‘ভুল সবই
ভুল,
এ
জীবনের
পাতায়
পাতায়
যা
লেখা
সে
ভুল’-
পুরনো
দিনের
একটি
জনপ্রিয় গান। গাইতেন
সুজাতা
চক্রবর্তী। গানটি গেয়ে
একসময়
পরস্পর
মজা
ও
মশকারা
করতাম।
জীবনসায়াহেœ এসে
হঠাৎ
সেদিন
আবার
গানটি
শুনতে
পেলাম।
সুরের
নিচে
যেন
আর
একটা
অশ্রুত
সুর
শোনা
গেল।
গানের
একটি
কলি-
‘কোথা
থেকে
এলাম,
কোথায়
যাব,
কে
আমি?’
শুনতে
শুনতে
কে
যেন
জীবনবৃক্ষের মূল
ধরে
নাড়া
দিলো।
‘কে আমি’?
খুঁজতে
খুঁজতে
একটা
বাঁক
থেকে
অন্য
একটা
বাঁকে
ঘুরে
যায়
দিন।
প্রথম
জীবনের
উক্তি
আর
শেষ
জীবনের
উপলব্ধির মধ্যে
কত
যে
তফাৎ!
বিশ্বের প্রায়
সব
ধর্মের
সাধকেরা ‘আমি’
কে-এই প্রশ্ন করে
মূলে
পৌঁছে
দেখেছেন - স্রষ্টাই সব।
ইসলামে
বলা
হয়েছে,
‘মান
আরাফা
নাফছাহু, ফাকাদ্
আরাফা
রাব্বাহু।’ অর্থাৎ
যে
নিজেকে
জানতে
পারে,
সে
তার
প্রভুকে চিনতে
পারে।
ভারতীয়
ষড়দর্শন তথা
বেদান্তের উক্তি
‘আত্মানং বিদ্ধি’,
অর্থাৎ
নিজেকে
জানো।
মহামতি
গৌতমবুদ্ধেরও প্রায়
একই
উচ্চারণ ‘বুদ্ধং
শরণং
গচ্ছামি’।
অর্থাৎ
প্রভুর
স্মরণেই নির্বাণ বা
মুক্তি। মহামতি
দার্শনিক সক্রেটিস বলেছেন,
Know Thyself অতএব
এই
‘আমি’কে প্রত্যক্ষ করাই
higher purpose of our existence. এবং এটাই
অধ্যাত্মবাদের চরম
কথা।
মনে
প্রশ্ন
জাগে,
নিঃস্পৃহ এ
সংসারে,
সত্যি
কে
আমি?
মন,
শরীর
ও
মস্তিষ্কের এই
অবিচ্ছেদ্য ত্রয়ী;
মনের
অলিন্দে অজানা
চিন্তার হদিস
উঁকি
দিয়ে
যায়।
সব
খোঁজাখুঁজির মধ্যে
নিজেকে
খোঁজা। কখনো
যেন
খুঁজে
পাই,
চিনতে
পারি,
আবার
কখনো
হারিয়ে
যাই।
তখন
নিজেকে
একদম
চিনতে
পারি
না।
নিজের
ছায়াটাকে মনে
হয়
অন্য
মানুষের ছায়া।
বুঝতে
পারি
না
কোনটা
আসল
‘আমি’। রক্তমাংসের আমিটা,
না
আমার
ছায়াটা। মোহময়
এক
আকর্ষণ
ছাড়া
চোখে
যেন
আর
কিছু
নেই।
শূন্যগর্ভ অহমিকায় ভরসা
নেই।
আসলে
আত্মাটাই আসল
আমি।
আত্মা
যা
চাইবে
না,
রক্তমাংসের শরীরের
কোনো
ক্ষমতা
নেই
সেটা
করার।
জড়
বাহ্যিক, প্রাণ
আন্তরিক। জড়কে
আমরা
জানি
তথ্যরূপে, কেননা
সে
বাইরের। কিন্তু
প্রাণকে আমাদের
অন্তর
থেকে
জানি
সত্যরূপে। প্রাণের সত্য
বৈজ্ঞানিক যুক্তি
দিয়ে
নয়,
গভীরতম
অনুভূতি দিয়ে
অনুভব
করতে
হয়।
প্রাণের মায়া
যে,
বড়
কঠিন
মায়া।
বাংলার
বাউল-ভাটিয়ালি-ফকিরী আর গম্ভীরার সুর
যা
প্রতিটি মানুষের হৃদয়পুরে বয়ে
চলে;
কান
পাতলে
যার
ছলাৎ
ধ্বনি
পাওয়া
যায়।
বাউলজগতের সেই
অচেনা
হাওয়াবাতাসের রহস্যময়তা আর
মোহময়তার পাশাপাশি, সুফিসাধকেরা আধ্যাত্মিকতাকে জীবনরসে জারিত
করে
অন্তরাত্মাকে ছুঁয়েছেন।
প্রখ্যাত সুফিসাধক মাওলানা জালালুদ্দিন রুমির
সুফিসাধনার গানগুলো অন্তিমে মানুষের প্রতি
এক
গভীর
তন্ময়,
মরমি
এবং
মমতাময়
কল্যাণবোধে সমৃদ্ধ। এটাই
‘তাসাউফ’। সুফিদর্শন, সুফিবাদ, সুফিশাস্ত্র, সুফিতত্ত্ব প্রভৃতি নামেও
তা
পরিচিত। বলা
হয়,
‘তাসাউফ’
শব্দের
উৎপত্তি ঘটেছে
পবিত্র
কুরআনের বিভিন্ন আয়াত
থেকে।
ইমাম
গাজ্জালী র:
তাসাউফের (সুফি
মতবাদ)
পরিচয়
সম্পর্কে বলেছেন,
‘তাসাউফ’
দু’টি গুণের নাম।
১.
