Tuesday, July 21, 2020

সময়ের সাথে মানুষ কোথায়?


মানুষের সৃষ্টি থেকে নিয়ে শেষ গন্তব্যস্থলে পৌঁছা পর্যন্ত মোট ছয়টি স্তর রয়েছে। একটি স্তর থেকে আরেকটি স্তরে স্থানান্তরিত হয় একটি নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধান সামনে রেখেঃ 

১ম-আলমে আরওয়াহ-রূহের জগত। আলমে আরওয়া বা আত্মার জগতে আল্লাহ্ জাল্লা শানুহু সব মানুষের প্রাণ বা রুহকে বহু পূর্বেই সৃষ্টি করেছেন। এ সবই আল্লাহর কুদরতের অপূর্ব নিদর্শন। আলমে আরওয়াহ বা রুহের জগতে শুধু রুহ ছিল, সঙ্গে ছিল নফস।

২য়-আরহামে উম্মেহাত-মাতৃগর্ভ। এক সংকীর্ণ স্থান কিন্তু আল্লাহ তাঁর অসীম কুদরত দিয়ে সেই স্থানকে করছেন তাঁর বান্দাহর জন্য অত্যন্ত আরামদায়ক। কবি নজরুল ইসলামের ভাষায় “তোরে সৃষ্টি ক’রে তোর কাছে যে আছেন তিনি ঋণী।” কারণ মানুষকে মায়ের পেটে লালন করা আল্লাহরই দায়িত্বে। সেখানে অন্য কারো হাত খেলানোর সুযোগ নাই। কুরআন মজীদে মানব সৃষ্টির বিভিন্ন স্তর এবং বিকাশের ধারাবাহিকতার বিবরণ দিয়ে আল্লাহ্ জাল্লা শানুহু ইরশাদ করেন,
আমি তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি মৃত্তিকার উপাদান থেকে,
অতঃপর আমি সেটাকে শুক্রবিন্দুরূপে (নুত্ফা) স্থাপন করি এক নিরাপদ আধারে,
পরে আমি শুক্রবিন্দুকে পরিণত করি ‘আলাক্-এ (জমাট রক্তপিন্ড)
অতঃপর আলাককে পরিণত করি পিন্ডকে এবং
পিন্ডকে পরিণত করি অস্থি-পাঞ্জরে, অতঃপর অস্থি-পাঞ্জরকে ঢেকে দেই গোশত দ্বারা,
অবশেষে সেটাকে গড়ে তুলি অন্য এক সৃষ্টিরূপে।
অতএব সর্বোত্তম স্রষ্টা আল্লাহ্ কত মহান!
এরপর তোমরা অবশ্যই মারা যাবে, অতঃপর কিয়ামতের দিন তোমাদের উত্থিত করা হবে। (সূরা মু’মিনূন: আয়াত ১২-১৬)।
আরও ইরশাদ হয়েছে: যিনি (আল্লাহ) তাঁর প্রত্যেকটি সৃষ্টিকে সৃজন করেছেন উত্তমরূপে এবং কাদাূ হতে মানব সৃষ্টির সূচনা করেছেন। অতঃপর তিনি তার বংশ উতপন্ন করেন তুচ্ছ তরল পদার্থের নির্যাস হতে। পরে তিনি সেটাকে করেছেন সুঠাম এবং তাতে ফুঁকে দিয়েছেন তার রুহুকে এবং তোমাদের দিয়েছেন কর্ণ, চক্ষু ও অন্তঃকরণ, তোমরা অতি সামান্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (সূরা সাজদা: আয়াত ৭-৯)।
বল, তিনিই তোমাদের সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের দিয়েছেন শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি ও অন্তঃকরণ, তোমরা অল্পই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। বল, তিনিই তোমাদের ছড়িয়ে দিয়েছেন পৃথিবীতে এবং তারই নিকট তোমাদের সমবেত করা হবে। (সূরা মুলক: আয়াত ২৩-২৪)।

