Tuesday, July 21, 2020

সময়ের সাথে মানুষ কোথায়?


মানুষের সৃষ্টি থেকে নিয়ে শেষ গন্তব্যস্থলে পৌঁছা পর্যন্ত মোট ছয়টি স্তর রয়েছে। একটি স্তর থেকে আরেকটি স্তরে স্থানান্তরিত হয় একটি নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধান সামনে রেখেঃ 

১ম-আলমে আরওয়াহ-রূহের জগত। আলমে আরওয়া বা আত্মার জগতে আল্লাহ্ জাল্লা শানুহু সব মানুষের প্রাণ বা রুহকে বহু পূর্বেই সৃষ্টি করেছেন। এ সবই আল্লাহর কুদরতের অপূর্ব নিদর্শন। আলমে আরওয়াহ বা রুহের জগতে শুধু রুহ ছিল, সঙ্গে ছিল নফস।

২য়-আরহামে উম্মেহাত-মাতৃগর্ভ। এক সংকীর্ণ স্থান কিন্তু আল্লাহ তাঁর অসীম কুদরত দিয়ে সেই স্থানকে করছেন তাঁর বান্দাহর জন্য অত্যন্ত আরামদায়ক। কবি নজরুল ইসলামের ভাষায় “তোরে সৃষ্টি ক’রে তোর কাছে যে আছেন তিনি ঋণী।” কারণ মানুষকে মায়ের পেটে লালন করা আল্লাহরই দায়িত্বে। সেখানে অন্য কারো হাত খেলানোর সুযোগ নাই। কুরআন মজীদে মানব সৃষ্টির বিভিন্ন স্তর এবং বিকাশের ধারাবাহিকতার বিবরণ দিয়ে আল্লাহ্ জাল্লা শানুহু ইরশাদ করেন,
আমি তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি মৃত্তিকার উপাদান থেকে,
অতঃপর আমি সেটাকে শুক্রবিন্দুরূপে (নুত্ফা) স্থাপন করি এক নিরাপদ আধারে,
পরে আমি শুক্রবিন্দুকে পরিণত করি ‘আলাক্-এ (জমাট রক্তপিন্ড)
অতঃপর আলাককে পরিণত করি পিন্ডকে এবং
পিন্ডকে পরিণত করি অস্থি-পাঞ্জরে, অতঃপর অস্থি-পাঞ্জরকে ঢেকে দেই গোশত দ্বারা,
অবশেষে সেটাকে গড়ে তুলি অন্য এক সৃষ্টিরূপে।
অতএব সর্বোত্তম স্রষ্টা আল্লাহ্ কত মহান!
এরপর তোমরা অবশ্যই মারা যাবে, অতঃপর কিয়ামতের দিন তোমাদের উত্থিত করা হবে। (সূরা মু’মিনূন: আয়াত ১২-১৬)।
আরও ইরশাদ হয়েছে: যিনি (আল্লাহ) তাঁর প্রত্যেকটি সৃষ্টিকে সৃজন করেছেন উত্তমরূপে এবং কাদাূ হতে মানব সৃষ্টির সূচনা করেছেন। অতঃপর তিনি তার বংশ উতপন্ন করেন তুচ্ছ তরল পদার্থের নির্যাস হতে। পরে তিনি সেটাকে করেছেন সুঠাম এবং তাতে ফুঁকে দিয়েছেন তার রুহুকে এবং তোমাদের দিয়েছেন কর্ণ, চক্ষু ও অন্তঃকরণ, তোমরা অতি সামান্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (সূরা সাজদা: আয়াত ৭-৯)।
বল, তিনিই তোমাদের সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের দিয়েছেন শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি ও অন্তঃকরণ, তোমরা অল্পই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। বল, তিনিই তোমাদের ছড়িয়ে দিয়েছেন পৃথিবীতে এবং তারই নিকট তোমাদের সমবেত করা হবে। (সূরা মুলক: আয়াত ২৩-২৪)।

৩য়- আলমে দুনিয়া -পৃথিবীর জীবন (জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত)।হায়াতুদ্ দুনিয়া বা পার্থিব জীবন অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী। আলমে দুনিয়া বা দুনিয়ার জগতে রুহ ও নফসের সঙ্গে দেহ বা শরীর যোগ হয়েছে। মৃত্যুর মাধ্যমে রুহ ও নফস দেহ ছেড়ে আলমে বারজাখে পাড়ি দেয়। আল্লাহ্ জাল্লা শানুহু ইরশাদ করেন: তোমরা পার্থিব জীবনকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছ, কিন্তু আখিরাতের জীবনই হচ্ছে অনেক ভাল এবং স্থায়ী। (সূরা আ’লা: আয়াত ১৬-১৭)। একজন মানুষের পৃথিবীতে আগমন এবং এখান থেকে নির্গমনের মধ্যবর্তী কালটাতে যে জীবন সেটাই পার্থিব জীবন। এই পৃথিবীর জীবনের বিভিন্ন মেয়াদী সময় নির্ধারিত থাকে। এই সময়সীমা সবার এক থাকে না। পৃথিবীতে থাকার জন্য যে সময়সীমা থাকে তা আয়ু নামে অভিহিত হয়। আল্লাহ্ জাল্লা শানুহু যার জন্য যতটুকু আয়ু নির্ধারণ করে দেন সে ততদিন পৃথিবীতে থাকতে পারে। অনেকেই অকালে ঝরে যায়, আবার অনেকের আলো-হাওয়ার এই মায়াঘেরা পৃথিবীতে আসারই সুযোগ হয় না, মাতৃগর্ভেই তারা নিঃশেষ হয়ে যায়।
এই যে পৃথিবীতে আগমন ও নির্গমন কিংবা আগমনের পূর্বেই শেষ হয়ে যাওয়া এসব রহস্য কেবলমাত্র আল্লাহ্ জাল্লা শানুহুই জানেন। আমরা যতই বুদ্ধিমান হই না কেন, যতই যুক্তি-প্রমাণ উপস্থাপন করি না কেন, যতই যুক্তির কষ্টিপাথরে কিংবা বৈজ্ঞানিক বিচার-বিশ্লেষণ দ্বারা যাচাই করার চেষ্টা-তদ্বির করি না কেন, জন্ম ও জীবনরহস্য উদ্ঘাটন করতে যথার্থভাবে সমর্থ হব না। শুধু এতটুকু বলতে পারব, ওয়া আল্লাহু আ’লম-আল্লাহ্ই ভাল জানেন।
কুরআন মজীদে পার্থিব জীবনের সুন্দর মিসাল বা উপমা দিয়ে আল্লাহ্ জাল্লা শানুহু ইরশাদ করেন: বস্তুত পার্থিব জীবনের দৃষ্টান্ত এরূপ: যেমন-আমি আসমান হতে পানি বর্ষণ করি, ফলে তা দ্বারা মাটিতে উদ্ভিদ ঘন সন্নিবিষ্ট হয়ে উদগত হয়, যা হতে মানুষ ও জীবজন্তু আহার করে থাকে। অতঃপর যখন ভূমি তার শোভা ধারণ করে ও নয়নাভিরাম হয় এবং তার অধিকারীরা মনে করে তা তাদের আয়ত্তাধীন, তখন দিবসে অথবা রজনীতে আমার নির্দেশ এসে পড়ে এবং আমি তা এমনভাবে নির্মূল করে দেই যেন গতকালও তার অস্তিত্বই ছিল না। এভাবে আমি নিদের্শনাবলী বিশদভাবে বিবৃত করি চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য। (সূরা ইউনুস: আয়াত ২৪)।
মানুষের পার্থিব জীবন ক্ষণস্থায়ী হলেও এই জীবন তার আল্লাহর খলিফা ও বান্দা হিসেবে দায়িত্ব অনেক। সে আল্লাহর ইবাদত করবে এবং শান্তির পৃথিবী, সমৃদ্ধির পৃথিবী, হানাহানি ও সংঘাতমুক্ত একটা নিরাপদ পৃথিবী গড়ায় যথাসাধ্য চেষ্টা করবে, কায়িক ও বৌদ্ধিক পরিশ্রম দিয়ে একটা সুখের পৃথিবী গড়ে তুলবে, এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহর বান্দা হিসেবে গোটা পৃথিবীর মানুষ একটা বৃহত্তর, উচ্চতর এবং সর্বশ্রেষ্ঠ ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ হবে। ফলে শোষণহীন, শ্রেণীবিহীন, আধিপত্যহীন ইনসাফ ও আদলভিত্তিক সামাজিক ন্যায়বিচারসম্পন্ন সত্যিকার কল্যাণকর পৃথিবী মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। আর এমন পৃথিবী সবার কাম্য হওয়া উচিত। কিন্তু শয়তান নামক অশুভ শক্তি পৃথিবীর অধিবাসীদের মধ্যে বিভ্রান্ত ও অশান্তির বিষবাষ্প এমনভাবে ছড়িয়ে দেয় যে, দুর্বলচিত্তের মানুষ, লোভ-লালসা আর মদ-মাতসর্ষের কবলে নিপতিত মানুষ মনুষ্যত্বের বৃত্তকে অগ্রাহ্য করে; ফলে অশান্তির সৃষ্টি হয়, অরাজকতা, নৈরাস্য ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটে। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে: তাদের যখন বলা হয় পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি কর না। তারা বলে: আমরাই তো শান্তি স্থাপনকারী। সাবধান! এরাই অশান্তি সৃষ্টিকারী, কিন্তু এরা বুঝতে পারে না।(সূরা বাকারা: আয়াত ১১-১২)।এই আয়াতে কারিমা কপটশ্রেণীর মানুষের সম্পর্কে বলা হয়েছে। কপটতা দুনিয়ার জন্য যেমন অকল্যাণকর, তেমনি তাদের আখিরাতের জীবনের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তির ব্যবস্থা।
৪থ-আলমে বারজাখ -অন্তরাল জগত। কবরের জগত। এক সংকীর্ণ স্থান। বারজাখ শব্দের অর্থ অন্তরায় ও পৃথককারী। শরী‘আতের পরিভাষায় মৃত্যর পর হতে ক্বিয়ামত পর্যন্ত সময়কালকে বরযখ বলা হয়। এটা দুনিয়া ও আখেরাতের জীবনের মধ্যেকার প্রাচীর। আল্লাহ বলেন, তাদের সামনে পর্দা থাকবে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত (ম’মিনূন ১০০)। হাদীসে “আলমে বারজাখ” — এর জন্য কবর শব্দটি রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে৷ সেখানে এর অর্থ হয় এমন একটি জগত যেখানে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে মৃত্যু লাভ করার পর থেকে নিয়ে পরবর্তী পুনরত্থান লাভ করা পর্যন্ত মানবিক রূহগুলো অবস্থান করবে৷ আলমে বারজাখ বা বারজাখ জগতে রুহ ও নফস ইল্লিন বা ছিজ্জিনে অবস্থান করবে এবং দেহ হয়তো বিলীন হয়ে যাবে, নয়তো সুরক্ষিত থাকবে। 

