ভাতে-মাছে বাঙালি বলে কথা। দুপুরের ভোজে একটু মাছের ঝোল-ভাত না হলে হয়? কিন্তু উদর তো পূর্তিতে বেড়েই চলেছে। সেক্ষেত্রে ওজন কমানোটাও জরুরি হয়ে পড়ছে (Fish for Weight Loss)।
কিন্তু জানেন কি, মাছ খেয়েই ওজন কমানো সম্ভব। ওমেগা-৩ (থ্রি) ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ মাছ শরীরের পক্ষে দারুণ উপকারী । চোখ, চুল ও স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন কমানোর দারুণ উপায় এই মাছগুলি।
সাধারণত অন্য আমিষ খাবারের চেয়ে এক টুকরো মাছে ক্যালোরি অনেকটাই কম থাকে। সঙ্গে মাছে থাকা প্রোটিন শরীরের প্রয়োজন মেটায়। গবেষণা বলছে, স্ট্রেস, চাপ, প্রদাহ এসব ওজন বাড়ানোর সহায়ক। মাছে থাকে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড যা প্রদাহ দূর করে। এবং শরীরকে ভালো মেটাবলিজম দেয় যা ওজন কমাতে সাহায্য করে।
স্যালমন বা রাভা-- এই মাছে প্রচুর ওমেগা, ভিটামিন বি, সেলেনিয়াম, ভিটামিন ডি থাকে। হার্টের স্বাস্থ্য, ডিমেনশিয়া, মানসিক অবসাদ কাটােত দারুণ কার্যকরী এই মাছ। অবশ্যই পাতে রাখুন। যে কোনও সুপারমার্কেটে পাওয়া যায়। বড় বাজারেও ওঠে।
সার্ডিন বা টারলি-- রোদের অভাবে শরীরে ভিটামিন ডি-র অভাব হয়। ভারতীয় মহিলাদের এই সমস্যা খুবই পরিচিত। ফলে শরীরে অল্প বয়স থেকেই ব্যথার সমস্যা তৈরি হয়। সার্ডিন মাছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি ও বি১২ ভিটামিন থাকে। গোটা মাছ খেতে দারুণ উপকার পাবেন।
ম্যাকরেল বা বাঙদা-- ছোট্ট তৈলাক্ত এই মাছে সেলেনিয়াম ও ভিটামিন ১২ ভিটামি ডি ভর্তি। শরীরের জন্য উপকার প্রচুর।
টুনা-- সব জায়গায় না পাওয়া গেলেও, সুপারমার্কেটে টুনার ক্যান কিনতে পাওয়া যায়। বাড়িতে টুনা এনে রেসিপি দেখে বানিয়ে খান। শরীরের দারুণ কাজে লাগবে, স্বাদেও অনবদ্য। এতে ওমেগা ৩, ভিটামিন ডি ও প্রোটিন ভরপুর।
বাঙালীর ইলিশও কম যায় না- কমবে ওজন, মিলবে পুষ্টি
ইলিশ মাছের নাম শুনলে জিবে জল আসে না, এমন বাঙালি আছেন কি? শর্ষে ইলিশ, ভাপা ইলিশ, ইলিশ পাতুরি, দই ইলিশ, ইলিশের টক, ভাজা ইলিশ, ইলিশের ভর্তা, আরও কত কি! বাঙালির রান্নাঘরে ইলিশের পদের তো শেষ নেই। বাঙালির ইলিশপ্রেম যতটা খাঁটি, ইলিশের বাঙালিপ্রেমও কিন্তু ঠিক ততটাই। স্বাদে অনন্য ইলিশ পুষ্টিগুণেও ভরপুর। প্রতি ১০০ গ্রাম ইলিশে প্রায় ২১.৮ গ্রাম প্রোটিনের পাশাপাশি রয়েছে উচ্চ পরিমাণ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, নায়সিন, ট্রিপ্টোফ্যান, ভিটামিন, বি ১২, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়ামসহ অন্যান্য ভিটামিন ও মিনারেলস। এ ছাড়া অন্যান্য উপকারিতা তো আছেই। এবার জেনে নিন আরও কিছু চমতকার উপকারিতা।
হৃদপিন্ডের জন্য
ইলিশ মাছে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ একেবারেই কম। অন্য দিকে প্রচুর পরিমাণ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকায় রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কম থাকে। ফলে হৃদপিন্ড থাকে সুস্থ।
