বিগত কয়েক দশক ধরে মহাকাশচারীরা মহাকাশে অভিযান পরিচালনা করে আসছেন। সেখানে তারা গবেষণা চালিয়েছেন এবং মানবজাতির পরবর্তী বৃহৎ পদক্ষেপ—মঙ্গল অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী মহাকাশ মিশনের পরিকল্পনা নেওয়ার আগেই মহাকাশচারীদের জন্য এক নতুন স্বাস্থ্যঝুঁকি সামনে এসেছে: স্পেস-অ্যাফিলিয়েটেড নিউরো-অকুলার সিনড্রোম (SANS)। সহজ ভাষায়, মাইক্রোগ্রাভিটির দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবে মহাকাশচারীদের চোখের গঠনে পরিবর্তন আসছে।
ভূপৃষ্ঠে থাকাকালীন আমাদের শরীরের তরল পদার্থ মাধ্যাকর্ষণের কারণে নিচের দিকে প্রবাহিত হয়। কিন্তু মহাকাশে ওজনহীন অবস্থায় এই তরলগুলো মাথার দিকে স্থানান্তরিত হয়, যা চোখের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। এই পরিবর্তনের ফলে দৃষ্টিশক্তি সংক্রান্ত বেশ কিছু জটিলতা দেখা যায়, যেমন অপটিক নার্ভ ও আশেপাশের টিস্যুর গঠন বদলে যায়। এছাড়া চোখের রিজিডিটি (ocular rigidity) ৩৩% হ্রাস পায়, ফলে চোখ সহজেই বিকৃত হতে পারে। চোখের অভ্যন্তরীণ চাপও (intraocular pressure) ১১% কমে যায়। এর প্রভাব পড়ে চোখের তরল পদার্থের প্রবাহে। এছাড়া রক্ত সঞ্চালন কমতে পারে, যা চোখের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করে।
গবেষকরা ১৩ জন মহাকাশচারীর ওপর পরীক্ষা চালিয়েছেন। তাদের মধ্যে ৭০% এর বেশি মহাকাশচারীর চোখে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা গিয়েছে৷ ভালো খবর হলো, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মহাকাশচারীরা পৃথিবীতে ফেরার পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি ফিরে পান। গবেষণায় দেখা গেছে, ৮০% মহাকাশচারীর মধ্যে SANS-এর অন্তত একটি উপসর্গ দেখা যায়, কিন্তু চশমার সাহায্যে তারা সহজেই স্বাভাবিক দৃষ্টি ফিরে পান।
তবে ভবিষ্যতের দীর্ঘমেয়াদি মহাকাশ অভিযান, যেমন দুই থেকে তিন বছরের মঙ্গল মিশন মহাকাশচারীদের চোখে আরও বড় সমস্যা তৈরি করতে পারে। যদি দীর্ঘ সময় ধরে ওজনহীনতার কারণে চোখের সমস্যা স্থায়ী হয়ে যায়, তবে এটি মহাকাশ গবেষণায় এক গুরুতর সংকট তৈরি করতে পারে। বর্তমানে NASA এবং বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা এই সমস্যা সমাধানে কাজ করছে। ইতোমধ্যেই তারা মস্তিষ্কের চাপ নিয়ন্ত্রণকারী পরিধেয় ডিভাইসের নকশা করেছেন। এছাড়া সময়মতো রোগ শনাক্তকরণের ডিভাইস ও প্রতিকারের জন্য ঔষধ তৈরি করা তাদের বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ৷
রেফারেন্স: https://bijnana-barta-360.quora.com/
No comments:
Post a Comment