৫ম -ইয়াওমুল কিয়ামত। আল্লাহ্‌ তালা কিয়ামতের দিনকে “মহা ত্রাস” বলে উল্লেখ করেছেন। এই দিনটি হচ্ছে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দিন। কিয়ামতের দিনের চেয়ে ভয়ংকর দিন আর নেই। আল্লাহ্‌ বলছেন, “লা ইয়াহজুনু হুমুল ফাজা’আল আকবার”- মানে মহা ত্রাস তাদের চিন্তান্বিত করবে না। অর্থাত ন্যায় পরায়ন ঐ সকল মুমিনরা সবচেয়ে ভয়ংকর দিনেও চিন্তামুক্ত থাকবে, নিরাপদে থাকবে।
এই সকল ব্যক্তিদের এত নিশ্চিন্ত নিরাপদ থাকার কারন কি? যখন অন্যেরা ভীতসন্ত্রস্ত, ভীষণ চিন্তায় থাকবে। আর এইসকল লোকরা থাকবে ফুরফুরে মেজাজে। এর উত্তর রয়েছে কুরআন ও হাদিসে। এই সকল লোকেরা যখন দুনিয়ায় থাকত তখন বলত,
“আমরা আমাদের পালনকর্তার তরফ থেকে এক ভীতিপ্রদ ভয়ংকর দিনের ভয় রাখি।” [৭৬:১০]
এই সকল পুণ্যশীল নারী ও পুরুষ, যখন দুনিয়ায় থাকত তখন বলত যে আমরা এমন এক দিনের ভয় রাখি যা “আবুস(tensed)” এবং “কামতারির(long day)”।
“আবুস” মানে হচ্ছে কোন কিছু নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকা যার ছাপ চেহারায় পড়ে অর্থাত ভয় করা।
ইবনে আব্বাস (রা) এর মতে “কামতারিরা” হচ্ছে অনেক বড় ও দীর্ঘস্থায়ী একটি দিন।
কাতাদা(রা) এর মতে কামতারিরা মানে হচ্ছে অত্যন্ত কঠিন এবং ভয়ঙ্কর একটি দিন।
ঐ পুণ্যশীল নারী ও পুরুষেরা দুনিয়ায় থাকতে এই দিনটিকে ভয় পেত। তাই আল্লাহ্‌ সুবহান ওয়াতালা এই ভীতিপ্রদ ভয়ংকর দিনে তাদের নিরাপদ রাখবেন। রাসুল (সা) একটি হাদিসে কুদসি তে বলেন,
“আল্লাহ্‌ তালা বলেন, ‘আমার নামের শপথ! আমি কখনই আমার বান্দাদের দুই কালেই সুখী বা দুখী রাখবনা। আমার বান্দা যদি দুনিয়াতে থাকতে কিয়ামত দিবস কে ভয় না পায়, তাহলে তারা কিয়ামত দিবস তাদের জন্য এক ভীতিকর দিন হবে। আর কেউ যদি দুনিয়াতেই এই দিনটিকে ভয় পায়, তাহলে কিয়ামত দিবসের দিন সে থাকবে নিরাপদ এবং তার মনে তাকবে শান্তি।”

৬ষ্ঠ-ইয়াওমুল আখিরাত। জান্নাত/জাহান্নাম -চিরস্থায়ী আসন। ক্বিয়ামতের পর থেকে আখিরাতের জীবন শুরু। যেহেতু আখিরাতই শেষ জীবন, তাই তাকে আখেরাত বা শেষদিবস বলা হয় (তাফসীর ত্বাবারী, বাক্বারাহ ৮ আয়াতের ব্যাখ্যা)। তারপর যার নেকী বেশি হবে সে যাবে জান্নাতে, আর যার গুনাহ বেশি হবে, সে যাবে জাহান্নামে (সুরা আল-ক্বারি‘আহ ৬-১১)। সুতরাং বরযখ ও আখেরাত পৃথক বিষয়। আখিরাত সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বহু আয়াত রয়েছে। যেমন: ‘আর অবশ্যই আপনার জন্য প্রথম জগত দুনিয়া অপেক্ষা আখিরাতই উত্তম বা শ্রেয়। অচিরেই আপনার রব আপনাকে দান করবেন, যাতে আপনি সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন।’ (সুরা-৯৩, ওয়াদ-দুহা, আয়াত: ৪-৫)।
পরকাল অনন্ত, সেখানে মৃত্যু নেই। ‘দারুল আখিরাত’ পরকাল সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের বহু আয়াতে উল্লেখ রয়েছে। যেমন: ‘মুত্তাকিদের জন্য পরকালীন নিবাসই উত্তম।’ (সুরা-৭ আরাফ, আয়াত: ১৬৯)। ‘(হে রাসুল সা.) আপনি বলুন! হে আমার জাতি, তোমরা তোমাদের অবস্থান থেকে সামর্থ্যমতো সতকর্ম করো, আমিও করছি; অচিরেই তোমরা জানতে পারবে পরিণতির শুভ নিবাস কাদের জন্য।’ (সুরা-৬ আনআম, আয়াত: ১৩৫)। ‘আল্লাহ তোমাদের আহ্বান করছেন শান্তিনিবাস পরকালের প্রতি।’ (সুরা-১০ ইউনুস, আয়াত: ২৫)। ‘তোমাদের প্রতি শান্তি! যেহেতু তোমরা ধৈর্য ধারণ করেছ, পরিণতি জান্নাতের বাড়ি কত-না উত্তম।’ (সুরা-১৩ রাআদ, আয়াত: ২৪)। ‘যারা সতকর্ম করবে, তারা দুনিয়াতেও কল্যাণ লাভ করবে, পরকালের নিবাস অতি উত্তম; মুত্তাকিদের নিবাস কত-না উত্তম।’ (সুরা-১৬ নাহল, আয়াত: ৩০)। ‘আল্লাহ তোমাকে যা দিয়েছেন, তা দিয়ে পরকালের নিবাসের সন্ধান করো।’ (সুরা-২৮ কাছাছ, আয়াত: ৭৭)

এই যে আমাদের চলার পথ, এ পথে আমরা কী সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি করছি? 

