যৌন বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গী কি ভারসাম্যপূরণ ও বাস্তব?
যৌন বিষয়ে ইসলামী দৃষ্ভিঙ্গীর শ্রেষ্ঠত্ব অনুধাবন করতে গিয়ে এ বিষয়ে যে সব বাড়াবাড়ি করা হয়েছে তা লক্ষ্য করা উচিত। এর এক দিকে রয়েছে সেই দর্শনভিত্তিক নৈতিক ধ্বস যাতে বলা হয়েছে যা কিছু আনন্দদায়ক তাই নৈতিক। এই দর্শন যৌন বিষয়ে সকল বাধা ও রাখ-ঢাক বর্জন করতে বলে। ইসলাম এধরনের অবাধ যৌনাচারকে পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করে। অন্যান্য প্রত্যাদিষ্ট ধর্মগুলোও অবাধ যৌন স্বাধীনতার বিপক্ষে। অন্যদিকে আর একদল আছে যারা যে কোন যৌন আকাঙ্খাকেই অপবিত্র, নোংরা, মন্দ আর শয়তানী মনে করে। এরা বৈরাগ্য বা চির-কৌমার্য অবলম্বন করে। ইসলাম এদুটো চরম পন্থার বাইরে ভারসাম্যপূর্ণ বিধান দেয়। ইসলাম মানুষের স্বাভাবিক যৌনাকাঙ্খাকে স্বীকৃতি দিয়ে তা পূরণের এমন ব্যবস্থা করে যাতে ব্যক্তির মধ্যে কোন অপরাধবোধ আসেনা। সাথে সাথে ইসলাম এমনভাবে মানুষের যৌনবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রন করে যাতে কোথাও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় না। যৌন অনাচার রোধে ও স্বাভাবিক পন্থায় যৌনাকাঙ্খা পূরণের লক্ষ্যে ইসলামে গৃহীত পদক্ষেপগুলো হলোঃ
১. বিবাহ বহির্ভূত সকল যৌনসম্পর্ক নিষিদ্ধ।
২. ব্যভিচার ও অবাধ যৌনাচার-এর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান
৩. আল্লাহ মানুষকে স্বাভাবিক যৌনাকাঙ্খা, সন্তান ও সম্পদ লাভের আকাঙ্খা দিয়েই সৃষ্টি করেছেন। ইসলাম বৈধভাবে এসব আকাঙ্খা পূরণকে দূষণীয় বলে না। ইসলাম সব সময় পৃথিবীর জীবনের সাথে আখেরাতের প্রস্তুতিকে সংযুক্ত করতে বলে।
৪. আল কুরআন বলে যে মানুষের বিয়ে করার আকাঙ্খা বৈধ আর বাঞ্ছিত আকাঙ্খা ও উত্তম স্ত্রী পাওয়া হচ্ছে আল্লাহর পক্ষ থেকে এক নিয়ামত।
৫. ইসলামে বৈরাগ্য আর চিরকৌমার্যের কোন স্বীকৃতি নেই।
রেফারেন্স: আল কুরআন থেকেঃ
১. যিনার কাছেও যেয়ো না, ওটা অত্যন্ত খারাপ কাজ
এবং খুবই জঘন্য পথ৷ Wa laa taqrabuz
zinaaa innahoo kaana faahishatanw wa saaa'a sabeelaa. –সূরা বণী ইসরাঈল আয়াত ৩২
এ হুকুম
ব্যক্তির জন্য এবং সামগ্রিকভাবে সমগ্র সমাজের জন্যও ৷ ব্যক্তির জন্য এ হুকুমের মানে
হচ্ছে, সে নিছক যিনার কাজ থেকে দূরে থেকেই ক্ষান্ত হবে না বরং এ পথের দিকে টেনে নিয়ে
যায় যিনার এমন সব সূচনাকারী এবং প্রাথমিক উদ্যোগ ও আকর্ষণ সৃষ্টিকারী বিষয় থেকেও দূরে
