আপনার বাবাকে কখনো কাঁদতে দেখেছেন? আমি দেখিনি। পরিবারে শত ঝড়ঝঞ্ঝা, আর্থিক সংকট, রোগশোক কোনো কিছুই এই মানুষটাকে কাঁদাতে পারে না। কখনো ভেবেছেন—কেন? জিজ্ঞাসা করলে হয়তো তারা স্মিত হেসে বলবেন, ‘বাবাদের কাঁদতে নেই রে বোকা!’ আর হয়তো সে কারণেই (অধিকাংশ ক্ষেত্রে) মায়েদের আগেই বাবারা দুনিয়া থেকে বিদায় নেন।
বাবারা কেন কাঁদেন না? জবাব অনেক রকমই হতে পারে। তবে সম্ভবত: আসল কথাটি হলো, তিনি কেঁদে ফেললে পরিবারের অন্য সদস্যদের ভরসার জায়গাটা আর থাকে না। তখন সবাই মিলে লড়াই করার মানসিক শক্তি দ্রুত নিঃশেষ হয়ে যায়।
অনেক সময় মাত্র একজনের দৃঢ়তায় লড়াইয়ের যে রসদ জোটে, তা অভাবনীয় ফল বয়ে আনে। চে গুয়েভারা, নেলসন ম্যান্ডেলা, শেখ মুজিবুর রহমান, লি-কুয়ান ইউ, মাহাথির মুহাম্মদ, ফিদেল কাস্ত্রো, মুয়াম্মার গাদ্দাফি—এমন অনেকেই তার জ্বলন্ত উদাহরণ। আর সে কারণেই পরিবারে ভরসার প্রতীক হয়ে বাবারা হাল ধরে থাকেন। তাদের অনুপস্থিতিতে মা, বড় ভাই বা বোনদেরও অনেক সময় এমন ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হয়। তবে সেটা বাবা হলে শত উত্কণ্ঠার মাঝেও তার একটি বাক্য—‘আচ্ছা, আমি দেখছি কী করা যায়।’ আশার প্রদীপটা জ্বালিয়ে রাখেন। তখন আমরা বিশ্বাস করি, একটা কিছু হবে। অর্থাৎ লড়াই চলাকালে ঝাণ্ডাটা কাউকে না কাউকে সুউচ্চে তুলে ধরতে হয়।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর বলাকা কাব্যে বলেছেন,
“ওই যে প্রবীণ, ওই যে পরম পাকা,
চক্ষুকর্ণ দুইটি ডানায় ঢাকা,
ঝিমায় যেন চিত্রপটে আঁকা”-এটা হলো বাবা, পরম পাকা, পরম অভিজ্ঞ।
আবার বলেছেন, বোধ করি বাবাকে বা যারা পরে বাবা হবে উদ্দেশ্য করেই-
সকল তর্ক হেলায় তুচ্ছ ক'রে
পুচ্ছটি তোর উচ্চে তুলে নাচা।
তাই ভাল বাবাই যোগ্য নেতৃত্বে রয়।
থিম: আবদুল হামিদ সাহেবের লেখার
No comments:
Post a Comment