রুহের জগতে আমরা একই জাতীর আওতায় ছিলাম। তখন আমাদের পরিচয় একটাই ছিল। কোন প্রকার ভেদাভেদ সেখানো ছিলনা। সমস্যার সুত্রপাত মুলত: যখন মাতৃগর্ভে এলাম তখন থেকে। বাবা-মায়ের একান্ত সময়ের আবেগের মধ্যদিয়ে চলে এলাম মায়ের গর্ভে। এখান থেকেই শুরু হল ভাল আর মন্দকে ঘিরে পথ চলা। করো প্রতি সহানুভুতি দেখানো ভুলে গেলাম এখানেই। কেননা, এ সময় মায়ের গর্ভে থেকেও মাকে কষ্ট দিতে কোন প্রকার কার্পন্য করলাম না।

মা-তার কাঁধে কষ্টের পাহাড় তুলে নিয়ে আমাকে এই পৃথিবীর আলোর মুখ দেখালেন। আমার জন্য বেঁচে থাকার সুন্দর পরিবেশ তৈরি করে দিলেন। এখানে পেলাম ভিন্ন এবং উপভোগ করার মত এক মাহারাজ্য। যে রাজ্যে নিজেকে রাজা ভাবতে শুরু করলাম। অন্তরআত্মাই একে কাজে লাগালো। এমনটাতো হবে, কেননা কষ্টের ভার অপরের কাঁধে দিয়ে নিজে  মজা ভোগ করাতো আগেই শিখেছি। কষ্টের ভারতো মায়ের কাধে তুলে দিয়েছি অনেক আগেই। 

এতো বেয়াদবী আর নোংরামী করেছি তাও আবার আমার অবস্থা যখন পরগাছার মত। অর্থাত এ সময়টিতে আমি নিজে কিছুই করতে পারিনি। বাবা-মায়ের করে দেয়া ব্যবস্থাকে শুধু উপোভোগ করেছি। এতটুকু করেই আমি হয়েছি মহা রাজা। যা আমার জন্য শোভনীয় ছিল কিনা সে বিষয়টি অনেক বড় প্রশ্নের দাবি রাখে।

এর পর তো আমার জন্য এই জগত হাতের মুঠোয় রাখার মত অবস্থা। আমার অবস্থান হল আকাশ ছোঁয়ার মত। সেই সাথে ক্ষমতার একটু-আধটু সুযোগ পেয়েছি, যা আমাকে আরো বেপরোয়া করে দিয়েছে। 

একে ব্যবহার করে আমি ভুলে গিয়েছি ফেলে আসা দিনের কথা। সেই সাথে ভুলে গিয়েছি সামনে আমার জন্য অপেক্ষমান সকল বিষয়। কালো আবরণে ঢেকে দিয়েছি নিজের ভিতরের সক্রিয় বিবেককে। ভুলে গিয়েছি আমাদের জীবনের শেষ পরিনতি সম্পর্কে। তাহলে আমরা আমাদের জীবনকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছি? আমরা কী আমাদের নিয়ে পুর্বের ও পরের সকল বিষয়কে সাময়িক মনে করছি?

এই সব বিষয় নিয়ে আমরা যারা চিন্তা করার সময় পাইনা, বরং একে একটি নিছক খেলা মনে করি তাদের প্রতি অনুরোধের হাতটা একটু প্রসারিত করে বলতে চাই, আপনার ফেলে আসা দিনের অসহায়ত্তের কথা কিছু সময় ভাবুন? আপনার কী করার ছিল সে অনুযায়ী কতটুকু করেছেন তা নিয়ে একটু চিন্তা করুন। আপনার ব্যর্থতার দায়ভার সামনে যে হিসেবের সময় আসছে সেখানে কার কাছে হস্তান্তর করবেন একটু ভেবে দেখুন?

চলমান সময়ে বাতাসের সাথে তাল মিলিয়ে আপনি যে ভাবে আপনা জীবন পরিচালনা করছেন তার শেষ পরিনতি নিয়ে আপনার ভিতরের বিবেককে প্রশ্ন করুন? জেনে নিতে চেষ্টা করুন আপনি কি সঠিক কাজ করছেন?  না-কি আপনার কাজগুলোই আপনাকে গভীর সমস্যার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন যে সময়ে আপনি আছেন তা থেকে বের হয়ে আসার কোন পথ আছে কি-না একটু মেলাতে চেষ্টা করুন আপনার স্ব-চিত্রিত সমীকরণে।

আপনার সকল সমীকরণকে মিলিয়ে একটি সুন্দর প্লাটফর্মে নিজেকে দাঁড় করিয়ে রাখুন। দেখতে পাবেন এই দুনিয়ার জীবন পরিচালনা করার মাঝেই রয়েছেঃ
এক. মৃত্যু পরবর্তী জীবনের শান্তি। যা এই দুনিয়ার সকল শান্তির চাইতেও উত্তম।
দুই. বিচারকের নিকট সঠিক ভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে পারার সমর্থ।
তিন. সর্বোপরি চাওয়া পওয়ার সর্বোচ্চ স্থানে নিজের স্থান করে নেয়া। যা আপনার আমার সকলের প্রাপ্য। 

Thursday, July 16, 2020

দাড়ি রাখা কি স্বাস্থ্যসম্মত?


দাড়ি রাখা কি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো? নাকি আপনার মুখভর্তি দাড়ি আসলে নানারকম রোগ-জীবাণুর এক বিরাট আস্তানা?
এ নিয়ে নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে বিজ্ঞানী আর গবেষকদের মধ্যে।
বিবিসির এক অনুষ্ঠান, “ট্রাস্ট মি, আই অ্যাম এ ডক্টর” সম্প্রতি ঠিক এই প্রশ্নে একটা ছোট্ট পরীক্ষা চালিয়েছিল।
তার ভিত্তিতে বিজ্ঞানীরা বলছেন, ক্লিন শেভড পুরুষের চেয়ে দাড়িওয়ালাদের মুখে রোগ-জীবানু বেশি, এমন কোন প্রমাণ তারা পাননি।
যারা দাড়ি রাখেন, তারা এর মধ্যে নানা রোগ-জীবাণু বহন করে চলেছেন এমন ভয় অনেকের মধ্যেই কাজ করে।
যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতাল সম্প্রতি এ নিয়ে গবেষণা চালায়।
তাদের গবেষণার ফল অনেককেই অবাক করেছে।
‘জার্নাল অব হসপিটাল ইনফেকশনে’ প্রকাশিত এই গবেষণার ফলে বলা হচ্ছে, দাড়িওয়ালাদের চেয়ে বরং দাড়ি কামানো পুরুষের মুখেই তারা বেশি রোগ-জীবাণু পাওয়া গেছে।
গবেষকরা বলছেন, মেথিসিলিন-রেসিস্ট্যান্ট স্ট্যাফাইলোকক্কাস অরিয়াস (এমআরএসএ) বলে যে জীবাণু অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী, সেটি দাড়িওয়ালাদের চাইতে দাড়ি কামানোদের মুখে তিনগুণ বেশি মাত্রায় পাওয়া গেছে।
এর কারণ কি?
গবেষকরা বলছেন, দাড়ি কামাতে গিয়ে মুখের চামড়ায় যে হালকা ঘষা লাগে, তা নাকি ব্যাকটেরিয়ার বাসা বাঁধার জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে।
অন্যদিকে দাড়ি নাকি সংক্রমণ ঠেকাতে সাহায্য করে।
বিবিসির “ট্রাস্ট মি, আই অ্যাম এ ডক্টর” অনুষ্ঠানে বেশ কিছু পুরুষের দাড়ি থেকে ব্যাকটেরিয়ার নমূনা সংগ্রহ করে একই ধরণের পরীক্ষা চালানো হয়।
ইউনিভার্সিটি কলেজ, লন্ডনের গবেষক ড: অ্যাডাম রবার্ট এই গবেষণার ফল দেখে বলছেন, দাড়িতে এমন কিছু ‘মাইক্রোব’ আছে, যা ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসে সাহায্য করে।

