হিংসার পরিণাম
পাখীরা আকাশে ওড়ে
দেখিয়া হিংসায়-
পিপীলিকা বিধাতার কাছে
পাখা চায়;
বিধাতা দিলেন পাখা
দেখ তার ফল-
আগুনে পুড়িয়া মরে
পিপীলিকা দল।
মানবের গীতি শুনি
হিংসায় মরিল-
মশক বিধির কাছে
সুকন্ঠ মাগিল;
সুকন্ঠ দিলেন বিধি
দেখ তার ফল-
নর করাঘাতে মরে
মশক সকল।
হিংসুক আল্লাহর নেয়ামত থেকে বঞ্চিত
আরবি ‘হাসাদ’ শব্দের অর্থ হিংসা, ঈর্ষা,
পরশ্রীকাতরতা ইত্যাদি। পরিভাষায়, অন্যের ভালো কিছু দেখে তা নষ্ট হওয়ার কামনা করাকে
হাসাদ বলে। ‘হাসাদ’ তথা হিংসা আত্মবিধ্বংসী বদ গুণ। হিংসুকের হিংসা থেকে আশ্রয়
প্রার্থনার কথা স্বয়ং আল্লাহ বলেছেন। ‘হিংসুকের হিংসা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করো,
যখন সে হিংসা করে।’ (সূরা ফালাক : ৬)। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি মানুষের
প্রতি এজন্যই হিংসা করে যে, আল্লাহ তাদের স্বীয় অনুগ্রহ দান করেছেন।’ (সূরা নিসা :
৫৪)। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মোমিন বান্দার পেটে আল্লাহর
রাস্তার ধুলা এবং জাহান্নামের আগুন একত্রে জমা হতে পারে না। একইভাবে হিংসা এবং
ঈমানও কোনো বান্দার মাঝে একত্রে থাকতে পারে না।’ (নাসাঈ)। তিনি (সা.) আরও বলেন,
‘তোমরা হিংসা থেকে বেঁচে থাক। কারণ হিংসা দ্বীন ধ্বংস করে দেয়।’ (তিরমিজি)।
হিংসুক আল্লাহর নেয়ামতের শত্রু। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর নেয়ামতের কিছু শত্রু আছে। সাহাবিরা জিজ্ঞেস করেন, আল্লাহর নেয়ামতের শত্রু কারা? রাসুল (সা.) বলেন, হিংসুকরা। হিংসুক তো এজন্যই হিংসা করে আল্লাহ কেন তাঁর বান্দাকে অনুগ্রহ করেছেন।’ (দাওয়াউল হাসাদ)। হিংসার পরিণাম খুবই ভয়াবহ। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা হিংসা থেকে বেঁচে থাক। কেননা হিংসা নেক আমলকে এমনভাবে খেয়ে ফেলে, যেভাবে আগুন কাঠকে খেয়ে ফেলে।’ (সুনান আবু দাউদ)। তিনি (সা.) আরও বলেছেন, ‘তিনটি বদ অভ্যাস আছে, যা থেকে কেউ মুক্ত নয়। ১. কুধারণা, ২. হিংসা এবং ৩. অশুভ ফলে বিশ্বাস। সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! এসব থেকে মুক্ত থাকার উপায় কী? রাসুল (সা.) বলেন, কারও প্রতি কুধারণা এলে তা বিশ্বাস না করা, হিংসার উদ্রেক হলে প্রকাশ না করা আর অশুভ ফলের কারণে শুরু করা কাজ থেকে ফিরে না আসা।’ (মাজমাউজ জাওয়াইদ)। হিংসার পরিণাম সম্পর্কে ইমাম জাফর সাদেক (রহ.) বলেন, ‘হিংসা হলো কুফরের ভিত্তিস্বরূপ।’ (আল কাফি)। ইমাম বাকের (রহ.) বলেন, ‘হিংসা ঈমানকে জ্বালিয়ে নিঃশেষ করে দেয়।’ (আল কাফি)। লোকমান হাকিম স্বীয় ছেলেকে বলেন, ‘বতস শোন! হিংসুকের তিনটি চিহ্ন আছেঃ
হিংসুক আল্লাহর নেয়ামতের শত্রু। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর নেয়ামতের কিছু শত্রু আছে। সাহাবিরা জিজ্ঞেস করেন, আল্লাহর নেয়ামতের শত্রু কারা? রাসুল (সা.) বলেন, হিংসুকরা। হিংসুক তো এজন্যই হিংসা করে আল্লাহ কেন তাঁর বান্দাকে অনুগ্রহ করেছেন।’ (দাওয়াউল হাসাদ)। হিংসার পরিণাম খুবই ভয়াবহ। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা হিংসা থেকে বেঁচে থাক। কেননা হিংসা নেক আমলকে এমনভাবে খেয়ে ফেলে, যেভাবে আগুন কাঠকে খেয়ে ফেলে।’ (সুনান আবু দাউদ)। তিনি (সা.) আরও বলেছেন, ‘তিনটি বদ অভ্যাস আছে, যা থেকে কেউ মুক্ত নয়। ১. কুধারণা, ২. হিংসা এবং ৩. অশুভ ফলে বিশ্বাস। সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! এসব থেকে মুক্ত থাকার উপায় কী? রাসুল (সা.) বলেন, কারও প্রতি কুধারণা এলে তা বিশ্বাস না করা, হিংসার উদ্রেক হলে প্রকাশ না করা আর অশুভ ফলের কারণে শুরু করা কাজ থেকে ফিরে না আসা।’ (মাজমাউজ জাওয়াইদ)। হিংসার পরিণাম সম্পর্কে ইমাম জাফর সাদেক (রহ.) বলেন, ‘হিংসা হলো কুফরের ভিত্তিস্বরূপ।’ (আল কাফি)। ইমাম বাকের (রহ.) বলেন, ‘হিংসা ঈমানকে জ্বালিয়ে নিঃশেষ করে দেয়।’ (আল কাফি)। লোকমান হাকিম স্বীয় ছেলেকে বলেন, ‘বতস শোন! হিংসুকের তিনটি চিহ্ন আছেঃ
১. সে হিংসা করে এবং পেছনে গিবত করে,
২. সামনে তোষামোদ করে এবং
৩. মানুষের বিপদে আনন্দিত হয়।’।
আদম (আ.) এর প্রতি হিংসার
বশবর্তী হয়েই ইবলিস আল্লাহর অবাধ্য হয়েছিল। তাই কেউ যদি হিংসাপ্রবণ মানুষে পরিণত
হয় বা কারও প্রতি হিংসা করে তবে সে ও আল্লাহর নেয়ামত থেকে চিরবঞ্চিত হবে। তাই
হিংসা থেকে বেঁচে থাকা আমাদের সবার একান্ত জরুরী কর্তব্য।
হিংসার পরিণাম অশুভ
হিংসা বলা হয় অপরের সুখ-শান্তি দেখে ব্যথিত হয়ে তা দূর
হওয়ার প্রত্যাশা করা। পরিভাষাবিদ আল্লামা জুরজানি (রহ.) বলেন, ‘হিংসা বলা হয়, হিংসাকৃত
ব্যক্তির নিয়ামত দূরীভূত হয়ে হিংসুকের মধ্যে চলে আসার আকাঙ্ক্ষা করা।’
আল্লাহ
তাআলা তাঁর কোনো বান্দাকে ধন-দৌলত দান করেছেন, কাউকে স্বাস্থ্য দান করেছেন, কাউকে
সুখ্যাতি দান করেছেন, কাউকে সম্মান দান করেছেন, কাউকে নেতৃত্ব দান করেছেন, আবার
কাউকে দান করেছেন জ্ঞান। হিংসুকের মনে এ খেয়াল জন্মায় যে এ নিয়ামত কেন তার অর্জিত
হলো? যদি তার থেকে এ নিয়ামত চলে যেত, তাহলে ভালো হতো! তাই অন্যের বিপদে সে খুশি
হয়, আর যদি অন্যের ভালো কিছু অর্জিত হয়, তাহলে সে অন্তরে ব্যথা পায়। সে আফসোস করতে
থাকে, কেন ওই ব্যক্তি আমার চেয়ে বড় হয়ে গেল, উন্নতি লাভ করল! এমন মানসিকতার নাম
হিংসা। এখানে হিংসার কিছু অপকারিতা তুলে ধরা হলো—
হিংসা
পুণ্য বিনষ্ট করে : মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা হিংসা থেকে বেঁচে থাকো। কেননা
হিংসা পুণ্যকে এমনভাবে বিনষ্ট করে দেয়, যেভাবে আগুন কাঠকে ভস্মীভূত করে দেয়।’ (আবু
দাউদ) রাসুলুল্লাহ (সা.) আরো বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে আগের লোকদের নৈতিক ব্যাধি
বিস্তার লাভ করবে। সে ব্যাধি হলো হিংসা ও বিদ্বেষ।’ (জামে তিরমিজি)
হিংসা করা
পাপ: আমরা যেসব কাজ করি, তার মধ্যে কিছু কাজ পুণ্যের, আর কিছু কাজ পাপের। পুণ্য ও
পাপের কিছু কাজ প্রকাশ্য, আবার কিছু কাজ অপ্রকাশ্য। অপ্রকাশ্য পাপ কাজের মধ্যে
হিংসা অন্যতম। হিংসা এমন নীরব অনল, যা ক্রমে ক্রমে জ্বলে ওঠে এবং মানুষের নেক আমল
ধ্বংস করে দেয়। অথচ মানুষের কোনো খবর থাকে না যে তার ভালো আমল নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে।
হিংসা থেকে
বেঁচে থাকা ফরজ : মানুষের মধ্যে হিংসা নামক ব্যাধি কার্যকলাপে লুকিয়ে আছে। খুব কম সংখ্যক
ব্যক্তিই এ ব্যাধি থেকে বাঁচতে পারে। অথচ হিংসা থেকে বেঁচে থাকা ফরজ। মহানবী (সা.)
