Monday, November 29, 2021

নীরবতা যখন সবারই কাম্য

 হৃদয়ের ক্ষত দূর করার জন্য নীরবতা হলো একটি বাম (Balm)। নীরবতা প্রশান্তির আরেক নাম। নীরবতা আত্মকে বলীয়ান করে আর তাকে নিয়ে যায় দূর অসীমের মাঝে..যেখনে বিরাজ করে পূর্ণ নিস্তব্ধতা।

রবীন্দ্রনাথের ভাষায়
“স্তব্ধতা উচ্ছ্বসি উঠে গিরিশৃঙ্গরূপে,
ঊর্ধ্বে খোঁজে আপন মহিমা।
গতিবেগ সরোবরে থেমে চায় চুপে
গভীরে খুঁজিতে নিজ সীমা।”
– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (স্ফুলিঙ্গ হতে সংগ্রহীত)
অথবা রুমীর কথায়-
Sing to me in the silence of your heart and I will rise up to hear your triumphant song.
অথবা তাঁরই কথায়
নীরবতাই হোক তোমার অভ্যাসের নিপুন শিল্পকলা
Forewords: Self

বিতরন হোক সুখ Give Happiness

মহত হৃদয়ের মানুষগুলো প্রতিটি মূহুর্তের সদ্ব্যবহার করে অন্যের সুখের কারণে নিজেকে বিলীন করে দেয়। কারণ, মহত হৃদয়ে কৃতজ্ঞতার মধ্যে বিস্ময় বিলীন হয়ে যায়। মহত হৃদয়ের মানুষগুলো অন্যের ভুলগুলো দেখেও দেখেনা। মহত হৃদয়ের মানুষগুলো তাদের প্রজ্ঞা ব্যবহার করে অন্যের ভেতরের সৃজনশীলতা নিয়ত বাড়ানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে।

তাই কবি কামিনী রায় লিখেছেনঃ
“পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি
এ জীবন মন সকলি দাও,
তার মত সুখ কোথাও কি আছে?
আপনার কথা ভুলিয়া যাও।
পরের কারণে মরণেও সুখ,
‘সুখ-সুখ’ করি কেঁদো না আর;
যতই কাঁদিবে যতই ভাবিবে,
ততই বাড়িবে হৃদয়-ভার।
আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে
আসে নাই কেহ অবনী পরে
সকলের তরে সকলে আমরা
প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।”
সবাই ভাল থাকুন
অথবা রবীনাথের ভাষায়-
বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি।
শুষ্ক হৃদয় লয়ে আছে দাঁড়াইয়ে
ঊর্ধমুখে নরনারী,
বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি।
না থাকে অন্ধকার, না থাকে মোহপাপ,
না থাকে শোকপরিতাপ।
হৃদয় বিমল হোক, প্রাণ সবল হোক,
বিঘ্ন দাও অপসারি।
বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি।
কেন এ হিংসাদ্বেষ, কেন এ ছদ্মবেশ,
কেন এ মান-অভিমান।
বিতর' বিতর' প্রেম পাষাণহৃদয়ে,
জয় জয় হোক তোমারি-
বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি।
-উপস্থাপনার ভাষা নিজের।

আনহ্যাপী গাট(Unhappy Gut)

 ব্রণ, দুশ্চিন্তা, অনিদ্রাও হতে পারে পেটের সমস্যার লক্ষণ

সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দৌড়ে চলেছি আমরা। কোনও সময় নেই বিশ্রাম। এই ব্যস্ত জীবনের ফাঁদে পড়ে নিজেদেরই বহু ক্ষতি করে চলেছি। এমনই একটি গুরুতর সমস্যা হল পেটের স্বাস্থ্য ভালো না থাকা।
জানলে অবাক হবেন, আমাদের শরীরের সমস্ত কিছুর সঙ্গেই জড়িয়ে আছে পেট। তাই পেট ভালো থাকলে আমরা ভালো থাকি। আর পেট খারাপ থাকলে গোটা শরীরেই তার লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনকার দিনে বেশিরভাগ মানুষের জীবনযাত্রার দোষেই পেটের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তাঁদের কথায়, আমাদের পেটের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল অন্ত্র (Gut)। সেই অন্ত্রে বাস করে কিছু ভালো ব্যাকটেরিয়া। এই ভালো ব্যাকটেরিয়া খাদ্যপাচন (Digestion) সহ নানান কাজে আমাদের সাহায্য করে। যদি কোনও কারণে অন্ত্রের এই ব্যাকটেরিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে দেখা দেয় নানান সমস্যা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, খাবার ঠিকমতো হজম না হলে আপনি নিজের খাবারের মজা পাবেন না। কারণ এক্ষেত্রে হজমে সমস্যা হলে আপনার নানান উপসর্গ দেখা দেবে। তখন খাওয়ার কথা মাথাতেই আসবে না। পাশাপাশি এমনটা দীর্ঘদিন চলতে থাকলে তার প্রভাব পড়বে আপনার শরীরেও। তাই সাধু সাবধান। নিজের পেটের খেয়াল রাখতেই খাবারদাবারে করতে হবে পরিবর্তন।
চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের কথায়, শরীরের বহু সমস্যার নেপথ্যেই থাকে পেট। তাই কোনও অসুখ হলে তার সঙ্গে পেটের কোনও সম্পর্ক রয়েছে কি না তা খুঁটিয়ে দেখা দরকার। আর বহু ক্ষেত্রে আপনি ভাবতেও পারবেন না, এই সমস্যাগুলির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে পেটের স্বাস্থ্যঃ
-খিদে না পাওয়া
-পেট ফুলে থাকা
-খাওয়ার পর পেট ভর্তি থাকার অনুভূতি
-জিভের উপর আস্তরণ পড়া
-পাতলা পায়খানা
-কোষ্ঠকাঠিন্য
-বদহজম
-ব্রণ
-দুশ্চিন্তা
-আতঙ্ক
-অনিদ্রা
-ঘুমঘুমভাব
-রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া
-ক্লান্তি, ইত্যাদি
কী করবেন তাহলে?
পেটের সমস্যা রোধ করতে চাইলে আপনাকে খাবারের দিকে প্রথমেই মনোযোগ দিতে হবে। সহজপাচ্য খাবার খাওয়া উচিত। এমন খাবার খান যা সহজেই হজম হয়।
তেলঝাল মশলা চেষ্টা করুন যতটা সম্ভব কম খাওয়া যায়। বাড়ির লোকজনদের বলুন রান্নায় কম তেল দিতে।
বাইরের খাবার খাওয়া যাবে না। বাইরের খাবারে থাকা নানা ক্ষতিকর উপাদান আপনার শরীরের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। পাশাপাশি পেটও হবে খারাপ।
খাবার খেতে হবে একটি নির্দিষ্ট সময়ে। অর্থাৎ আজ যেই সময়ে খাবার খাচ্ছেন, কালও ঠিক সেই সময়েই খাবার খান। তবেই শরীর ভালো থাকবে।
আর অবশ্যই একবারে অনেকটা খাবার নয়। অল্প অল্প করে বারেবারে খান।
কম সময়ের ব্যাবধানে খান। দুই ঘণ্টা পরপর কিছু না কিছু খেতে থাকুন। তাহলে পাচনক্রিয়া স্বাভাবিক থাকে। পেটের স্বাস্থ্য থাকে ভালো।
খুব সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তিনিই আপনাকে সঠিক রাস্তা দেখাবেন।
সূত্র: এইসময়
-নিজ পাঠ

দ্বিনের ওপর চলার সহজ আমলগুলো

 যত ইবাদত আছে সবই উপকারী এবং যত পাপকাজ আছে সবই ক্ষতিকর। তার পরও মৌলিক কিছু আমল আছে, যেগুলো করা বা পরিহার করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা সেগুলোর প্রতি গুরুত্বারোপ করা হলে অন্যান্য আমল সংরক্ষণ ও বিশুদ্ধকরণ সহজ হয়ে যায়। নিম্নে এমন কিছু আমলের আলোচনা তুলে ধরা হলো—

১. ধর্মীয় জ্ঞানার্জন : ইলামে দ্বিন বা ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করা। হোক সেটা কিতাব পড়ে বা আলেমদের সান্নিধ্যে থেকে। বরং কিতাব পড়ে ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করার পরও আলেমদের সান্নিধ্যে থাকা জরুরি।
২. আলেমদের সান্নিধ্য : আলেম দ্বারা এমন আলেম উদ্দেশ্য যারা জ্ঞান অনুযায়ী আমল করে। যাদের মধ্যে শরিয়ত ও হাকিকতের সমন্বয় ঘটেছে। সুন্নতের ওপর সুদৃঢ়, মধ্যপন্থী এবং অতিরঞ্জন ও অতিশৈথিল্য থেকে দূরে থাকে। আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি স্নেহপরায়ণ। যাদের মধ্যে হঠকারিতা ও গোঁয়ার্তুমি নেই। এককথায় যাদের মধ্যে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নিম্নোক্ত বাণীর প্রতিফলন দেখা যায়—‘আমার উম্মতের একটি দল সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে এবং আল্লাহর সাহায্যপ্রাপ্ত হবে। যারা তাদের পরিত্যাগ করবে তারা তাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭৩১১)
৩. নামাজ : যেকোনো পরিস্থিতিতে নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা। যতদূর সম্ভব জামাআতের সঙ্গে পড়ার চেষ্টা করবে। অপারগ হলে যেভাবে সম্ভব সেভাবে নামাজ পড়ে নেবে। এতে আল্লাহর দরবারের সঙ্গে একটি সম্পর্ক ও যোগসূত্র প্রতিষ্ঠিত থাকবে। নামাজের বরকতে ইনশাআল্লাহ নামাজির দোষ-ত্রুটি সংশোধিত হয়ে যাবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই নামাজ যাবতীয় অশ্লীল ও অসত্কর্ম থেকে বিরত রাখে।’ (সুরা আনকাবুত, আয়াত : ৪৫)
৪. কম কথা বলা : মানুষের সঙ্গে কম কথা বলা ও কম মেলামেশা করা। যা কিছু বলার চিন্তা-ভাবনা করে বলা। শত-সহস্র বিপদ থেকে নিরাপদ থাকার একটি উত্তম উপায় এটি।
৫. মুরাকাবা ও মুহাসাবা : বেশির ভাগ সময় এ খেয়াল রাখা যে আমি আমার মালিকের সামনে অবস্থান করছি। আমার সব কথা, কাজ ও অবস্থা তিনি দেখছেন। এটি হলো মুরাকাবা। আর মুহাসাবা হলো কোনো একটি সময়—যেমন ঘুমানোর আগে একাকী বসে সারা দিনের কাজের কথা স্মরণ করে এরূপ ধারণা করবে যে এখন আমার হিসাব হচ্ছে, কিন্তু আমি উত্তর দিতে পারছি না।
৬. তাওবা ও ইস্তিগফার : যখনই কোনো ভুল হয়ে যাবে বিলম্ব না করে, কোনো জিনিসের অপেক্ষা না করে নির্জন স্থানে সেজদায় লুটিয়ে পড়ে খুব মাফ চাওয়া। কান্না এলে কান্না করা। তা না হলে কান্নার ভান করা। এই সহজ বিষয়গুলোর প্রতি যত্নশীল হলে আল্লাহর দরবারে আশা করা যায় যে তিনি অন্যান্য আমল সহজ করে দেবেন।
‘জাজাউল আমাল’ থেকে
মূল: আশরাফ আলী থানভী (রহ.)