Friday, July 10, 2020

তারপর তাকে(মানুষকে) উল্টো ফিরিয়ে নীচতমদেরও নীচে পৌঁছিয়ে দিয়েছি



সুম্মা  রাদাদনাহু আসফালা সাফিলীন
Thumma ra dad naahu asfala saafileen
আল কুরআন। সূর আত ত্বীন। আয়াত ০৫
মুফাসসিরগণ সাধারণত এর দু'টি বর্ণনা করেছেনঃ
একঃ আমি তাকে বার্ধক্যের এমন এক অবস্থার দিকে ফিরিয়ে দিয়েছি যেখানে সে কিছু চিন্তা করার বুঝার ও কাজ করার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলে৷
দুইঃ আমি তাকে জাহান্নামের সর্বনিম্ন পর্যায়ের দিকে ফিরিয়ে দিয়েছি৷
কিন্তু বক্তব্যের যে উদ্দেশ্যটি প্রমাণ করার জন্য এই সূরাটি নাযিল করা হয়েছে এই দু'টি অর্থের তার জন্য প্রমাণ হিসেবে দাঁড় করানো যেতে পারে না৷
সূরাটির উদ্দেশ্য হচ্ছে, আখেরাতে পুরস্কার ও শাস্তির ব্যবস্থা যে যথার্থ সত্য তা প্রমাণ করা৷ এদিক দিয়ে মানুষের মধ্যে থেকে অনেককে চরম দুর্বলতম অবস্থায় পৌঁছিয়ে দেয়া হয় এবং মানুষদের একটি দলকে জাহান্নামে ফেলে দেয়া হবে- এ দু'টি কথার একটিও এই অর্থের সাথে খাপ খায় না৷
প্রথম কথাটি শাস্তি ও পুরস্কারের প্রমাণ হতে পারে না৷ কারণ, ভালো ও খারপ উভয় ধরনের লোক বার্ধক্যের শিকার হয়৷ কাউকে তার কাজের শাস্তি ভোগ করার জন্য এই অবস্থায় শিকার হতে হয় না৷
অন্যদিকে দ্বিতীয় কথাটি আখেরাতে কার্যকর হবে একে কেমন করে এমন সব লোকের কাছে হিসেবে পেশ করা যেতে পারে যাদের থেকে আখেরাতে শাস্তি ও পুরস্কার লাভের ব্যবস্থার পক্ষে স্বীকৃতি আদায় করার জন্য এই সমস্ত যুক্তি প্রমাণ পেশ করা হচ্ছে? তাই বলা যেতে পারে আয়াতের সঠিক অর্থ হচ্ছে, সর্বোত্তম কাঠামোয় সৃষ্টি করার পর যখন মানুষ নিজের দৈহিক ও মানসিক শক্তিগুলোকে দুষ্কৃতির পথে ব্যবহার করে তখন আল্লাহ তাকে দুষ্কৃতিরই সুযোগ দান করেন এবং নিচের দিকে গড়িয়ে দিতে দিতে তাকে এমন নিম্নতম পর্যায়ে পৌঁছিয়ে দেন যে, অন্য কোন সৃষ্টি সেই পর্যায়ে নেমে যেতে পারে না৷ এটি একটি বাস্তব সত্য৷ মানুষের সমাজে সচরাচর এমনটি দেখা যায়৷ লোভ, লালসা, স্বার্থবাদিতা, কামান্ধতা, নেশাখোরী, নীচতা, ক্রোধ এবং এই ধরনের অন্যান্য বদ স্বভাব যেসব লোককে পেয়ে বসে তারা সত্যিই নৈতিক দিক দিয়ে নীচতমদেরও নীচে পৌঁছে যায়৷ দৃষ্টান্ত স্বরূপ শুধু মাত্র একটি কথাই ধরা যাক৷ একটি জাতি যখন অন্য জাতির প্রতি শত্রুতা পোষণ করার ব্যাপারে অন্ধ হয়ে যায় তখন সে হিংস্রতার দুনিয়ায় হিংস্র পশুদেরকে ও হার মানায়৷ একটি হিংস্র পশু কেবলমাত্র নিজের ক্ষুধার খাদ্য যোগাড় করার জন্য অন্য পশু বধ করে৷ সে ব্যাপকভাবে পশুদের হত্যা করে চলেনা৷ কিন্তু মানুষ নিজেই নিজের সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষদেরকে ব্যাপকভাবে হত্যা করে চলে(Cannibalism)৷ পশুরা কেবলমাত্র নিজেদের নখর ও দাঁত ব্যবহার করে শিকার করে৷ কিন্তু এই সর্বোত্তম কাঠামোয় সৃষ্ট মানুষ নিজের বুদ্ধির সাহায্যে বন্দুক, কামান, ট্যাংক, বিমান, আণবিক বোমা, Hydrogen বোমা এবং অন্যান্য অসংখ্য মারণান্ত্র তৈরী করেছে এবং সেগুলোর সাহায্যে মুহূর্তের মধ্যে সুবিশাল জনপদগুলো ধবংস নিশ্চিহ্ন করে দিচ্ছে৷ পশুরা কেবল আহত বা হত্যা করে৷ কিন্তু মানুষ নিজেদেরই মতো মানুষকে নির্যাতন করার জন্য এমন সব ভয়াবহ পদ্ধতি আবিস্কার করেছে যেগুলোর কথা পশুরা কোন দিন কল্পনাও করতে পারে না৷ তারপর নিজেদের শত্রুতা ও প্রতিশোধ স্পৃহা চরিতার্থ করার জন্য তারা নীচতার শেষ পর্যায়ে পৌঁছে যায়৷ তারা মেয়েদের উলংগ করে তাদের মিছিল বের করে৷ এক একজন মেয়ের ওপর দশ বিশ জন ঝাঁপিয়ে পড়ে নিজেদের কাম প্রবৃত্তি চরিতার্থ করে৷ বাপ, ভাই ও স্বামীদের সামনে তাদের স্ত্রী ও মা-বোনদের শ্লীলতাহানি করে৷ মা-বাপের সামনে সন্তানদেরকে হত্যা করে৷ নিজের গর্ভজাত সন্তানদের রক্ত পান করার জন্য মাকে বাধ্য করে৷ মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারে এবং জীবন্ত কবর দেয়৷ দুনিয়ায় পশুদের মধ্যেও এমন কোন হিংস্রতম গোষ্ঠী নেই যাদের বর্বরতাকে কোন পর্যায়ে মানুষদের এই বর্বরতার সাথে তুলনা করা যেতে পারে৷ মানুষের অন্যান্য বড় বড় গুণের ব্যাপারেও এই একই কথা বলা যায়৷ এগুলোর মধ্য থেকে যেটির দিকে মানুষ মুখ ফিরিয়েছে সেটির ব্যাপারে নিজেকে নিকৃষ্টতম সৃষ্টি প্রমাণ করেছে৷ এমনকি ধর্ম যা মানুষের কাজে সবচেয়ে পবিত্র, তাকেও সে এমন সংকীর্ণ করে দিয়েছে, যার ফলে সে গাছ পালা, জীব- জন্তু ও পাথরের পূজা করতে করতে অবনতির চরম পর্যায়ে পৌঁছে গিয়ে নারী ও পুরুষের লিংগেরও পূজা করতে শুরু করেছে৷ দেবতাদেরকে সন্তুষ্ট করার জন্য ধর্ম মন্দিরে দেবদাসী রাখছে৷ তাদের সাথে ব্যভিচার করাকে পুণ্যের কাজ মনে করছে৷ যাদেরকে তারা দেবতা ও উপাস্য গণ্য করেছে তাদের সাথে সম্পর্কিত দেবকাহিনীতে এমন সব কুতসিত কাহিনী জুড়ে দিয়েছে যা জঘন্য ও নিকৃষ্টতম মানুষের জন্য ও লজ্জার ব্যাপার৷                                                             

