স্মার্ট মানুষ ও তাদের বৈশিষ্ট্য
এভরিথিং স্মার্ট
আজকাল অনেক কিছুই স্মার্ট নামে বাজারে
এসেছে। যেমন স্মার্ট
ওয়াচ, স্মার্ট মোবাইল
ফোন, স্মার্ট
টেলিভিশন, স্মার্ট
কিচেন ইত্যাদি। এসব কিছু যদি মানুষই তৈরী করে তা’হলে স্মার্ট মানুষ কি থাকা সম্ভব? আমি বলি সম্ভব!
কেননা, সৃষ্টিকর্তা নিজেই স্মার্ট আর তাই মানুষও স্মার্ট।
১০টি কাজ স্মার্ট মানুষেরা করেন নাঃ 10 Things Smart People Don't Do
স্মার্ট বলতে আপনারা কি বোঝেন? স্মার্ট বলতে আপনাদের
চোখের সামনে ভেসে ওঠে চটপটে কোন লোক, কোন মহিলা যারা বিভিন্ন কাজে পটিয়সী, তাই না?
যারা কোন প্রশ্নের দ্রুত জবাব দিতে পারে, যারা পরীক্ষায় হাই স্কোর করে তারাও তো স্মার্ট আপনাদের
চোখে তাই না? আসলে স্মার্ট তো ওরা এটা ঠিক আছে কিন্তু আরো আরো গুন যেগুলো এই স্মার্ট মানুষের
অর্জন সে সব হলোঃ ১. এরা কমপ্যাশানেট বা দয়ালু বা সহানুভুতিশীল। ২. এরা ইমাজিনেটিভ
বা স্বপ্ন দেখেন। ৩. এরা হাম্বল বা বিনয়ী। ৪. এরা অ্যাপ্র্রেশিয়েটিভ বা মহান। ৫. এরা
আশুতোষ-অল্পেই তুষ্ট। ৬. এরা নিজেদের দেখে সারা দুনিয়ার অংশ হিসেবে। ৭. এরা খুবই ভাল
করে জানে যে তারা মহত কাজ সম্পাদন করতে পারে।
০১. স্মার্ট মানুষেরা
অতীত নিয়ে ভাবে না।
স্মার্ট মানুষেরা সব সময় বর্তমানের ওপরেই বিশ্বাসী ।
They don’t let past stumbles dictate
their present state. এরা জানে যে ব্যর্থতা হলো সফলতার অন্যতম সোপান। ফেইলিউর
ইজ দ্য পিলার অব সাক্সেস। ইফ য়্যু ওয়ন্ট টু সাকসিড, ডাবল্ ইওর ফেইলিউর। সাধারনতঃ দেখা
যায় যে অনেকেই ব্যর্থ হওয়ার পর খেই হারিয়ে ফেলেন। এগিয়ে যাওয়ার উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। এটা
স্মার্ট মানুষের
কাজ নয়। স্মার্ট
মানুষেরা অতীতকে পেছনে ফেলে দিয়ে বর্তমানের ওপর ভর করে সফলতার দিকে এগিয়ে যান।
০২. স্মার্ট মানুষেরা
নেতিবাচক দিককে কোন মূল্যই দেন না।
স্মার্ট মানুষেরা তাদের ভাবনাকে নিয়ন্ত্রনে রাখে। এই
ভাবনাকে তারা ইতিবাচক বা পজিটিভ দিকে পরিচালনা করেন। স্মার্ট মানুষেরা গভীরভাবে বিশ্বাস করে যে
মনের একট ধারন ক্ষমতা আছে। মন অনেক কিছুই অর্জন করতে পারে। স্মার্ট মানুষেরা
জানেন যে জীবন অবশ্যই উপভোগ্য যদি ভাল স্বপ্ন দেখা যায়। আর এ থেকেই স্মার্ট মানুষেরা
পরিবর্তিত হয়ে যায়।
০৩. Smart মানুষেরা
কোন কাজকে Problem মনে করে না।
স্মার্ট মানুষেরা যে কোনও কাজকে সামনা সামনি মোকাবেলা
করে। স্মার্ট
মানুষেরা যে কোন সমস্যার গঠনমূলক সমাধান খুঁজে বের করবার চেষ্টা করে। এরা যখন ব্যর্থ
হয়, আবার নোতুন উদ্যোগে কাজ করবার প্রয়াস পায়। পড়ে গেলে থেমে থাকেনা। উঠে দাঁড়ায়। হেঁটে
যাবার চেষ্টা করে। কারণ, স্মার্ট মানুষেরা জানে যে জীবন উপভোগ করা খুবই সহজ। স্মার্ট মানুষেরা
