আল কুরআনের বিভিন্ন স্থানে “আস সিদক্” শব্দটি ১শ বারেরও বেশী ব্যবহৃত হয়েছে।
এই মহা গ্রন্থে সত্যবাদিতার বিষয়টি যেভাবে উপস্থাপিত হয়েছে তা হলোঃ
ক. সত্যবাদিতা হচ্ছে বিশ্বাসীদের জন্য আল্লাহর আদিষ্ট গুণ।
খ. আল্লাহর নবী-রাসুল ও প্রিয় মু’মিনদের অন্যতম প্রধান গুণ তাদের সত্যবাদিতা।
গ. ঈসা (আ.)এর মাতা বিবি মারিয়াম (রা.)এর মত ঐতিহাসিক
ব্যক্তিত্বদের প্রধান বৈশিষ্ঠ্য ছিল তাঁদের সত্যবাদিতা।
ঘ. রাসুল মুহাম্মদ
(সা.)এর জীবন ও চরিত্রে সত্যবাদিতার প্রকাশ ছিল সুস্পষ্ট। তাঁর সততা ও বিশ্বস্ততার
জন্য তাঁর শত্রু কাফিররাও তাঁকে সম্মান করতো। এজন্য তারা তাঁকে আল-আমীন (বিশ্বস্ত)
নামে ডাকতো। কাফির নেতা আবু সুফিয়ান রোম সম্রাট হেরাক্লিয়াসের রাসুল (সা.)এর শিক্ষা
সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে বলেন, “তিনি লোকদের আল্লাহর ওপর ঈমান আনতে, নামাজ
কায়েম করতে, সত্যবাদী হতে এবং সত ও আত্মীয় পরিজনদের প্রতি দয়ালূ হতে বলেন।”
সত্যবাদিতার বিপরীত
বিষয় বা মিথ্যাবাদিতা বা মিথ্যাচারকে আল কুরআন ও হাদীসে নিকৃষ্টতম অপরাধ হিসেবে বলা
হয়েছে। রাসুল মুহাম্মদ (সা.) বলেন, “নিকৃষ্টতম প্রতারণা হচ্ছে আমার এমন ভাইকে মিথ্যা
কথা বলা যে তোমাকে বিশ্বাস করে। তিনি আরো বলেন, সত্যবাদী হও কারণ সত্যবাদিতা তোমাকে
সততার দিকে পরিচালনা করে। আর সততা জান্নাতের দিকে চালিত করে।” পক্ষান্তরে “মিথ্যা মানুষকে
প্রতারণার দিকে চালিত করে আর প্রতারণা চালিত করে জাহান্নামের দিকে।”
কারো অতি প্রশংসা করা
যা চাটুকারীতার পর্যায়ে পড়ে, রাসুল (সা.) সেটাকেও মিথ্যার শামিল বলে মনে করতেন এবং
এসব করতে নিষেধ করেছেন।
রাসুল (সা.)সতর্ক করে
দিয়েছেন শিশুদের দিয়ে কোন কাজ করানোর ক্ষেত্রে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি না দিতে। কোন মাতা
পিতা যদি সন্তানকে বলে, “তুমি একাজ করলে তোমার জন্য অমুক পুরষ্কার রয়েছে।” এক্ষেত্রে
বাস্তবে প্রতিশ্রুত বিষয় না থাকলে তা হবে পিতা মাতার জন্য মিথ্যা বলার শামিল। অনেক
সময় ছোট বাচ্চারা মুরব্বীদেরকে বিব্রতকর প্রশ্ন করে। এসব ক্ষেত্রে মিথ্যা জবাব না দিয়ে সত্য
কথা বলাই শ্রেয়ঃ। নির্দোষ মিথ্যার চেয়ে সত্য কথা বলাই চূড়ান্তভাবে মঙ্গলজনক।
রেফারেন্স: আল কুরআন থেকেঃ
১. সে মিথাবাদী হয়ে থাকলে তার মিথ্যার দায়-দায়িত্ব তারই৷ কিন্তু
সে যদি সত্যবাদী হয়ে থাকে তাহলে যেসব ভয়ানক পরিণামের কথা সে বলছে তার কিছুটা তো অবশ্যই
তোমাদের ওপর আসবে৷ আল্লাহ কোন সীমালংঘনকারী মিথ্যাবাদী লোককে হিদায়াত দান করেন না৷
wa iny yaku kaaziban fa'alaihi kazi buhoo wa iny yaku
saadiqany yasibkum ba'dul lazee ya'idukum innal laaha laa yahdee man huwa
musrifun kaazaab-সূরা আল মু’মিন আয়াত ২৮
২. আল্লাহ এমন ব্যক্তিকে হিদায়াত দান করেন না, যে মিথ্যাবাদী ও হক
অস্বীকারকারী৷
innal laaha laa yahdee man huwa kaazibun kaffaar-সূরা আয্ যুমার
আয়াত ০৩
রেফারেন্স: আল হাদীস থেকেঃ
রাসুল (সা.) এক হাদীসে
মুনাফিক এর ৪টি বৈশিষ্ঠ্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ১.
তার কাছে কোনো আমানত রাখলে খিয়ানত করে ২. সে কথা বললে মিথ্যা বলে ৩. ওয়াদা করলে ভঙ্গ
করে ৪. ঝগড়া করলে গাল-মন্দ করে। (বুখারি, মুসলিম, নাসাঈ, আবু দাউদ, মুসনাদে আহমাদ)
রেফারেন্স: ইসলামী শিক্ষা সিরিজ থেকেঃ ড. জামাল আল বাদাবী: পৃষ্ঠা ২৩৭
No comments:
Post a Comment