সু-অভ্যাস

সু-অভ্যাস কেমন হতে পারে তা নীচের কবিতায় পুরোপুরি উঠে এসেছে। কবিতাটি আমাদের সকলের জানা। আমি পড়েছিলাম ১৯৬০এ- “১” ক্লাশে পড়ার সময়্। কত ভালভাবে পড়েছিলাম বুঝতে পারি যার কারণে এখনো আমার ভেতরে তার অনুরণন চলে। চলবে আমৃত্যু।
বেলা ওঠার আগেই নিদ থেকে জাগার পরে ফ্রেশ হয়ে আল্লাহর কাছে নিজেকে সঁপে দিয়ে কিছু সময় থিতু হয়ে বসো। আজকের দিনের রূপ, রস, গন্ধ, স্পর্শ, শব্দ-এ সব কিছুই পাবার জন্য আল্লাহকেই পয়লা ধন্যবাদটুকু দাও। তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ হও। কারণ আজকে না জাগলে এই দুনিয়ার শোভাটুকু উপভোগ করার সৌভাগ্য কোনভাবেই আসতো না। আজকের সকালে কত মানুষই তো দুনিয়া থেকে চলে গেছে, যাদের খবর তোমার কাছে পৌছেনি। এবার মনের ভেতরে কিছু ভাল ভাল আইডিয়া তৈরী করে নাও। জীবনে ভাল আইডিয়াগুলোর প্রতিফলণ ঘটাবার চেষ্টা করো। কিছু সময় “নীরব” হয়ে যাও। দেখো তোমার মনে ভেতর আজকের দিনের রূপ, রস, গন্ধ, স্পর্শ, শব্দ মিশে গেল কি না! এভাবে ভাবলে আল এ অভ্যাস বজায় রইলে দ্বন্দ্ব ও ডিফিকাল্ট সিচুয়েশনগুলো থেকে উত্তরণ ঘটানো সম্ভব। আর এভাবে ভাবলে সারাদিন শান্তিপূর্ণ জীবন যাপনও সম্ভব।   
আমার পণ
-মদনমোহন তর্কালঙ্কার
সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি,
সারা দিন আমি যেন ভালো হয়ে চলি।
আদেশ করেন যাহা মোর গুরুজনে,
আমি যেন সেই কাজ করি ভালো মনে।
ভাইবোন সকলেরে যেন ভালোবাসি,
এক সাথে থাকি যেন সবে মিলেমিশি।
ভালো ছেলেদের সাথে মিশে করি খেলা,
পাঠের সময় যেন নাহি করি হেলা।
সুখী যেন নাহি হই আর কারো দুখে,
মিছে কথা কভু যেন নাহি আসে মুখে।
সাবধানে যেন লোভ সামলিয়ে থাকি,
কিছুতে কাহারে যেন নাহি দিই ফাঁকি।
ঝগড়া না করি যেন কভু কারো সনে,
সকালে উঠিয়া এই বলি মনে মনে।

খাবার গ্রহণে রাসুল (সা.) এর সুন্নত


রাসুল (সা.) তার প্রিয় সাহাবিদের ক্ষুদ্র থেকে বৃহ—প্রত্যেক বিষয়ে শিক্ষা দিয়েছেন। তার প্রতিটি কর্ম ও পদক্ষেপ মানবতার অনুসরণযোগ্য। সফলতা ও কামিয়াবির মাধ্যম। জীবনপথের পাথেয়। তার কর্মপদ্ধতি অনুসরণ করলে ‍মুমিনের জীবনে বয়ে যাবে প্রশান্তির ফল্গুধারা।
রাসুল (সা.) কীভাবে খাবার খেতেন, খাবার গ্রহণে তার কী পদ্ধতি ছিল—সে সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা।
খাবার গ্রহণের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা 
রাসুল (সা.) খাবার গ্রহণের আগে সব সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলতেন। তার সঙ্গীদেরও বিসমিল্লাহ বলতে উতসাহিত করতেন। রাসুল (সা.)  বলেন, ‘আল্লাহর নাম নিয়ে ও ডান হাত দ্বারা খানা খাও। এবং তোমার দিক হতে খাও।’ (বুখারি, হাদিস নং: ৫১৬৭, তিরমিজি, হাদিস নং: ১৯১৩)
বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে গেলে
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, “যখন তোমরা খানা খেতে শুরু করো তখন আল্লাহর নাম স্মরণ করো। আর যদি আল্লাহর নাম স্মরণ করতে ভুলে যাও, তাহলে বলো, ‘বিসমিল্লাহি আওয়ালাহু ও আখিরাহ।” (আবু দাউদ, হাদিস নং: ৩৭৬৭, তিরমিজি, হাদিস নং: ১৮৫৮)
হাত ধুয়ে শুরু ও শেষ করা
খাবার গ্রহণের আগে হাত ধোয়া আবশ্যক। না হয় বিভিন্ন ধরনের অসুখ দেখা দিতে পারে। রাসুল (সা.) খাওয়ার আগে হাত ধোয়ার আদেশ দিয়েছেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) পানাহারের আগে উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত ধুয়ে নিতেন। (মুসনাদে আহমাদ)
অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) খাওয়ার পর কুলি করতেন এবং হাত ধৌত করতেন। (মুসনাদে আহমাদ ও ইবনে মাজাহ)
দস্তরখান বিছিয়ে খাওয়া
আনাস (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) পায়াবিশিষ্ট বড় পাত্রে খাবার খেতেন না। কাতাদা (রা.) কে জিজ্ঞেস করা হলো, তাহলে কীসের ওপর খানা খেতেন? তিনি বললেন, ‘চামড়ার দস্তরখানের ওপর।’ (বোখারি: ৫৩৮৬)
ডান হাত দিয়ে খাওয়া
রাসুল (সা.) আজীবন ডান হাত দিয়ে খাবার খেতেন। বাম হাত দিয়ে খাবার খেতে নিষেধ করেছেন তিনি। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা বাম হাত দ্বারা খাবার খেয়ো না ও পান করো না। কেননা শয়তান বাম হাতে খায় ও পান করে।’ (বুখারি, হাদিস নং: ৫৩৭৬; মুসলিম, হাদিস নং: ২০২২)
হাত চেটে খাওয়া
রাসুল (সা.) খাওয়ার সময় সর্বদা হাত চেটে খেতেন। না চাটা পর্যন্ত কখনো হাত মুছতেন না। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা যখন খাবার গ্রহণ করবে, তখন হাত চাটা নাগাদ তোমরা হাতকে মুছবে (ধোয়া) না।’ (বুখারি, হাদিস নং: ৫২৪৫)
আঙুল চেটে খাওয়া
আঙুল চেটে খাওয়ার ফলে বরকত লাভের অধিক সম্ভাবনা থাকে। কারণ খাবারের বরকত কোথায় রয়েছে মানুষ তা জানে না। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা যখন খাবার গ্রহণ করো তখন আঙুল চেটে খাও। কেননা বরকত কোথায় রয়েছে তা তোমরা জানো না।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং: ১৯১৪)
পড়ে যাওয়া খাবার তুলে খাওয়া
খাবার গ্রহণের সময় কখনো কখনো থালা-বাসন থেকে এক-দুইটি ভাত, রুটির টুকরো কিংবা অন্য কোনো খাবার পড়ে যায়। সম্ভব হলে এগুলো তুলে পরিচ্ছন্ন করে খাওয়া চাই।
রাসুল (সা.)-এর খাবারকালে যদি কোনো খাবার পড়ে যেত, তাহলে তিনি তুলে খেতেন। জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের খাবার আহারকালে যদি লুকমা পড়ে যায়, তাহলে ময়লা ফেলে তা ভক্ষণ করো। শয়তানের জন্য ফেলে রেখো না।’ (তিরমিজি, হাদিস নং: ১৯১৫; ইবনে মাজাহ, হাদিস নং: ৩৪০৩)
হেলান দিয়ে না খাওয়া
কোনো কিছুর ওপর হেলান দিয়ে খাবার খেতে তিনি নিষেধ করেছেন। হেলান দিয়ে খাবার খেলে পেট বড় হয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে দাম্ভিকতা প্রকাশ পায়। আবু হুজাইফা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুল (সা.)-এর দরবারে ছিলাম। তিনি এক ব্যক্তিকে বলেন, আমি টেক লাগানো অবস্থায় কোনো কিছু ভক্ষণ করি না। (বুখারি, হাদিস নং: ৫১৯০, তিরমিজি, হাদিস নং: ১৯৮৬)
খাবারের দোষ-ত্রুটি না ধরা
শত চেষ্টা সত্ত্বেও খাবারে দোষ-ত্রুটি থেকে যাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু এ নিয়ে পরিবারের সঙ্গে ঝগড়াঝাটি করা নিতান্ত বেমানান। রাসুল (সা.) কখনো খাবারের দোষ ধরতেন না। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.)  কখনো খাবারের দোষ-ত্রুটি ধরতেন না। তার পছন্দ হলে খেতেন, আর অপছন্দ হলে খেতেন না। (বুখারি, হাদিস নং: ৫১৯৮; ইবনে মাজাহ, হাদিস নং: ৩৩৮২)
খাবারে ফুঁ না দেওয়া
খাবার ও পানীয়তে ফুঁ দেওয়ার কারণে অনেক ধরনের রোগ হতে পারে। রাসুল (সা.) খাবারে ফুঁ দিতে নিষেধ করেছেন। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) কখনো খাবারে ফুঁ দিতেন না। কোনো কিছু পান করার সময়ও তিনি ফুঁ দিতেন না। (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং: ৩৪১৩)
খাবারের শেষে দোয়া পড়া
আল্লাহ তাআলা খাবারের মাধ্যমে আমাদের প্রতি অনেক বড় দয়া ও অনুগ্রহ করেন। এ দয়ার কৃতজ্ঞতা আদায় করা সভ্যতা ও শিষ্টাচারের অন্তর্ভুক্ত। খাবার গ্রহণ শেষে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করা অপরিহার্য।
খাবার শেষে রাসুল (সা.)  আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানাতেন ও দোয়া পড়তেন। আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) খাবার শেষ করে বলতেন, ‘আলহামদুলিল্লাহি হামদান কাসিরান ত্বয়্যিবান মুবারাকান ফিহি, গায়রা মাকফিইন, ওলা মুয়াদ্দায়িন ওলা মুসতাগনা আনহু রাব্বানা।’ তিনি কখনো এই দোয়া পড়তেন: ‘আলহামদুলিল্লাহিল্লাজি আতআমানা ওয়াছাকানা ওয়াজাআলানা মিনাল মুসলিমিন।’ (বুখারি, হাদিস নং: ৫৪৫৮)
রাসুল (সা.)-এর সুন্নতগুলো জীবনে বাস্তবায়ন সম্ভব হলে, জীবন সুন্দর ও সার্থক হবে। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।