সাহসী। এরা Problem থেকেই সমাধান পায়।
০৪. স্মার্ট মানুষেরা
মনেই করেনা যে অন্যেরা কি বললো
পাছে, লোকে কিছু বলে,
এটা স্মার্ট
মানুষেরা ধর্তব্যের মধ্যেই আনে না। আমাদের এই দুনিয়ায় সন্দেহপ্রবণ মানুষের কোনই অভাব
নেই। নেতিবাচক মনোভাব নিয়ে থাকেন এ ধরনের লোকদেরও কোন ঘাটতি নেই। মানুষকে ঘৃনা করে
এমন লোকও সমাজে যথেষ্ট, আরও আছে যারা পিছু হটে। স্মার্ট মানুষেরা এসব মানুষদের এড়িয়ে চলে
সব সময়।
০৫. স্মার্ট মানুষেরা
সময় নষ্ট করে না
স্মার্ট মানুষেরা জানে সময় কত মূলবান। এরা সময়কে মূল্যায়ন
করে। এরা ২৪ ঘন্টার ৮৬৪০০ সেকেন্ডেকে যথাযথভাবে কাজে লাগায়। কারণ এই সময় দুনিয়ার সকল
মানুষের জন্য একইভাবে বরাদ্দ করা আল্লাহর পক্ষ থেকে। এরা সব সময়ই Problem কাজ নিয়ে সময় কাটায়। আট ঘন্টা ঘুমিয়ে
নেওয়ার পর আট ঘন্টা এক নাগাড়ে আট ঘন্টা কাজ করে যেতে পারে এই সব মানুষ। রোদে রাখা বরফ যেমন দ্রুত গলে যায় স্মার্ট মানুষেরা
তেমনি ভাবে দ্রুত আপনার কাজ সেরে নেয়। স্মার্ট মানুষেরা ছোট পাখীর মত বলে “এখন না কবো
কথা আনিয়াছি তৃণলতা, আপনার বাসা আগে বুনি”। স্মার্ট মানুষেরা পিঁপড়ার মত বলে, “শীতের সঞ্চয়
চাই, খাদ্য খুঁজিতেছি তাই, ৬ পায়ে পিলপিল চলি । স্মার্ট মানুষেরা মৌমাছির মত বলে, “ওই ফুল
ফোট বনে, যাই মধূ আহরণে, দাঁড়াবার সময় তো নাই। আবার স্মার্ট মানুষেরা বলে, “আদমী যো চাহিয়ে,
ওয়াক্তসে ডার কার রাহে; কৌনজানে কিস্ ঘড়ী, বাদলে ওয়াক্ত কি মেজাজ! বা আদম সন্তানেরা
যেন সময়কে ভয় করে চলে কেননা, সময় যে কোন সময় তার ওপর তীব্র প্রতিশোধ নিতে পারে। কারণ,
স্মার্ট মানুষেরা
জানে “টাইম অ্যান্ড টাইড ওয়েট ফর নান।”
০৬. স্মার্ট মানুষেরা
ইন্সট্যান্ট গ্রাটিফিকেশন বা তাতক্ষণিক আনন্দ ভুলে থাকেন
স্মার্ট মানুষেরা যে কাজ যত্ন কোরে করে সেই কাজই তাদেরকে
আনন্দের ভাগীদার করে। বর্তমান সময়ের মহামানব নেলসন ম্যান্ডেলা এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
উনি বলতেন, Joy shared Joy Multiplied,
Sorrow shared sorrow divided
০৭. যে কাজটি তাদের
নিয়ন্ত্রনে নেই স্মার্ট
মানুষেরা সে কাজের দিকে ভুলেও তাকান না।
কারণ, স্মার্ট মানুষেরা
জানেন, বোঝেন যে এই কাজের পেছনে ছুটলে স্মার্ট মানুষের অনেক সময় মিছেমিছি নষ্ট হবে। স্মার্ট মানুষেরা
সেই সব কাজের দিকে বেশী কোরে তাকান যে কাজটি তাদের নিয়ন্ত্রনে আছে।
০৮. স্মার্ট মানুষেরা সে সব মানুষকে যতনে এড়িয়ে
চলেন যারা তাদেরকে নীচে নামিয়ে আনতে চায়।
স্মার্ট মানুষেরা
সংসার পাতে তাদের সাথে যারা তাদের মূল্য জানে, বোঝে, বন্ধুত্ব করে তাদের সাথে যারা
বন্ধুত্বে মর্যাদা দিতে জানে। They spent
most of their time with positive, intelligent & uplifting people.