সহনশীলতার লড়াই

 সহনশীল হও। আল্লাহ নিজে সহনশীল

সহনশীলতা এমন একটি গুণ যা সবার ভাগ্যে জোটেনা-
আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ আল্লাহ কোমল। তাই তিনি প্রতিটি কাজে কোমলতা পছন্দ করেন। (বুখারী, মুসলিম)
গল্পের শুরু
জর্জ ডব্লিউ ম্যাকলরেন। ১৯৪৮ সালে জর্জ ওকলাহোমা ইউনিভার্সিটিতে আবেদন করেন(খুব সম্ভবত ৫৮ বছর বয়সে), সেখান থেকে স্নাতকত্ব ডিগ্রি অর্জন করার জন্যে। কিন্তু তার আবেদনপত্র বাতিল করা হয়, তার কালো রঙের জন্যে। বর্ণবৈষম্যের স্বীকার হয়েছিলেন তিনি।
হার মানেন নি তিনি। কোর্টে গেলেন। জিতে গেলেন কেস। ভর্তি হলেন ওকলাহোমা ইউনিভার্সিটিতে।
লড়াই এখানেই থেমে থাকলো না। আইনগত ভাবে ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হতে পেলেও, আর সকলের সাথে বসার সৌভাগ্য হলো না। ঘরের এক কোনায় সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের থেকে আলাদা হয়ে বসতে বাধ্য করা হল তাকে।
একদিন বা দুই দিন নয়। টানা দুই বছর তিনি সেইভাবে ক্লাস করে গেলেন। ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে তখন প্রায় ১২ হাজার ছাত্র ছাত্রী। একমাত্র জর্জ - প্রথম আফ্রিকান আমেরিকান মানুষ সেই ইউনিভার্সিটিতে এই ভাবে ক্লাস করে গেলেন।
এইভাবে প্রতিদিন অপমানিত লাঞ্ছিত বঞ্চিত তিরস্কৃত হয়ে তিনি আবার কোর্টে গেলেন। ততদিনে বেশ কিছু কালো, সংখ্যালঘু, আদিবাসী আমেরিকানরা সেই ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে। তাদেরও সাথে জর্জের মত ব্যবহার করা হতো। তাদের লাইব্রেরি, বসার জায়গা, পড়ার জায়গা সব আলাদা।
কোর্টের রায় এলো আবার জর্জের পক্ষেই। আসতে আসতে তারাও অধিকার পেলো ক্লাসের সবার সাথে বসার।
জর্জের কথায়, “সহপাঠীরা তার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে থাকত, সে যেন একটা পশু। কেউ তার সাথে কথা বলতো না, শিক্ষকরা তার উপস্থিতি অবজ্ঞার সাথে উপেক্ষা করে দিতো। তার প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হতো না। কিন্তু তিনি এমনভাবে পড়াশুনা করেছিলেন যে শেষের দিকে তারা আমার খোঁজ নিত। তারা(ছাত্ররা) তাদের প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ও বুঝতে আমার কাছে আসতো।”
"Some colleagues would look at me like I was an animal, no one would give me a word, the teachers seemed like they were not even there for me, nor did they always take my questions when I asked. But I devoted myself so much that afterwards, they began to look for me to give them explanations and to clear their questions."
ইউনিভার্সিটির তিনজন উল্লেখযোগ্য ছাত্রের মধ্যে তার নাম উল্লিখিত হয়েছিল। পরবর্তী কালে তিনি কানসাস ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স করেন এবং সেখানেই প্রফেসর হিসেবে কাজ করেন।
এতো সহনশীলতা, কষ্ট সহ্য করার এত ক্ষমতা - আমাদের সকলের কাছে পূজনীয়। সমস্ত প্রতিকূলতাকে পরাজিত করে, পড়াশুনার জন্যে, নিজের অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার জন্যে তার এই লড়াই আর অধ্যবসায় - প্রতিটি মানুষের জীবনের চলার পথের পাথেয় হয়ে ওঠা উচিত।
গল্পের শেষ
আমার প্রশ্ন হলো আমরা জর্জ ডব্লিউ ম্যাকলরেন-এঁর মত কতজন হতে পেরেছি?
কষ্ট থেকেই বোধ করি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত লিখেছিলেন-
জগত জুড়িয়া এক জাতি আছে
সে জাতির নাম মানুষ জাতি;
এক পৃথিবীর স্তন্যে লালিত
একই রবি শশী মোদের সাথি।
শীতাতপ ক্ষুধা তৃষ্ণার জ্বালা
সবাই আমরা সমান বুঝি,
কচি কাঁচাগুলি ডাঁটো করে তুলি
বাঁচিবার তরে সমান যুঝি।
দোসর খুঁজি ও বাসর বাঁধি গো,
জলে ডুবি, বাঁচি পাইলে ডাঙা,
কালো আর ধলো বাহিরে কেবল
ভিতরে সবারই সমান রাঙা।
বাহিরের ছোপ আঁচড়ে সে লোপ
ভিতরের রং পলকে ফোটে,
বামুন, শূদ্র, বৃহত, ক্ষুদ্র
কৃত্রিম ভেদ ধুলায় লোটে।
রাগে অনুরাগে নিদ্রিত জাগে
আসল মানুষ প্রকট হয়,
বর্ণে বর্ণে নাইরে বিশেষ
নিখিল জগত ব্রহ্মময়।
বংশে বংশে নাহিকো তফাত
বনেদি কে আর গর-বনেদি,
দুনিয়ার সাথে গাঁথা বুনিয়াদ
দুনিয়া সবারি জনম-বেদি।
সূত্র:
আল হাদীস
বিএন.কোর.ডটকম
-বাঙলা সংকলন
-নিজ পাঠ

সহনশীলতা নিয়ে কিছু ভাল ভাল কথা

 সহনশীলতা নিয়ে কিছু ভাল ভাল কথা

ইবনুল আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) আবদুল কায়েস গোত্রের আশাজ্জাকে বললেনঃ তোমার মধ্যে এমন দু’টি গুণ বা অভ্যাস রয়েছে যা আল্লাহও পছন্দ করেনঃ সহনশীলতা ও ধীর-স্থিরতা। (মুসলিম ৬৩২)
আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ আল্লাহ কোমল। তাই তিনি প্রতিটি কাজে কোমলতা পছন্দ করেন। (বুখারী, মুসলিম-৬৩৩)
আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী (সা) বলেছেনঃ আল্লাহ নিজে কোমল। তিনি কোমলতা ভালোবাসেন। তিনি কোমলতার দ্বারা ঐ জিনিস দান করেন যা কঠোরতার দ্বারা দেন না। (মুসলিম-৬৩৪)
আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী (সা) বলেছেনঃ যে জিনিসে কোমলতা থাকে, কোমলতা সেটিকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে। যে জিনিস থেকে কোমলতা ছিনিয়ে নেয়া হয় সেটাই দোষদুষ্ট ও ত্রুটিযুক্ত হয়ে যায়। (মুসলিম ৬৩৫)
আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক বেদুঈন মসজিদে পেশাব করলে লোকেরা ঝাঁপিয়ে পড়তে উঠে দাঁড়াল। নবী (সা) বলেনঃ ছাড় তাকে। তার পেশাবের উপর এক বালতি পানি ঢেলে দাও। তোমাদেরকে সহজ নীতি অবলম্বনকারী হিসাবে পাঠানো হয়েছে, কঠোর নীতির ধারক হিসেব নয়। (বুখারী ৬৩৬)
আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। নবী (সা) বলেছেনঃ তোমরা সহজ নীতি ও আচরণ অবলম্বন কর, কঠোর নীতি অবলম্বন করো না। সুসংবাদ শোনাতে থাক এবং পরস্পর ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়িও না। (বুখারী, মুসলিম ৬৩৭)
জারীর ইবনে আবদুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা) কে বলতে শুনেছিঃ যাকে কোমলতা বঞ্চিত করা হয়েছে, তাকে সব রকমের কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত করা হয়েছে। (মুসলিম ৬৩৮)
আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি নবী (সা) কে বলল, আমাকে কিছু উপদেশ দিন। তিনি বলেনঃ রাগ করো না। লোকটি (এটাকে যথেষ্ট মনে না করে) কথাটিকে কয়েকবার পুনরাবৃত্তি করলো। নবী (সা) বারবার বলেনঃ রাগ করো না। (বুখারী ৬৩৯)
আবু ইয়া’লা শাদ্দাদ ইবনে আওস (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেনঃ আল্লাহ প্রত্যেক জিনিসের প্রতি দয়া-মায়াপূর্ণ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছেন। অতএব তোমরা কোন প্রাণীকে হত্যা করলে, উত্তমভাবে হত্যা করবে এবং কোন প্রাণীকে যবেহ করলে উত্তমভাবে যবেহ করবে। তোমাদের প্রত্যেকেই যেন তার ছুরিকে শানিত করে নেয় এবং যবেহ করার প্রাণীকে আরাম দেয়। (মুসলিম ৬৪০)
আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সা) কে দু’টি বিষয়ের যে কোন একটি গ্রহণ করার ইখতিয়ার দেয়া হলে তিনি সর্বদাই অপেক্ষাকৃত সহজটি গ্রহণ করতেন, যদি না তা গুনাহর বিষয় হত। তা গুনাহর বিষয় হলে তা থেকে তিনি সকলের চাইতে বেশি দূরে অবস্থানকারী হতেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ব্যক্তিগত কোন বিষয়ে কখনো প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। তবে আল্লাহর বিধান লংঘিত হলে তিনি শুধু মহান আল্লাহর জন্যই প্রতিশোধ গ্রহণ করতেন। (বুখারী, মুসলিম ৬৪১)
ইবনে মাসঊদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ আমি কি তোমাদের জানাব না যে, কোন লোক জাহান্নামের আগুনের জন্য হারাম অথবা কার জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম? জাহান্নামের আগুন এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য হারাম যে লোকদের নিকটে বা তাদের সাথে মিলেমিশে থাকে, যে কোমলমতি, নরম মেজাজ ও বিনম্র স্বভাব বিশিষ্ট। ইমাম তিরমিযী এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন, এটি হাসান হাদীস।

