আল কুরআন একটি বিষ্ময়কর
গ্রন্থ: এর প্রতিটি আয়াত তাই প্রমাণ করে-
“তারপর তার পাপ ও তার তাকওয়া তার প্রতি ইলহাম করেছেন”(সূরা আশ শামস: আয়াত ০৮)
ফা আলহামাহা ফুজুরাহা ওয়া তাকওয়াহা।
Fa-alhamahaa fujoorahaa wa taqwaahaa
ব্যাখ্যাঃ
ইলহাম শব্দটির উতপত্তি “লহম” থেকে৷ এর মানে গিলে ফেলা৷ যেমন বলা হয় উমুক ব্যক্তি জিনিসটিকে দিলে
ফেলেছে৷ আর মানে হয়, আমি উমুক জিনিসটি তাকে গিলিয়ে দিয়েছি বা তার গলায় নীচে নামিয়ে
দিয়েছি৷ এই মৌলিক অর্থের দিক দিয়ে ইলহাম শব্দ পারিভাষিক অর্থে আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন
কল্পনা বা চিন্তাকে অবচেতনভাবে বান্দার মন ও মস্তিষ্কের গোপন প্রদেশে নামিয়ে দেয়ার
জন্য ব্যবহৃত হয়৷ মানুষের প্রতি তার পাপ এবং তার নেকী ও তাকওয়া ইলহাম করে দেয়ার দু'টি
অর্থ হয়ঃ
একঃ স্রষ্টা তার মধ্যে নেকী ও গোনাহ উভয়ের ঝোঁক প্রবণতা রেখে দিয়েছেন৷ প্রত্যেক
ব্যক্তিই এটি অনুভব করে৷
দুইঃ প্রত্যেক ব্যক্তির অবচেতন মনে আল্লাহ এ চিন্তাটি রেখে দিয়েছেন যে, নৈতিকতার
ক্ষেত্রে কোন জিনিস ভালো ও কোন জিনিস মন্দ এবং সত নৈতিক বৃত্তি ও সতকাজ এবং অসত নৈতিক বৃত্তি ও অসতকাজ সমান নয়৷ ফুজুর ( দুস্কৃতি ও পাপ
) একটি খারাপ জিনিস এবং তাকওয়া ( খারাপ কাজ থেকে দূরে থাকা ) একটি ভালো জিনিস, এ চিন্তাধারা
মানুষের জন্য নতুন নয়৷ বরং তার প্রকৃতি এগুলোর সাথে পরিচিত৷
স্রষ্টা তার মধ্যে জন্মগতভাবে ভালো ও মন্দের পার্থক্যবোধ সৃষ্টি করে দিয়েছেন৷
একথাটিই সূরা আল বালাদে এভাবে বলা হয়েছে: "আর আমি ভালো ও মন্দ উভয় পথ তার জন্য
সুম্পষ্ট করে রেখে দিয়েছি৷" (১০ আয়াত) সূরা আদদাহরে নিম্নোক্তভাবে বর্ণনা করা
হয়েছে: "আমি তাদেরকে পথ দেখিয়ে দিয়েছি, চাইলে তার কৃতজ্ঞ হতে পারে আবার চাইলে
হতে পারে অস্বীকারকারী৷"(৩ আয়াত ) একথাটিই সূরা আল কিয়ামাহে বর্ণনা করা হয়েছে
এভাবে: মানুষের মধ্যে একটি নফসে লাওয়ামাহ (বিবেক) আছে৷ সে অসতকাজ করলে তাকে তিরস্কার করে৷ (২ আয়াত
) আর প্রত্যেক ব্যক্তি সে যতই ওজর পেশ করুক না কেন সে কি তা সে খুব ভালো করেই জানে৷
(১৪- ১৫ আয়াত)
এখানে একথাটি ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে যে,
মহান আল্লাহ স্বভাবজাত ও প্রকৃতিগত ইলহাম করেছেন প্রত্যেক সৃষ্টির প্রতি তার
মর্যাদা ভুমিকা ও স্বরূপ অনুযায়ী৷ যেমন সূরা ত্বা- হা'য় বলা হয়েছে: "যিনি
প্রত্যেকটি জিনিসকে তার আকৃতি দান করেছেন, তারপর তাকে পথ দেখিয়েছেন৷"(৫০
আয়াত) যেমন প্রাণীদের প্রত্যেক প্রজাতিকে তার প্রয়োজন অনুযায়ী ইলহামী জ্ঞান(ইন্সটিংক্ট
instinct or innate behavior is the
inherent inclination of a living organism towards
a particular complex behavior. The simplest example of an
