মায়ের
পেট থেকে পড়ার কিছুক্ষণের
মধ্যেই নিজের পায়ে উঠে
দাঁড়ায় বাছুর। কিষানের
গোয়ালঘরে বা আঙিনায় বাছুরের
ওই টলমল প্রথম পা (staggering gait) ফেলা, হাঁটতে গিয়ে ঝাঁপাঝাঁপি
করা, মাকে ঘিরে এবড়োখেবড়ো
দৌড় যারা দেখেছেন, তাঁরাই
জানেন জন্মের সে কী
আনন্দ! কিন্তু ঠিক ওই
সময়ই গাভির কাছ থেকে
সদ্যোজাত বাছুরকে সরিয়ে নেন কিষান। মায়ের
কাছ থেকে শিশুকে এভাবে
বিচ্ছিন্ন করার অনেক যুক্তিসংগত
কারণের কথা বলা হয়ে
থাকে। কিন্তু
যুগ যুগ ধরে চলা
এই চর্চার নেতিবাচক দিকের
কথা জানিয়েছেন আধুনিক গবেষকেরা।
পেশাগত ক্ষেত্রে কর্মীদের আবেগ অনুভূতি মূল্যায়ন
প্রসঙ্গে এক প্রতিবেদনে সে
সম্পর্কে জানিয়েছে বিবিসি।
গাভির কাছ থেকে সদ্যোজাত বাছুরকে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে কিষানের সবচেয়ে বড় যুক্তি—গৃহপালিত গাভি অনেক ক্ষেত্রেই সদ্যোজাত বাছুরের প্রতি রুষ্ট হয়ে ওঠে, এমনকি বাছুরকে আহতও করে ফেলতে পারে। তবে, সে যা-ই হোক, মায়ের কাছ থেকে শিশুর এই বিচ্ছিন্নতার একটা অনাকাঙ্ক্ষিত নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া আছে বলে বিশ্বাস করেন প্রায়োগিক জীববিদ্যার গবেষক ড্যানিয়েল উয়েরি।
গাভির কাছ থেকে এভাবে আলাদা করে ফেলায় তা বাছুরের মধ্যে একটা হতাশা সৃষ্টি করতে পারে। জন্মানোর পরপরই এই আঘাত গভীর ছাপ ফেলতে পারে এবং কালক্রমে এই ক্ষত বেড়ে গিয়ে একটা স্থায়ী নেতিবাচকতা সৃষ্টি করতে পারে, যাকে অনেকটা মানুষের ‘বিষাদগ্রস্ততা’ বা মনমরা হয়ে থাকার সঙ্গে তুলনা করা যায়। ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায়োগিক জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক উয়েরি বলেন, ‘প্রাণীদের আবেগী প্রতিক্রিয়া আছে, তাই তাকে আহত না করে বিষয়টিকে অন্যভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে তা লাভজনক।’ আর এটা কেবল একটা নৈতিক সমস্যাই নয়, বিষাদগ্রস্ত গাভি বেশি দুধ দেয় না। ফলে এখানে কিষানের লাভ-লোকসানের প্রশ্নও জড়িত।
উত্পাদনশীলতা এবং আবেগের মধ্যকার এই সম্পর্ক ইদানীং বেশ গুরুত্বের সঙ্গেই আলোচিত হচ্ছে ব্যবসার ক্ষেত্রেও। আবেগ-কাজে মনোযোগ-উত্পাদনশীলতার এই ধারণা জনপ্রিয় হচ্ছে। পাশাপাশি দিন দিন অনেক বড় বড় কোম্পানিই চাচ্ছে যে তাদের ব্যবস্থাপকেরা কর্মীদের আবেগ-অনুভূতির খোঁজখবর রাখবেন, কর্মীদের আবেগের সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নেবেন।
গাভির কাছ থেকে সদ্যোজাত বাছুরকে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে কিষানের সবচেয়ে বড় যুক্তি—গৃহপালিত গাভি অনেক ক্ষেত্রেই সদ্যোজাত বাছুরের প্রতি রুষ্ট হয়ে ওঠে, এমনকি বাছুরকে আহতও করে ফেলতে পারে। তবে, সে যা-ই হোক, মায়ের কাছ থেকে শিশুর এই বিচ্ছিন্নতার একটা অনাকাঙ্ক্ষিত নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া আছে বলে বিশ্বাস করেন প্রায়োগিক জীববিদ্যার গবেষক ড্যানিয়েল উয়েরি।