Monday, November 22, 2021

বেশী ধারণা ও অনুমান করা থেকে বিরত থাকো।

 অনুমান যদি নিজের গণ্ডি ছাড়িয়ে অন্যের ওপর গিয়ে পড়ে এবং তা কোনো মন্দ বিষয়ে হয়ে থাকে তখন সেটাকে আমরা মন্দ বা কুধারণা বলে থাকি। সমাজে পারস্পরিক সহাবস্থান ও সম্প্রীতি রক্ষার জন্যে এ মন্দ ধারণা হুমকিস্বরূপ। কারো সঙ্গে মুক্ত মনে কিংবা ভালো ধারণা রেখে চলাফেরা করা আর তার সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ করে ওঠাবসার করার মাঝে স্বাভাবিকভাবেই বিস্তর ফারাক রয়েছে। কোনো দলিল-প্রমাণ ছাড়া অনর্থক কারো সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ করতে তাই ইসলামে নিষেধ করা হয়েছে। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে কারিমে আল্লাহ বলেন , “হে ঈমানদাগণ, বেশী ধারণা ও অনুমান করা থেকে বিরত থাকো কারণ কোন কোন ধারণা ও অনুমান গুনাহ ৷

–সূরা হুজরাত আয়াত- ১২
একেবারেই ধারণা(অনুমান) করতে নিষেধ করা হয়নি ৷ বরং খুব বেশী ধারণার ভিত্তিতে কাজ করতে এবং সব রকম ধারণার অনুসরণ থেকে মানা করা হয়েছে ৷ এর কারণ বলা হয়েছে এই যে, অনেক ধারণা গুনাহের পর্যায়ের পড়ে ৷ এ নির্দেশটি বুঝার জন্য আমাদের বিশ্লেষণ করে দেখা উচিত ধারণা কত প্রকার এবং প্রত্যেক প্রকারের নৈতিক অবস্থা কি?
প্রথম প্রকারের ধারণা হচ্ছে, যা নৈতিকতার দৃষ্টিতে অত্যন্ত পছন্দনীয় এবং দীনের দৃষ্টিতেও কাম্য ও প্রশংসিত ৷ যেমনঃ আল্লাহ, তার রসূল এবং ঈমানদারদের ব্যাপারে ভাল ধারণা পোষণ করা ৷ তাছাড়া যাদের সাথে ব্যক্তির মেলামেশা ও ওঠাবসা আছে এবং যাদের সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষনের কোন যুক্তিসংগত কারণ নেই ৷
দ্বিতীয় প্রকার ধারণা আছে যা বাদ দিয়ে বাস্তব জীবনে চলার কোন উপায় নেই ৷ যেমন আদালতে বিচারকের সামনে যেসব সাক্ষ পেশ করা হয় তা যাঁচাই বাছাই করে নিশ্চিত প্রায় ধারণার ভিত্তিতে ফায়সালা করা ছাড়া আদালত চলতে পারে না ৷ কারণ, বিচারকের পক্ষে ঘটনা সম্পর্কে সরাসরি জ্ঞান লাভ করা সম্ভব নয় ৷ আর সাক্ষের ভিত্তিতে যে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা নিশ্চিত সত্য হয়না, বরং প্রায় নিশ্চিত ধারণার ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় ৷ যে ক্ষেত্রে কোন না কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ জরুরী হয়ে পড়ে, কিন্তু বাস্তব জ্ঞান লাভ বাস্তব হয় না সে ক্ষেত্রে ধারণার ওপর ভিত্তি করে একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা ছাড়া মানুষের জন্য আর কোন উপায় থাকে না ৷
তৃতীয় এক প্রকারের ধারণা আছে যা মূলত খারাপ হলেও বৈধ প্রকৃতির ৷ এ প্রকারের ধারণা গোনাহের অন্তরভুক্ত হতে পারে না ৷ যেমনঃ কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠির চরিত্র ও কাজ-কর্মে কিংবা তার দৈনন্দিন আচার -আচরণ ও চালচলে এমন সুস্পষ্ট লক্ষণ ফুটে উঠে যার ভিত্তিতে সে আর ভাল ধারণার যোগ্য থাকে না ৷ বরং তার প্রতি খারাপ ধারণা পোষণের একাধিক যুক্তিসংগত কারণ বিদ্যমান ৷ এরূপ পরিস্থিতিতে শরীয়াত কখনো এ দাবী করে যে, সরলতা দেখিয়ে মানুষ তার প্রতি অবশ্যই ভাল ধারণা পোষণ করবে ৷ তবে বৈধ খারাপ ধারণা পোষনের চূড়ান্ত সীমা হচ্ছে তার সম্ভাব্য দুস্কৃতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে ৷ নিছক ধারণার ভিত্তিতে আরো অগ্রসর হয়ে তার বিরুদ্ধে কোন তৎপরতা চালানো ঠিক নয় ৷
চতুর্থ আরেক প্রকারের ধারণা আছে যা মূলত গুনাহ, সেটি হচ্ছে, বিনা কারণে কারো অপরের প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ করা কিংবা অন্যদের ব্যাপারে মতস্থির করার বেলায় সবসময় খারাপ ধারণার ওপর ভিত্তি করেই শুরু করা কিংবা এমন লোকেদের ব্যাপারে খারাপ ধারণা পোষণ করা যাদের বাহ্যিক অবস্থা তাদের সৎ ও শিষ্ট হওয়ার প্রমাণ দেয় ৷ অনুরূপভাবে কোন ব্যক্তি কোন কথা বা কাজে যদি ভাল ও মন্দের সমান সম্ভবনা থাকে কিন্তু খারাপ ধারণার বশবর্তী হয়ে আমরা যদি তা খারাপ হিসেবেই ধরে নেই তাহলে তা গোনাহের কাজ বলে গণ্য হবে ৷ যেমনঃ কোন সৎ ও ভদ্র লোক কোন মাহফিল থেকে উঠে যাওয়ার সময় নিজের জুতার পরিবর্তে অন্য কারো জুতা উঠিয়ে নেন আমরা যদি ধরে নেই যে, জুতা চুরি করার উদ্দেশ্যেই তিনি এ কাজ করেছেন ৷ অথচ এ কাজটি ভুল করেও হতে পারে ৷ কিন্তু ভাল সম্ভাবনার দিকটি বাদ দিয়ে খারাপ সম্ভাবনার দিকটি গ্রহণ করার কারণ খারাপ ধারণা ছাড়া আর কিছুই নয় ৷
এ বিশ্লেষণ থেকে একথা পরিস্কার হয়ে যায় যে, ধারণা করা যেমন নিষিদ্ধ বিষয় নয় ৷ বরং কোন কোন পরিস্থিতিতে তা পছন্দনীয়, কোন কোন পরিস্থিতিতে অপরিহার্য, কোন কোন পরিস্থিতিতে একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত জায়েয কিন্তু ঐ সীমার বাইরে নাজায়েয এবং কোন কোন পরিস্থিতিতে একেবারেই নাজায়েয ৷ তাই একথা বলা হয়নি যে, ধারণা বা খারাপ ধারণা করা থেকে একদম বিরত থাকো ৷ বরং বলা হয়েছে, অধিকমাত্রায় ধারণা করা থেকে বিরত থাকো ৷ তাছাড়া নির্দেশটির উদ্দেশ্য সুস্পষ্ট করার জন্য আরো বলা হয়েছে , কোন কোন ধারণা গোনাহ ৷ এ সতর্কীকরণ দ্বারা আপনা থেকেই বুঝা যায় যে, যখনই কোন ব্যক্তি ধারণার ভিত্তিতে কোন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে কিংবা কোন পদক্ষেপ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তখন তার ভালভাবে যাচাই বাছাই করে দেখা দরকার, যে ধারণা সে পোষণ করেছে তা গোনাহের অন্তর্ভুক্ত নয় তো? আসলেই কি এরূপ ধারণা পোষনের দরকার আছে? এরূপ ধারণা পোষনের জন্য তার কাছে যুক্তিসংগত কারণ আছে কি? সে ধারণার ভিত্তিতে সে যে কর্মপদ্ধতি গ্রহণ করেছে তা কি বৈধ? যেসব ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে এতটুকু সাবধানতা তারা অবশ্যই অবলম্বন করবে ৷ লাগামহীন ধারণা পোষণ কেবল তাদেরই কাজ যারা আল্লাহর ভয় থেকে মুক্ত এবং আখেরাতের জবাবদিহি সম্পর্কে উদাসীন ৷

আসক্তি

 আসক্তি নিয়ে কুরআন

আল্লাহ্ বলেন- ‘নারী, সন্তান-সন্ততি, জমাকৃত সোনা-রূপার ভাণ্ডার, পছন্দসই (চিহ্নিত) ঘোড়া, চতুষ্পদ জন্তু ও ক্ষেত-খামার প্রভৃতি কামনীয় জিনিসকে মানুষের নিকট শোভনীয় করা হয়েছে। এসব ইহজীবনের ভোগ্য বস্তু। আর আল্লাহর কাছেই উত্তম আশ্রয়স্থল রয়েছে’ (ইমরান: ১৪)।
‘কামনীয় জিনিস’ বলতে এখানে এমন সব জিনিসকে বুঝানো হয়েছে, প্রাকৃতিকভাবে মানুষ যার প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং যা পছন্দ করে। এই জন্যই তার প্রতি আকৃষ্ট হওয়া এবং তা ভালোবাসা অপছন্দনীয় নয়। আকর্ষণীয় এই সুশোভন আল্লাহর পক্ষ হতে মানুষের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ। তিনি বলেন, ‘আমি পৃথিবীস্থ সব কিছুকে পৃথিবীর জন্য শোভা করেছি মানুষকে পরীক্ষার জন্য।-’ (সূরা কাহ্ফ ১৮:৭)।
আলোচ্য আয়াতে কামনীয় জিনিসের মধ্যে সর্বপ্রথম মহিলার কথা উল্লেখ হয়েছে। রমণী পুরুষের কাছে সর্বাধিক বেশি রমণীয় ও কমনীয়। রাসূল সা: বলেছেন, ‘মহিলা এবং সুগন্ধি আমার কাছে অতি প্রিয় জিনিস’ (মুসনাদে আহমদ)। অনুরূপ তিনি বলেছেন, ‘নারী হলো দুনিয়ার সব চেয়ে উৎকৃষ্টমানের সামগ্রী।’
তাই যদি নারীর প্রতি (বৈধ) ভালোবাসা শরীয়তের সীমা অতিক্রম না করে, তা হবে আখিরাতের সম্বলও।

হলুদ ও রোগ নিরাময়

রান্নাঘরে হলুদ আছে?