০৯. স্মার্ট মানুষেরা
অহংকারী হয় না। They don’t display
arrogance.
ভাল করে দেখবেন যে যারা
স্মার্ট মানুষ
তারা কখনোই বলবে না যে আমি স্মার্ট কারণ, স্মার্ট মানুষেরা সব সময়ই বিনয়ী হয়ে থাকেন। স্মার্ট মানুষেরা কখনোই তাদের কাজের জন্য
গর্ব বোধ করে না।
১০. স্মার্ট মানুষেরা
শুষ্কং কাষ্ঠং নয় বা নিরস গোছের কোন কিছু নয়। এরা সব সময়ই সরস। এরা দারুন হিউমারাস-কৌতুক
প্রিয়।
এ কথার অর্থ এই যে স্মার্ট মানুষেরা
মানুষকে সব সময় ধন্যবাদ দেন। এটা তাদের স্বভাবজাত বা Instinct বা সহজাতবোধ। একটা পাখীর
বাচ্চা যখন ডিম থেকে বের হয় তখন কিন্তু সে বাসা তৈরী করতে পারে না। যখন তার ডিম পাড়বার
সময় হয়, তখন সে আপনা থেকেই বাসা বোনার কাজ শিখে নেয়। আর এটাই পাখীর Instinct বা সহজাতবোধ।
আর Instinct বা সহজাতবোধ নিয়েই Smart মানুষেরা ধন্যবাদ দিয়ে মানুষের মনটা অনুক্ষণ ভিজিয়েই
চলেন। আনস্মার্ট
মানুষেরা এটা টেরও পায় না। এটা দুঃখজনকও বটে।
রাসুল (স.) এর উদাহরণঃ
আমাদের নবী (স.)এ রকমই স্মার্ট মানুষ ছিলেন।
ওপরে যে সব গুণের কথা বলা হলো, খেয়াল করে দেখুন আমাদের নবী (স.) এঁর মধ্যে এর কোন গুনটা
ছিল না। সবটাই পাবেন তাঁর মধ্যে। সেই জন্যই আল কুরআন বলে, “লাক্কাদ কানা লাকুম ফি রাসুলুল্লাহি
উসওয়াতুন হাসানা” বা রাসল(সা.)এঁর মধ্যে রয়েছে তোমাদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ LAQAD KANA LAKUM FI RASULILLAHI USWATUN
HASANAH-"Indeed in the Messenger of Allah you have a good example to
follow for him who hopes for Allah and the Last Day, and remembers Allah Quran:
Sura Al-Ahzab Ch 33 Ayat 21.