চুপ থাকা ভাল, কথা বেশি বিপদ বেশি

ইসলামে মত প্রকাশের স্বাধীনতা স্বীকৃত, কিন্তু অপ্রয়োজনীয় কথা, অনর্থক বাক্যব্যয় নিষিদ্ধ। মানুষের মনের ভাব প্রকাশের শুদ্ধতম ও অর্থপূর্ণ উচ্চারিত ধ্বনিসমষ্টিই ভাষা। মুখের উচ্চারণের সঙ্গে মনের সংশ্লেষ না ঘটলে তা হয় অনর্থক। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যখন তোমরা তা মুখে মুখে ছড়িয়ে দিচ্ছিলে এবং এমন বিষয় তোমরা উচ্চারণ করছিলে মুখে, যে সম্পর্কে তোমাদের বিন্দুমাত্র জ্ঞান ছিল না। তোমরা বিষয়টিকে একটি সাধারণ কথা মনে করেছিলে। অথচ আল্লাহর কাছে তা ছিল অত্যন্ত গুরুতর বিষয়।’ (সুরা নুর, আয়াত: ১৫)
এ আয়াতে মুখে মুখে কথা চালাচালি ও অন্যের বিরুদ্ধে অপবাদ রটনাকে মারাত্মক বিষয় হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
ইসলামের দৃষ্টিতে কথা-কাজে সত্য-মিথ্যার মিশ্রণ হলো ‘মুনাফিকি’। এটি অপরাধ। মহান আল্লাহর নির্দেশ হলো—‘তোমরা সত্যের সঙ্গে মিথ্যার মিশ্রণ কোরো না এবং জেনেশুনে সত্যকে গোপন করো না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ৪২)
মন ও মুখের সংশ্লেষহীন বাক্য মূল্যহীন। এমন কথা কখনোই বলা উচিত নয়, যার কর্মগত বাস্তবতা নেই। মহান আল্লাহ বলেন, ‘ঈমান এনেছ যারা, তারা শোন/যে কাজ কর না কিছু, বল তা কেন?/আল্লাহর কাছে অতি ঘৃণার তাহা/এমন কথা বল, কর না যাহা।’ (কাব্যানুবাদ, সুরা সাফ, আয়াত: ২-৩)
তাইতো বলতে হয়, নৈতিকতা ও বাকসংযম পরস্পর সম্পৃক্ত। বাকসংযমের বিষয়ে প্রিয় নবী (সা.) অত্যন্ত সতর্ক ছিলেন। এর সঙ্গে জান্নাত লাভের সম্পর্ক প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমাকে তার দুই চোয়ালের মধ্যবর্তী ও দুই পায়ের মধ্যবর্তী স্থানের জামানত দিতে পারে, আমি তার জন্য জান্নাতের জামিন হব।’ (বুখারি)
বাক্সংযমের অভাবে মানুষ মানুষের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে এবং পাপ কাজে লিপ্ত হয়। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, কোনো মুসলমানকে গালি দেওয়া পাপ কাজ, তার সঙ্গে লড়াই-ঝগড়া করা কুফরি কাজ। (বুখারি ও মুসলিম)
দ্বিমুখী আচরণ মারাত্মক অন্যায় ও জঘন্য বিষয়, এর পরিণতি ভয়াবহ। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি দুই মুখবিশিষ্ট হয় (যার কাছে যায় তারই প্রশংসা গায়) কিয়ামতের দিন ওই ব্যক্তির জিহ্বা হবে আগুনের তৈরি।’ (দারেমি)
আমরা মুখে যা কিছু বলি আর যা কিছু করি আল্লাহ তার সব কিছু জানেন, দেখেন ও বোঝেন। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ আমাদের সতর্ক করে দিচ্ছেন—‘মানুষ যে কথাই বলুক না কেন, তার কাছে একজন ততপর প্রহরী প্রস্তু থাকেন।’ (সুরা কাফ, আয়াত: ১৮)
‘অহেতুক কথা’ ও ‘কথার কথা’ বিপদের বিষয় হতে পারে।
মহামতি প্লেটো বলতেন, ‘একটি কথা বলার আগে ১০ বার ভেবে বলো।’ তাই বেশি কথা বলা যাবে না। তবে ন্যায়সংগত কথা বলা জরুরি।