রক্ত সঞ্চালন সুবিধা
সামুদ্রিক মাছে থাকা ইপিএ ও ডিএইচএ(ইকোসাপেন্টাইওনিক এসিড ও ডোকোজেএক্সেনিক অ্যাসিড) ওমেগা-৩ তেল শরীরে ইকসিনয়েড হরমোন তৈরি রুখতে পারে। এই হরমোনের প্রভাবে রক্ত জমাট বেঁধে শিরা ফুলে যায়। ইলিশ মাছ খেলে শরীরে রক্ত সঞ্চালন ভালো হয়। থ্রম্বসিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে।
বাতব্যথার উপশম
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের সঙ্গে অস্টিওআর্থ্রাইটিসের প্রত্যক্ষ যোগ রয়েছে। প্রতিদিনের ডায়েটে সামুদ্রিক মাছ থাকলে বাতের ব্যথা, গাঁট ফুলে গিয়ে যন্ত্রণার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
চোখের স্বাস্থ্যে উপকারী
তেলযুক্ত মাছ খেলে চোখের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। চোখ উজ্জ্বল হয়। বয়সকালে দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে আসা মোকাবিলা করতে পারে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। ইলিশ মাছের মধ্যে থাকা ভিটামিন এ রাতকানা রোগের মোকাবিলা করতেও সাহায্য করে।
প্রয়োজনীয় খনিজ মেলে ইলিশে
ইলিশ মাছে রয়েছে আয়োডিন, সেলেনিয়াম, জিংক, পটাশিয়াম। থাইরয়েড গ্ল্যান্ড সুস্থ রাখে আয়োডিন, সেলেনিয়াম উতসেচক ক্ষরণে সাহায্য করে, যা ক্যানসার মোকাবিলা করতে পারে। এ ছাড়া ভিটামিন এ ও ডির উত্কৃষ্ট উত্স ইলিশ মাছ।
ফুসফুসের জন্য
বহু গবেষণায় দেখা গেছে, সামুদ্রিক মাছ ফুসফুসের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কার্যকর। শিশুদের ক্ষেত্রে হাঁপানি রোধ করতে পারে ইলিশ মাছ। যাঁরা নিয়মিত মাছ খান, তাঁদের ফুসফুস অনেক বেশি শক্তিশালী হয়।
অবসাদ কাটাতে
ওমেগা-ত ফ্যাটি অ্যাসিড অবসাদের মোকাবিলা করতে পারে। সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিজঅর্ডার (এসএডি), পোস্ট ন্যাটাল ডিপ্রেশন কাটাতে পারে ইলিশ মাছ।
ত্বকের যত্নে
সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির হাত থেকে ত্বককে রক্ষা করে ইলিশ খাওয়ার অভ্যাস। নিয়মিত মাছ খেলে অ্যাকজিমা, সিরোসিসের হাত থেকে রক্ষা পায় ত্বক। ইলিশ মাছে থাকা প্রোটিন কোলাজেনের অন্যতম উপাদান। এই কোলাজেন ত্বক টাইট ও নমনীয় রাখতে সাহায্য করে।
পেটের যত্নে
ডায়েটে তেলযুক্ত মাছ থাকলে পেটের সমস্যা অনেক কম হয়। আলসার, কোলাইটিসের হাত থেকে রক্ষা করে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড।
ব্রেন
মস্তিষ্কের ৬০ শতাংশই তৈরি ফ্যাট দিয়ে, যার অধিকাংশই ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। যাঁরা নিয়মিত মাছ খান, তাঁদের মধ্যে বয়স বাড়ার পর ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা অনেক কম দেখা যায়। শিশুদের মস্তিষ্কের গঠনেও সাহায্য করে ডিএইচএ। অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিজঅর্ডার (এডিএইচডি) রোধ করতে পারে ইলিশ মাছ। স্মৃতিশক্তি বাড়ায়, পড়াশোনায় মনোযোগী করে।
-নিউজ১৮
-প্রথম আলো
-নিজ পাঠ
No comments:
Post a Comment