থাকবে ৷ আর সমাজের ব্যাপারে বলা যায়, এ হুকুমের প্রেক্ষিতে সমাজ জীবনে যিনা, যিনার
উদ্যোগ আকর্ষণ এবং তার কারণসমূহের পথ বন্ধ করে দেয়া সমাজের জন্য ফরয় হয়ে যাবে৷ এ উদ্দেশ্যে
সে আইন প্রণয়ন, শিক্ষা ও অনুশীলনদান, সামাজিক পরিবেশের সংস্কার সাধন, সমাজ জীবনের যথাযোগ্য
বিন্যাস এবং অন্যান্য প্রভাবশালী ব্যবস্থা অবলম্বন করবে ৷
২. তারা আল্লাহ ছাড়া আর কোন উপাস্যকে ডাকে না, আল্লাহ যে প্রানকে হারাম
করেছেন কোন সংগত কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না৷ এসব যে-ই
করে সে তার গোনাহের শাস্তি ভোগ করবে৷ Wallazeena
laa yad'oona ma'al laahi ilaahan aakhara wa laa yaqtuloonan nafsal latee
harramal laahu illaa bilhaqqi wa laa yaznoon; wa mai yaf'al zaalika yalqa
asaamaa. -সূরা আল ফুরক্কান আয়াত ৬৮
সে সময়কার
আরববাসীরা যে তিনটি বড় গোনাহের সাথে বেশী করে জড়িত থাকতো সেগুলো থেকে তারা দূরে থাকে৷
একটি হলো শির্ক, দ্বিতীয়টি অন্যায়ভাবে হত্যা করা এবং তৃতীয়টি যিনা৷ এ বিষয়বস্তুটিই
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিপুল সংখ্যক হাদীসে বর্ণনা করেছেন৷ যেমন আবদুল্লাহ
ইবনে মাসউদ (রা) বর্ণিত হাদীস৷ তাতে বলা হয়েছেঃ একবার নবীকে (সা) জিজ্ঞেস করা হলো,
সবচেয়ে বড় গোনাহ কি? তিনি বললেন: "তুমি যদি কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ প্রতিদ্বন্দী
দাঁড় করাও৷ অথচ আল্লাহই তোমাকে সৃষ্টি করেছেন৷" জিজ্ঞেস করা হলো, তারপর? বললেন:
তুমি যদি তোমার সন্তানকে হত্যা কর এই ভয়ে যে সে তোমার সাথে আহারে অংশ নেবে৷" জিজ্ঞেস
করা হলো, তারপর? বললেন: "তুমি যদি তোমার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে যিনা কর৷"
(বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, নাসাঈ, আহমদ) যদিও আরো অনেক কবীরা গোনাহ আছে কিন্তু সেকালের
আরব সমাজে এ তিনটি গোনাহই সবচেয়ে বেশী জেঁকে বসেছিল৷
৩. কিয়ামতের
দিন তাকে উপর্যুপরি শাস্তি দেয়া হবে এবং সেখানেই সে পড়ে থাকবে চিরকাল লাঞ্ছিত অবস্থায়৷ Yudaa'af lahul 'azaabu Yawmal Qiyaamati wa yakhlud feehee
muhaanaa. -সূরা আল ফুরক্কান আয়াত ৬৯
৪. তবে তারা ছাড়া যারা (ঐসব গোনাহের পর) তাওবা করেছে এবং
ইমান এনে সতকাজ করতে থেকেছে৷ এ ধরনের লোকদের মন্দ কাজগুলোকে আল্লাহ ভালো কাজের
দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন এবং আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল ও মেহেরবান৷ Illaa man taaba wa 'aamana wa 'amila 'amalan saalihan fa