বলেছেন, ‘তোমরা পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ ও শত্রুতা পোষণ কোরো না ও অন্যের দোষ চর্চা
কোরো না।’ (সহিহ মুসলিম)
হিংসা
ভাগ্যে অবিশ্বাসের নামান্তর: হিংসুক মূলতঃ আল্লাহ তা’আলার তাকদিরের ব্যাপারে
অভিযোগ করছে যে আল্লাহ তা’আলা ওই ব্যক্তিকে এ নিয়ামত কেন দিয়েছেন, আমাকে কেন
দেননি? এটি হলো আল্লাহ তা’আলার ফয়সালার ওপর তার অভিযোগ। সে যেন একচ্ছত্র ক্ষমতাবান
স্রষ্টার ওপর অভিযোগ করছে এবং দয়াময় প্রভুকে দোষারোপ করছে। এটি ভাগ্যে অবিশ্বাসের
নামান্তর।
হিংসা করার
কারণ: হিংসা করার অনেক কারণ রয়েছে। মনীষীদের মতে, হিংসার প্রধান কারণ সাতটিঃ
ক. শত্রুতা,
খ. সমপর্যায়ের লোকদের মান-সম্মান দেখে নিজের মধ্যে তা
দুর্বিষহ বোধ হওয়া,
গ. অন্যকে তুচ্ছজ্ঞান করা,
ঘ. বিস্ময়বোধ,
ঙ. কাঙ্ক্ষিত বিষয় হাতছাড়া হওয়ার আকাঙ্ক্ষা,
চ. শ্রেষ্ঠত্ব ও বড়ত্বের লোভ,
ছ. হীনম্মন্যতা।
আল্লাহ তা’আলা
ইরশাদ করেন, ‘যদি তোমাদের কোনো কল্যাণ লাভ হয়, তাহলে তাদের কাছে খারাপ লাগে। আর
যদি তোমাদের অকল্যাণ হয়, তাহলে তাতে তারা আনন্দিত হয়।’ (সুরা: আলে ইমরান, আয়াত:
১২০)
হিংসা পৃথিবীতে
অশান্তির কারণ: শত্রুতার কারণে হিংসার জন্ম হয়। পরিণতিতে অনেক সময় ভয়াবহ
দ্বন্দ্ব-কলহ ও খুনাখুনির মতো অবস্থার সৃষ্টি হয়। প্রতিপক্ষের নিয়ামত বিলোপ সাধনের
ফন্দি-ফিকিরে জীবন ও সময় ব্যয় হয়। কখনো কখনো প্রতিপক্ষের দোষ চর্চা ও মানহানির
চেষ্টা চালানো হয়। হিংসার আগুন আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, ভাই-ভাইয়ের মধ্যে
প্রজ্বলিত হয়ে ওঠে। হিংসার উপাদানের উপস্থিতি যেখানে যত বেশি ঘটবে, হিংসাও সেখানে
সেই পরিমাণ প্রবল আকারে পাওয়া যাবে।
হিংসার
প্রতিকার: মানুষের আত্মার ব্যাধিগুলোর অন্যতম ব্যাধি হলো হিংসা। আত্মার এ রোগের প্রতিকার
একমাত্র ইলম ও আমল দ্বারাই সম্ভব। যে ইলম দ্বারা হিংসার চিকিতসা করা যায়, তা হলো—এ
কথা নিশ্চিতভাবে জানা যে হিংসা একটি মারাত্মক রোগ। এ হিংসার ফলে হিংসুকের দুনিয়া ও
আখিরাত উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অথচ যার প্রতি হিংসা করা হয়, তার ইহলৌলিক ও পারলৌকিক
কোনো ক্ষতি হয় না, বরং এ হিংসার ফলে সে লাভবান হয়। কেউ এ কথা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করলে
তার জন্য হিংসা ত্যাগ করা সহজ হবে।
হিংসার
ভিত্তি হলো দুনিয়ায় প্রেম ও সম্পদের মোহ। ফলে ব্যক্তি যদি অন্তর থেকে দুনিয়ায়
প্রেম ও সম্পদের লোভ-লালসা বের করে দিতে পারে, তাহলে হিংসার রোগ থেকে আরোগ্য লাভ
করবে।
No comments:
Post a Comment