গাভির কাছ থেকে এভাবে আলাদা করে ফেলায় তা বাছুরের মধ্যে একটা হতাশা সৃষ্টি করতে পারে। জন্মানোর পরপরই এই আঘাত গভীর ছাপ ফেলতে পারে এবং কালক্রমে এই ক্ষত বেড়ে গিয়ে একটা স্থায়ী নেতিবাচকতা সৃষ্টি করতে পারে, যাকে অনেকটা মানুষের ‘বিষাদগ্রস্ততা’ বা মনমরা হয়ে থাকার সঙ্গে তুলনা করা যায়। ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায়োগিক জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক উয়েরি বলেন, ‘প্রাণীদের আবেগী প্রতিক্রিয়া আছে, তাই তাকে আহত না করে বিষয়টিকে অন্যভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে তা লাভজনক।’ আর এটা কেবল একটা নৈতিক সমস্যাই নয়, বিষাদগ্রস্ত গাভি বেশি দুধ দেয় না। ফলে এখানে কিষানের লাভ-লোকসানের প্রশ্নও জড়িত।
উত্পাদনশীলতা এবং আবেগের মধ্যকার এই সম্পর্ক ইদানীং বেশ গুরুত্বের সঙ্গেই আলোচিত হচ্ছে ব্যবসার ক্ষেত্রেও। আবেগ-কাজে মনোযোগ-উত্পাদনশীলতার এই ধারণা জনপ্রিয় হচ্ছে। পাশাপাশি দিন দিন অনেক বড় বড় কোম্পানিই চাচ্ছে যে তাদের ব্যবস্থাপকেরা কর্মীদের আবেগ-অনুভূতির খোঁজখবর রাখবেন, কর্মীদের আবেগের সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নেবেন।
নিষিদ্ধ থেকে স্বাগত
১৯৮০-র দশক বা তার আগে পেশা জীবনে যোগ দেওয়া মানুষদের কাছে এসব কথা খুবই উদ্ভট মনে হতে পারে। অফিসে কোনো বিষয়ে আবেগী প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা কর্মীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়াই ছিল সেই যুগের ব্যবস্থাপকের কাজ। হার্ভার্ড মেডিকেল কলেজের মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক এবং ক্যামব্রিজ হেলথ অ্যালায়েন্সের প্রধান মনোবিজ্ঞানী কিম্বারলিন লিয়ারি এভাবেই সে যুগে কোম্পানি ব্যবস্থাপকদের মনস্তত্ত্ব ব্যাখ্যা করলেন।
এখনকার চিত্র একেবারেই ভিন্ন। বড় কোম্পানিগুলো আশা করে চৌকস ব্যবস্থাপকেরা কর্মীদের আবেগ-অনুভূতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখবেন এবং যাকে বলে অফিসে ‘আবেগী গোয়েন্দাবৃত্তি’ চালাতে সক্ষম হবেন। কর্মীদের অনুভূতি কী এবং কেন ওই রকম? কর্মীদের কেউ কেউ কি ভাবছেন যে বাকি কর্মীরা তাঁদের চিন্তাভাবনায় গুরুত্ব দেন না এবং তাঁদের সম্মান করেন না? অফিস মিটিংয়ে তাঁর কথা শুনতে না চাওয়ায় কি কোনো কর্মী ক্ষুব্ধ হয়ে আছেন? মূল্যায়নসংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে কি কোনো কর্মী আহত বোধ করছেন বা কর্মস্পৃহা হারিয়ে ফেলছেন?
আর এ ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপকদের ভূমিকাই মুখ্য বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের ডেনভারের ডা ভিটার সদর দপ্তরের ভাইস প্রেসিডেন্ট ডেভ হোরমান। তিনি বলেন, ‘ব্যবস্থাপনার এই বিষয়টিকে আমরা যেভাবে দেখি তা হলো, আমরা সব সময়ই হিসাবটা নিজেকে দিয়ে শুরু করতে বলি। ব্যবস্থাপকেরা যত বেশি নিজেদের সম্পর্কে সচেতন হবেন, নিজেরা স্বাস্থ্যবান এবং সুখী হবেন, তাঁদের কর্মিবাহিনীও ততটাই তেমন হবে।’
কানাডীয় বংশোদ্ভূত জীববিজ্ঞানী ড্যানিয়েল উয়েরি বলেন, গল্পটা ওই কিষান এবং তাঁর গাভি আর বাছুরের মতই। এমন কেউ কেউ আছেন যাঁরা প্রাণীর আবেগটাই বোঝেন না, কেউ কেউ তা জানেন বা বোঝেন বটে কিন্তু সে বিষয়ে কিছুই করেন না। আর কেউ কেউ বিষয়টা বুঝবেন এবং তা সমাধানে কাজও করবেন। তিনি বলেন, ‘গাভির কাছ থেকে ভালোভাবে দুধ দুইয়ে নিতে হলে তাকে যথাযথ খানা-খাদ্য আর আদর-ভালোবাসা দিয়েই তা নিতে হবে।’-
Adapted
No comments:
Post a Comment