আড্ডা থেকে শিখেছি মেঝেতে বসে খাওয়ার উপকারিতা

সালটা ১৯৮২ বা ’৮৩ হবে। সবে চাকরী পেয়েছি আমরা বন্ধুরা। থাকি অফিসের কাছাকাছি মতিঝিলের এজিবি কলোনী বা এর আশপাশ। ২-১ জন আরো পশ্চিমে ধানমন্ডি, কলাবাগান এলাকায়। একদিন বন্ধু নান্না ওর শিল্প ব্যাংক অফিস থেকে (তারিখ মনে নেই) টেলিফোনে বল্লো, “লুলু আগামীকাল আসবে, তুইও আসবি। বিকেলে শাকেরের বাসায় যাবো আরামবাগে।” আমি তখন কাকরাইলে ন্যাশনাল সায়েন্স মিউজিয়ামে চাকরী করি। লুলু তখন সম্ভবত: বি.এ.ভি.এস-এ কাজ করে। শাকেরেরটা মনে করতে পারিনি। আমি রাজী হলাম। আমরা ৪ জন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ছাত্র ছিলাম। বিকেল হলেই বেরিয়ে পড়তাম। একসাথে ঘোরাঘুরি আরো কত কি। সে এক দারুন স্মৃতি।
আমাদের মধ্যে শাকের চটুল কথায় বেশ ওস্তাদ।
নান্না আইনষ্টাইনের মত মাঝেমধ্যে বেশ ভারী ভারী কথা কয়।
লুলু সক্রেটিসের মত ভাবনা নিয়ে কথা কয়।
আর আমি মাঝেমঝে ২-১টি রসবোধের কথা ছাড়ি।
তো শাকেরের বাসায় নির্দিষ্ট দিনের বিকেলে আমরা ৩ জনে হাজির হই। আড্ডা শেষে নাশতা এলো। শাকের বল্লো, দোস্তঁরা, “মেঝেতে মাদুর বিছিয়ে খাওয়া যাক।” লুলু সক্রেটিসের মতই বল্লো, মেঝেতে বসে খাওয়া, সে তো দারুন এক ব্যাপার! লিগেসি আছে এতে। শাকের ওরে বাপ রে কয়ে ফোড়ন কাটলো। বল্লো, দোস্তঁরা! “ডাইনিং টেবিল কিনতে পারিনি, টাকা নাই। তাই মেঝেতে বসেই তোরা খাবি। না হলে খাবিনা, ভাগবি! ব্যস!” নান্না আর আমি কোন মন্তব্য করিনি। বসে যাই সবাই। খাওয়া আর গল্প চলে এক সাথে। অনেক সময় এক সাথে থেকে চলে আসি আমরা শাকেরের বাসা থেকে।
ভালই হতো সেই দিনগুলো যদি আবার ফিরে পেতাম!  
আমরা তো মেঝেতে বসলাম। খাওয়ার সময় এর উপকারিতা কি কিছু আছে?
 ডাইনিংয়ের চেয়ারের চেয়ে ঘরের মেঝেতে বসে খাওয়ার উপকারিতা অনেক
আধুনিক জীবনযাপনে আমরা সবাই চেয়ার টেবিলে বসে খেতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। মাটিতে বসে খাওয়ার চল প্রায় উঠেই গিয়েছে। কিন্তু প্রাচীনকাল থেকেই এদেশের মানুষ ঘরের মেঝেতে বসে খেত। এবার জেনে নেয়া যাক মাটিতে ঘরের মেঝেতে বসে খাওয়ার উপকারিতা। চেয়ারের আবিষ্কার আসলে খুব বেশি দিন ধরে হয়নি। অধিকাংশ মানুষই এখন ডাইনিং টেবিলে বসে খাওয়া-দাওয়া করতে পছন্দ করেন। আর এখন তো ডাইনিং টেবিল-চেয়ারে বসে খাওয়া একটি ফ্যাশন, ভদ্রতার অংশ হিসেবে ধরা হয়। তবে আগের দিনের মানুষ কিন্তু স্কোয়াট Squat বা উবু হয়ে বসে খেত। তবে এটি পশ্চিমা বিশ্বের লোকদের অভ্যাসে নেই, কিছু কিছু দেশের সংস্কৃতিতে এখনো এ অভ্যাস রয়েছে। তবে জানেন কি, পুরোনো এই সংস্কৃতির মধ্যে যোগব্যায়ামের শেকড় রয়েছে এবং এটি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। আমরা যারা গাঁয়ে থেকেছি তার মাটিতে বসে খাওয়াই অভ্যস্ত ছিলাম। কালক্রমে অভ্যাসটি হারিয়ে যায়। এখন আর কারো ঘরে মাদুর দেখা যায় না। আমার আব্বা ডাইনিং টেবিলের কথা শুনতেই চাইতো না। বলতো, “ওটাতে বসে খেলে আমার খাওয়াই হবে না।” তবে আমি ভোরের নাশতার সময় অভ্যাসটি সজীব রেখেছি। এখনো।
মেঝেতে বসে খাওয়ার উপকারিতা
ভারতের চিতৌরের প্রাক্তন জেলা আয়ুর্বেদ চিকিসা আধিকারিক রোশনাল মোড়ের পরামর্শ অনুযায়ী, চেয়ার-টেবিলের তুলনায় মাটিতে বসে খাওয়াই স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী।
১. যখন আমরা খাওয়ার জন্য মেঝেতে বসি, আসলে তখন কিছু যোগব্যায়ামের আসনও করা হয়। এটিকে সুখাসন বা স্বস্তিকাসন অথবা সিদ্ধাসনও বলা হয়। সুখাসন পদ্মাসনেরই একটি রূপ। পদ্মাসনের যা যা উপকারিতা, সুখাসন করলেও সেগুলো পাওয়া যায়।
২. সুখাসনে বসলে একাগ্রতা বাড়ে।
৩. সুখাসনে বসলে শরীরে রক্ত সঞ্চালন ভাল হয়। যার ফলে শরীরে অতিরিক্ত এনার্জি পাওয়া যায়।
৪. এই আসনে বসলে মানসিক চাপ কমে, মনে ইতিবাচক চিন্তাভাবনার প্রভাব বৃদ্ধি পায়।
৫. সুখাসনে বসলে পায়ের শক্তি বৃদ্ধি হয়।
৬. মাটিতে সুখাসনে বসে খাবার খেলে মেদ বৃদ্ধি, বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাসের মতো পেট সংক্রান্ত সমস্যা এড়ানো যায়।
৭. সুখাসনে বসে খাবার খেলে আলস্য দূর হয়। মাংস পেশিতে খিঁচ ধরা কমে।
৮. এই আসনটিতে বসে খাবার খেলে মেরু‌দণ্ডের নীচের অংশে জোর পড়ে। এর ফলে শরীরে আরাম অনুভূত হয়।
৯. পা ক্রস করে মেঝেতে বসে খেলে খাবার ভালোভাবে হজম হয়। মেঝেতে বসে খেলে হজমরস ভালোভাবে বের হয় ও দ্রুত খাবার হজম হয়।
১০. পা ক্রস করে বসে খাওয়া পিঠ ও ঘাড়ের জন্য খুবই উপকারি।
১১. পা ক্রস করে বসলে এমনিতেই অঙ্গবিন্যাস বা Posture ঠিকঠাক হয়ে যায়।
১২. পবিত্র দ্বীন ইসলামে মেঝেতে বসে খাওয়া সুন্নত।
১৩. নামাজে বসার মতো মেঝেতে বসে খেলে খাবার ভালোভাবে হজম হয়।মেঝেতে বসে খেলে হজমরস ভালোভাবে বের হয় ও দ্রুত খাবার হজম হয়।
১৪. নামাজের মতো বসে খাওয়া পিঠ ও ঘাড়ের জন্য খুবই উপকারি।
১৫. মেঝেতে বসে খেলে কম খাওয়া যায় কারণ পেটে কিছুটা চাপ পড়ে, পেটের আয়তন কমে যায়। এতে স্থুলতা কমে, ওজনও কমে।

বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ মানুষ ডাইনিং টেবিলে বসে খেয়ে থাকে। তবে আপনি জানেন কী? টেবিলে খাওয়ার চেয়ে মেঝেতে বসে খেলে হজম প্রক্রিয়াকে ভালো হয়। এছাড়া মেঝেতে বসে খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে।
পবিত্র দ্বীন ইসলামে মেঝেতে বসে খাওয়া সুন্নত। এর রয়েছে অনেক উপকারিতা। সেই উপকারিতার কথা ফুটে উঠেছে স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট টপ টেন হোম রেমেডিতে। আসুন জেনে মেঝেতে বসে খাওয়ার উপকারিতা।
১.নামাজে বসার মতো মেঝেতে বসে খেলে খাবার ভালোভাবে হজম হয়।মেঝেতে বসে খেলে হজমরস ভালোভাবে বের হয় ও দ্রুত খাবার হজম হয়।
২. মেঝেতে বসে খাবার খেলে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। এছাড়া হার্টের রক্ত পাম্প করতে সুবিধা হয়।
৩. নামাজের মতো বসে খাওয়া পিঠ ও ঘাড়ের জন্য খুবই উপকারি। চেয়ারে বেশিক্ষণ বসে থাকা ঘাড় ও কোমরের ব্যথা হয়।
৪. মেঝেতে বসে খেলে ব্যায়াম ও করা হয়। এটি এ ধরনের আসনগুলোতে যে উপকারিতা রয়েছে।

নুন, আল্লাহর একটি নিদর্শন

খুলে যাক মানুষের জ্ঞান
রুপান্তরের দিক বিবেচনা করে অনেকসময় জ্ঞানীরা উদাহরণ যে থাকেন যে, “তোমরা নুনের মত হও। যাতে অল্পতেই বোঝা যায় যে পরিবর্তনের জন্য তোমাদের মনের সঠিক উপস্থিতি কতটা দরকার।”
সাগর জলে পানি আর নুনের অনুপাত যেমন, মানুষের শরীরের প্রত্যেকটি কোষেও পানি আর নুনের অনুপাত ঠিক তেমন। এ এক বিষ্ময়কর ব্যাপার। (Ref: Grolier Encyclopedia of Knowledge)