ulaaa'ika yubad dilul laahu saiyi aatihim hasanaat; wa kaanal laahu Ghafoorar
Raheemaa. -সূরা আল ফুরক্কান আয়াত ৭০
৫. মানুষের জন্য নারী, সন্তান, সোনারুপার
স্তূপ, সেরা ঘোড়া, গবাদী পশু ও কৃষি ক্ষেতের প্রতি আসক্তিকে বড়ই সুসজ্জিত ও সুশোভিত
করা হয়েছে৷ কিন্তু এগুলো দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনের সামগ্রী মাত্র৷ প্রকৃতপক্ষে উত্তম
আবাস তো রয়েছে আল্লাহর কাছে৷ Zuyyina
linnaasi hubbush shahawaati minannisaaa'i wal baneena walqanaateeril
muqantarati minaz zahabi walfiddati walkhailil musawwamati wal an'aami walhars;
zaalika mataa'ul hayaatid dunyaa wallaahu 'indahoo husnul ma-aab. –সূরা আলে
ইমরান আয়াত ১৪
বলো, আমি
কি তোমাদের জানিয়ে দেবো, ওগুলোর চাইতে ভালো জিনিস কি? যারা তাকওয়ার নীতি অবলম্বন করে
তাদের জন্য তাদের রবের কাছে রয়েছে বাগান, তার নিম্নদেশে ঝরণাধারা প্রবাহিত হয়৷ সেখানে
তারা চিরন্তন জীবন লাভ করবে৷ পবিত্র স্ত্রীরা হবে তাদের সংগিনী এবং তারা লাভ করবে
আল্লাহর সন্তুষ্টি ৷ আল্লাহ তার বান্দাদের কর্মনীতির ওপর গভীর ও প্রখর দৃষ্টি রাখেন
৷ Qul a'unabbi 'ukum bikhairim min zaalikum;
lillazeenat taqaw 'inda Rabbihim jannaatun tajree min tahtihal anhaaru
khaalideena feehaa wa azwaajum mutahharatunw wa ridwaanum minal laah; wallaahu
baseerum bil'ibaad. –সূরা আলে ইমরান আয়াত ১৪
৬. আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে, তিনি তোমাদের জন্য
তোমাদেরই জাতি থেকে সৃষ্টি করেছেন স্ত্রীগণকে, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি
লাভ করো এবং তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন৷ অবশ্যই এর মধ্যে বহু
নিদর্শন রয়েছে তাদের জন্য যারা চিন্তা-ভাবনা করে৷ Wa
min Aayaatiheee an khalaqa lakum min anfusikum azwaajal litaskunooo ilaihaa wa
ja'ala bainakum mawad datanw wa rahmah; inna fee zaalika la Aayaatil liqawminy
yatafakkaroon. সূরা আর রুম আয়াত ২১
স্রষ্টার
প্রজ্ঞার পূর্ণতা হচ্ছে এই যে, তিনি মানুষকে শুধুমাত্র একটি জাতি (sexes) সৃষ্টি করেননি
বরং তাকে দুটি জাতির আকারে সৃষ্টি করেছেন৷ মানবিকতাঁর দিক দিয়ে তারা একই পর্যায়ভুক্ত৷
তাদের সৃষ্টির মূল ফর্মুলাও এক৷ কিন্তু তারা উভয়ই পরস্পর থেকে ভিন্ন শারীরিক আকৃতি,
