Thursday, April 5, 2018

‘ঈবাদত সম্পর্কে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি কি?


ইসলামে ঈবাদত বলতে নিছক কিছু আনুষ্ঠানিকতা বুঝায় না মুসলমানরাও ঈবাদত বলতে নিছক স্রষ্টার প্রতি আনুগত্যসূচক কিছু গতবাঁধা নিয়ম পালন করা বোঝে না মুসলমানদের জীবনের সব কাজই ঈবাদত যদি তা ২টি পূর্বশর্ত পূরণ করেঃ
. কাজের নেপথ্য উদ্দেশ্য (নিয়াত) হতে হবে সত, বিশুদ্ধ আর তা হতে হবে আল্লাহর পূর্ণ আনুগত্য স্বীকার করে মানুষের ওপর পৃথিবীতে তাঁর আরোপিত মিশন পূরণের অঙ্গিকার নিয়ে
. কাজটি হতে হবে অবশ্যই আল্লাহর নির্ধারিত পন্থায় বা আল্লাহর নির্ধারিত সীমার ভেতর থেকে এভাবে মুসলমানরা কাজে-কর্মে, লেখাপড়ার সময়, বিশ্রামের সময়, উঠতে-বসতে, চলতে ফিরতে-সব সময়ই ঈবাদতের ভেতরেই থাকে আল্লাহর নির্ধারিত পন্থায় চললে গোটা জীবনই মুসলমানদের ঈবাদত
রেফারেন্স ০১. আল কুরআন থেকেঃ
জিন মানুষকে আমি শুধু জন্যই সৃষ্টি করেছি যে, তারা আমার দাসত্ব  করবে আয্ যারিআত, আয়াত ৫৬
Wa maa khalaqtul jinna wal insa illaa liya'budoon

অর্থাত আমি তাদেরকে অন্য কারো দাসত্বের জন্য নয় আমার নিজের দাসত্বের জন্য সৃষ্টি করেছি ৷ তারা আমার দাসত্ব করবে এ জন্য যে, আমি তাদের স্রষ্টা ৷ যখন অন্য কেউ তাদের সৃষ্টি করেনি তখন তার দাসত্ব করার কি অধিকার এদের আছে? তাছাড়া তাদের জন্য এটা কি করে বৈধ হতে পারে যে, এদের স্রষ্টা আমি অথচ এরা দাসত্ব করবে অন্যদের!
এখানে প্রশ্ন দেখা দেয় যে, আল্লাহ তা'আলা শুধু জিন ও মানুষের স্রষ্টা নন ৷ তিনি সমগ্র বিশ্ব-জাহান ও তাঁর প্রতিটি জিনিসের স্রষ্টা ৷ কিন্তু এখানে কেবল জিন ও মানুষ সম্পর্কে কেন বলা হয়েছে যে, আমি তাদেকে আমার ছাড়া আর কারো দাসত্বের জন্য সৃষ্টি করিনি? অথচ গোটা সৃষ্টির প্রতিটি অণু-পরমাণু শুধু আল্লাহর দাসত্বের জন্য৷ এর জবাব হচ্ছে পৃথিবীতে জিন ও মানুষই শুধু সৃস্টি যাদের স্বাধীনতা আছে ৷ তারা তাদের ক্ষমতা ও ইখতিয়ারের গন্ডির মধ্যে আল্লাহ তা'আলার দাসত্ব করতে চাইলে কিংবা তাঁর দাসত্ব থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে চাইলে নেবে এবং আল্লাহ ছাড়া অন্যদের দাসত্ব করতে চাইলেও করতে পারে ৷ জিন ও মানুষ ছাড়া এ পৃথিবীতে আর যত সৃষ্টি আছে তাদের এ ধরনের কোন স্বাধীনতা নেই ৷ তাদের আদৌ কোন ক্ষমতা ও ইখতিয়ার নেই যে, তারা আল্লাহর দাসত্ব করবে না অন্য কারো দাসত্ব করতে পারবে ৷ তাই এখানে শুধু জিন ও মানুষ সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তারা তাদের ক্ষমতা ও ইখতিয়ারের গণ্ডির মধ্যে তাদের নিজ স্রষ্টার আনুগত্য ও দাসত্ব থেকে মুখ ফিরিয়ে এবং স্রষ্টা ছাড়া অন্যদের দাসত্ব করে নিজেরা নিজেদের স্বভাব প্রকৃতির বিরুদ্ধে লড়াই করছে ৷ তাদের জানা উচিত যে, তাদেরকে একমাত্র স্রষ্টা ছাড়া আর কারো দাসত্বের জন্য সৃষ্টি করা হয়নি ৷ তাদের সোজা পথ হচ্ছে যে স্বাধীনতা তাদেরকে দেয়া হয়েছে তার অন্যায় ব্যবহার যেন না করে ৷ বরং স্বাধিনতার এ সীমার মধ্যে নিজ নিজ ইচ্ছা অনুসারে ঠিক তেমনিভাবে যেন আল্লাহর দাসত্ব করে যেভাবে তার দেহের প্রতিটি লোক তার ক্ষমতা ও ইখতিয়ার বিহীন সীমার মধ্যে তার দাসত্ব করছে ৷
এ আয়াতে 'ইবাদত' শব্দটিকে শুধু নামায রোযা এবং এ ধরনের অন্যান্য ইবাদত অর্থে ব্যবহার করা হয়নি ৷ তাই কেউ এর এ অর্থ গ্রহণ করতে পারে না যে জিন ও মানুষকে শুধু নামায পড়া রোযা রাখা এবং তাসবীহ তাহলীল করার জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে ৷ এ অর্থটিও এর মধ্যে শামিল আছে বটে, তবে এটা তার পূর্ণাংগ অর্থ নয় ৷ এর পূর্ণাংগ অর্থ হচ্ছে, জিন ও মানুষকে আল্লাহ ছাড়া অন্যের পূজা আনুগত্য আদেশ পালন ও বিনীত প্রার্থনার জন্য সৃষ্টি করা হয়নি ৷ অন্য কারো সামনে নত হওয়া, অন্য কারো নির্দেশ পালন করা, অন্য কাউকে ভয় করা, অন্য কারো রচিত দীন বা আদর্শের অনুসরণ করা অন্য কাউকে নিজের ভাগ্যের নিয়ন্তা মনে করা এবং অন্য কোন সত্তার কাছে প্রার্থনার জন্য হাত বাড়ানোর তাদের কাজ নয় ৷

