আপনার খাদ্য তালিকায় শুকরের চর্বি নেই তো?
শূকরের মাংস ইউরোপ জুড়ে তাদের প্রোটিন বা আমিষ সরবরাহের অন্যতম একটা মাধ্যম। একমাত্র ফ্রান্সেই প্রায় বিয়াল্লিশ হাজারেরও বেশী শূকরের খামার রয়েছে। ইংল্যন্ডরও আনাচে কানাচে রয়েছে। এদের খাদ্য তালিকায় শূকরের মাংস একটি অতি আবশ্যকীয় ও উপাদেয় তালিকা।
আজকাল পুরো ইউরোপ, আমেরিকা আর পশ্চিমা বিশ্ব, এমনকি, সমগ্র বিশ্বব্যাপি স্বাস্থ সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে মানুষ খাদ্যে অতিরিক্ত ফ্যাট নিয়ে বড় বেশী চিন্তিত এবং সজাগ। খাদ্যে চর্বির আধিক্যই হৃদরোগের প্রধান কারণ, তাই ইউরোপীয়রা শূকরের মাংস খেলেও এর চর্বিকে যথাসম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। ফলে শূকরের মাংস সরবরাহকারীদের একটা বড় অংশ অপচয় হয়।
এই অপচয় ঠেকাতে তারা শূকরের চর্বিকে প্রসাধনী সামগ্রীর কাঁচামাল, ঔষধের মাধ্যম বা ঔষধ হিসেবে ব্যবহার, শল্য চিকিৎসায় ব্যবহার্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি নির্মাণ ব্যবহার করছে। প্রথমে শূকরের চর্বি দিয়ে সাবান, বিভিন্ন রকম তরল প্রসাধনী, ক্রিম ইত্যাদি উৎপাদন এবং বাজারজাত করা হয়, এটাও ব্যবসায়িক সফলতা পায়। বন্দুকের কার্তুজেও এই শূকরের চর্বি ব্যবহার হতো এক সময়।
ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানীগুলোও ঔষধ ও চিকিৎসা সামগ্রীতে এর ব্যবহার শুরু করে। সর্বপ্রথমে শরীরের অভ্যন্তরে সেলাই করার জন্য বিশেষ ধরনের সুতো; ‘ক্যটগাট’ তৈরিতে বেড়ালের চেয়ে শূকরের চর্বির প্রচলন বেশী।
ষাটের দশকে মুসলমান ইউরোপীয় পণ্যসামগ্রীর গায়ে লিপিবব্ধ উপাদানের তালিকায় pig fat শব্দটি দেখে আঁতকে উঠেন। কারণ মুসলমানের কাছে pig fat বা শূকরের চর্বি, মাংস বা রক্ত সকল কিছুই হারাম। তারা এ ব্যপারে জনগণকে সতর্ক করেন, সরকারের কাছেও দাবী জানান তে থাকেন এইসব ইউরোপীয় পণ্য আমদানীর অনুমতি না দেবার।
ফলে ইউরোপীয়রা তাদের পণ্যতে pig fat শব্দটির পরিবর্তে 'animal fat' শব্দটি ব্যবহার শুরু করে। কিন্তু সেই এনিমেল ফ্যাটও তো হারাম যদি তা হারাম জন্তু হয় বা হালাল পদ্ধতিতে জবেহ না হয়ে থাকে।
ইউরোপীয়ান বাবস্যায়ীরা পণ্যের বাজার হারানোর ভয়ে বিকল্প পন্থা উদ্ভাবন করে। বিকল্প পন্থাটইি হলো উৎপাদিত পণ্যে আঈন অনুযায়ী উপাদান সমুহের নাম লেখা হবে সাংকেতিক ভাষায়। সেই থেকে শিল্পকারখানায় উৎপাদিত পণ্য ও খাদ্য সামগ্রী প্রস্তুতে ব্যবহৃত উপাদানসমুহে সাধারণ মানুষের কাছে দুর্বোধ্য E-Codes ব্যবহার করা শুরু হয়।
একজন মুসলিম টেকনিশিয়ান (বিজ্ঞানী ড: এম আমজাদ খান) কাজ করতেন ফ্রান্সের Pegal শহরে অবস্থিত Departments of Food Administration এর মান নিয়ন্ত্রণ ল্যবরেটরিতে। তিনি দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় বের করেছেন বেশ ক’টি E-Codes যার প্রত্যেকটিই শূকরের চর্বিকে ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে। সেই E-Codes গুলো হলো;
E100, E110, E120, E 140, E141, E153, E210, E213, E214, E216, E234, E252, E270, E280, E325, E326, E327, E334, E335, E336, E337, E422, E430, E431, E432, E433, E434, E435, E436, E440, E470, E471, E472, E473, E474, E475, E476, E477, E478, E481, E482, E483, E491, E492, E493, E494, E495, E542, E570, E572, E631, E635, E904.
উক্ত তালিকায় উল্লেখিত E-Codes গুলোর বেশ ক’টি আমাদের দেশের জনপ্রিয় খাদ্যতালিকায় উপস্থিত। যেমন;
1 Cadburrys chocolate - E476
2 Igloo Ice Cream -E471,E433
3 Baskin Robbins Ice Cream E471
4 Foster Clarks Custard Powder-E110
5 Fadeco Ice Cream-E471
6 Nova Chewing Gum -E422
7 Demah Fresh -E422
8 Big Babool Chewing Gum
আল কুরআনে অন্তত চারটি জায়গায় মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন শূকরের মাংস এবং মৃত জন্তু জানোয়ার আর সেইসব জানোয়ার যা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নাম নিয়ে জবাই করা হয়েছে, মুসলমানদের জন্য হারাম করেছেন। এটা মোটমুটি অমুসলিম ব্যবসায়ী ও তাদের সরকার ও জনগোষ্ঠির সচেতন অংশটি খুব ভালো করেই জানে, কিন্তু তারপরেও তারা ভিন্ন কৌশলে জঘন্য এ কর্মটি করে চলেছে।
No comments:
Post a Comment