মানসিক ও আত্মিক গুণাবলী এবং আবেগ- অনুভূতি ও উদ্যোগ নিয়ে জন্মলাভ করে৷ আবার তাদের
মধ্যে এমন বিস্ময়কর সম্বন্ধ ও সামঞ্জস্য সৃষ্টি করে দেয়া হয়েছে যার ফলে তারা প্রত্যেকে
পুরোপুরি অন্যের জোড়ায় পরিণত হয়েছে৷ প্রত্যেকের শরীর এবং প্রবৃত্তি ও উদ্যোগসমূহ অন্যের
শারীরিক ও প্রবৃত্তির দাবীসমূহের পরিপূর্ণ জবাব৷ এ ছাড়াও সেই প্রাজ্ঞ স্রষ্টা ও উভয়
জাতির লোকদেরকে সৃষ্টির সূচনা থেকেই বরাবর ও আনুপাতিক হারে সৃষ্টি করে চলবেন৷ আজ পর্যন্ত
কখনো দুনিয়ার কোন জাতির মধ্যে বা কোন এলাকায় কেবলমাত্র পুত্র সন্তানই জন্মলাভ করে চলছে
এমন কথাও শোনা যায় নি৷ এটা এমন একটা জিনিস যার মধ্যে কোন মানুষের হস্তক্ষেপ বা বুদ্ধি-
কৌশল প্রয়োগের সামান্যতম অবকাশই নেই৷ মানুষ এ ব্যাপারে সামান্যতমও প্রভাব বিস্তার করতে
পারে না যে, মেয়েরা অনবরত এমনি মেয়েলী বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্মলাভ করতে থাকবে এবং ছেলেরা
অনবরত এমন পুরুষালী বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্মলাভ করতে থাকবে যা তাদের পরস্পরকে যথার্থ জোড়ায়
পরিণত করবে৷ আর নারী ও পুরুষের জন্ম এমনি ধারাবাহিকভাবে একটি আনুপাতিক হারে হয়ে যেতে
থাকবে, এ ব্যাপারে প্রভাব বিস্তার করার কোন মাধ্যম তাঁর নেই৷ হাজার হাজার বছর থেকে
কোটি কোটি মানুষের জন্মলাভ এ কৌশল ও ব্যবস্থার এমনই সুসামঞ্জস্য পদ্ধতিতে কার্যকর থাকা
কখনো নিছক আকস্মিক ঘটনা হতে পারে না আবার বহু ইলাহর সম্মিলিত ব্যবস্থাপনার ফলও এটা
নয়৷ এ জিনিসটি সুস্পষ্টভাবে একথা প্রমাণ করে যে, একজন বিজ্ঞানী আর শুধুমাত্র একজন মহা
বিজ্ঞানী স্রষ্টাই তাঁর পরিপূর্ণ জ্ঞান ও শক্তির মাধ্যমে শুরুতে পুরুষ ও নারীর একটি
সর্বাধিক উপযোগী ডিজাইন তৈরি করেন৷ তাঁরপর তিনি এ ডিজাইন অনুযায়ী অসংখ্য পুরুষ ও অসংখ্য
নারীর তাদের পৃথক ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য সহকারে সারা দুনিয়ায় একটি আনুপাতিক হারে জন্মলাভ
করার ব্যবস্থা করেন৷
এটা কোন
অপরিকল্পিত ব্যবস্থা নয়৷ বরং স্রষ্টা নিজেই পরিকল্পিতভাবে এ ব্যবস্থা করেছেন যার ফলে
পুরুষ তাঁর প্রাকৃতিক দাবী নারীর কাছে এবং নারী তাঁর প্রাকৃতিক চাহিদা পুরুষের কাছে
লাভ করবে এবং তারা উভয়ে পরস্পরের সাথে সম্পর্কিত থেকেই প্রশান্তি ও সুখ লাভ করবে৷ এ
বিজ্ঞানময় ব্যবস্থাপনাকে স্রষ্টা একদিকে মানব বংশধারা অব্যাহত থাকার এবং অন্যদিকে মানবিক
সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে অস্তিত্ব দান করার মাধ্যমে পরিণত করেছেন৷ যদি এ দুটি জাতিকে নিছক