instinctive behavior is a fixed action pattern (FAP), in which
a very short to medium length sequence of actions, without variation, are
carried out in response to a corresponding clearly defined stimulus.) দান করা হয়েছে৷ যার ফলে মাছ নিজে নিজেই সাঁতার কাটে, পাখি উড়ে
বেড়ায়, মৌমাছি মৌচাক তৈরি করে, পাখী বাসা বানায়, ক্যাঙ্গারুর ছানা জন্মের পরেই তার
মায়ের পেটের নীচের থলেতে( pouch)আশ্রয় খুঁজে নেয়। মানুষকেই তার বিভিন্ন
পর্যায় ও ভূমিকার ক্ষেত্রে পৃথক পৃথক ইলহামী জ্ঞান দান করা হয়েছে৷ মানুষ এক দিক
দিয়ে প্রাণী গোষ্ঠীভুক্ত৷ এই দিক দিয়ে তাকে যে ইলহামী জ্ঞান দান করা হয়েছে তার
একটি সুস্পষ্ট দৃষ্টান্ত হচ্ছে, মানব শিশু জন্মের সাথে সাথেই মায়ের স্তন চুষতে
থাকে৷ আল্লাহ যদি প্রকৃতিগতভাবে তাকে এ শিক্ষাটি না দিতেন তাহলে তাকে এ কৌশলটি
শিক্ষা দেবার সাধ্য কারো ছিল না৷ অন্যদিক দিয়ে মানুষ একটি বুদ্ধিবৃত্তিক প্রাণী৷
এদিক দিয়ে তার সৃষ্টির শুরু থেকেই আল্লাহ তাকে অনবরত ইলহামী পথনির্দেশনা দিয়ে
চলছেন৷ এর ফলে সে একের পর এক উদ্ভাবন ও আবিস্কারের মাধ্যমে মানব সভ্যতার বিকাশ
সাধন করছে৷ এই সমস্ত উদ্ভাবন ও আবিস্কারের ইতিহাস অধ্যয়নকারী যে কোন ব্যক্তিই একথা
অনুভব করবেন যে, সম্ভবতঃ মানুষের চিন্তা ও পরিশ্রমের ফল হিসেবে দু'-একটি ব্যতিক্রম
ছাড়া প্রত্যেকটি আবিস্কার আকস্মিকভাবে শুরু হয়েছে৷ হঠাত এক ব্যক্তির মাথার একটি
চিন্তার উদয় হয়েছে এবং তারই ভিত্তিতে সে কোন জিনিস আবিস্কার করেছে৷ এই দু'টি
মর্যাদা ছাড়াও মানুষের আর একটি মর্যাদা ও ভূমিকা আছে৷ সে একটি নৈতিক জীবও৷ এই
পর্যায়ে আল্লাহ তাকে ভালো ও মন্দের মধ্যে পার্থক্য করার শক্তি এবং ভালোকে ভালো ও
মন্দকে মন্দ জানার অনুভূতি ইলহাম করেছেন৷ এই শক্তি, বোধ ও অনুভূতি একটি বিশ্বজনীন
সত্য৷ এর ফলে আজ পর্যন্ত দুনিয়ায় এমন কোন সমাজ-সভ্যতা গড়ে ওঠেনি যেখানে ভালো ও
মন্দের ধারণা ও চিন্তা কার্যকর ছিল না৷ আর এমন কোন সমাজ ইতিহাসে কোন দিন পাওয়া
যায়নি এবং আজো পাওয়া না যেখানকার ব্যবস্থায় ভালো ও মন্দের এবং সত ও অসতকর্মের জন্য
পুরস্কার ও শাস্তির কোন না কোন পদ্ধতি অবলম্বিত হয়নি৷ প্রতিযুগে, প্রত্যেক জায়গায়
এবং সভ্যতা-সংস্কৃতির প্রত্যেক পর্যায়ে এই জিনিসটির অস্তিত্বই এর স্বভাবজাত ও
প্রকৃতিগত হবার সুস্পষ্ট প্রমাণ৷ এছাড়াও একজন বিজ্ঞ ও বিচক্ষণ স্রষ্টা মানুষের
প্রকৃতির মধ্যেই এটি গচ্ছিত রেখেছেন, একথাও এ থেকে প্রমানিত হয়৷ কারণ যেসব উপাদানে
মানুষ তৈরি এবং যেসব আইন ও নিয়মের মাধ্যমে জড় জগত চলছে তার কোথাও নৈতিকতার কোন
একটি বিষয়ও চিহ্নিত করা যাবে না৷
Ref:
No comments:
Post a Comment