সুন্দর অর্থপূর্ণ ও রুচিসম্পন্ন নামকরণের বিষয়ে ইসলামের রয়েছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা।
আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা সন্তানদের তার পিতার নামেই ডাকো, সেটাই আল্লাহর কাছে ন্যায়সঙ্গত।’ (সূরা আল আহজাব : ৫)
হজরত ইবনে আব্বাস রা: বলেন, একদা সাহাবারা হজরত রাসূলুল্লাহ সা:-এর কাছে জিজ্ঞাসা করলেন, হুজুর! পিতার হক সম্পর্কে তো আমরা আপনার কাছ থেকে জানলাম। পিতার ওপর সন্তানের হক কী এ ব্যাপারে আমাদের জানান। উত্তরে রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করলেন, পিতা সন্তানের অর্থপূর্ণ ভালো নাম রাখবে এবং তাকে সুশিক্ষা দিবে। (সুনানে বায়হাকি)
হজরত আবু ওহাব জুশানি রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘তোমরা নবীদের নামে নিজেদের নাম রাখবে। তবে আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম নাম হলো- আবদুল্লাহ ও আবদুর রহমান।’ (সুনানে আবু দাউদ)
হজরত আবু সাঈদ খুদরি রা: থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন, ‘যার সন্তান জন্মগ্রহণ করে সে যেন সন্তানের সুন্দর নাম রাখে ও সুশিক্ষা দেয় এবং প্রাপ্তবয়স্ক হলে তাকে বিয়ে দেয়।’ (সুনানে বায়হাকি)
হজরত আবু দারদা রা: হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে তোমাদের পিতার নামে ডাকা হবে। অতএব তোমাদের নামগুলো অর্থবোধক রাখো। ’ (সুনানে আবু দাউদ)
বিখ্যাত দার্শনিক ও ইসলামী স্কলার ইবনে কাইয়্যুম জাওচি রহ: তার কিতাব ‘তুহফাতুল মাওদুদ বি আহকামিল মাওলুদ’ এ লিখেছেন, ‘নামের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবেই মানুষের ভালো-মন্দ আচরণ, চরিত্র ও কর্মধারা প্রভাবিত হয়। মন্দ নামেরও মন্দ প্রভাব রয়েছে।’
ব্যক্তির নাম তার স্বভাব চরিত্রের ওপর ইতিবাচক অথবা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এ বিষয়ে হাদিসে চমৎকার নির্দেশনা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে শায়েখ আবু বকর আবু যায়েদ রহ: বলেন, ঘটনাক্রমে দেখা যায়, ব্যক্তির নামের সাথে তার স্বভাব ও বৈশিষ্ট্যের মিল থাকে। এটাই আল্লাহ তায়ালার হেকমতের দাবি। যার নামের মধ্যে গাম্ভীর্যতা আছে তার চরিত্রে গাম্ভীর্য পাওয়া যায়। খারাপ নামের অধিকারী লোকের চরিত্রও খারাপ হয়ে থাকে। ভালো নামের অধিকারী ব্যক্তির চরিত্রও ভালো হয়ে থাকে।
ইমাম মালেক রহ:-এর প্রসিদ্ধ হাদিসের কিতাব ‘মুয়াত্তায়’ বর্ণিত আছে। হজরত ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ রা: হতে বর্ণিত, হজরত ওমর ইবনে খাত্তাব রা:-এর কাছে জুহারনা গোত্রের এক ব্যক্তি এলো। তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন তোমার নাম কী? সে বলল, জামরা (অগ্নিস্ফুলিঙ্গ)। তিনি আবার জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কার পুত্র? সে বলল, ইবনে শিহাব (অগ্নিশিখার পুত্র)। তিনি পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, কোন গোত্রের? সে বলল, হারাকা (প্রজ্বলন)। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার বাড়ি কোথায়? সে বলল, হারাকা (অগ্নিগর্ভে)। সর্বশেষে ওমর রা: জিজ্ঞাসা করলেন, কোন অংশে? সে বলল, বিজাতিল লাজা (শিখাময় অংশে)। হজরত ওমর রা: তাকে বললেন যাও, তোমার গোত্রের লোকদের কাছে গিয়ে দেখ, তারা ভস্মীভূত হয়েছে! লোকটি বলল, তাদের কাছে এসে দেখলাম সত্যিই তারা সবাই ভস্মীভূত হয়েছে।
-নয়া দিগন্ত সূত্র
No comments:
Post a Comment