খোলাফায়ে রাশেদার সবারই
মধ্যে ছিল Smartness যারা আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় বান্দাহ্ তারা সবাই স্মার্ট । এরা বিদ্বান,
পরোপকারী, বিদ্যোতসাহী, বিনয়ী, সাহসী, দৃঢ়চিত্ত, সুযোগ পেলেই মানুষের প্রতি দয়া দেখানোর
কাজ করেন বা Act of little kindness করেন আর তাদের প্রভুর প্রতি অসম্ভব অনুরক্ত থাকেন।
এরা তাদের প্রভুকে ডাকেন ভক্তির সাথে, বিনয়াবনতভাবে, তাদের নিঃশ্বাসের চেয়েও নীচু স্বরে।
তূলনা
স্মার্ট মানুষ বনাম আনস্মার্ট
মানুষ মানুষ
স্মার্ট মানুষ পরিবর্তনকে সাদরে
গ্রহণ করে
আনস্মার্ট মানুষ পরিবর্তনকে ভয় পায়।
স্মার্ট মানুষ নোতুন আইডিয়া নিয়ে
কথা বলে
আনস্মার্ট মানুষ মানুষের দোষ-ত্রুটি
নিয়ে কথা বলে
স্মার্ট মানুষ নিজের কৃতিত্ব অপর লোকদের দিয়ে দেয়
আনস্মার্ট মানুষ অপরের কৃতিত্ব নিজের
নামে চালায়
স্মার্ট মানুষ অপরের সফলতা কামনা করে
আনস্মার্ট মানুষ অপরের পরাজয় কামনা
করে
স্মার্ট মানুষ এরা খুশী ভাগ করে
নেয় আর দুঃখও ভাগ করে নেয়
আনস্মার্ট মানুষ এরা অপরের আনন্দে ঈর্ষান্বিত হয়
স্মার্ট মানুষেরা যুক্তি প্রদর্শনের
সময় গেুলো নরমভাবে উপস্থাপন করে
আনস্মার্ট মানুষেরা খুব রেগে গিয়ে তর্কে লিপ্ত হয়।
পাশাপাশি ভাবুন তো একবার আনস্মার্ট মানুষ কেমন হবে?
“করিতে পারিনা
কাজ, সদা ভয়, সদা লাজ,
সংশয়ে সংকল্প
সদা টলে,
পাছে লোকে
কিছু বলে।
অড়ালে আড়ালে
থাকি, নীরবে আপনা ঢাকি,
সম্মুখে চরণ
নাহি চলে,
পাছে লোকে
কিছু বলে।
হৃদয়ে বুদ্বুদ-মত
ওঠে শুভ্র চিন্তা কত
মিশে যায় হৃদেয়ের
তলে,
পাছে লোকে
কিছু বলে।
কাঁদে প্রাণ
যবে আঁখি, সযতনে শুষ্ক রাখি,
নির্মল নয়নের
জলে,
পাছে লোকে
কিছু বলে।
একটি স্নেহের
কথা, প্রশমিতে পারে ব্যথা,
চলে যাই উপেক্ষার
ছলে,
পাছে লোকে
কিছু বলে।
মহত উদ্দেশ্যে যবে, একসাথে মিলে সবে,
পারিনা মিলিতে
সেই দলে,
পাছে লোকে
কিছু বলে।
বিধাতা দিয়েছেন
প্রাণ, থাকি সদা ম্রিয়মান,
শক্তি মরে
ভীতির কবলে,
পাছে লোকে
কিছু বলে।” -এরা সকলেই আনস্মার্ট। একথা অনেক
আগেই কবি কামিনী রায় বলে গেছেন। কিন্তু আমরা তলিয়ে দেখিনি কবি কি বলে গেলেন।
স্মরণে রাখুনঃ
A Smart
person will give you smart answers but a wise person will ask you smart
questions. কারণ, সকল স্মার্ট মানুষই জ্ঞানী।
স্মার্ট মানুষেরা অহংবোধ বা “ইগো” এড়িয়ে চলেন। কারণ, যার জ্ঞান ভাল তার অহংবোধ কম, যার জ্ঞান কম তার অহংবোধ বেশী-More the
knowledge lesser the ego, lesser the knowledge more the ego. So, don’t
be ego derived, seek knowledge, be SMART.
No comments:
Post a Comment