কোটের চেইন লাগানো থেকে শুরু করে চামচ ধরার মতো সাধারণ কাজগুলো আজকের শিশুদের জন্য কঠিন হয়ে উঠছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর একটি বড় কারণ হতে পারে অতিরিক্ত সময় স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে ব্যয় করা। গবেষণায় দেখা গেছে, ৭৭% শিক্ষক বলেছেন, শিশুরা এখন পেনসিল, কলম ও কাঁচি ধরতে আগের চেয়ে বেশি অসুবিধা অনুভব করে। আর ৬৯% শিক্ষক জানিয়েছেন, পাঁচ বছর আগের তুলনায় এখনকার শিশুদের জুতা বাঁধতেও বেশি কষ্ট হয়। ফাইন মোটর স্কিলস আমাদের হাত ও আঙুলের সূক্ষ্ম ও সুনির্দিষ্ট নড়াচড়ার উপর নির্ভর করে—যেমন, জুতার ফিতা বাঁধা, কলম দিয়ে লেখা, বা ব্লক দিয়ে টাওয়ার তৈরি করা। কিন্তু বর্তমান প্রজন্মের শিশুদের মধ্যে এসব বিষয়ে দক্ষতা কমে যাচ্ছে।
অনেকে বলছেন, কোভিড-১৯ মহামারির সময় শিশুরা বেশি স্ক্রিনের সামনে বসে থাকার কারণে এই প্রবণতা বেড়েছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা মহামারির প্রথম বছরে জন্মেছে, তারা ছয় মাস বয়সে ফাইন মোটর স্কিলসের পরীক্ষায় তুলনামূলকভাবে খারাপ ফল করেছে। কিছু গবেষক জানান, এসময়ে মায়ের ওপর অতিরিক্ত মানসিক চাপ পড়ায় এরকম হতে পারে– অথবা শিশুরা জন্মের পর ভিন্ন পরিবেশে বেড়ে ওঠায় এমনটা ঘটছে। শুধু মহামারির জন্যই নয়, বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুরা মহামারীর অনেক আগে থেকেই হাত দিয়ে কম কাজ করছে। স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, ই-বুক, বা টেলিভিশনে সময় কাটানোর মানে হলো, শিশুরা কম আঁকছে, কম কাটাকুটি করছে, কম ব্লক সাজাচ্ছে। স্ক্রিনের মাধ্যমে গণিত শেখা বা ডিজিটাল আর্ট তৈরি করা শিক্ষামূলক হতে পারে– কিন্তু হাতে লিখে, রঙ করে, কিংবা কাটাকুটি করে হাতের ওপর যে সূক্ষ্ম নিয়ন্ত্রণ আনা যায়, তা স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আয়ত্তে আনা যায় না। এছাড়া, শিশুদের খেলাধুলার ধরনও বদলে গেছে। আগে বাচ্চারা পাজল ও কাঠের ব্লক নিয়ে খেলা করত, যা ধৈর্য ও দক্ষতা তৈরি করে। শিশুরা বই পড়ার আগ্রহও হারাচ্ছে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আনন্দলাভের জন্য বই পড়ার হার নাটকীয়ভাবে কমে গেছে। অথচ বইয়ের পাতা উল্টানো, মনোযোগ ধরে রাখা এবং নির্দেশনা অনুসরণ করা—এসবই ফাইন মোটর স্কিলসের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
সুতরাং বলা যায় শিশুদের এই ফাইন মোটর স্কিলস কমে যাওয়া একটি গুরুতর সমস্যা। এটা শুধুমাত্র প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহার নয়, বরং তাদের দৈনন্দিন জীবনের অভ্যাস পরিবর্তনের ফল। যদিও স্ক্রিনের পেছনে ব্যয় করা সময় সম্পূর্ণরূপে দূর করা সম্ভব নয়, তবে অভিভাবকরা যদি শিশুদের হাতে-কলমে কাজ করার সুযোগ বেশি করে দেন, তাহলে তারা এসব দক্ষতা পুনরুদ্ধার করতে পারবে।
No comments:
Post a Comment