স্রষ্টার সাথে
সুসম্পর্ক বজায়
রাখা।
২.
সৃষ্টির সাথেও
সুসম্পর্ক বজায়
রাখা।
যিনি
স্রষ্টা ও
সৃষ্টির সাথে
সমভাবে
সুসম্পর্ক বজায়
রাখতে
পেরেছেন, তিনিই
প্রকৃত
সুফি।
প্রসঙ্গত, রবীন্দ্রনাথের কবিতায় অধ্যাত্ম-চেতনার বিমূর্ত স্রষ্টার যে ধারণা, এরকম একজন স্রষ্টার কথা মানতেন সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী আইনস্টাইন। কোনো-না-কোনোভাবে তিনি আস্থাশীল ছিলেন স্রষ্টায়। তিনি বলেছেন, ‘আই এম এ ডিপলি রিলিজিয়াস্
ম্যান’। তার মতে, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে পরিব্যাপ্ত এক উচ্চতর শক্তি, যা কি না এই বিশ্বজগতে টিকে থাকা এবং এগিয়ে চলার মূলে, তা কোয়ান্টাম তত্ত্ব।
সে
যা
হোক,
নানাবর্ণে রঞ্জিত
আমাদের
পার্থিব জীবন।
কিন্তু
সময়ের
কাছে
আমরা
সবাই
পরাভূত। সেই
পরাজয়
মেনে
নিতে
হয়।
অলৌকিক
মহিমায়
জন্ম-মৃত্যু, ভূত-ভবিষ্যৎ, আত্মা
ও
শরীর
সবকিছু
ব্যাখ্যার অতীত।
সবকিছু
ঢাকা
সঙ্কেতের কঠিন
আড়ালে।
অনাদিকালের মানচিত্রে পৃথিবী
এক
ঠায়
রয়েছে
দাঁড়িয়ে। যেতে
হবে
আরো
কত
দূর,
জানি
না।
হৃদয়ের
গভীরে
অহরহ
এক
অদৃশ্য
হাতছানি।
দিগন্তের দিকে
কেবলই
ছুটে
যায়
মন।
বাইরে
সোনালি
সন্ধ্যা রক্তিম
হয়ে
ওঠে।
রাঙা
ওই
দিগন্ত
কী
অদ্ভুত
লাগে!
কিছু
ওপরে
আকাশে
দপদপ
করে
জ্বলছে
সন্ধ্যাতারা। মায়াজাল, মায়াঘোর, মায়াকুহক সৃষ্টি
করে
আকাশে
কালপুরুষ নিজেকে
মেলে
ধরছে।
সৃষ্টি
যেন
ধ্যানমগ্ন!
যেতে
হবে
কত
দূর
জানি
না।
বেজে
ওঠে
কার
সুরে
কোন
সুরে
এ-বীণা! পথ ডাকে;
আমি
তাই
হয়ে
যাই
পান্থ।
দিকহারা এ
চলায়
নেই
কোনো
শ্রান্তি। ভেতরে
আমার
সেই
চেনারে
পাবো
কি
না
জানি
না।
এক
বৃত্তাকার পথ-পরিক্রমায় আবহমানের নক্ষত্রলিপি পাঠ করতে করতে
আয়
ঘুম
যায়
ঘুম!
Source: K.G. Mustafa, Lyricist
No comments:
Post a Comment