মহান আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদত করার জন্য। আর দুনিয়ার সব কিছু সৃষ্টি করেছেন মানুষের জন্য। মানুষের প্রয়োজনীয় সব উপকরণ তিনি পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রেখেছেন। যার মধ্যে অন্যতম একটি জিনিস হলো লবণ।
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর সাগর দুটি একরূপ নয়। একটির পানি সুমিষ্ট ও সুপেয়, অন্যটির পানি লোনা, খর। আর প্রত্যেকটি থেকে তোমরা তাজা গোশত খাও এবং আহরণ করো অলংকার, যা তোমরা পরিধান করো। আর তোমরা দেখো তার বুক চিরে নৌযান চলাচল করে, যাতে তোমরা তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পারো এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো।’ (সুরা: ফাতির, আয়াত: ১২)
আমরা খাওয়ার জন্য যে লবণ ব্যবহার করি তার বেশির ভাগই আসে সমুদ্রের লবণ থেকে। সমুদ্র থেকে যে লবণ আনা হয় তা একটি বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিশোধন করা হয়। জোয়ারের সময় সমুদ্রের লোনা পানি জমা করে রাখা হয় বড় বড় জমিতে। এরপর সেই জমির চারপাশ বাঁধ দিয়ে পানি আটকে ফেলা হয়। এরপর সূর্যের আলোতে সেই পানি বাষ্প হয়ে গেলে তার নিচে লবণ পড়ে থাকে। পরে আবার সেই লবণ পরিষ্কার করে বাজারে বিক্রয় করা হয়। ইংরেজিতে একে Table Salt বলা হয়। ল্যাটিন শব্দ ‘salārium’ মানে হলো নুন আর স্যালারি মানে বেতন কথাটি এসেছে salārium থেকে। রোমে সৈন্যদের বেতন দেয়া হতো নুন কেনার জন্য। The word salary ultimately derives from an allowance—salārium—paid to Roman soldiers for the purchase of salt.( https://en.wikipedia.org/wiki/History_of_salt )
আয়েশা (রা.) গোশত সংরক্ষণের জন্য লবণ ব্যবহার করেছেন। (বুখারি, হাদিস: ৫৫৭০)
জীবনের জন্য লবণের গুরুত্ব অপরিসীম। লবণে আছে বিপুল পরিমাণ সোডিয়াম। সোডিয়াম শরীরের জন্য দরকারি ইলেকট্রোলাইট। জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় সব ইলেকট্রোলাইট, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম অপরিশোধিত লবণে পাওয়া যায়। তবে তা গ্রহণ করতে হবে পরিমিত। শরীরে লবণ বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া দুটিই দেহের জন্য বিপজ্জনক। তাই লবণের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখার ব্যাপারটি বেশ সতর্কতার সঙ্গে করা উচিত তা বলাই বাহুল্য।
হাজার হাজার বছর ধরে লবণ যে শুধু রান্নায় ব্যবহার হচ্ছে তা কিন্তু নয়। কোনো কোনো ধর্মেও লবণের রয়েছে আলাদা মর্যাদা। জাপানের Shintoয় যেকোনো মানুষ বা স্থানকে পরিশুদ্ধ করতে লবণ ছিটিয়ে দেওয়া হয়। দা িভিঞ্চির আঁকা “লাষ্ট সাপার” চিত্র কর্মে একটি নুনের পাত্র উল্টে পড়ে আছে দেখা যায়। এটা ছিল সে সময়কার রীতি অনুযায়ী এক অশুভ ঈঙ্গিত (spilling salt was generally considered a bad omen).
লবণ নিয়ে রীতিমতো একটা আন্দোলন হয়েছিল, যেটিকে লবণ আইন অভিযান বা লবণ সত্যাগ্রহ বলা হয়। ইংরেজিতে একে সল্ট মার্চ বলে অভিহিত করা হয়। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে এই আন্দোলনের বিশেষ মর্যাদা ছিল। লবণের ওপর ব্রিটিশ সরকার যে কর আরোপ করে তারই প্রতিবাদে এই যাত্রার আয়োজন করা হয়। লাখ লাখ মানুষ সেদিন সেই যাত্রায় অংশগ্রহণ করেছিল। The Salt March, also known as the Salt Satyagraha, Dandi March and the Dandi Satyagraha, was an act of nonviolent civil disobedience in colonial India led by Mohandas Karamchand Gandhi. The 24-day march lasted from 12 March 1930 to 6 April 1930 as a direct action campaign of tax resistance and nonviolent protest against the British salt monopoly. Ref: https://en.wikipedia.org/wiki/Salt_March
মহান আল্লাহর এই নিয়ামত পরিমিত ব্যবহারে যেমন খাবার সুস্বাদ করে, তেমনি বিভিন্ন ক্ষতিকর অনুজীব দমনে এটি ওষুধ হিসেবে কাজ করে। রাসুল (সা.) নিজেও ওষুধ হিসেবে লবণ ব্যবহার করেছেন। একবার রাসুল (সা.)-কে নামাজরত অবস্থায় বিচ্ছু কামড় দিলে তিনি কিছু লবণ ও পানি চেয়ে নিলেন এবং তা একটি পাত্রে মেশালেন, অতঃপর অঙ্গুলির দংশিত স্থানে পানি ঢালতে এবং ওই স্থান মুছতে লাগলেন এবং সুরা ফালাক ও নাস দ্বারা ঝাড়তে লাগলেন। (মিশকাত, হাদিস: ৪৫৬৭)
বিশেষ করে ঠাণ্ডাজনিত সমস্যায় ডাক্তাররা লবণপানিতে গড়গড়া কুলি করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
এভাবেই মহান আল্লাহ তাঁর কোটি কোটি নিয়ামত দিয়ে আমাদের জীবনকে সহজ করে দিয়েছেন। আল্লাহু আকবার। যেগুলো নিয়ে চিন্তা করলে মুমিনের ঈমান আরো দৃঢ় হয়ে যায়।

আমি মুসলিম—এ কথার অর্থ কী

মূল শব্দ হলো “সলম” মানে আত্মসমর্পণ। আত্মসমর্পণ করতে হবে আল্লাহর কাছে। যে আত্মসমর্পণ করে সেই হলো মুসলিম।
মুসলিম অর্থ আত্মসমর্পণকারী ও অনুগত। যে নিজেকে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করে সে মুসলিম। যে মুহাম্মাদ (সা.)-এর ওপর ঈমান এনে তাঁর শরিয়ত পালনে অঙ্গীকারবদ্ধ, সে মুসলিম। যে কোরআন-সুন্নাহ মেনে চলে সে মুসলিম। যার মুখ ও হাত থেকে অন্য মানুষ নিরাপদ, সে মুসলিম। যে নামাজ পড়ে, কেবলামুখী হয় এবং মুসলমানদের জবাইকৃত পশু ভক্ষণ করে, সে মুসলিম।
মুসলিম আরবি শব্দ। এর বাংলা পরিভাষা হিসেবে মুসলিম ও মুসলমান দুটি শব্দই সমানভাবে ব্যবহার হয়।
যে দ্বিন হিসেবে ইসলামকে মেনে নেয়, সে মুসলিম। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘নিঃসন্দেহে ইসলামই আল্লাহর একমাত্র মনোনীত দ্বিন।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৯)
যে হালাল-হারাম মেনে চলে, সে মুসলিম। যে ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত ও নফল পালন করে, সে মুসলিম।
মুসলমান হতে হলে পাপ কাজ করা যায় না। অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা করা যায় না। অবৈধ পন্থায় সম্পদ অর্জন করা যায় না। এক শ্রেণির মানুষের কাছে সম্পদ পুঞ্জীভূত করে রাখা যায় না। মানুষের সম্মান নিয়ে খেলা করা যায় না।
মুসলমান কাউকে নিয়ে উপহাস করে না। দোষারোপ করে না। মন্দ নামে ডাকে না। গোপন দোষ প্রকাশ করে না। গিবত করে না। শত্রুভাব নিয়ে থাকে না।
মুসলমান মানবাধিকার রক্ষায় সচেষ্ট হয়। প্রতিবেশীর খবর নেয়। মা-বাবা ও আত্মীয়-স্বজনের হক আদায় করে। এতিম ও অসহায়ের পাশে দাঁড়ায়।
মুসলমান আদম সন্তান হিসেবে ভেদাভেদ দূর করে। পারস্পরিক সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করে। ভাই ভাই হয়ে থাকে।
মুসলমান জীবনকে গতিশীল করে। জীবনের সব ক্ষেত্রে সংকল্প, ধৈর্য, সততা নিশ্চিত করে। আল্লাহর ওপর ভরসা করে।
মুসলমান সর্বাধিক মানবিক হয়। তাকওয়া, বিনয়-নম্রতা, ধৈর্য-সহিষ্ণুতা, দানশীলতা, আমানতদারি, ন্যায়পরায়ণতা, কর্তব্যপরায়ণতা ইত্যাদি মুসলমানের বিশেষ গুণ।
মুসলমান পরিবার ও সমাজবান্ধব হয়।
মুসলমান জীবনের সব ক্ষেত্রে পরকালীন সাফল্যকে প্রাধান্য দেয়।
মুসলমান তার গোটা জীবন আল্লাহর কাছে সঁপে দেয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘বলে দাও, নিশ্চয়ই আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন, আমার মরণ—সবই বিশ্বজগতের রব আল্লাহর জন্য।’ (সুরা আনআম, আয়াত: ১৬২)