সমাধান আছে জলদি
বেশির ভাগ বাঙালি হেঁশেলেই হলুদ থাকে। গুঁড়ো হলুদ বেশি ব্যবহার হলেও, কেউ কেউ নিয়মিত কাঁচা হলুদ কেনেন বাজার থেকে। তবে হালে কাঁচা হলুদ খাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। কারণ অতিমারির শুরুতে অনেকে দাবি করেছিলেন, কাঁচা হলুদ না কি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আটকাতে পারে। যদিও সেই দাবির সত্যতা প্রমাণিত হয়নি।
তবে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে পারুক বা না পারুক, হলুদের অন্য অনেক গুণ আছে। সেগুলি ইতিমধ্যেই প্রমাণিত। এমনই কয়েকটির তালিকা রইল
• গাঁটের ব্যথা সারায়: অনেকেরই হাড়ের সংযোগস্থলে ব্যথা হয়। এগুলি মূলত বাতের ব্যথা। হলুদে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যেগুলি বাতের ব্যথা কমাতে পারে। হাড়ের সংযোগস্থলের নমনীয়তা বাড়ায় হলুদ। দীর্ঘ দিনের পুরনো ব্যথাও কমিয়ে দিতে পারে অনেকাংশে।
• যকৃতের ক্ষমতা বাড়ে: প্রতি দিন খাবারের সঙ্গে নানা দূষিত পদার্থ শরীরে ঢোকে। এগুলি শরীরের নানা ক্ষতি করে। সবচেয়ে বেশি মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় যকৃত। হলুদে উচ্চমানের অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট আছে। এটি যকৃত সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এর ক্ষমতাও বাড়ায়।
• রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি হয়: হলুদ এমন একটি খাবার, যার মধ্যে একই সঙ্গে ব্যাক্টিরিয়া, ভাইরাস এবং ছত্রাক জাতীয় সংক্রমণ আটকানোর উপাদান রয়েছে। ফলে মরসুম বদলের সময়ে নিয়মিত একটু করে হলুদ খেলে নানা রকম রোগবালাই দূরে থাকে।
• মস্তিষ্কের পুষ্টি হয়: শিশুদের জন্য হলুদ খুবই উপকারী। কারণ বাড়ন্ত বয়সে মস্তিষ্কের যে পুষ্টির দরকার হয়, তার অনেকটিই পাওয়া যায় হলুদ থেকে।
• ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে: হলুদে থাকা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ওজন কমাতে সাহায্য করে। কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা, হলুদের কিছু উপাদান মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। কিছু কিছু হরমোন মানসিক চাপ বাড়িয়ে দেয়। এই হরমোনগুলির ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে হলুদ। আর মানসিক চাপ কমলে ওজনও কমে।
-আনন্দবাজার

কসমেটিকস কি আপনাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে?

কেনার আগেই জেনে নিন

দোকান থেকে বিউটি প্রোডাক্ট কেনার সময়, তাতে কোন কোন যৌগ ব্যবহার করা হয়েছে, তা দেখে কেনেন ক’জন? কিন্তু জানেন কি, এই সব বিউটি প্রোডাক্ট-এ এমন কিছু যৌগ ব্যবহার হয়, যা ব্যবহারকারীর স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক? শুধু তাই নয়, মারণ রোগের দিকেও ঠেলে দিতে পারে এই সব যৌগ। তাই এরপর থেকে বিউটি প্রোডাক্ট কেনার আগে দেখে নেবেন, এই সব যৌগ তাতে রয়েছে কি না। থাকলে তৎক্ষণাত বাদ দেবেন এই প্রডোক্টগুলোঃ
১। বিএইচএ এবং বিএইচটি(বুটিলেটেড হাইড্রক্সিয়ানসোল (বিএইচএ) বায়োলেটেড হাইড্রক্সিটলুয়েন (বিএইচটি))
ত্বকের রং হালকা করার জন্য এই যৌগ ব্যবহার করা হয়। কিন্তু তার পাশাপাশি এটি ক্যান্সারের মতো রোগও ডেকে আনতে পারে। পরিবেশের জন্য খুব খারাপ এই যৌগ দু’টি। জলে মিশলে মাছের ক্ষতি হয়। কোনও ভাবে পেটে গেলে লিভার খারাপ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ত্বকে ব্যবহার করলেও, পরে থাইরয়েডের সমস্যা ডেকে আনতে পারে এরা।
২। ফর্মালডিহাইড
নেল পলিশ, বডি ওয়াশ, কন্ডিশনার, শ্যাম্পু, আই শ্যাডোর মতো প্রোডাক্ট-এ এই ফর্মালডিহাইড ব্যবহার করা হয়। আপাত ভাবে এর ব্যবহার হল ব্যাকটেরিয়া মারতে। কিন্তু ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি অফ রিসার্চ অন কারসিনোজেন-এর মতে, এটি মানুষের জন্য প্রচণ্ড ভাবে ক্যান্সার ঘটাতে পারে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমিয়ে দেয় এই যৌগ।
৩। বোরিক অ্যাসিড
বাজারে প্রচুর পরিমাণে বিক্রি হয় ত্বক ফরসা করার ক্রিম। কিন্তু জানেন কি, এতে থাকতে পারে সোডিয়াম বোরেট বা বোরিক অ্যাসিড? এই বোরিক অ্যাসিড শরীরে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। পুরুষদের ক্ষেত্রে এই বোরিক অ্যাসিডের ক্ষতিকারক প্রভাব আরও বেশি। শুক্রাণু পরিমাণ কমে যেতে পারে এর কারণে। এবং পুরুষ প্রজননক্ষমতা হারাতে পারেন এই যৌগ অতিরিক্ত পরিমাণে শরীরে গেলে।
৪। মার্কারি
ভয়ানক যৌগ। যদিও বহু কসমেটিক-এই এর ব্যবহার হয়। কারণ মার্কারি বা পারদ ত্বক উজ্জ্বল করতে পারে। আই শ্যাডো বা আই মেকআপে এর বেশি ব্যবহার হয়। মস্তিষ্কের ক্ষতি করতে পারে মার্কারি। যে কোনও প্রোডাক্ট কেনার আগে দেকে নিন, তাতে ক্যালোমেল, মারকিউরিও, মারকিউরিও ক্লোরাইড বা সাধারণ মার্কারি-র কথা লেখা আছে কি না। থাকলে কোনও ভাবেই ব্যবহার করবেন না সেটি।
৫। ফ্র্যাগরান্স
শ্যাম্পু, কোলোন, কন্ডিশনার, বডি ওয়াশের মতো প্রোডাক্ট কেনার সময়, বহু নামী কোম্পানিরও বোতলেই উপাদানের তালিকায় এই শব্দটি লেখা থাকে। কিন্তু ফ্র্যাগরান্স মানে কি শুধুই সুগন্ধ? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই নামের আড়ালে রয়েছে এমন কতগুলো যৌগ, যেগুলোর কথা কোম্পানিরা প্রকাশ্যে বলতে চায় না। এবং সেই সব যৌগের ব্যবহারে অ্যালার্জি, শ্বাসকষ্ট থেকে প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পর্যন্ত হতে পারে।
৬। পলিইথিলিন গ্লাইকল
চুলের তেলচিটে ভাব দূর করতে পারে এই যৌগ। তাই শ্যাম্পুতে এর ব্যবহার করা হয়। কিন্তু মনে রাখবেন, এই যৌগ একই সঙ্গে ত্বকের স্বাভাবিক তৈলাক্ত ভাবও নষ্ট করতে পারে। তাতে ত্বকের ক্যান্সার থেকে মস্তিষ্কের ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। তাই শ্যাম্পু কেনার আগে তাতে পলিইথিলিন গ্লাইকল বা পিইজি আছে কি না পরীক্ষা করে নিন।

তিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন

 তিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন৷- সূরা আল মুলক, আয়াত ০২

