Monday, November 29, 2021

সহনশীলতার লড়াই

 সহনশীল হও। আল্লাহ নিজে সহনশীল

সহনশীলতা এমন একটি গুণ যা সবার ভাগ্যে জোটেনা-
আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ আল্লাহ কোমল। তাই তিনি প্রতিটি কাজে কোমলতা পছন্দ করেন। (বুখারী, মুসলিম)
গল্পের শুরু
জর্জ ডব্লিউ ম্যাকলরেন। ১৯৪৮ সালে জর্জ ওকলাহোমা ইউনিভার্সিটিতে আবেদন করেন(খুব সম্ভবত ৫৮ বছর বয়সে), সেখান থেকে স্নাতকত্ব ডিগ্রি অর্জন করার জন্যে। কিন্তু তার আবেদনপত্র বাতিল করা হয়, তার কালো রঙের জন্যে। বর্ণবৈষম্যের স্বীকার হয়েছিলেন তিনি।
হার মানেন নি তিনি। কোর্টে গেলেন। জিতে গেলেন কেস। ভর্তি হলেন ওকলাহোমা ইউনিভার্সিটিতে।
লড়াই এখানেই থেমে থাকলো না। আইনগত ভাবে ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হতে পেলেও, আর সকলের সাথে বসার সৌভাগ্য হলো না। ঘরের এক কোনায় সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের থেকে আলাদা হয়ে বসতে বাধ্য করা হল তাকে।
একদিন বা দুই দিন নয়। টানা দুই বছর তিনি সেইভাবে ক্লাস করে গেলেন। ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে তখন প্রায় ১২ হাজার ছাত্র ছাত্রী। একমাত্র জর্জ - প্রথম আফ্রিকান আমেরিকান মানুষ সেই ইউনিভার্সিটিতে এই ভাবে ক্লাস করে গেলেন।
এইভাবে প্রতিদিন অপমানিত লাঞ্ছিত বঞ্চিত তিরস্কৃত হয়ে তিনি আবার কোর্টে গেলেন। ততদিনে বেশ কিছু কালো, সংখ্যালঘু, আদিবাসী আমেরিকানরা সেই ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে। তাদেরও সাথে জর্জের মত ব্যবহার করা হতো। তাদের লাইব্রেরি, বসার জায়গা, পড়ার জায়গা সব আলাদা।
কোর্টের রায় এলো আবার জর্জের পক্ষেই। আসতে আসতে তারাও অধিকার পেলো ক্লাসের সবার সাথে বসার।
জর্জের কথায়, “সহপাঠীরা তার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে থাকত, সে যেন একটা পশু। কেউ তার সাথে কথা বলতো না, শিক্ষকরা তার উপস্থিতি অবজ্ঞার সাথে উপেক্ষা করে দিতো। তার প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হতো না। কিন্তু তিনি এমনভাবে পড়াশুনা করেছিলেন যে শেষের দিকে তারা আমার খোঁজ নিত। তারা(ছাত্ররা) তাদের প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ও বুঝতে আমার কাছে আসতো।”
"Some colleagues would look at me like I was an animal, no one would give me a word, the teachers seemed like they were not even there for me, nor did they always take my questions when I asked. But I devoted myself so much that afterwards, they began to look for me to give them explanations and to clear their questions."
ইউনিভার্সিটির তিনজন উল্লেখযোগ্য ছাত্রের মধ্যে তার নাম উল্লিখিত হয়েছিল। পরবর্তী কালে তিনি কানসাস ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স করেন এবং সেখানেই প্রফেসর হিসেবে কাজ করেন।
এতো সহনশীলতা, কষ্ট সহ্য করার এত ক্ষমতা - আমাদের সকলের কাছে পূজনীয়। সমস্ত প্রতিকূলতাকে পরাজিত করে, পড়াশুনার জন্যে, নিজের অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার জন্যে তার এই লড়াই আর অধ্যবসায় - প্রতিটি মানুষের জীবনের চলার পথের পাথেয় হয়ে ওঠা উচিত।
গল্পের শেষ
আমার প্রশ্ন হলো আমরা জর্জ ডব্লিউ ম্যাকলরেন-এঁর মত কতজন হতে পেরেছি?
কষ্ট থেকেই বোধ করি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত লিখেছিলেন-
জগত জুড়িয়া এক জাতি আছে
সে জাতির নাম মানুষ জাতি;
এক পৃথিবীর স্তন্যে লালিত
একই রবি শশী মোদের সাথি।
শীতাতপ ক্ষুধা তৃষ্ণার জ্বালা
সবাই আমরা সমান বুঝি,
কচি কাঁচাগুলি ডাঁটো করে তুলি
বাঁচিবার তরে সমান যুঝি।
দোসর খুঁজি ও বাসর বাঁধি গো,
জলে ডুবি, বাঁচি পাইলে ডাঙা,
কালো আর ধলো বাহিরে কেবল
ভিতরে সবারই সমান রাঙা।
বাহিরের ছোপ আঁচড়ে সে লোপ
ভিতরের রং পলকে ফোটে,
বামুন, শূদ্র, বৃহত, ক্ষুদ্র
কৃত্রিম ভেদ ধুলায় লোটে।
রাগে অনুরাগে নিদ্রিত জাগে
আসল মানুষ প্রকট হয়,
বর্ণে বর্ণে নাইরে বিশেষ
নিখিল জগত ব্রহ্মময়।
বংশে বংশে নাহিকো তফাত
বনেদি কে আর গর-বনেদি,
দুনিয়ার সাথে গাঁথা বুনিয়াদ
দুনিয়া সবারি জনম-বেদি।
সূত্র:
আল হাদীস
বিএন.কোর.ডটকম
-বাঙলা সংকলন
-নিজ পাঠ

No comments:

Post a Comment