Tuesday, February 11, 2025

সময়মত নামায না পড়ার পরিণতি

 পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অতঃপর দুর্ভোগ ওই সব মুসল্লির জন্য, যারা তাদের নামাজ সম্পর্কে উদাসীন।’ (সুরা মাউন, আয়াত : ৪-৫)

১. রাসূল সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন : যে ব্যক্তি যথারীতি নামায আদায় করবে না, তার জন্য তা আলোকবর্তিকাও হবে না, যুক্তিপ্রমাণও হবেনা, মুক্তির ওসীলাও হবেনা। অধিকন্তুু সে কিয়ামতের দিন ফিরাউন, কারূন, হামান ও উবাই বিন খালাফের সঙ্গী হবে।
হাদীসের ব্যাখ্যায় কোনো কোনো মুসলিম মনীষী বলেছেন যে, উল্লেখিত চারজন কুখ্যাত কাফেরের সাথে বেনামাযীর হাশর হওয়ার কারণ এই যে, নামায তরকের কারণ চার রকমের হয়ে থাকে। অর্থসম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ, রাষ্ট্রীয় ব্যস্ততা, প্রশাসনিক ব্যস্ততা ও বাণিজ্যিক ব্যস্ততা। নামায পরিত্যাগের কারণ প্রথমটি হলে কারূণের সাথে, দ্বিতীয়টি হলে ফেরাউনের সাথে, তৃতীয়টি হলে হামানের সাথে এবং চতুর্থটি হলে মক্কার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী উবাই বিন খালাফের সাথে তার হাশর হবে।
২. হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বললো: হে আল্লাহর রাসূল! ইসলামের কোন কাজ আল্লাহর নিকট বেশি প্রিয়? রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : যথাসময়ে নামায পড়া। যে ব্যক্তি নামায ছেড়ে দিল তার ধর্ম নেই। নামায ইসলামের খুঁটি। (বায়হাকী)
৩. ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, কিয়ামাতের দিন এক ব্যক্তিকে আল্লাহর সামনে দাঁড় করিয়ে জাহান্নামে যাওয়ার আদেশ দেয়া হবে। সে জিজ্ঞেস করবে : হে আমার প্রতিপালক! কি কারণে (আমাকে জাহান্নামের নির্দেশ দেয়া হলো)? আল্লাহ বলবেন : নামায নির্ধারিত সময়ের পরে পড়া ও আমার নামে মিথ্যা কসম খাওয়ার কারণে।
বিশিষ্ট তাবেয়ী (যিনি রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেননি, কিন্তু সাহাবীর সাক্ষাত পেয়েছেন তাকে-তাবেয়ী বলা হয়) আব্দুল্লাহ বিন শাকীফ (রহ.) বলেন : রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ নামায ছাড়া আর কোনো কাজকে ছেড়ে দিলে মানুষ কাফের হয়ে যায় বলে মনে করতেন না। আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু ও ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বে-নামাযীকে সুস্পষ্টভাবে যথাক্রমে কাফের ও বেদ্বীন বলেছেন। ইবনে আব্বাস বলেছেন : ইচ্ছাকৃতভাবে এক ওয়াক্ত নামায তরক করলেও আল্লাহর সাথে যখন সাক্ষাত হবে তিনি ক্রুদ্ধ থাকবেন।
উড়োজাহাজ বা ট্রেন বিমান বন্দর বা রেলস্টেশন ছেড়ে যাবার ৫/৭ মিনিট পরে সেখানে পৌঁছলে আপনি কি ভ্রমণ করতে পারবেন? উড়োজাহাজ বা ট্রেন কি আপনার জন্য অপেক্ষা করবে? কখনো নয়। তাই যারা জেনে-শুনে, বুঝে ইচ্ছাকৃতভাবে নামায অসময়ে আদায় করছেন, তারা অন্যায় কাজ করছেন। তাই নামায প্রকৃত সময়েই আদায় করতে হবে। নামাযকে যারা এর নির্দিষ্ট সময় থেকে পিছিয়ে অসময়ে আদায় করে, তাদেরকে আল্লাহ হুঁশিয়ারী দিয়েছেন। ইমাম ইবনে কাসীর (রহ) তাঁর বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহ আনহু বলেছেন, “হজ্জের মতো নামাজেরও সময় নির্ধারিত।” অপর সাহাবী ইবনে মাস‘ঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন-এর মতও এমনটিই। তিনি বলেছেন, “হজ্জের মতো নামাজেরও একটি নির্ধারিত সময় রয়েছে।” তাই হজ্জ যেমন নির্ধারিত সময়ে আদায় না করে অন্য সময়ে আদায় করা যায় না, তেমনি নামায ও নির্ধারিত সময় ছাড়া আদায় করা যায় না। শরয়ী ওজর ব্যতীত নির্ধারিত সময়ে নামায আদায় না করলে আল্লাহ্ তা কবুল নাও করতে পারেন।
ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিমের উস্তাদ উবাইদুল্লাহ বিন উমার কাওয়ারী বলেন যে, আমি কখনো এশার নামায জামায়াতে পড়তে ভুলতাম না। কিন্তু একদিন আমার বাড়ীতে এক মেহমান আসায় তাকে নিয়ে ব্যস্ত হওয়ার কারণে এশার জামায়াত ধরতে পারলামনা। পরে এশার নামায ২৭ বার পড়লাম। কারণ হাদীসে আছে, জামায়াতে নামাযের সওয়াব ২৭ গুণ বেশি। কিন্তু রাতে স্বপ্নে দেখলাম, আমি এক দল ঘোড় সওয়ারের সাথে দৌড়ে পাল্লা দিচ্ছি। কিন্তু আমি পেছনে পড়ে যাচ্ছি। যারা আগে ছিল তারা বললো, তুমি কখনো আমাদেরকে ধরতে পারবেনা। কারণ আমরা এশার নামায জামায়াতে পড়েছি আর তুমি পড়েছো একাকী।
প্রিয় ভাই ও বোনেরা যারা নামায পড়ে বা আদায় করে বটে তবে তা যথাসময়ে ও সঠিক নিয়মে করেনা। নামাযের ব্যাপারে আলস্য ঔদাসীন্য, অনীহা প্রদর্শন করে থাকে। তারা কিয়ামতের দিন শাস্তির সম্মূখীন হবে।
Allahu Akbar
May be an image of text that says ""How can you disbelieve in Allah? You were lifeless and He gave you life, then He will cause you to die and again bring you to life, and then to Him you will all be returned." Quran 2:28"
 and 3 others

No comments:

Post a Comment