আল্লাহ পৃথিবীতে মানুষের জীবন ও মৃত্যুর এ ধারাবাহিকতা চালু করেছেন তাকে পরীক্ষা করার জন্য, কোন মানুষটির কাজ বেশী ভাল তা দেখার জন্য৷ এ সংক্ষিপ্ত বাক্যটিতে বেশ কিছু সত্যের প্রতি ইংগিত দেয়া হয়েছেঃ
প্রথম হলো, মৃত্যু এবং জীবন তাঁরই দেয়া৷ আর কেউ জীবনও দান করতে পারে না, মৃত্যুও না৷
দ্বিতীয় হলো, মানুষ একটি সৃষ্টি, তাকে ভাল এবং মন্দ উভয় প্রকার কাজ করার শক্তি দেয়া হয়েছে৷ তার জীবন বা মৃত্যু কোনটিই উদ্দেশ্যহীন নয়, সৃষ্টা তাকে এখানে সৃষ্টি করেছেন পরীক্ষার জন্য৷ জীবন তার জন্য পরীক্ষার সময় বা অবকাশ মাত্র৷ মৃত্যুর অর্থ হলো, তার পরীক্ষার সময় ফুরিয়ে গেছে৷
তৃতীয় হলো, এ পরীক্ষার জন্য স্রষ্টা সবাইকে কাজের সুযোগ দিয়েছেন৷ সে ভাল মানুষ না খারাপ মানুষ, এ পৃথিবীতে কাজের মাধ্যমে সে যাতে তার প্রকাশ ঘটাতে পারে সে জন্য সৃষ্টিকর্তা প্রত্যেককে কাজের সুযোগ দিয়েছেন৷
চতুর্থ হলো, কার কাজ ভাল এবং কার কাজ খারাপ প্রকৃতপক্ষে সৃষ্টিকর্তাই তার ফায়সালা করবেন৷ কাজের ভাল-মন্দ বিচার করার মানদণ্ড নির্ধারণ করা পরীক্ষার্থীর কাজ নয়, বরং পরীক্ষা গ্রহণকারীর কাজ৷ তাই যারাই পরীক্ষায় সফল হতে চাইবে, তাদেরকে জানতে হবে পরীক্ষা গ্রহণকারীর দৃষ্টিতে ভাল কাজ কি?
পঞ্চম বিষয়টি পরীক্ষা কথাটির মধ্যেই নিহিত৷ তা হলো, যার কাজ যেমন হবে তাকে সে অনুপাতেই প্রতিফল দেয়া হবে৷ কারণ ফলাফলই যদি না থাকে তাহলে পরীক্ষা নেয়ার আদৌ কোন অর্থ হয় না৷

অ্যান্টাসিড থেকে সাবধান

 Antacids Cause Kidney Disease

আমাদের মধ্যে বহু মানুষ কথায় কথায় অ্যান্টাসিড (Antacid) খেয়ে নেন। যদিও এই অভ্যাস আপনার করে দিচ্ছে ঘোর ক্ষতি। এমনকী এর থেকে হতে পারে ক্রনিক কিডনি ডিজিজও (Chronic Kidney Disease)। তাই আজ থেকেই সাবধান।
সজীবের প্রচণ্ড গ্যাসের সমস্যা। তবে তিনি চিকিতসকের পরামর্শ নেন না। বরং নিজের বুদ্ধির উপরই আস্থা রাখেন। এই কারণে ওষুধের দোকানে গিয়ে কিনে ফেলেন অ্যান্টাসিড। তারপর বাড়িতে এসেই জল দিয়ে খেয়ে গিলে নেন সেই ওষুধ। এভাবেই বছরের পর বছর কেটে যাচ্ছে। তবে তিনি জানতেও পারছেন না তিনি কোন ভুলটাই না করছেন। এক সমস্যা কাটাতে গিয়ে জন্ম দিচ্ছেন অপর এক সমস্যা। এই অ্যান্টাসিড অগচোরেই করে দিচ্ছে মারাত্মক ক্ষতি। অন্তত এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
একনজরে অ্যান্টাসিড
এই ওষুধগুলিকে বিজ্ঞানসম্মত ভাষায় বলে পিপিআই বা প্রোটোন পাম্প ইনহিবিটর (এমন ধরনের ওষুধ যার প্রধান কাজ হলো পাকস্থলীর প্যারাইটাল কোষ থেকে এসিড নিঃসরণ কমানো)। সাধারণত অ্যাসিড (Acid Reflux), বদহজম (Indigestion), পেপটিক আলসারের (Peptic Ulcers) ক্ষেত্রে এই ওষুধ ব্যবহার হয়।
সমস্যা কখন?
মুশকিল হল, এই ওষুধটি দোকানে প্রেসক্রিপশন ছাড়া বিক্রি হয়। যদিও বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টাসিড খাওয়া উচিত নয়। কারণ চিকিতসকরাই জানেন এই ওষুধের ডোজ কতটা দিতে হবে। সেই মতোই খেতে হয় ওষুধ। নইলে এক অসুখ তাড়াতে গিয়ে অন্য সমস্যা উঁকি দেয়। তাই এই ওষুধ ডাক্তারবাবুরা অহেতুক খেতে বারণ করে থাকেন।
কী কী সমস্যা হয়?
বিভিন্ন সমস্য়া হতে পারে। এমনকী সার্বিক স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়াও সম্ভব। গবেষণা বলছে, টপাটপ অ্যান্টাসিড খেলে ক্রনিক কিডনি ডিজিজ, অ্যাকিউট কিডনি ডিজিজ ইত্যাদি রোগ দেখা দেওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই কিডনি বিশেষজ্ঞরা এই বদোভ্যাস নিয়ে বিশেষ রকম সতর্ক করেছেন।
তবে দোষ কেবল সাধারণ মানুষের নয়। বহু বিশেষজ্ঞও অ্যান্টাসিড ব্যবহার নিয়ে তেমন আমল দেন না বলে বিভিন্ন স্তর থেকে অভিযোগ উঠে আসছে। কিন্ত কেন এমনটা হচ্ছে? অনেকের মতে, এই সকল বিষয়গুলি কেবল জার্নালের পেজেই বন্ধ থাকে। তার বাইরে কোনও প্রচার নেই। তাই সকলের পক্ষে এই বিষয়টি জানা সম্ভব নয়। তবে বর্তমানে এই সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ছে বলেই মত দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই অচিরেই এই সমস্যা থেকে সমাধান মিলবেন বলেই আশাবাদি সকলে।
মনে রাখবেন
এক-আধদিন খেলে অসুবিধে নেই। তবে নিয়মিত অ্যান্টাসিড খাওয়ার আগে অবশ্যই ভাবুন। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। তাঁর মত অনুযায়ী, অ্যান্টাসিড খান। কারণ তিনি প্রথমে আপনার শরীরের সমস্যা ধরবেন। তারপর ঠিক করবেন, আপনার কোন ধরনের অ্যান্টাসিড লাগবে বা আদৌও তা লাগবে কি না। কখন, কতটা ডোজে সেই ওষুধ খেতে হবে তাও ঠিক করবেন তিনিই। তাই নিজের বুদ্ধি কাজে লাগাতে যাবেন না। বিশেষজ্ঞের উপর ভরসা করুন। আর গ্যাসের সমস্যা প্রায়ই চলতে থাকলে খাওয়াদাওয়া ঠিক করুন। বাইরের খাবার এড়িয়ে চলুন। বাড়িতে কম তেল, মশলা দিয়ে খাবার খান। খাবারের মধ্যে শাকসবজি, হোল গ্রেইন জাতীয় খাবার বেশি রাখুন। মাছ, মাংস, ডিম খান পরিমিত। তবেই ভালো থাকবেন।
-এইসময়
-নিজ পাঠ

মাছ খেয়েই ওজন কমানো সম্ভব

 ভাতে-মাছে বাঙালি বলে কথা। দুপুরের ভোজে একটু মাছের ঝোল-ভাত না হলে হয়? কিন্তু উদর তো পূর্তিতে বেড়েই চলেছে। সেক্ষেত্রে ওজন কমানোটাও জরুরি হয়ে পড়ছে (Fish for Weight Loss)।

