Saturday, February 15, 2025

যেসব খাবার মনে সুখ আনে

 কিছু খাবার মানুষকে বাড়তি আনন্দ ও সুখের অনুভূতি দেয়। এসব খাবার খেলে শরীরে সুখের হরমোন বা হ্যাপি হরমোনের নিঃসরণ বেড়ে যায়। এতে সুখানুভূতি হয়।

ডোপামিন, সেরোটোনিন, অক্সিটোসিন ও এন্ডোরফিন—এই চারটা হরমোন সুখের হরমোন হিসেবে পরিচিত।
ডোপামিন নিঃসরণে খাবারের ভূমিকা আছে। আমাদের অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা যত বাড়বে, ডোপামিনের নিঃসরণও তত বাড়বে। অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়াতে গুড ফ্যাটসমৃদ্ধ খাবার, ফার্মেন্টেড ফুড ও ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। পেটিযুক্ত মাছ, মাছের তেল, অলিভ অয়েল, টকদই, পান্তা, শাকসবজি, সামুদ্রিক মাছ ইত্যাদি খাবার পর্যাপ্ত খেতে হবে। ভাজাপোড়া, প্রক্রিয়াজাত ও প্যাকেটজাত খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। এ ছাড়া হাসিখুশি থাকা, বেড়াতে যাওয়া, পছন্দের পোশাক পরার কারণেও ডোপামিনের নিঃসরণ বৃদ্ধি হয়।
অন্ত্রের পেশির চলনে সেরোটোনিন সাহায্য করে। মাত্র ১ শতাংশ সেরোটোনিন মস্তিষ্কে নিঃসৃত হয়। এই ১ শতাংশ সেরোটোনিন মুড, ঘুম, স্মৃতি, ক্ষুধা, মন ভালো থাকা ইত্যাদিতে প্রভাব ফেলে। ওমেগা-৩ফ্যাটি অ্যাসিড, আঁশসমৃদ্ধ খাবার, ভিটামিন বি-১২ এবং ভিটামিন ডি সেরোটোনিনের নিঃসরণ বৃদ্ধি করে। খাবারের পাশাপাশি রাতের ভালো ঘুম সেরোটোনিনের নিঃসরণ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণসমৃদ্ধ খাবার যেমন দারুচিনি, লবং, হলুদ, ফ্ল্যাক্স সিড, চিয়া সিড খাবার তালিকায় যোগ করতে হবে।
এন্ডোরফিন প্রাকৃতিকভাবে ব্যথা উপশম করে। আমরা শারীরিক বা মানসিকভাবে আহত হলে এন্ডোরফিন সক্রিয় হয়ে আমাদের ব্যথা নিরাময় করে। অতিরিক্ত ওজন, বিষণ্নতা, উচ্চ রক্তচাপ এন্ডোরফিনের নিঃসরণ হ্রাস করে। তাই ওজন ও রক্তচাপ কমাতে লো-কার্ব, হাইপ্রোটিন, মডারেট গুড ফ্যাট ও ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। হাসলে, পছন্দের গান শুনলে, ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চললে, ব্যায়াম করলে এন্ডোরফিন হরমোনের নিঃসরণ বাড়ে।
অক্সিটোসিন শুধু স্তন্যপায়ী প্রাণীদের দেহে তৈরি হয়। এটি মানুষের পশ্চাৎ পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে নিঃসরণ হয়। অক্সিটোসিন স্তন্যপায়ীদের মস্তিষ্কে কাজ করে। মানবদেহে এটি নারীদের প্রজননের সময় নির্গত হয়, বিশেষ করে সন্তান প্রসবকালে ও প্রসবের পরে। অক্সিটোসিনের নিঃসরণ ভিটামিন ‘সি’ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। তাই অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি প্রতিদিন পর্যাপ্ত ভিটামিন ‘সি’সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
আমাদের শরীরের সবচেয়ে অবহেলিত অঙ্গ ক্ষুদ্রান্ত্র। অস্বাস্থ্যকর খাবার খেলে ক্ষুদ্রান্ত্রের ওপর প্রভাব পড়ে। এসব অস্বাস্থ্যকর খাবারে ক্ষুদ্রান্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা কমতে থাকে। এতে আমাদের গ্যাস, ফ্যাটি লিভার, কোলেস্টেরল এবং কোষ্ঠকাঠিন্য বা কিডনি সমস্যার ঝুঁকি বাড়ে। আবার নানা ধরনের ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় এসব ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এতে ডোপামিনসহ সব ধরনের সুখের হরমোনের নিঃসরণ ব্যাহত হয়।
করণীয়
গ্যাস্ট্রিকের ওষুধসহ যেকোনো ওষুধই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া যাবে না।
লাল আটা, ফাইবারসমৃদ্ধ চাল খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
ফার্মেন্টেড খাবার যেমন টকদই, পান্তা খাওয়া যায়। সপ্তাহে ২-৩ দিন সামুদ্রিক মাছ খাওয়ার চেষ্টা করা।
প্রতিদিন একবেলা ৩০ মিনিট ব্যায়াম করা। সপ্তাহে এক দিন কাছাকাছি দূরত্বে ঘুরতে যাওয়া। রাতের আঁধারে ৬-৭ ঘণ্টা ঘুমানো।
সূত্র: মো. ইকবাল হোসেন, জ্যেষ্ঠ পুষ্টি কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল
May be a doodle of smoked salmon
r Khan

No comments:

Post a Comment