৩য়- আলমে দুনিয়া -পৃথিবীর জীবন (জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত)।হায়াতুদ্ দুনিয়া বা পার্থিব জীবন অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী। আলমে দুনিয়া বা দুনিয়ার জগতে রুহ ও নফসের সঙ্গে দেহ বা শরীর যোগ হয়েছে। মৃত্যুর মাধ্যমে রুহ ও নফস দেহ ছেড়ে আলমে বারজাখে পাড়ি দেয়। আল্লাহ্ জাল্লা শানুহু ইরশাদ করেন: তোমরা পার্থিব জীবনকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছ, কিন্তু আখিরাতের জীবনই হচ্ছে অনেক ভাল এবং স্থায়ী। (সূরা আ’লা: আয়াত ১৬-১৭)। একজন মানুষের পৃথিবীতে আগমন এবং এখান থেকে নির্গমনের মধ্যবর্তী কালটাতে যে জীবন সেটাই পার্থিব জীবন। এই পৃথিবীর জীবনের বিভিন্ন মেয়াদী সময় নির্ধারিত থাকে। এই সময়সীমা সবার এক থাকে না। পৃথিবীতে থাকার জন্য যে সময়সীমা থাকে তা আয়ু নামে অভিহিত হয়। আল্লাহ্ জাল্লা শানুহু যার জন্য যতটুকু আয়ু নির্ধারণ করে দেন সে ততদিন পৃথিবীতে থাকতে পারে। অনেকেই অকালে ঝরে যায়, আবার অনেকের আলো-হাওয়ার এই মায়াঘেরা পৃথিবীতে আসারই সুযোগ হয় না, মাতৃগর্ভেই তারা নিঃশেষ হয়ে যায়।
এই যে পৃথিবীতে আগমন ও নির্গমন কিংবা আগমনের পূর্বেই শেষ হয়ে যাওয়া এসব রহস্য কেবলমাত্র আল্লাহ্ জাল্লা শানুহুই জানেন। আমরা যতই বুদ্ধিমান হই না কেন, যতই যুক্তি-প্রমাণ উপস্থাপন করি না কেন, যতই যুক্তির কষ্টিপাথরে কিংবা বৈজ্ঞানিক বিচার-বিশ্লেষণ দ্বারা যাচাই করার চেষ্টা-তদ্বির করি না কেন, জন্ম ও জীবনরহস্য উদ্ঘাটন করতে যথার্থভাবে সমর্থ হব না। শুধু এতটুকু বলতে পারব, ওয়া আল্লাহু আ’লম-আল্লাহ্ই ভাল জানেন।
কুরআন মজীদে পার্থিব জীবনের সুন্দর মিসাল বা উপমা দিয়ে আল্লাহ্ জাল্লা শানুহু ইরশাদ করেন: বস্তুত পার্থিব জীবনের দৃষ্টান্ত এরূপ: যেমন-আমি আসমান হতে পানি বর্ষণ করি, ফলে তা দ্বারা মাটিতে উদ্ভিদ ঘন সন্নিবিষ্ট হয়ে উদগত হয়, যা হতে মানুষ ও জীবজন্তু আহার করে থাকে। অতঃপর যখন ভূমি তার শোভা ধারণ করে ও নয়নাভিরাম হয় এবং তার অধিকারীরা মনে করে তা তাদের আয়ত্তাধীন, তখন দিবসে অথবা রজনীতে আমার নির্দেশ এসে পড়ে এবং আমি তা এমনভাবে নির্মূল করে দেই যেন গতকালও তার অস্তিত্বই ছিল না। এভাবে আমি নিদের্শনাবলী বিশদভাবে বিবৃত করি চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য। (সূরা ইউনুস: আয়াত ২৪)।
মানুষের পার্থিব জীবন ক্ষণস্থায়ী হলেও এই জীবন তার আল্লাহর খলিফা ও বান্দা হিসেবে দায়িত্ব অনেক। সে আল্লাহর ইবাদত করবে এবং শান্তির পৃথিবী, সমৃদ্ধির পৃথিবী, হানাহানি ও সংঘাতমুক্ত একটা নিরাপদ পৃথিবী গড়ায় যথাসাধ্য চেষ্টা করবে, কায়িক ও বৌদ্ধিক পরিশ্রম দিয়ে একটা সুখের পৃথিবী গড়ে তুলবে, এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহর বান্দা হিসেবে গোটা পৃথিবীর মানুষ একটা বৃহত্তর, উচ্চতর এবং সর্বশ্রেষ্ঠ ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ হবে। ফলে শোষণহীন, শ্রেণীবিহীন, আধিপত্যহীন ইনসাফ ও আদলভিত্তিক সামাজিক ন্যায়বিচারসম্পন্ন সত্যিকার কল্যাণকর পৃথিবী মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। আর এমন পৃথিবী সবার কাম্য হওয়া উচিত। কিন্তু শয়তান নামক অশুভ শক্তি পৃথিবীর অধিবাসীদের মধ্যে বিভ্রান্ত ও অশান্তির বিষবাষ্প এমনভাবে ছড়িয়ে দেয় যে, দুর্বলচিত্তের মানুষ, লোভ-লালসা আর মদ-মাতসর্ষের কবলে নিপতিত মানুষ মনুষ্যত্বের বৃত্তকে অগ্রাহ্য করে; ফলে অশান্তির সৃষ্টি হয়, অরাজকতা, নৈরাস্য ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটে। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে: তাদের যখন বলা হয় পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি কর না। তারা বলে: আমরাই তো শান্তি স্থাপনকারী। সাবধান! এরাই অশান্তি সৃষ্টিকারী, কিন্তু এরা বুঝতে পারে না।(সূরা বাকারা: আয়াত ১১-১২)।এই আয়াতে কারিমা কপটশ্রেণীর মানুষের সম্পর্কে বলা হয়েছে। কপটতা দুনিয়ার জন্য যেমন অকল্যাণকর, তেমনি তাদের আখিরাতের জীবনের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তির ব্যবস্থা।
৪থ-আলমে বারজাখ -অন্তরাল জগত। কবরের জগত। এক সংকীর্ণ স্থান। বারজাখ শব্দের অর্থ অন্তরায় ও পৃথককারী। শরী‘আতের পরিভাষায় মৃত্যর পর হতে ক্বিয়ামত পর্যন্ত সময়কালকে বরযখ বলা হয়। এটা দুনিয়া ও আখেরাতের জীবনের মধ্যেকার প্রাচীর। আল্লাহ বলেন, তাদের সামনে পর্দা থাকবে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত (ম’মিনূন ১০০)। হাদীসে “আলমে বারজাখ” — এর জন্য কবর শব্দটি রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে৷ সেখানে এর অর্থ হয় এমন একটি জগত যেখানে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে মৃত্যু লাভ করার পর থেকে নিয়ে পরবর্তী পুনরত্থান লাভ করা পর্যন্ত মানবিক রূহগুলো অবস্থান করবে৷ আলমে বারজাখ বা বারজাখ জগতে রুহ ও নফস ইল্লিন বা ছিজ্জিনে অবস্থান করবে এবং দেহ হয়তো বিলীন হয়ে যাবে, নয়তো সুরক্ষিত থাকবে। 

