Thursday, September 29, 2022

ক্যান্সার কী? ক্যান্সার কীভাবে হয়?

 ক্যান্সার-The Outlaw Cells শারীরিক নিয়ম না মানা কোষগুলো

মানুষের শরীর বিভিন্ন কোষ বা সেল দিয়ে তৈরি। এ-সব সেল একটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে বাড়ে। তবে সেই বৃদ্ধি কোনও কারণে অনিয়ন্ত্রিত হয়ে বাঁধনছেড়া হলে শরীরে নানারকম পরিবর্তন ঘটে। অস্বাভাবিক আকৃতির এই বৃদ্ধি টিউমার নামে পরিচিত। টিউমার দু’ধরনের। এক ধরনের টিউমার যেখানে সৃষ্টি হয় সেখানেই অবস্থান করে, স্থান পরিবর্তন না করে আজীবন একই জায়গায় থেকে যায়। যেমন, আব বা আঁচিল। অন্য দিকে কিছু টিউমার, যারা শরীরের অন্যান্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে তারাই ক্যান্সার। সুতরাং, সেল-এর অনিয়ন্ত্রিত বিভাজন, সেখান থেকে টিউমার/আলসার হওয়া এবং তার দূরদূরান্তে ছড়িয়ে পড়াকেই ক্যান্সার বলে।
ক্যান্সার কীভাবে হয় তার সঠিক কারণ এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। তবে কয়েকটি কারণ আছে যেগুলিকে হাই রিস্ক ফ্যাক্টর বলে। এই রিস্ক ফ্যাক্টরগুলি দু’ভাবে বিভক্ত। বংশগত বা জেনেটিক ফ্যাক্টর এবং পরিবেশগত বা এনভায়রনমেন্টাল ফ্যাক্টর। প্রথম ফ্যাক্টর নিয়ে কিছু করার না থাকলেও দ্বিতীয় ফ্যাক্টরগুলি একজন মানুষের লাইফস্টাইল বা জীবনধারার সঙ্গে যুক্ত।
জেনেটিক ফ্যাক্টর: পরিবারে কারও ক্যান্সার হলে অন্য সদস্যদের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এটাই জেনেটিক ফ্যাক্টর। তার মানে এই নয় যে, বাবার ক্যান্সার হলে ছেলেরও ক্যান্সার হবে। বরং এভাবে বলা যায়, যে পরিবারে ক্যান্সারের ইতিহাস নেই, সে পরিবারের তুলনায় ক্যান্সার আক্রান্ত পরিবারের রক্ত সম্পর্কিত সদস্যদের এ রোগের ঝুঁকি কিছুটা বেশি। সুতরাং, বিষয়টি নিয়ে তাঁদের সচেতন থাকা দরকার। তবে এটা এখন প্রায় স্বীকৃত যে, ক্যান্সার একটি বংশগত রোগ।
পরিবেশগত ফ্যাক্টর: জিন ছাড়াও ক্যান্সার হওয়ার পেছনে পরিবেশগত ফ্যাক্টরের বড় ভূমিকা আছে। সেরকম কিছু কারণ জানানো হল-
তামাক বা টোব্যাকো- পরিবেশগত কারণের মধ্যে সবচেয়ে বড় হল তামাক। সিগারেট, খৈনি বা গুটখা, নস্যি ইত্যাদি নানা ধরনের তামাক জাতীয় নেশা থেকে ক্যান্সার হতে পারে।
অ্যালকোহল বা মদ্যপান- ক্যান্সারের দ্বিতীয় বৃহত্তর পরিবেশগত কারণ মদ্যপান। অনেকের লিভার ক্যান্সার বা প্যানক্রিয়াস ক্যান্সারের পেছনে থাকে দীর্ঘদিনের মদ্যাভ্যাস। তবে তামাক ও মদ একসঙ্গে সেবন করলে ক্যান্সারের ঝুঁকি ২ গুণ না হয়ে ১০ গুণ বেশি হয়ে যায়।
স্থুলতা বা ওবেসিটি- স্থুলতা বা ওবেসিটি ক্যান্সারের ক্ষেত্রে একটি বড় রিস্ক ফ্যাক্টর। মেয়েদের ব্রেস্ট, ইউটেরাইন এবং ছেলেদের প্রস্টেট ক্যান্সারের সঙ্গে ওবেসিটির যোগাযোগ খুঁজে পাওয়া গেছে।
খাদ্য- খাদ্যের সঙ্গে ক্যান্সারের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। যাঁরা নিয়মিত ফাস্ট ফুড বা ফ্যাট জাতীয় খাদ্য বেশি খান, তাঁদের ওজন বেড়ে গিয়ে স্থুল হয়ে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়ে।
পরিশ্রমবিমুখতা- পরিশ্রমবিমুখতা ক্যান্সারের অন্যতম বড় কারণ। এক্ষেত্রেও ওজন বেড়ে গিয়ে ওবেসিটি ফ্যাক্টর প্রাধান্য পায়।
সংক্রমণ- ক্যান্সার সংক্রামক নয় কিন্তু কিছু কিছু ভাইরাল ও ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ থেকে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। যেমন, হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচ পি ভি) থেকে মেয়েদের সার্ভাইক্যাল ক্যান্সার এবং ছেলে ও মেয়েদের ওরাল বা ওরোফ্যারেঞ্জিয়াল ক্যান্সার হওয়ার হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এছাড়াও হেপাটাইটিস ‘বি’ ও হেপাটাইটিস ‘সি’ ভাইরাস লিভার ক্যান্সার ঘটাতে পারে। হার্পিস গ্রুপের কয়েকটি বিরল ভাইরাসও ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। কিছু ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ থেকেও ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে। যেমন, এইচ পাইলোরি সংক্রমণ থেকে স্টমাক ক্যান্সার হতে পারে। তা ছাড়া ব্লাডার ক্যান্সারের সঙ্গেও ব্যাকটেরিয়া ব্যাকটেরিয়ার যোগাযোগ আবিষ্কৃত হয়েছে।
রোদ- নিয়মিত রোদের সংস্পর্শে স্কিন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। তবে পাশ্চাত্যের তুলনায় এদেশে স্কিন ক্যান্সার ততটা প্রবল নয়।
শিল্প- কিছু কিছু শিল্প বা ইন্ডাস্ট্রিতে ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে। যেমন, অ্যাসবেস্টস শিল্পে সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের বেশি লাঙ ক্যান্সার হয়। অ্যানিলিন ডাই-এর সঙ্গেও ব্লাডার ক্যান্সারের সম্পর্ক রয়েছে।
দূষণ বা পলিউশন- দূষণ থেকেও এ রোগ হতে পারে। যাঁরা নিয়মিত দূষিত এলাকায় থাকেন, তাঁদের লাঙ ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি।
-Own study
-International Review on Cytology, Japan
-NASA Excerpts

No comments:

Post a Comment