কিন্তু জানেন কি, মাছ খেয়েই ওজন কমানো সম্ভব। ওমেগা-৩ (থ্রি) ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ মাছ শরীরের পক্ষে দারুণ উপকারী । চোখ, চুল ও স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন কমানোর দারুণ উপায় এই মাছগুলি।
সাধারণত অন্য আমিষ খাবারের চেয়ে এক টুকরো মাছে ক্যালোরি অনেকটাই কম থাকে। সঙ্গে মাছে থাকা প্রোটিন শরীরের প্রয়োজন মেটায়। গবেষণা বলছে, স্ট্রেস, চাপ, প্রদাহ এসব ওজন বাড়ানোর সহায়ক। মাছে থাকে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড যা প্রদাহ দূর করে। এবং শরীরকে ভালো মেটাবলিজম দেয় যা ওজন কমাতে সাহায্য করে।
স্যালমন বা রাভা-- এই মাছে প্রচুর ওমেগা, ভিটামিন বি, সেলেনিয়াম, ভিটামিন ডি থাকে। হার্টের স্বাস্থ্য, ডিমেনশিয়া, মানসিক অবসাদ কাটােত দারুণ কার্যকরী এই মাছ। অবশ্যই পাতে রাখুন। যে কোনও সুপারমার্কেটে পাওয়া যায়। বড় বাজারেও ওঠে।
সার্ডিন বা টারলি-- রোদের অভাবে শরীরে ভিটামিন ডি-র অভাব হয়। ভারতীয় মহিলাদের এই সমস্যা খুবই পরিচিত। ফলে শরীরে অল্প বয়স থেকেই ব্যথার সমস্যা তৈরি হয়। সার্ডিন মাছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি ও বি১২ ভিটামিন থাকে। গোটা মাছ খেতে দারুণ উপকার পাবেন।
ম্যাকরেল বা বাঙদা-- ছোট্ট তৈলাক্ত এই মাছে সেলেনিয়াম ও ভিটামিন ১২ ভিটামি ডি ভর্তি। শরীরের জন্য উপকার প্রচুর।
টুনা-- সব জায়গায় না পাওয়া গেলেও, সুপারমার্কেটে টুনার ক্যান কিনতে পাওয়া যায়। বাড়িতে টুনা এনে রেসিপি দেখে বানিয়ে খান। শরীরের দারুণ কাজে লাগবে, স্বাদেও অনবদ্য। এতে ওমেগা ৩, ভিটামিন ডি ও প্রোটিন ভরপুর।
বাঙালীর ইলিশও কম যায় না- কমবে ওজন, মিলবে পুষ্টি
ইলিশ মাছের নাম শুনলে জিবে জল আসে না, এমন বাঙালি আছেন কি? শর্ষে ইলিশ, ভাপা ইলিশ, ইলিশ পাতুরি, দই ইলিশ, ইলিশের টক, ভাজা ইলিশ, ইলিশের ভর্তা, আরও কত কি! বাঙালির রান্নাঘরে ইলিশের পদের তো শেষ নেই। বাঙালির ইলিশপ্রেম যতটা খাঁটি, ইলিশের বাঙালিপ্রেমও কিন্তু ঠিক ততটাই। স্বাদে অনন্য ইলিশ পুষ্টিগুণেও ভরপুর। প্রতি ১০০ গ্রাম ইলিশে প্রায় ২১.৮ গ্রাম প্রোটিনের পাশাপাশি রয়েছে উচ্চ পরিমাণ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, নায়সিন, ট্রিপ্টোফ্যান, ভিটামিন, বি ১২, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়ামসহ অন্যান্য ভিটামিন ও মিনারেলস। এ ছাড়া অন্যান্য উপকারিতা তো আছেই। এবার জেনে নিন আরও কিছু চমতকার উপকারিতা।
হৃদপিন্ডের জন্য
ইলিশ মাছে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ একেবারেই কম। অন্য দিকে প্রচুর পরিমাণ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকায় রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কম থাকে। ফলে হৃদপিন্ড থাকে সুস্থ।
রক্ত সঞ্চালন সুবিধা
সামুদ্রিক মাছে থাকা ইপিএ ও ডিএইচএ(ইকোসাপেন্টাইওনিক এসিড ও ডোকোজেএক্সেনিক অ্যাসিড) ওমেগা-৩ তেল শরীরে ইকসিনয়েড হরমোন তৈরি রুখতে পারে। এই হরমোনের প্রভাবে রক্ত জমাট বেঁধে শিরা ফুলে যায়। ইলিশ মাছ খেলে শরীরে রক্ত সঞ্চালন ভালো হয়। থ্রম্বসিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে।
বাতব্যথার উপশম
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের সঙ্গে অস্টিওআর্থ্রাইটিসের প্রত্যক্ষ যোগ রয়েছে। প্রতিদিনের ডায়েটে সামুদ্রিক মাছ থাকলে বাতের ব্যথা, গাঁট ফুলে গিয়ে যন্ত্রণার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
চোখের স্বাস্থ্যে উপকারী
তেলযুক্ত মাছ খেলে চোখের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। চোখ উজ্জ্বল হয়। বয়সকালে দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে আসা মোকাবিলা করতে পারে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। ইলিশ মাছের মধ্যে থাকা ভিটামিন এ রাতকানা রোগের মোকাবিলা করতেও সাহায্য করে।
প্রয়োজনীয় খনিজ মেলে ইলিশে
ইলিশ মাছে রয়েছে আয়োডিন, সেলেনিয়াম, জিংক, পটাশিয়াম। থাইরয়েড গ্ল্যান্ড সুস্থ রাখে আয়োডিন, সেলেনিয়াম উতসেচক ক্ষরণে সাহায্য করে, যা ক্যানসার মোকাবিলা করতে পারে। এ ছাড়া ভিটামিন এ ও ডির উত্কৃষ্ট উত্স ইলিশ মাছ।
ফুসফুসের জন্য
বহু গবেষণায় দেখা গেছে, সামুদ্রিক মাছ ফুসফুসের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কার্যকর। শিশুদের ক্ষেত্রে হাঁপানি রোধ করতে পারে ইলিশ মাছ। যাঁরা নিয়মিত মাছ খান, তাঁদের ফুসফুস অনেক বেশি শক্তিশালী হয়।
অবসাদ কাটাতে
ওমেগা-ত ফ্যাটি অ্যাসিড অবসাদের মোকাবিলা করতে পারে। সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিজঅর্ডার (এসএডি), পোস্ট ন্যাটাল ডিপ্রেশন কাটাতে পারে ইলিশ মাছ।
ত্বকের যত্নে
সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির হাত থেকে ত্বককে রক্ষা করে ইলিশ খাওয়ার অভ্যাস। নিয়মিত মাছ খেলে অ্যাকজিমা, সিরোসিসের হাত থেকে রক্ষা পায় ত্বক। ইলিশ মাছে থাকা প্রোটিন কোলাজেনের অন্যতম উপাদান। এই কোলাজেন ত্বক টাইট ও নমনীয় রাখতে সাহায্য করে।
পেটের যত্নে
ডায়েটে তেলযুক্ত মাছ থাকলে পেটের সমস্যা অনেক কম হয়। আলসার, কোলাইটিসের হাত থেকে রক্ষা করে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড।
ব্রেন
মস্তিষ্কের ৬০ শতাংশই তৈরি ফ্যাট দিয়ে, যার অধিকাংশই ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। যাঁরা নিয়মিত মাছ খান, তাঁদের মধ্যে বয়স বাড়ার পর ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা অনেক কম দেখা যায়। শিশুদের মস্তিষ্কের গঠনেও সাহায্য করে ডিএইচএ। অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিজঅর্ডার (এডিএইচডি) রোধ করতে পারে ইলিশ মাছ। স্মৃতিশক্তি বাড়ায়, পড়াশোনায় মনোযোগী করে।
-নিউজ১৮
-প্রথম আলো
-নিজ পাঠ

ধন যখন অস্বস্তির কারণ

 কিয়ামতের দিন যেসব ধনী শাস্তির সম্মুখীন হবে

ধন-সম্পদ মহান আল্লাহর নিয়ামত। এটি হালাল পদ্ধতিতে অর্জন করলে এবং আল্লাহর নির্দেশিত পদ্ধতিতে আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় ব্যয় করলে এটি জান্নাতের সোপান হতে পারে। কিন্তু কেউ যদি তা অর্জনে এতটাই বেপরোয়া হয়ে ওঠে যে সে আল্লাহকেই ভুলে যায়, হালাল-হারামের পার্থক্য করে না, সম্পদের নেশায় জুলুম-অত্যাচারে লিপ্ত হয়ে যায়, তাহলে তা সম্পদের মালিককে জাহান্নামের দিকে টেনে নিয়ে যাবে। তাদের পরম যত্নে আগলে রাখা ধন-সম্পদ দিয়েই তাদের কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে। যেই প্রাচুর্যের জন্য যারা মহান আল্লাহর আদেশ-নিষেধের তোয়াক্কা পর্যন্ত করেনি, সেই প্রাচুর্য হারিয়ে তারা নিঃস্ব হয়ে যাবে। কিয়ামতের দিন কিছু ধনী মানুষ একেবারে নিঃস্ব হয়ে উঠবে। তারা হলো—
জাকাত না দিয়ে সম্পদ জমাকারী : যারা আল্লাহ প্রদত্ত সম্পদ পেয়ে তাঁর শুকরিয়া আদায় করেনি, সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করেনি, কিয়ামতের দিন তাদের অবস্থা হবে ভয়াবহ। পবিত্র কোরআনে তাদের শাস্তির বর্ণনা দিতে গিয়ে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য পুঞ্জীভূত করে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, আপনি তাদের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দিন। যেদিন জাহান্নামের আগুনে সেগুলো উত্তপ্ত করা হবে এবং সেসব দিয়ে তাদের কপাল, পাঁজর আর পিঠে দাগ দেওয়া হবে, বলা হবে, এগুলোই তা যা তোমরা নিজেদের জন্য পুঞ্জীভূত করতে। কাজেই তোমরা যা পুঞ্জীভূত করেছিলে তার স্বাদ ভোগ করো।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৩৪-৩৫)
অনাহারীদের অন্ন না দানকারী : ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য হলো অনাহারীর আহারের ব্যবস্থা করা। যারা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও তা থেকে বিরত থাকবে, কিয়ামতের দিন তারা কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘কিন্তু যার আমলনামা তার বাঁ হাতে দেওয়া হবে, সে বলবে, হায়! আমাকে যদি দেওয়াই না হতো আমার আমলনামা, আর আমি যদি না জানতাম আমার হিসাব। হায়! আমার মৃত্যুই যদি আমার শেষ হতো। আমার ধন-সম্পদ আমার কোনো কাজেই এলো না। আমার ক্ষমতাও বিনষ্ট হয়েছে। ফেরেশতাদের বলা হবে, ধরো তাকে, তার গলায় বেড়ি পরিয়ে দাও। তারপর তোমরা তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করিয়ে দগ্ধ করো। তারপর তাকে শৃঙ্খলিত করো এমন এক শিকলে, যার দৈর্ঘ্য হবে ৭০ হাত, নিশ্চয়ই সে মহান আল্লাহর প্রতি ঈমানদার ছিল না, আর মিসকিনকে অন্নদানে উতসাহী করত না।’ (সুরা : হাক্কাহ, আয়াত : ২৫-৩৪)
কৃপণ : যেসব কারণে মানুষের ধ্বংস অবধারিত, তার মধ্যে কৃপণতা অন্যতম। এটি বরকত উঠিয়ে নেয়। মহান আল্লাহ কৃপণদের ওপর ভীষণ রাগান্বিত হন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর কেউ কার্পণ্য করলে এবং নিজেরা অমুখাপেক্ষী মনে করলে আর যা উত্তম তাতে মিথ্যারোপ করলে তার জন্য আমরা সুগম করে দেব কঠোর পথ। আর তার সম্পদ তার কোনো কাজে আসবে না, যখন সে ধ্বংস হবে।’ (সুরা : লাইল, আয়াত : ৮-১১)
অশ্লীল কাজে অর্থায়নকারী : যে কাজ করতে গেলে অর্থের প্রয়োজন হয়, তাই যারা ভালো কাজের উদ্যোগ নেয়, তারা যেমন ধনীদের দ্বারস্থ হয়, তেমনি যারা মন্দ কাজ করে, তারাও ধনীদের দ্বারস্থ হয়। অশ্লীল ও গুনাহর কাজে অর্থায়ন করা যেকোনো মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় বিপদের কারণ। পাপে সহযোগিতা করার কারণে তাদেরও পাপীদের সমপরিমাণ পাপ বহন করতে হবে এবং মহান আল্লাহর কঠিন আজাবের সম্মুখীন হতে হবে। এ ব্যাপারে সতর্ক করে মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে, তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আর আল্লাহ জানেন তোমরা জানো না। (সুরা : নুর, আয়াত : ১৯)
সুদখোর: সুদ ইসলামের দৃষ্টিতে জঘন্যতম অপরাধ। একে ব্যভিচারের চেয়েও নিকৃষ্ট পাপ মনে করা হয়। কিয়ামতের দিন সুদখোরদের কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা সুদ খায় তারা (কিয়ামতের দিন) তার মতো দাঁড়াবে, যাকে শয়তান স্পর্শ দ্বারা পাগল করে।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৭৫)
এ ছাড়া বিভিন্ন আয়াত ও হাদিসে যারা অবৈধ উপায়ে উপার্জন করে এবং গুনাহর কাজে ব্যয় করে, কিয়ামতের দিন তাদের দুর্ভোগের বিষয়ে বহু হুঁশিয়ারি রয়েছে।
Ref: কালের কন্ঠ