৫ম -ইয়াওমুল কিয়ামত। আল্লাহ্‌ তালা কিয়ামতের দিনকে “মহা ত্রাস” বলে উল্লেখ করেছেন। এই দিনটি হচ্ছে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দিন। কিয়ামতের দিনের চেয়ে ভয়ংকর দিন আর নেই। আল্লাহ্‌ বলছেন, “লা ইয়াহজুনু হুমুল ফাজা’আল আকবার”- মানে মহা ত্রাস তাদের চিন্তান্বিত করবে না। অর্থাত ন্যায় পরায়ন ঐ সকল মুমিনরা সবচেয়ে ভয়ংকর দিনেও চিন্তামুক্ত থাকবে, নিরাপদে থাকবে।
এই সকল ব্যক্তিদের এত নিশ্চিন্ত নিরাপদ থাকার কারন কি? যখন অন্যেরা ভীতসন্ত্রস্ত, ভীষণ চিন্তায় থাকবে। আর এইসকল লোকরা থাকবে ফুরফুরে মেজাজে। এর উত্তর রয়েছে কুরআন ও হাদিসে। এই সকল লোকেরা যখন দুনিয়ায় থাকত তখন বলত,
“আমরা আমাদের পালনকর্তার তরফ থেকে এক ভীতিপ্রদ ভয়ংকর দিনের ভয় রাখি।” [৭৬:১০]
এই সকল পুণ্যশীল নারী ও পুরুষ, যখন দুনিয়ায় থাকত তখন বলত যে আমরা এমন এক দিনের ভয় রাখি যা “আবুস(tensed)” এবং “কামতারির(long day)”।
“আবুস” মানে হচ্ছে কোন কিছু নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকা যার ছাপ চেহারায় পড়ে অর্থাত ভয় করা।
ইবনে আব্বাস (রা) এর মতে “কামতারিরা” হচ্ছে অনেক বড় ও দীর্ঘস্থায়ী একটি দিন।
কাতাদা(রা) এর মতে কামতারিরা মানে হচ্ছে অত্যন্ত কঠিন এবং ভয়ঙ্কর একটি দিন।
ঐ পুণ্যশীল নারী ও পুরুষেরা দুনিয়ায় থাকতে এই দিনটিকে ভয় পেত। তাই আল্লাহ্‌ সুবহান ওয়াতালা এই ভীতিপ্রদ ভয়ংকর দিনে তাদের নিরাপদ রাখবেন। রাসুল (সা) একটি হাদিসে কুদসি তে বলেন,
“আল্লাহ্‌ তালা বলেন, ‘আমার নামের শপথ! আমি কখনই আমার বান্দাদের দুই কালেই সুখী বা দুখী রাখবনা। আমার বান্দা যদি দুনিয়াতে থাকতে কিয়ামত দিবস কে ভয় না পায়, তাহলে তারা কিয়ামত দিবস তাদের জন্য এক ভীতিকর দিন হবে। আর কেউ যদি দুনিয়াতেই এই দিনটিকে ভয় পায়, তাহলে কিয়ামত দিবসের দিন সে থাকবে নিরাপদ এবং তার মনে তাকবে শান্তি।”