দুটি পৃথক ডিজাইনে তৈরি করা হতো এবং তাদের মধ্যে এমন অস্থিরতা সৃষ্টি না করা হতো, যা
তাদের পারস্পরিক সংযোগ ও সম্পর্ক ছাড়া প্রশান্তিতে পরিণত হতে পারতো না, তাহলে সম্ভবত
ছাগল ভেড়ার মতো মানুষের বংশধারাও এগিয়ে যেতো কিন্তু তাদের সাহায্যে কোন সভ্যতা ও সংস্কৃতির
অস্তিত্ব লাভ করার কোন সম্ভাবনাই থাকতো না৷ স্রষ্টা নিজের জ্ঞান ও প্রজ্ঞার সাহায্যে
পুরুষ ও নারীর জন্য এমন পরস্পরের চাহিদা, তৃষ্ণা ও অস্থিরতাঁর অবস্থা সৃষ্টি করে রেখেছেন
যার ফলে তারা উভয়ে মিলে একসাথে না থাকলে শান্তি ও সুখ লাভ করতে পারে না৷ সমগ্র প্রাণীজগতের
বিপরীতে মানব জাতির মধ্যে এটিই হচ্ছে সভ্যতা ও সংস্কৃতির উন্মেষ ও বিকাশ লাভের মৌলিক
কারণ৷ এ শান্তির অন্বেষায় তাদেরকে একত্রে ঘর বাঁধতে বাধ্য করে৷ এরি বদৌলতে পরিবার ও
গোত্র অস্তিত্ব লাভ করে৷ এর ফলে মানুষের জীবনে সাংস্কৃতিক বিকাশ ঘটে৷ এ বিকাশে মানুষের
বুদ্ধিবৃত্তিক যোগ্যতা অবশ্যই সহায়ক হয়েছে৷কিন্তু তা তাঁর আসল উদ্যোক্তা নয়৷ আসল উদ্যোক্তা
হচ্ছে এ অস্থিরতা, যাকে পুরুষ ও নারীর অস্তিত্বের মধ্যে সংস্থাপিত করে তাদেরকে 'ঘর'
বাঁধতে বাধ্য করা হয়েছে৷ কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তি এ কথা ভাবতে পারেন যে, এ বিপুল প্রজ্ঞা
প্রকৃতির অন্ধ শক্তিসমূহ থেকে হঠাত এমনিই সৃষ্টি হয়ে গেছে ? অথবা বহু সংখ্যক ইলাহ কি
এমনি ধরনের একটি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারতো, যার ফলে তারা এ গভীর জ্ঞানময় উদ্দেশ্য সামনে
রেখে হাজার হাজার বছর থেকে অনবরত অসংখ্য পুরুষ ও নারীকে এ বিশেষ অস্থিরতা সহকারে সৃষ্টি
করে যেতে থাকতো? এ তো একজন জ্ঞানীর এবং মাত্র একজন জ্ঞানীরই প্রজ্ঞার সুস্পষ্ট নিদর্শন৷
কেবলমাত্র বুদ্ধিভ্রষ্ট ব্যক্তিই এটি দেখতে অস্বীকার করতে পারে৷
ভালোবাসা
বলতে এখানে কামশক্তি ভালোবাসার (sexual love) কথা বলা হয়েছে ৷ নারী ও পুরুষের মধ্যে
এটি আকর্ষণের প্রাথমিক উদ্যোক্তায় পরিণত হয়৷ তাঁরপর তাদেরকে পরস্পরের সাথে সংলগ্ন করে
রাখে৷ আর 'রহমত' তথা দয়া মানে হচ্ছে এমন একটি আত্মিক সম্পর্ক, যা স্বামী- স্ত্রীর জীবনে
পর্যায়ক্রমে বিকাশ লাভ করে৷ এর বদৌলতে তারা দু'জনে দু'জনার কল্যাণকাংখী, দু'জনের প্রতি
সহানুভূতিশীল এবং উভয়ের সুখে দুঃখে শরীক হয়ে যায়৷ এমনকি এমন এক সময় আসে যখন কামসিক্ত
ভালোবাসা পিছনে পড়ে থাকে এবং বার্ধক্যে এ জীবনসাথী যৌবনকালের চাইতে অনেক বেশি অগ্রসর
