Friday, July 10, 2020

আড্ডা থেকে শিখেছি মেঝেতে বসে খাওয়ার উপকারিতা

সালটা ১৯৮২ বা ’৮৩ হবে। সবে চাকরী পেয়েছি আমরা বন্ধুরা। থাকি অফিসের কাছাকাছি মতিঝিলের এজিবি কলোনী বা এর আশপাশ। ২-১ জন আরো পশ্চিমে ধানমন্ডি, কলাবাগান এলাকায়। একদিন বন্ধু নান্না ওর শিল্প ব্যাংক অফিস থেকে (তারিখ মনে নেই) টেলিফোনে বল্লো, “লুলু আগামীকাল আসবে, তুইও আসবি। বিকেলে শাকেরের বাসায় যাবো আরামবাগে।” আমি তখন কাকরাইলে ন্যাশনাল সায়েন্স মিউজিয়ামে চাকরী করি। লুলু তখন সম্ভবত: বি.এ.ভি.এস-এ কাজ করে। শাকেরেরটা মনে করতে পারিনি। আমি রাজী হলাম। আমরা ৪ জন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ছাত্র ছিলাম। বিকেল হলেই বেরিয়ে পড়তাম। একসাথে ঘোরাঘুরি আরো কত কি। সে এক দারুন স্মৃতি।
আমাদের মধ্যে শাকের চটুল কথায় বেশ ওস্তাদ।
নান্না আইনষ্টাইনের মত মাঝেমধ্যে বেশ ভারী ভারী কথা কয়।
লুলু সক্রেটিসের মত ভাবনা নিয়ে কথা কয়।
আর আমি মাঝেমঝে ২-১টি রসবোধের কথা ছাড়ি।
তো শাকেরের বাসায় নির্দিষ্ট দিনের বিকেলে আমরা ৩ জনে হাজির হই। আড্ডা শেষে নাশতা এলো। শাকের বল্লো, দোস্তঁরা, “মেঝেতে মাদুর বিছিয়ে খাওয়া যাক।” লুলু সক্রেটিসের মতই বল্লো, মেঝেতে বসে খাওয়া, সে তো দারুন এক ব্যাপার! লিগেসি আছে এতে। শাকের ওরে বাপ রে কয়ে ফোড়ন কাটলো। বল্লো, দোস্তঁরা! “ডাইনিং টেবিল কিনতে পারিনি, টাকা নাই। তাই মেঝেতে বসেই তোরা খাবি। না হলে খাবিনা, ভাগবি! ব্যস!” নান্না আর আমি কোন মন্তব্য করিনি। বসে যাই সবাই। খাওয়া আর গল্প চলে এক সাথে। অনেক সময় এক সাথে থেকে চলে আসি আমরা শাকেরের বাসা থেকে।
ভালই হতো সেই দিনগুলো যদি আবার ফিরে পেতাম!  
আমরা তো মেঝেতে বসলাম। খাওয়ার সময় এর উপকারিতা কি কিছু আছে?
 ডাইনিংয়ের চেয়ারের চেয়ে ঘরের মেঝেতে বসে খাওয়ার উপকারিতা অনেক
আধুনিক জীবনযাপনে আমরা সবাই চেয়ার টেবিলে বসে খেতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। মাটিতে বসে খাওয়ার চল প্রায় উঠেই গিয়েছে। কিন্তু প্রাচীনকাল থেকেই এদেশের মানুষ ঘরের মেঝেতে বসে খেত। এবার জেনে নেয়া যাক মাটিতে ঘরের মেঝেতে বসে খাওয়ার উপকারিতা। চেয়ারের আবিষ্কার আসলে খুব বেশি দিন ধরে হয়নি। অধিকাংশ মানুষই এখন ডাইনিং টেবিলে বসে খাওয়া-দাওয়া করতে পছন্দ করেন। আর এখন তো ডাইনিং টেবিল-চেয়ারে বসে খাওয়া একটি ফ্যাশন, ভদ্রতার অংশ হিসেবে ধরা হয়। তবে আগের দিনের মানুষ কিন্তু স্কোয়াট Squat বা উবু হয়ে বসে খেত। তবে এটি পশ্চিমা বিশ্বের লোকদের অভ্যাসে নেই, কিছু কিছু দেশের সংস্কৃতিতে এখনো এ অভ্যাস রয়েছে। তবে জানেন কি, পুরোনো এই সংস্কৃতির মধ্যে যোগব্যায়ামের শেকড় রয়েছে এবং এটি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। আমরা যারা গাঁয়ে থেকেছি তার মাটিতে বসে খাওয়াই অভ্যস্ত ছিলাম। কালক্রমে অভ্যাসটি হারিয়ে যায়। এখন আর কারো ঘরে মাদুর দেখা যায় না। আমার আব্বা ডাইনিং টেবিলের কথা শুনতেই চাইতো না। বলতো, “ওটাতে বসে খেলে আমার খাওয়াই হবে না।” তবে আমি ভোরের নাশতার সময় অভ্যাসটি সজীব রেখেছি। এখনো।
মেঝেতে বসে খাওয়ার উপকারিতা
ভারতের চিতৌরের প্রাক্তন জেলা আয়ুর্বেদ চিকিসা আধিকারিক রোশনাল মোড়ের পরামর্শ অনুযায়ী, চেয়ার-টেবিলের তুলনায় মাটিতে বসে খাওয়াই স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী।
১. যখন আমরা খাওয়ার জন্য মেঝেতে বসি, আসলে তখন কিছু যোগব্যায়ামের আসনও করা হয়। এটিকে সুখাসন বা স্বস্তিকাসন অথবা সিদ্ধাসনও বলা হয়। সুখাসন পদ্মাসনেরই একটি রূপ। পদ্মাসনের যা যা উপকারিতা, সুখাসন করলেও সেগুলো পাওয়া যায়।
২. সুখাসনে বসলে একাগ্রতা বাড়ে।
৩. সুখাসনে বসলে শরীরে রক্ত সঞ্চালন ভাল হয়। যার ফলে শরীরে অতিরিক্ত এনার্জি পাওয়া যায়।
৪. এই আসনে বসলে মানসিক চাপ কমে, মনে ইতিবাচক চিন্তাভাবনার প্রভাব বৃদ্ধি পায়।
৫. সুখাসনে বসলে পায়ের শক্তি বৃদ্ধি হয়।
৬. মাটিতে সুখাসনে বসে খাবার খেলে মেদ বৃদ্ধি, বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাসের মতো পেট সংক্রান্ত সমস্যা এড়ানো যায়।
৭. সুখাসনে বসে খাবার খেলে আলস্য দূর হয়। মাংস পেশিতে খিঁচ ধরা কমে।
৮. এই আসনটিতে বসে খাবার খেলে মেরু‌দণ্ডের নীচের অংশে জোর পড়ে। এর ফলে শরীরে আরাম অনুভূত হয়।
৯. পা ক্রস করে মেঝেতে বসে খেলে খাবার ভালোভাবে হজম হয়। মেঝেতে বসে খেলে হজমরস ভালোভাবে বের হয় ও দ্রুত খাবার হজম হয়।
১০. পা ক্রস করে বসে খাওয়া পিঠ ও ঘাড়ের জন্য খুবই উপকারি।
১১. পা ক্রস করে বসলে এমনিতেই অঙ্গবিন্যাস বা Posture ঠিকঠাক হয়ে যায়।
১২. পবিত্র দ্বীন ইসলামে মেঝেতে বসে খাওয়া সুন্নত।
১৩. নামাজে বসার মতো মেঝেতে বসে খেলে খাবার ভালোভাবে হজম হয়।মেঝেতে বসে খেলে হজমরস ভালোভাবে বের হয় ও দ্রুত খাবার হজম হয়।
১৪. নামাজের মতো বসে খাওয়া পিঠ ও ঘাড়ের জন্য খুবই উপকারি।
১৫. মেঝেতে বসে খেলে কম খাওয়া যায় কারণ পেটে কিছুটা চাপ পড়ে, পেটের আয়তন কমে যায়। এতে স্থুলতা কমে, ওজনও কমে।

বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ মানুষ ডাইনিং টেবিলে বসে খেয়ে থাকে। তবে আপনি জানেন কী? টেবিলে খাওয়ার চেয়ে মেঝেতে বসে খেলে হজম প্রক্রিয়াকে ভালো হয়। এছাড়া মেঝেতে বসে খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে।
পবিত্র দ্বীন ইসলামে মেঝেতে বসে খাওয়া সুন্নত। এর রয়েছে অনেক উপকারিতা। সেই উপকারিতার কথা ফুটে উঠেছে স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট টপ টেন হোম রেমেডিতে। আসুন জেনে মেঝেতে বসে খাওয়ার উপকারিতা।
১.নামাজে বসার মতো মেঝেতে বসে খেলে খাবার ভালোভাবে হজম হয়।মেঝেতে বসে খেলে হজমরস ভালোভাবে বের হয় ও দ্রুত খাবার হজম হয়।
২. মেঝেতে বসে খাবার খেলে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। এছাড়া হার্টের রক্ত পাম্প করতে সুবিধা হয়।
৩. নামাজের মতো বসে খাওয়া পিঠ ও ঘাড়ের জন্য খুবই উপকারি। চেয়ারে বেশিক্ষণ বসে থাকা ঘাড় ও কোমরের ব্যথা হয়।
৪. মেঝেতে বসে খেলে ব্যায়াম ও করা হয়। এটি এ ধরনের আসনগুলোতে যে উপকারিতা রয়েছে।

No comments:

Post a Comment