ইসলামের ১০ নির্দেশনা
কাছ থেকে আঘাত করলে যেমন ব্যথার পরিমাণ বেশি হয়, তেমনি কাছের মানুষ কষ্ট দিলে অন্তরের ক্ষতটা গভীর হয়। কিন্তু প্রাত্যহিক জীবনে মানুষ বারবার আপনজনের দ্বারা আক্রান্ত হয়। নিকটাত্মীয় ও আপনজন কষ্ট দিলে মুমিনের করণীয় কী? ইসলাম বলে, অসৌজন্যমূলক আচরণের বিপরীতে সৌজন্যমূলক আচরণ করতে, যথাসম্ভব ধৈর্য ধারণ করতে। আপনজন কষ্ট দিলে মুমিনের করণীয় সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো—
ইরশাদ হয়েছে, ‘ভালো ও মন্দ সমান হতে পারে না। মন্দ প্রতিহত কোরো উত্কৃষ্ট দ্বারা; ফলে তোমার সঙ্গে যার শত্রুতা আছে, সে হয়ে যাবে অন্তরঙ্গ বন্ধুর মতো।’ (সুরা : হা-মিম-সাজদা, আয়াত : ৩৪)
২. উত্তম আচরণ কল্যাণের দুয়ার খোলে : উত্তম আচরণ মানুষকে পাল্টে দেওয়ার সর্বোত্তম হাতিয়ার। আর তা মানুষের সামনে কল্যাণের দুয়ার খুলে দেয়।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘তাদের সঙ্গে সৎভাবে জীবনযাপন করবে; তোমরা যদি তাদের অপছন্দ কোরো তবে এমন হতে পারে যে আল্লাহ যাতে প্রভূত কল্যাণ রেখেছেন তোমরা তাকেই অপছন্দ করছ।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১৯)
৩. ধৈর্য ধারণ ও ক্ষমা করা : যে কষ্ট দেয় তার সঙ্গে উত্তম আচরণ করা এবং তাকে ক্ষমা করাই ইসলামের নির্দেশ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমি কি তোমাকে দুনিয়া ও আখিরাতে উত্তম চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তি সম্পর্কে জানাব না? যে তোমার সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করে তার সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা কোরো, যে তোমাকে বঞ্চিত করে তাকে তুমি দাও, যে তোমার প্রতি অবিচার করে তাকে ক্ষমা কোরো।’ (আল মুসতাদরিক আলাস সহিহাইন, হাদিস : ৭৪৯১)
৪. সম্পর্ক রক্ষার সুফল : কোনো ব্যক্তির আচরণ পছন্দ না হওয়ার পরও সম্পর্ক রক্ষা করলে আল্লাহ ব্যক্তির জীবন-জীবিকায় বরকত দান করেন।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সাবধান! তোমাদের মধ্যে যে চায় তার জীবন দীর্ঘায়িত হোক ও জীবিকা প্রশস্ত হোক সে যেন আত্মীয়তা রক্ষা করে।’ (আল মুসতাদরিক আলাস সহিহাইন, হাদিস : ৭৪৯১)
৫. খারাপ লাগার অর্থ খারাপ নয় : কারো বাহ্যিক আচরণে কষ্ট পেলেই যে ব্যক্তিটি খারাপ হবে তা আবশ্যক নয়। কেননা হয়তো তাকে ভুল বোঝা হচ্ছে বা আল্লাহ তার ভেতর কোনো কল্যাণ রেখেছেন। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘তাদের সঙ্গে সৎভাবে জীবন যাপন করবে; তোমরা যদি তাদের অপছন্দ করো, তবে এমন হতে পারে যে আল্লাহ যাতে প্রভূত কল্যাণ রেখেছেন তোমরা তাকেই অপছন্দ করছ।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১৯)
৬. কষ্ট সহ্য করা নিষ্ফল নয় : কোনো ব্যক্তি যদি আপনজনের মন্দ আচরণ সহ্য করে যায়, তবে তা দুনিয়া ও আখিরাতে নিষ্ফল হবে না।
কেননা আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসুল, আমার আত্মীয়-স্বজন আছে। আমি তাদের সঙ্গে সদাচরণ করি; কিন্তু তারা আমাকে বিচ্ছিন্ন করে রাখে। আমি তাদের উপকার করি, কিন্তু তারা আমার ক্ষতি করে। আমি তাদের প্রতি সহনশীলতা দেখাই আর তারা আমার সঙ্গে মূর্খতাসুলভ আচরণ করে। তখন তিনি বললেন, তুমি যা বললে যদি প্রকৃত অবস্থা তাই হয়, তবে তুমি যেন তাদের ওপর জ্বলন্ত অঙ্গার নিক্ষেপ করছ। আর সর্বদা তোমার সঙ্গে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের বিপক্ষে একজন সাহায্যকারী (ফেরেশতা) থাকবে, যতক্ষণ তুমি এ অবস্থায় বহাল থাকবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৪১৯)
৭. ‘আমিই ঠিক’ চিন্তা পরিহার : আপনজনের আচরণে কষ্ট পাওয়ার অন্যতম কারণ নিজের চিন্তা ও কাজকে সব সময় সঠিক মনে করা। এমন প্রবণতা পরিহার করা এবং অন্যের প্রয়োজন ও ব্যক্তিগত সুবিধা-অসুবিধাকে গুরুত্ব দেওয়া আবশ্যক। যেমন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘(ঘরে প্রবেশের) অনুমতি প্রার্থনা তিনবার করবে। যদি সে তোমাকে অনুমতি দেয় তবে ভালো, নতুবা তুমি ফিরে যাবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৮৯১)
৮. নিজেকে যাচাই করা : অন্যের দ্বারা কষ্ট পেলে নিজেকে যাচাই করে দেখাও আবশ্যক। এমন আচরণের পেছনে নিজের কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে কি না? কেননা অনেক সময় অন্যের আচরণ বলে দেয় ‘আমি’ মানুষ হিসেবে কেমন। যেমন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই উত্তম, যে তার পরিবারের কাছে উত্তম। আমি আমার পরিবারের কাছে তোমাদের চেয়ে উত্তম।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৮৯৪)
৯. নিজেকে সংশোধন করে নেওয়া : যদি এমন হয় যে মানুষ আমার সঙ্গে মিশতে পারে না, আমার সঙ্গেই সবাই মন্দ আচরণ করে, তবে নিজের দোষ-ত্রুটি খুঁজে বের করে সংশোধন করে নেওয়া আবশ্যক। কেননা মহানবী (সা.) বলেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে মর্যাদার বিচারে সর্বনিকৃষ্ট সেই ব্যক্তি, যার মন্দ আচরণের কারণে মানুষ তাকে পরিহার করে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬০৩২)
১০. নিজেকে আল্লাহর কাছে সমর্পণ করা : কখনো যদি ঘরে-বাইরে আপনজনরা কষ্ট দিতে থাকে, তবে বুদ্ধিমানের কাজ হলো মানুষের কাছে অনুযোগ না করে নিজেকে আল্লাহর কাছে সমর্পণ করা। ইয়াকুব (আ.) সন্তানদের দ্বারা কষ্ট পেয়ে যেমনটি করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘সে বলল, আমি আমার অসহনীয় বেদনা; আমার দুঃখ শুধু আল্লাহর কাছে নিবেদন করছি এবং আমি আল্লাহর কাছ থেকে জানি যা তোমরা জানো না।’ (সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ৮৬)
আল্লাহ সবার আচরণ সুন্দর করে দিন। আমিন
রেফাঃ আলেমা হাবিবা আক্তার