মানুষ ‘সৃষ্টির সেরা জীব’ হলেও কিছু মানুষকে আল্লাহ তাআলা চতুষ্পদ প্রাণীর চেয়েও নিকৃষ্ট বলেছেন। ‘..তারা (মানুষ হয়েও) পশুর মতো, বরং পশুর চেয়েও বেশি নিকৃষ্ট’ ulaaa'ika kal an'aami bal hum adall (সুরা আরাফ: ১৭৯)। এ থেকে প্রতীয়মান হয়, ব্যাপকভাবে মানুষ বলতেই সৃষ্টির সেরা নয়; বরং কোনো ক্ষেত্রে মানুষ পশু থেকেও নিকৃষ্ট হয়ে থাকে।
এছাড়াও সুষ্ঠু বিবেক ও সঠিক জ্ঞান দেওয়া হয়েছে মানুষকে। দেওয়া হয়েছে অন্তর, স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের অন্তর রয়েছে অথচ তারা তা দ্বারা উপলব্ধি করে না’ lahum quloobul laa yafqahoona bihaa wa lahum a'yunul laa yubisiroona bihaa wa lahum aazaanul laa yasma'oona bihaa (সুরা আরাফ: ১৭৯)। মহান আল্লাহ আরও বলেন, ‘তারা কি কোরআন সম্পর্কে মনোযোগসহ চিন্তাভাবনা করে না, নাকি তাদের অন্তর তালাবদ্ধ!’ Afalaa yatadabbaroonal Qur-aana am 'alaa quloobin aqfaaluhaa (সুরা মুহাম্মদ: ২৪)
আল্লাহকে চিনতে না পারাদের প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করেনি? তবে তারা জ্ঞানবুদ্ধিসম্পন্ন হৃদয় ও শ্রুতিশক্তিসম্পন্ন শ্রবণের অধিকারী হতো’ Afalam yaseeroo fil ardi fatakoona lahum quloobuny ya'qiloona bihaaa aw aazaanuny yasma'oona bihaa fa innahaa laa ta'mal absaaru wa laakin ta'mal quloobul latee fissudoor(সুরা হজ: ৪৬)।
সৃষ্টিকুলের সবকিছুকে তিনি মানুষের অনুগত করেছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মহান আল্লাহ সেই সত্তা, যিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীর সব কিছু সৃষ্টি করেছেন’ Huwal lazee khalaqa lakum maa fil ardi jamee'an (সুরা বাকারা: ২৯)। সুতরাং আল্লাহ প্রদত্ত এই অধিকার যথাযথভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে পৃথিবীর সুন্দর পরিবেশ গড়ে তোলা, একইসঙ্গে নিজের স্রষ্টার আদেশ-নিষেধকে মেনে নিয়ে তাঁরই বিধান গ্রহণ করা মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের বৈশিষ্ট্য।
কিন্তু যারা মহান স্রষ্টার অবাধ্যতা করে, তাদের বিবেক, জ্ঞান ও চিন্তাশক্তি অর্থহীন হয়ে গেল। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে যারা পৃথিবীর সুন্দর পরিবেশ কলুষিত করে, তারা মানবতার শত্রু। তাই মানুষ হয়েও তারা চতুষ্পদ প্রাণী বা তার চেয়েও নিকৃষ্ট।
আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘আমি অবশ্যই বহু মানুষ ও জিনকে দোজখের জন্যে নির্ধারিত করেছি; কারণ তাদের অন্তর আছে, কিন্তু তারা সত্যকে উপলব্ধি করে না, তাদের চোখ থাকলেও তা দিয়ে তারা সত্যকে দেখে না, তাদের কান আছে, কিন্তু তা দিয়ে তারা সত্যবাণী শোনে না। ওরা পশুর মতো; বরং তার চেয়েও বেশি পথভ্রষ্ট; নিশ্চয়ই তারা উদাসীন।’ (সুরা আরাফ: ১৭৯)
আয়াতের অর্থ এই নয় যে, আমি বিনা কারণে তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করার জন্যই সৃষ্টি করেছিলাম, বরং এর সঠিক অর্থ হচ্ছে, আমি তো তাদেরকে হৃদয়, মস্তিষ্ক, কান, চোখ সবকিছুসহ সৃষ্টি করেছিলাম। কিন্তু এরা এগুলোকে যথাযথভাবে ব্যবহার করেনি এবং নিজেদের অসৎ কাজের বদৌলতে শেষ পর্যন্ত তারা জাহান্নামের ইন্ধনে পরিণত হয়েছে। সুতরাং তাদের আমলই তাদেরকে জাহান্নামের উপযুক্ত করেছে। তাদের জাহান্নাম দেওয়া আল্লাহর ইনসাফের চাহিদা। সে হিসেবে তিনি যেহেতু আগে থেকেই জানেন যে, তারা জাহান্নামে যাবে, সুতরাং তাদেরকে যেন তিনি জাহান্নামের আগুনে শাস্তি দেয়ার জন্যই সৃষ্টি করেছেন। (ফাতহুল কাদির)
আয়াতের পরের অংশে বলা হয়েছে, এরা কিছুই বোঝে না, কোনো কিছু দেখেও না এবং শুনেও না। অথচ বাস্তবে এরা পাগল বা উম্মাদ নয় যে, কিছুই বুঝতে পারে না। অন্ধও নয় যে, কোন কিছু দেখবে না, কিংবা বধিরও নয় যে, কোন কিছু শুনবে না; বরং প্রকৃতপক্ষে এরা পার্থিব বিষয়ে অধিকাংশ লোকের তুলনায় অধিক সতর্ক ও চতুর। উদ্দেশ্য এই যে, তাদের যা উপলব্ধি করা উচিত ছিল তারা তা করেনি, যা দেখা উচিত ছিল তা তারা দেখেনি, যা কিছু তাদের শোনা উচিত ছিল তা তারা শোনেনি। আর যা কিছু বুঝেছে, দেখেছে এবং শুনেছে, তা সবই ছিল সাধারণ জীবজন্তুর পর্যায়ের, যাতে গাধা-ঘোড়া, গরু-ছাগল সবই সমান।
তাছাড়া, জীব-জন্তু নিজের প্রভু ও মালিকের সেবা যথার্থই সম্পাদন করে। পক্ষান্তরে অকৃতজ্ঞ মানুষ স্বীয় মালিক, পালনকর্তার আনুগত্যে ত্রুটি করতে থাকে। সেকারণে তারা চতুস্পদ জন্তু অপেক্ষা বেশি নির্বোধ ও গাফেল। কাজেই বলা হয়েছে “এরাই হলো প্রকৃত গাফেল।” (তাবারি; ইবনে কাসির)
এ আয়াতের দুটি শিক্ষা
১) সবাই ঈমান আনবে বা সব মানুষই সংশোধিত হবে এমন আশা করা উচিত নয়। কারণ, মহান আল্লাহ মানুষকে পথ বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা দেওয়ায় অনেক মানুষ ভুল পথ নির্বাচন করবে এবং দোজখে যাবে এটাই স্বাভাবিক।
২) মানুষের মনুষ্যত্বের মানদণ্ড হলো- তারা সত্যকে উপলব্ধি করবে। এ মানদণ্ড না থাকলে তাকে পশুর সমান, বরং পশুর চেয়েও অধম বলা যায়।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তাঁর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টির মর্যাদা রক্ষার তাওফিক দান করুন। তাঁর রাগ ও শাস্তি থেকে হেফাজত করুন। প্রকৃত বান্দা হিসেবে ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
-ঢাকামেইল.কম
-নিজ পাঠ
-ইসলাম.নেট
No comments:
Post a Comment