লেখা - শব্দটির সাথে জুড়ে আছে চিন্তা-দর্শন-মতামত প্রকাশের আকাঙ্খা। লেখার মাধ্যম পাথর, গাছের কান্ড থেকে শুরু করে একসময় কাগজ এবং বর্তমানে ডিজিটাল স্ক্রিনে এসে পৌঁছেছে। গেলো কয়েক দশক থেকে প্রিন্টার-কীবোর্ড এর প্রচলনে কাগজে লেখার প্রবণতা কিছুটা কমে এসেছে। বর্তমানে অফিস বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে অনেক জায়গায় ই-টাইপিং কে অগ্রাধিকার দেয়া হলেও কাগজে-কলমে লেখা কোনো কিছু শেখার ক্ষেত্রে অনেক বেশি কার্যকর বলে মত প্রকাশ করেছেন গবেষকরা।
এখন আসি হাতে লেখার বিষয়ে। হাতে লেখার পুরো প্রক্রিয়াটিই কগনিটিভ-মটর স্কিল এর সাথে সম্পর্কিত। হাত দিয়ে কলমের শীর্ষে চাপ প্রয়োগ করার মাধ্যমে কাগজের পৃষ্ঠে ক্রমাগত বাঁক পরিবর্তন করে কোনো অক্ষর, শব্দ বা বাক্য তৈরি করা Cognitive-motor স্কিল এর আওতায় পড়ে। এটি শেখার একটি গভীর উপায় যেখানে মস্তিষ্ক প্রতিটি অক্ষরকে ম্যাপ এর সাথে তুলনা করে আত্মস্থ করে।
এ সম্পর্কিত একটি স্টাডিতে দেখা গিয়েছে ৪২ জন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি যারা আরবি ভাষা শিখছে তাদের উপর পরিচালনা করা হয়। দেখা গিয়েছে যারা পড়ে বা টাইপিং করে দেখে শিখে তাদের তুলনায় যারা কাগজে লিখে শিখে তারা খুব তাড়াতাড়ি শিখতে পারে এবং তাদের উচ্চারণও সুস্পষ্ট।
এ বছরের জানুয়ারিতে প্রকাশিত অন্য একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় যা ৩৬ জন তরুণের লিখিত টাস্কের উপর করা হয়েছে। অংশগ্রহণকারী একটি দল যারা টাচস্ক্রিন এ ডিজিটাল পেন এর মাধ্যমে এবং অন্যদল টাইপিং এর মাধ্যমে লিখিত Pictionary (যেখানে ছবি দেখে শব্দ অনুমান করা হয়) টাস্ক সম্পন্ন করে। টাস্ক করার সময়ে প্রতিজনের মস্তিষ্কের সক্রিয়তা বা প্রতিক্রিয়া Electroencephalogram (eeg) পদ্ধতির মাধ্যমে রেকর্ড করা হয়। এ রেকর্ড এর ফলাফলে হাতে অনেক বেশি তারতম্য দেখা যায়। দেখা যায় যে, যেসব অংশগ্রহণকারী কলম দিয়ে লিখেছে ঐসময়ে একইসাথে তাদের পুরো মস্তিষ্ক সক্রিয় ছিলো। অপরদিকে যারা টাইপিং করেছে ঐসময়ে তাদের মস্তিষ্কের ক্ষুদ্র একটি অংশ সক্রিয় ছিলো।
নিয়মিত হাতে-কলমে লেখার অভ্যাস মস্তিষ্কের সক্রিয়তার জন্য একটি কার্যকরী ব্যায়াম বলে দাবি করছেন বিজ্ঞানীরা যা একজন মানুষকে মাল্টিটাস্কিংয়ে ও দক্ষ করে তোলায় ভূমিকা রাখতে পারে।
No comments:
Post a Comment