তুমি কি কখনো সেই ব্যক্তির অবস্থা ভেবে দেখেছো যে তার প্রবৃত্তির কামনা বাসনাকে খোদা বানিয়ে নিয়েছে  আর জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও  আল্লাহ তাকে গোমরাহীর মধ্যে নিক্ষেপ করেছেন, তার দিলে কানে মোহর মেরে দিয়েছেন এবং চোখে আবরণ সৃষ্টি করেছেন৷  আল্লাহ ছাড়া আর কে আছে যে তাকে হিদায়াত দান করতে পারে? তোমরা কি কোন শিক্ষা গ্রহণ করো না? -আল জাসিয়াহ্ আয়াত ২৩
Afara'ayta manit takhaza ilaahahoo hawaahu wa adal lahul laahu 'alaa 'ilminw wa khatama 'alaa sam'ihee wa qalbihee wa ja'ala 'alaa basarihee ghishaawatan famany yahdeehi mim ba'dil laah; afalaa tazakkaroon?

প্রবৃত্তির কামনা-বাসনাকে খোদা বানিয়ে নেয়ার অর্থ ব্যক্তির নিজের ইচ্ছা আকাংখার দাস হয়ে যাওয়া৷ তার মন যা চায় তাই সে করে বসে যদিও আল্লাহ তা হারাম করেছেন এবং তার মন যা চায় না তা সে করে না যদিও আল্লাহ তা ফরয করে দিয়েছেন৷ ব্যক্তি যখন এভাবে কারো আনুগত্য করতে থাকে তখন তার অর্থ দাঁড়ায় এই যে, তার উপাস্য আল্লাহ নয়, বরং সে এভাবে যার আনুগত্য করছে সে- তার উপাস্য৷ সে মুখে তাকে 'ইলাহা' এবং উপাস্য বলুক বা না বলুক কিংবা মূর্তি তৈরী করে তার পূজা করুক বা না করুক তাতে কিছু এসে যায় না৷ কারণ, দ্বিধাহীন আনুগত্যই তার উপাস্য হওয়ার জন্য যথেষ্ট৷ এভাবে কার্যত শিরক করার পর কোন ব্যক্তি শুধু এই কারণে শিরকের অপরাধ থেকে মুক্ত হতে পারে না যে, সে যার আনুগত্য করছে মুখে তাকে উপাস্য বলেনি এবং সিজদাও করেনি৷ অন্যান্য বড় বড় মুফাসসিরও আয়াতটির ব্যাখ্যাই করেছেন৷ ইবনে জারীর এর অর্থ বর্ণনা করেছেন এইভাবে যে, সে তার প্রবৃত্তির কামনা-বাসনাকে উপাস্য বানিয়ে নিয়েছে৷ প্রবৃত্তি যা কামনা করেছি সে তাই করে বসেছে৷ না সে আল্লাহর হারামকৃত বস্তুকে হারাম বলে মনে করেছে, না তার হালালকৃত বস্তুকে হালাল বলে গণ্য করেছে৷ আবু বকর জাসসাস এর অর্থ বর্ণনা করেছেন, "কেউ যদি যেমনভাবে আল্লাহর আনুগত্য করে সে ঠিক তেমনিভাবে প্রবৃত্তি আকাংখার আনুগত্য করে" যামাখশারী এর ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে, "সে প্রবৃত্তির কামনা-বাসনার প্রতি অত্যন্ত অনুগত৷ তার প্রবৃত্তি তাকে যেদিকে আহবান জানায় সে সেদিকেই চলে যায়৷ সে এমনভাবে তার দাসত্ব করে যেমন কেউ আল্লাহর দাসত্ব করে"

No comments:

Post a Comment