হয়ে পরস্পরের জন্য দয়া, স্নেহ ও মমতার পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করতে থাকে৷ মানুষের মধ্যে
শুরুতেই যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছিল তাকে সাহায্য করার জন্য স্রষ্টা মানুষের মধ্যে এ
দুটি ইতিবাচক শক্তি সৃষ্টি করে দেন৷ এ অস্থিরতা তো শুধুমাত্র শান্তির প্রত্যাশী এবং
এর সন্ধানে সে নারী ও পুরুষকে পরস্পরের দিকে নিয়ে যায়৷ এরপর এ দুটি শক্তি অগ্রসর হয়ে
তাদের মধ্যে স্থায়ী বন্ধুত্বের এমন একটি সম্পর্ক জুড়ে দেয় যা দুটি পৃথক পরিবেশে লালিত
আগন্তুকদেরকে একসাথে মিলিয়ে গভীরভাবে সংযুক্ত করে দেয়৷ এ সংযোগের ফলে সারা জীবনে তারা
মাঝ দরিয়ায় নিজেদের নৌকা একসাথে চালাতে থাকে৷ একথা সুস্পষ্ট, কোটি কোটি মানুষ তাদের
জীবনে এই যে ভালোবাসা ও দয়ার অভিজ্ঞতা লাভ করছে এগুলো কোন নিরেট বস্তু নয়৷ এগুলোকে
ওজন ও পরিমাপ করা যেতে পারে না৷ মানুষের শারীরিক গঠনে যেসব উপাদানের সমাবেশ ঘটানো হয়েছে
তাদের মধ্যে কোথাও এদের উতস চিহ্নিত করা যেতে পারে না৷ কোন ল্যাবরেটরীতেও এদের জন্ম
ও বিকাশ সাধনের কারণসমূহ অনুসন্ধান করা যেতে পারে না৷ এ ছাড়া এর আর কোন ব্যাখ্যাই করা
যেতে পারে না যে, একজন প্রাজ্ঞ স্রষ্টা স্বেচ্ছাকৃতভাবে একটি উদ্দেশ্য সামনে রেখে পূর্ণ
সামঞ্জস্য সহকারে মানুষের মধ্যে তা সংস্থাপন করে দিয়েছেন৷
রেফারেন্স: আল হাদীস থেকেঃ
একটি হাদসে রাসুল (সা.) বলেন, যখন স্বামী-স্ত্রী
দাম্পত্য মিলন করে তখন উভয়ই আল্লাহর কাছ থেকে পুরস্কৃত হয়ে থাকে। একথা শুনে সাহাবারা
অবাক হয়ে প্রশ্ন করেন যে, কিভাবে মানুষ এমন কাজ থেকে পুরস্কৃত হতে পারে যা তারা নিজেরা
নেহায়েত নিজেদের আনন্দের জন্যই করেছে। উত্তরে রাসুল (সা.) বলেন একই কাজ তারা যদি বিবাহ
বন্ধন ছাড়া করতো তবে তারা শাস্তি পেত। আর এখন আল্লাহর বিধান মেনে আনন্দ করার জন্য তারা
পুরস্কৃত হবে।
যখন একদল সাহাবী সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে
তারা বিয়ে করবে না এবং আজীবন নামায ও রোজা করে কাটাবে। রাসুল (সা.) এখবর পাবার পর সাহাবীর
দলকে কঠোরভাবে তিরষ্কার করেন। তিনি বলেন, তোমাদের চাইতেও আমি আল্লাহর কাছে। আর তবুও
আমি রাতে নামায পড়ি আবার বিশ্রামও করি। আমি রোজা রাখি আবার খাই। আমি বিবাহিত। তোমাদের
মাঝে যে কেউ আমার পথ থেকে বিচ্যুত হবে সে আমার কেউ নয়!
রেফারেন্স: ইসলামী শিক্ষা সিরিজ থেকেঃ ড. জামাল আল বাদাবী: পৃষ্ঠা ২০৩
No comments:
Post a Comment