সম্পদ ও সৌভাগ্য লাভ

 মুসনাদে আহমদ ও সুনানে তিরমিজিতে আবু কাবাশা আনসারি (রহ.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে বলা হয়েছে, জ্ঞানীদের আচার-আচরণে জ্ঞানের বিশেষ প্রভাব আছে এবং একইভাবে মূর্খদের আচার-আচরণে মূর্খতার প্রভাব আছে। জ্ঞান লাভ ও অজ্ঞতার বিচারে পৃথিবীর মানুষ চার প্রকার। হাদিসে বলা হয়েছে, ‘দুনিয়া চার শ্রেণির মানুষের জন্য। তারা হলো—

১. আল্লাহ যে বান্দাকে সম্পদ ও জ্ঞান দান করেছেন। অতঃপর সে তাতে (সম্পদ আয় ও ব্যয় করার ক্ষেত্রে) প্রতিপালককে ভয় করে, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে, সে তাতে আল্লাহর অধিকার স্বীকার করে। এটাই সর্বোত্তম স্তর।
২.
“হে জ্ঞান,
করেছো ধনী কতনা জাতিরে
যাহারে ছেড়েছো
সে ই ডুবেছে তিমেরে।”
যে বান্দাকে আল্লাহ জ্ঞান দান করেছেন, কিন্তু সম্পদ দান করেননি। তবে তার নিয়ত পরিশুদ্ধ। ফলে সে বলে, যদি আমার সম্পদ থাকত, তবে আমি অমুক কাজ করতাম। তাকে তার নিয়ত অনুসারে সওয়াব দেওয়া হবে। প্রতিদান লাভে দ্বিতীয় ব্যক্তি প্রথম ব্যক্তির মতো। অর্থাত দান-সদকা ও আর্থিক ইবাদত করতে না পারলেও আল্লাহ তাকে সওয়াব দিয়ে দেবেন।
সোনার পাত্র ভাঙিলেও তারে
সোনা বলি সমাদর,
ধন নাশে জ্ঞানী জ্ঞানীই থাকে গো
অক্ষয় গুণাকর
মূর্খের যদি ধন নাশ হয়
কি বা মূল্য তার
মাটির পাত্র ভাঙিবা মাত্র
হয়ে যায় ধুলিসার।
৩. যে ব্যক্তিকে আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন, কিন্তু জ্ঞান দান করেননি। ফলে সে জ্ঞানহীন অবস্থায় সম্পদ ব্যয় করে। সে তাতে আল্লাহকে ভয় করে না, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে না এবং তাতে আল্লাহর অধিকার আছে, তা-ও সে জানে না। এই ব্যক্তি সবচেয়ে নিকৃষ্ট।
৪. যে ব্যক্তিকে আল্লাহ জ্ঞানও দেননি এবং সম্পদও দেননি। সে বলে, আমার সম্পদ থাকলে আমি অমুক ব্যক্তির তথা তৃতীয় জনের মতো (পাপ কাজ) করতাম। সে তার নিয়ত অনুসারে প্রতিদান পাবে এবং তাদের উভয়ের পরিণতি একই রকম হবে। অর্থাত মন্দ কাজ না করেও সে পাপের ভাগীদার হবে।
উল্লিখিত হাদিসে মানুষ ও পৃথিবীতে তাদের প্রাপ্তিকে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম শ্রেণি হলো যাদের জ্ঞান ও সম্পদ উভয়টি দেওয়া হয়েছে। এখানে জ্ঞান দ্বারা দূরদৃষ্টি, বিবেক-বুদ্ধি ও গভীর বোধ-উদ্দেশ্য, যা মানুষকে সঠিক পথ প্রদর্শন করে, তাকে পরিণতির ব্যাপারে সতর্ক করে। তার জ্ঞান তাকে বোঝায় সম্পদ মাধ্যম, গন্তব্য নয়। সে সম্পদের ক্ষেত্রে প্রতিনিধি মাত্র। নিশ্চয়ই সম্পদের প্রকৃত মালিক আল্লাহ। সুতরাং তার সম্পদে আল্লাহর সুদৃঢ় অধিকার আছে। ফলে সে সম্পদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করে, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে, সে নিজের প্রতি সুবিচার করে এবং জ্ঞান ও সম্পদ দ্বারা মানুষের প্রতি সুবিচার করে। এটাকেই হাদিসে সর্বোত্তম স্তর বলা হয়েছে।
দ্বিতীয় শ্রেণির মানুষ মর্যাদায় প্রথম শ্রেণির মতো। তারা হলো যাদের জ্ঞান দেওয়া হয়েছে, তবে সম্পদ দেওয়া হয়নি। ফলে তারা অর্থ ব্যয় করতে পারে না, দান করতে পারে না, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করতে পারে না। তবে তাদের এসব কাজ করার নিয়ত থাকে। কেননা জ্ঞান থাকায় তারা জানে আল্লাহ এসব কাজে সন্তুষ্ট হন। নিয়তের বিনিময়ে আল্লাহ তাদের উপযুক্ত প্রতিদান দেন। তবে নিয়ত মনের ভেতর উঁকি দেওয়া বা ভাসমান কোনো বিষয় নয়। বরং নিয়ত হলো সুদৃঢ় ইচ্ছা। মনের গভীরে যা স্থান করে নেয়। জ্ঞানী ব্যক্তির চিন্তা-ভাবনা ও আগ্রহ-উদ্দীপনায় নেক কাজের ইচ্ছা প্রবল থাকে। এ জন্য আল্লাহ তাকে প্রথম জনের মতো উত্তম প্রতিদান দেবেন।
তৃতীয় শ্রেণি, যাদের সম্পদ দেওয়া হয়েছে তবে জ্ঞান দেওয়া হয়নি। অর্থাত সে এমন উপকারী জ্ঞান থেকে বঞ্চিত ছিল, যা তাকে আল্লাহভীতি শেখাবে, তার দৃষ্টির জ্যোতি হবে, ভালো কাজের আগ্রহ তৈরি করবে এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখবে। হাদিসের ভাষায় এটাই নিকৃষ্টতম স্থান। তার এই অধঃপতনের কারণ হলো অজ্ঞতার মধ্যে ডুবে থাকা এবং জ্ঞান থেকে বঞ্চিত হওয়া। জ্ঞান না থাকায় সে জানে না তার সম্পদে আল্লাহর অধিকার আছে, সে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে না, সম্পদ দ্বারা অন্যের প্রতি সুবিচার করে না এবং সম্পদ অর্জন ও ব্যয়ে তার প্রতিপালক মহান আল্লাহকে ভয় করে না। ফলে তার সম্পদ ও প্রাচুর্য তাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। এমন সম্পদ তার না থাকাই তার জন্য কল্যাণকর ছিল। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তাকে যে সম্পদ দান করেছিলেন, তা দ্বারা সে জান্নাতের পাথেয় অর্জন করতে পারত। কিন্তু তা না করে সে জাহান্নামের পথ প্রশস্ত করেছে।
চতুর্থ শ্রেণির মানুষকে জ্ঞান ও সম্পদ কোনোটাই দান করা হয়নি। কিন্তু তার অজ্ঞতা ও অন্ধত্বের কারণে তার প্রত্যাশা ছিল যদি সে সম্পদ লাভ করে, তবে তা অবশ্যই প্রবৃত্তিপূজা ও পাপ কাজে ব্যয় করবে। ঠিক যেমনটি করে তৃতীয় শ্রেণির মূর্খ ধনী। ফলে সে তাদেরই দলভুক্ত হয়ে যায়। মন্দ নিয়তের কারণে সে তাদের উভয়ের পাপের ভাগ সমান হয়ে যায়। এই ব্যক্তি সবচেয়ে নির্বোধ ও বোকা। সে তার পরকালকে নষ্ট করেছে অথচ পার্থিব জীবনেও তার কোনো অর্জন নেই। তার মন্দ পরিণতির জন্য তার মন্দ নিয়ত ও খারাপ ইচ্ছাই শুধু দায়ী। নিঃসন্দেহে সে-ই সবচেয়ে হতভাগ্য, যে পৃথিবীতে দরিদ্রের জীবন যাপন করে এবং পরকালেও তার জন্য প্রস্তুত থাকে জাহান্নামের শাস্তি।
হাদিসের ব্যাখ্যা ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেন, প্রথম দুই শ্রেণি সৌভাগ্যবান। তাদের জ্ঞান ও জ্ঞানানুযায়ী তাদের আমল তাদের সৌভাগ্যের কারণ হয়েছে। দ্বিতীয় দুই শ্রেণি হতভাগ্য। অজ্ঞতা ও অজ্ঞতার পরিণতি তাদের দুর্ভাগ্যের কারণ হয়েছে।
-ড. ইউসুফ আল-কারজাভি/কালের কন্ঠ/নিজ পাঠ

তেজী বটে তেজপাতা!!

 তেজী বটে তেজপাতা!!

বাঙালি রান্নায় নিয়মিত তেজপাতা ব্যবহার হয়। সুগন্ধ তো বটেই, এ ছাড়াও এই পাতার অনেক গুণ। এর নানা উপাদান শরীরের নানা কাজে লাগে। কিন্তু রান্নার সময়ে গরম কড়াইয়ে তেজপাতা দিলে, তা থেকে যে ধোঁয়া ওঠে, সেটি শরীরে এক বিশেষ ধরনের প্রভাব ফেলে। এমনই বলছেন বিজ্ঞানীরা।
রান্নার সময়ে তেজপাতা থেকে তৈরি হওয়া ধোঁয়া শরীরে কেমন প্রভাব ফেলে, তার আগে জেনে নেওয়া যাক, তেজপাতার গুণগুলি।
• তেজপাতা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। যাঁরা ডায়াবিটিসের সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের খাবার রান্নার সময়ে তেজপাতা মেশাতে পারেন। শর্করার মাত্রা কমবে।
• শরীরে জমা দূষিত পদার্থ তেজপাতা বার করে দেয়। ফলে ওজন কমে।
• তেজপাতা হৃদ্‌রোগের আশঙ্কা কমায়। যাঁরা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের রান্নায় তেজপাতা মেশানো যেতে পারে। রক্তচাপ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
এই গুণগুলির কথা অনেকেই জানেন। কিন্তু তেজপাতার ধোঁয়া শরীরে গেলেও তার সুফল আছে। এমনই বলছেন কয়েক জন বিজ্ঞানী। দেখা গিয়েছে, তেজপাতার ধোঁয়া নাকে ঢুকলে কয়েকটি হরোমোনের ক্ষরণ বাড়ে। এই হরোনেগুলি মন ভাল রাখতে সাহায্য করে। ফলে রান্নার সময়ে তাতে তেজপাতা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তার সুফল পাওয়া যায়।

মশলার নাম “গরম” কেন?