৬ষ্ঠ-ইয়াওমুল আখিরাত। জান্নাত/জাহান্নাম -চিরস্থায়ী আসন। ক্বিয়ামতের পর থেকে আখিরাতের জীবন শুরু। যেহেতু আখিরাতই শেষ জীবন, তাই তাকে আখেরাত বা শেষদিবস বলা হয় (তাফসীর ত্বাবারী, বাক্বারাহ ৮ আয়াতের ব্যাখ্যা)। তারপর যার নেকী বেশি হবে সে যাবে জান্নাতে, আর যার গুনাহ বেশি হবে, সে যাবে জাহান্নামে (সুরা আল-ক্বারি‘আহ ৬-১১)। সুতরাং বরযখ ও আখেরাত পৃথক বিষয়। আখিরাত সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বহু আয়াত রয়েছে। যেমন: ‘আর অবশ্যই আপনার জন্য প্রথম জগত দুনিয়া অপেক্ষা আখিরাতই উত্তম বা শ্রেয়। অচিরেই আপনার রব আপনাকে দান করবেন, যাতে আপনি সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন।’ (সুরা-৯৩, ওয়াদ-দুহা, আয়াত: ৪-৫)।
পরকাল অনন্ত, সেখানে মৃত্যু নেই। ‘দারুল আখিরাত’ পরকাল সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের বহু আয়াতে উল্লেখ রয়েছে। যেমন: ‘মুত্তাকিদের জন্য পরকালীন নিবাসই উত্তম।’ (সুরা-৭ আরাফ, আয়াত: ১৬৯)। ‘(হে রাসুল সা.) আপনি বলুন! হে আমার জাতি, তোমরা তোমাদের অবস্থান থেকে সামর্থ্যমতো সতকর্ম করো, আমিও করছি; অচিরেই তোমরা জানতে পারবে পরিণতির শুভ নিবাস কাদের জন্য।’ (সুরা-৬ আনআম, আয়াত: ১৩৫)। ‘আল্লাহ তোমাদের আহ্বান করছেন শান্তিনিবাস পরকালের প্রতি।’ (সুরা-১০ ইউনুস, আয়াত: ২৫)। ‘তোমাদের প্রতি শান্তি! যেহেতু তোমরা ধৈর্য ধারণ করেছ, পরিণতি জান্নাতের বাড়ি কত-না উত্তম।’ (সুরা-১৩ রাআদ, আয়াত: ২৪)। ‘যারা সতকর্ম করবে, তারা দুনিয়াতেও কল্যাণ লাভ করবে, পরকালের নিবাস অতি উত্তম; মুত্তাকিদের নিবাস কত-না উত্তম।’ (সুরা-১৬ নাহল, আয়াত: ৩০)। ‘আল্লাহ তোমাকে যা দিয়েছেন, তা দিয়ে পরকালের নিবাসের সন্ধান করো।’ (সুরা-২৮ কাছাছ, আয়াত: ৭৭)

এই যে আমাদের চলার পথ, এ পথে আমরা কী সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি করছি? 

রুহের জগতে আমরা একই জাতীর আওতায় ছিলাম। তখন আমাদের পরিচয় একটাই ছিল। কোন প্রকার ভেদাভেদ সেখানো ছিলনা। সমস্যার সুত্রপাত মুলত: যখন মাতৃগর্ভে এলাম তখন থেকে। বাবা-মায়ের একান্ত সময়ের আবেগের মধ্যদিয়ে চলে এলাম মায়ের গর্ভে। এখান থেকেই শুরু হল ভাল আর মন্দকে ঘিরে পথ চলা। করো প্রতি সহানুভুতি দেখানো ভুলে গেলাম এখানেই। কেননা, এ সময় মায়ের গর্ভে থেকেও মাকে কষ্ট দিতে কোন প্রকার কার্পন্য করলাম না।