 'গরম মশলা' বললেই আমরা 'আহ্' বলে উঠি। একটা আস্বাদের আঘ্রাণ যেন লেগে যায় জিভে। এ কথা ঠিক যে, গরম মশলা যে কোনও রান্নার স্বাদ বৃদ্ধি করে। কিন্তু গরম মশলাকে কেন 'গরম মশলা' বলে?

গরম মশলা আসলে শরীরের তাপমাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে, তাই এই মশলার নামের সঙ্গে 'গরম' শব্দটি যুক্ত হয়ে গিয়েছে। রান্নায় অতিরিক্ত গন্ধ এবং স্বাদ যোগ করে এই মশলা। তবে এই মশলার ফলে শরীরে যে তাপমাত্রা তৈরি হয় তা খারাপ নয়, তা প্রকারান্তরে স্বাস্থ্যের কাজেই লাগে। তা রোগ প্রতিরোধশক্তি বাড়িয়ে দেয়।
গরম মশলা আসলে নানা মশলার একটা মিশ্রণ। এতে থাকে গোলমরিচ, বড় এলাচ, ছোট এলাচ, দারুচিনি, লবঙ্গ। কখনও কখনও এ সবের সঙ্গে তেজপাতা, জায়ফল, জৈয়ত্রীও যোগ করা হয়।
গরম মশলায় থাকা প্রতিটি মশলারই আলাদা আলাদা কার্যকারিতা রয়েছে। যেমন দারুচিনি হৃদরোগ, সুগার ইত্যাদি রোধ করে। এমনকী ক্যান্সারের প্রতিকারেও কাজে লাগে। এভাবে প্রতিটি মশলাই কোনও না কোনও ভাবে শরীরকে রক্ষা করে।
ঘরেই গরম মশলা বানিয়ে নেওয়া যেতে পারে। গোটা গোলমরিচ, বড় এলাচ, ছোট এলাচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, তেজপাতা, জায়ফল, জৈয়ত্রীকে ছোট ছোট টুকরোয় ভেঙে গুঁড়ো করে নিয়ে তা বায়ু-নিরোধক কোনও কৌটোয়ে রেখে দেওয়া যেতে পারে। এর পর প্রয়োজনমতো একটু একটু ব্যবহার করলেই হল।
-জিনিউজচব্বিশঘন্টা

ক্ষুদ্র গ্লিটার(GLITTER) বৃহত ক্ষতি

 ক্ষুদ্র গ্লিটার(GLITTER) বৃহত ক্ষতি

গ্লিটার হল ছোট, প্রতিফলিত কণার একটি ভাণ্ডার যা বিভিন্ন আকার, আকার এবং রঙে আসে। চকচকে কণাগুলি বিভিন্ন কোণে আলো প্রতিফলিত করে, যার ফলে পৃষ্ঠটি ঝলমলে বা ঝলমলে হয়। বাচ্চারা ছবি আঁকার সময় এগুলো ব্যবহার করে।
চলতি মাসে রিডার্স ডাইজেস্টে একটি লেখা এসেছে, “Small steps can stop harming our Oceans”-শীর্ষক শিরোনামে। লেখাটি আমি বেশ মনযোগ দিয়ে পড়েছি। কিন্তু একটি জায়গায় এসে আমার চোখ দুটো আটকে যায়। ওরা লিখেছে- NOT ONLY IS GLITTER REALLY ANNOYING AND IMPOSSIBLE TO GET OUT OF YOUR HOUSE, BUT IT IS ALSO TERRIBLE FOR THE OCEANS. “MOST GLITTER PRODUCTS USED FOR CHILDREN’S ARTS AND CRAFTS ARE MADE FROM PLASTIC AND WHEN WASHED DOWN THE KITCHEN SINK WILL CONTRIBUTE THE GROWING OF MICROPLASTICS IN OUR ENVIRONMENT-“ SAYS DR. DUNE IVES, CEO OF LONELY WHALE-AN ENVIRONMENTAL ORGANISATION.
MICROPLASTICS ARE CONSUMED BY FISH BIRDS AND SEA TURTLES.
ONE STUDY FOUND THAT MICROPLASTICS HAVE BEEN CONTAMINATED THE DEEPEST POINT OF THE OCEAN, CHALLENGER DEEP, IN THE PACIFIC OCEAN’S MARIANA TRENCH, SHE SAYS. BUT YOU DON’T HAVE TO GIVE UP YOUR CHILDRE’S CRAFT PROJECTS-INSTEAD OPT FOR ECO-FRIENDLY ALTERNATIVES SUCH AS FOOD COLORING SALTS.
এখন আমরা চিন্তা করে দেখি যে ছেলে-মেয়েদের আঁকিবুকিতে আমরা যে গ্লিটার ব্যবহার করার জন্য উতসাহি করছি তাদেরকে কিনেও দিচ্ছি, সেই গ্লিটার যদি রান্না ঘরের সিঙ্ক বা বেসিন গড়িয়ে পৃথিবীর গভীরতম খাঁড়ি চ্যালেঞ্জার ডীপের ম্যারিয়ানা ট্রেঞ্চ অব্দি যায়- আর সেগুলো যদি পাখি, মাছ এবং সাগরে বিচরণশীল কচ্ছপগুলো খায় আর আমরা সেই প্রাণীগুলো যদি খেয়ে নিই -তাহলে গ্লিটারতো আমদের তথা মানুষের পেটেই এলো?
ঈশপের গল্প:
সেই ছোট বেলায় শোনায় ঈশপের গল্প মনে পড়ে গেল। গল্পটি এ রকম করে লেখাঃ
এক জলাশয়ে অনেক ভেক (ব্যাঙ) বাস করত। একবার কতগুলো বালক খেলাচ্ছলে সেই জলাশয়ে পাথর নিক্ষেপ করতে লাগল। বালকদের ছোঁড়া পাথরে অনেক ভেক মারা গেল, অনেক হলো আহত। অবশেষে এক সাহসী ভেক উঠে এল কিনারে। বলল, তোমরা আমাদের গায়ে পাথর ছুঁড়ে মারছ কেন?
বালকেরা বলল, এটা তো আমাদের কাছে খেলা।
সর্দার ভেক বলল, ওটা তোমাদের জন্য খেলা হতে পারে। কিন্তু আমাদের জন্য মরণ।
সেই ভেককুলের গল্পের মত এখনকার মাইক্রেপ্লাষ্টিক গ্লিটার। ওরা শুধু সামুদ্রিক প্রাণীই নয়-আমাদেরকেও মারছে।
আমরা সচেতন হবো কবে? কবে?
আল্লাহ পাক তার গ্রন্থ আল করআনে মানুষকে ভালবেসে উল্লেখ করেছেন, ظَهَرَ الْفَسَادُ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِي النَّاسِ لِيُذِيقَهُم بَعْضَ الَّذِي عَمِلُوا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ
জাহারাল ফাছা-দুফিল বাররি ওয়ালবাহরি বিমা-কাছাবাত আইদিন্না-ছি লিইউযীকাহুম বা‘দাল্লাযী ‘আমিলূলা‘আল্লাহুম ইয়ারজি‘ঊন।– সূরা আর রূম, আয়াত নং-৪১
মানুষ নিজ হাতে যা কামাই, তার ফলে স্থলে ও জলে অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে, আল্লাহ তাদেরকে তাদের কতক কৃতকর্মের স্বাদ গ্রহণ করাবেন সে জন্য; হয়ত (এর ফলে) তারা ফিরে আসবে।
দুনিয়ায় যে ব্যাপক বালা-মুসিবত দেখা দেয়, যেমন দুর্ভিক্ষ, মহামারি, ভূমিকম্প, শত্রুর আগ্রাসন, জালিমের আধিপত্য ইত্যাদি, এসবের প্রকৃত কারণ ব্যাপকভাবে আল্লাহ তাআলার হুকুম অমান্য করা ও পাপাচারে লিপ্ত হওয়া। এভাবে এসব বিপদাপদ মানুষের আপন হাতের কামাই হয়ে থাকে। আল্লাহ তাআলা মানুষের উপর এসব বিপদাপদ চাপান এজন্য, যাতে মানুষের মন কিছুটা নরম হয় এবং দুষ্কর্ম থেকে নিবৃত্ত হয়। প্রকাশ থাকে যে, দুনিয়ায় যেসব বিপদাপদ দেখা দেয়, অনেক সময় তার বাহ্যিক কারণও থাকে যা প্রাকৃতিক নিয়ম অনুযায়ী আপন কার্য প্রকাশ করে। কিন্তু এটা তাে বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সেই কারণও আল্লাহ তাআলারই সৃষ্টি এবং বিশেষ সময় ও বিশেষ স্থানে তার সক্রিয় হওয়াটাও আল্লাহ তাআলার ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল। তিনি নিজের সে ইচ্ছা সাধারণত মানুষের পাপাচারের ফলেই কার্যকর করেন। এভাবে এ আয়াত শিক্ষা দিচ্ছে, সাধারণ বালা-মুসিবতের সময় নিজেদের গুনাহের কথা স্মরণ করে আল্লাহ তাআলার কাছে তওবা ও ইস্তিগফারে লিপ্ত হওয়া চাই, যদিও আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় তা বাহ্যিক কোন কারণ ঘটিত বিষয়।
আল কুরআন বিষ্ময়করভাবে সত্য কথাই বলে আমাদের ভালোর জন্য! কিন্ত আমরা বিষ্ময়করভাবে নির্বিকার।
বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন ২০৫০ সাল নাগাদ আমাদের মহাসাগরগুলোতে মাছের চেয়ে প্লাষ্টিকের ওজন হবে দ্বিগুণ বা ৪ গুণ।
Source:
Al Quran
Reader’s Digest