মা-তার কাঁধে কষ্টের পাহাড় তুলে নিয়ে আমাকে এই পৃথিবীর আলোর মুখ দেখালেন। আমার জন্য বেঁচে থাকার সুন্দর পরিবেশ তৈরি করে দিলেন। এখানে পেলাম ভিন্ন এবং উপভোগ করার মত এক মাহারাজ্য। যে রাজ্যে নিজেকে রাজা ভাবতে শুরু করলাম। অন্তরআত্মাই একে কাজে লাগালো। এমনটাতো হবে, কেননা কষ্টের ভার অপরের কাঁধে দিয়ে নিজে  মজা ভোগ করাতো আগেই শিখেছি। কষ্টের ভারতো মায়ের কাধে তুলে দিয়েছি অনেক আগেই। 

এতো বেয়াদবী আর নোংরামী করেছি তাও আবার আমার অবস্থা যখন পরগাছার মত। অর্থাত এ সময়টিতে আমি নিজে কিছুই করতে পারিনি। বাবা-মায়ের করে দেয়া ব্যবস্থাকে শুধু উপোভোগ করেছি। এতটুকু করেই আমি হয়েছি মহা রাজা। যা আমার জন্য শোভনীয় ছিল কিনা সে বিষয়টি অনেক বড় প্রশ্নের দাবি রাখে।

এর পর তো আমার জন্য এই জগত হাতের মুঠোয় রাখার মত অবস্থা। আমার অবস্থান হল আকাশ ছোঁয়ার মত। সেই সাথে ক্ষমতার একটু-আধটু সুযোগ পেয়েছি, যা আমাকে আরো বেপরোয়া করে দিয়েছে। 

একে ব্যবহার করে আমি ভুলে গিয়েছি ফেলে আসা দিনের কথা। সেই সাথে ভুলে গিয়েছি সামনে আমার জন্য অপেক্ষমান সকল বিষয়। কালো আবরণে ঢেকে দিয়েছি নিজের ভিতরের সক্রিয় বিবেককে। ভুলে গিয়েছি আমাদের জীবনের শেষ পরিনতি সম্পর্কে। তাহলে আমরা আমাদের জীবনকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছি? আমরা কী আমাদের নিয়ে পুর্বের ও পরের সকল বিষয়কে সাময়িক মনে করছি?

এই সব বিষয় নিয়ে আমরা যারা চিন্তা করার সময় পাইনা, বরং একে একটি নিছক খেলা মনে করি তাদের প্রতি অনুরোধের হাতটা একটু প্রসারিত করে বলতে চাই, আপনার ফেলে আসা দিনের অসহায়ত্তের কথা কিছু সময় ভাবুন? আপনার কী করার ছিল সে অনুযায়ী কতটুকু করেছেন তা নিয়ে একটু চিন্তা করুন। আপনার ব্যর্থতার দায়ভার সামনে যে হিসেবের সময় আসছে সেখানে কার কাছে হস্তান্তর করবেন একটু ভেবে দেখুন?

চলমান সময়ে বাতাসের সাথে তাল মিলিয়ে আপনি যে ভাবে আপনা জীবন পরিচালনা করছেন তার শেষ পরিনতি নিয়ে আপনার ভিতরের বিবেককে প্রশ্ন করুন? জেনে নিতে চেষ্টা করুন আপনি কি সঠিক কাজ করছেন?  না-কি আপনার কাজগুলোই আপনাকে গভীর সমস্যার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন যে সময়ে আপনি আছেন তা থেকে বের হয়ে আসার কোন পথ আছে কি-না একটু মেলাতে চেষ্টা করুন আপনার স্ব-চিত্রিত সমীকরণে।

আপনার সকল সমীকরণকে মিলিয়ে একটি সুন্দর প্লাটফর্মে নিজেকে দাঁড় করিয়ে রাখুন। দেখতে পাবেন এই দুনিয়ার জীবন পরিচালনা করার মাঝেই রয়েছেঃ
এক. মৃত্যু পরবর্তী জীবনের শান্তি। যা এই দুনিয়ার সকল শান্তির চাইতেও উত্তম।
দুই. বিচারকের নিকট সঠিক ভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে পারার সমর্থ।
তিন. সর্বোপরি চাওয়া পওয়ার সর্বোচ্চ স্থানে নিজের স্থান করে নেয়া। যা আপনার আমার সকলের প্রাপ্য। 

No comments:

Post a Comment