Tuesday, May 16, 2017

ওজনে কম দেয়ায় হযরত শোয়াইব (আ.)-এর জাতির করুণ পরিণতি

হযরত শোয়াইব (.) প্রেরিত হয়েছিলেন মাদইয়ান সম্প্রদায়ের কাছে হযরত শোয়াইব (.) ছিলেন হযরত ইব্রাহীম (.)-এর তৃতীয় স্ত্রী কাতুরার ঘরের পুত্র মাদইয়ানের বংশধর জন্য হযরত ইবরাহীম (.)-এর এই বংশধরকে বনি কাতুরা বলে অভিহিত করা হয় কোনো কোনো বর্ণনা মতে, হযরত শোয়াইব (.) হযরত সালেহ (.)-এর বংশধর ছিলেন যেহেতু মাদইয়ান জাতির কাছে প্রেরিত হয়েছিলেন, তাই পরবর্তীতে তাঁর নামেই তাঁর কওমের নাম হয়ে যায় কওমে শোয়াইব ধারণা করা হয়, বর্তমান সিরিয়ার মুয়ান নামক স্থানে কওমে শোয়াইবের বসবাস ছিল কুরআনে কারিমে কোথাওআসহাবে মাদইয়ান আহলে মাদইয়ান নামে বর্ণনা করা হয়েছে আবার কোথাওআসহাবে আইকানামে উল্লেখ করা হয়েছে কারও কারও মতে, আসহাবে আইকা মাদইয়ান দুটি ভিন্ন সম্প্রদায় তবে অধিকাংশ তাফসিরকারক আসহাবে আইকা মাদইয়ান একই সম্প্রদায় বলে মনে করেন যাদের পিতার দিকে সম্বোধন করে মাদইয়ান বলা হতো, আর ভৌগোলিক দিক থেকে আইকা বলা হতো
আইকা কথাটির অর্থ হলো বন-জঙ্গল। জায়গার মাটি উর্বর হওয়ায় সে স্থানে ফলফলাদিসহ বিভিন্ন প্রকার বৃক্ষরাজি বেশি হতো। তাই পবিত্র কুরআনে তাকে আইকা বলে বর্ণনা করা হয়েছে। মাদইয়ানবাসী পার্থিব লোভ-লালসায় মত্ত হয়ে পারস্পরিক লেনদেনের সময় ওজনে কম দিয়ে মানুষের হক আত্মসাৎ করত। মহান আল্লাহ তায়ালার সাথে শরিক স্থাপন করত। তারা গাছপালা, মূর্তি পূজায় লিপ্ত থাকত। দুর্নীতি, রাহাজানি, ছিনতাই, ধর্ষণ মজুদদারির মতো জঘন্য অন্যায় কাজ তাদের সমাজের মধ্যে বিষ বাস্পের মতো ছড়িয়ে পড়ে। এসব পাপে তারা এমনভাবে লিপ্ত ছিল যে, তারা কখনো মনে করত না যে, এসব কাজগুলো অত্যন্ত জঘন্য বা গর্হিত কাজ। বরং তারা এসব জঘন্য কাজ করে গর্ববোধ করত। এভাবে সমাজের মধ্যে তারা অরাজকতা সৃষ্টি করত। মাদইয়ান সম্প্রদায়কে সুপথে পরিচালিত করার জন্য আল্লাহ তায়ালা শোয়াইব (.)কে তাদের কাছে প্রেরণ করেন। হযরত শোয়াইব (.) সর্বপ্রথম তাদের তাওহিদের দাওয়াত দিলেন। তিনি তাদের বললেন, ‘হে আমার সম্প্রদায়; তোমরা আল্লাহতায়ালার ইবাদত কর, যিনি ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই।তাওহিদে দাওয়াত দেয়ার পরপরই হযরত শোয়াইব (.) তাদের ওজনে কম দেয়ার জঘন্য মানসিকতাকে ত্যাগ করার উপদেশ দিলেন
তিনি তাদের ওজনে কম না দেয়ার অনুরোধ জানালেন। তিনি আরও বলেন, আজ আমি তোমাদের সচ্ছল ভালো অবস্থায় দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু আমি তোমাদের ব্যাপারে পরিবেষ্টনকারী দিনের আজাবের বিষয়ে উদ্বিগ্ন। হে আমার কওম! ওজনে কম দিও না এবং লোকদের সাথে প্রতারণা করো না। আর সমাজের বুকে ঝগড়া-বিবাদ সৃষ্টি করো না
থেকে বুঝা যায়, ওজনে কম দেয়া যেমন হারাম, তেমনি অপরের অধিকারে হস্তক্ষেপ করাও হারাম। হযরত শোয়াইব (.) তাদের আরও উপদেশ দিলেন, মানুষের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করে তাদের সম্পদ কেড়ে নেয়ার জন্য রাস্তাঘাটে ওঁৎ পেতে অপেক্ষা করো না। কুরআনে কারিমে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ তায়ালার বিশ্বাসীদের হুমকি দেয়ার জন্য রাস্তাঘাটে বসে থেকো না, আল্লাহ তায়ালার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করো না। মনে রেখো যখন তোমরা সংখ্যায় ছিলে কম তখন আল্লাহ তায়ালা তোমাদের সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়েছে এবং পূর্ববর্তী ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী কওমে নূহ, আদ, সামুদ কওমে লুতের ওপর কী ভীষণ গজব নাযিল হয়েছিল। তাই তোমরা এই ধরনের আযাব আসার আগেই সতর্ক হয়ে যাও এভাবে হযরত শোয়াইব (.) তাদেরকে বিভিন্নভাবে অনুনয়-বিনয় সহনশীলতার সাথে বুঝিয়েছেন। কিন্তু বিনিময়ে কেবল তিনি উপহাস-পরিহাসই পেয়েছেন। অবশেষে তারা যখন সীমালঙ্ঘন করে ফেললো তখন আল্লাহ তায়ালার গজব এসে গেল। কয়েক দিন তাদের অঞ্চলে প্রচYW  গরম পড়ল। প্রচYW গরমে তারা ছটফট করতে লাগল। অতঃপর নিকটস্থ একটা ময়দানের ওপর গাঢ় মেঘমালা দেখা দিল। ময়দানে ছায়া পড়ল। শীতল বাতাস বইতে লাগল
এলাকার সকলেই ওই ময়দানে উপস্থিত হলো। বলতে লাগল, এই মেঘ থেকে আমাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষিত হবে। কিন্তু তাদের ওপর অগ্নিবৃষ্টি বর্ষিত হতে শুরু করল। আর নিচের দিকে শুরু হলো প্রচYW  ভূমিকম্প। ফলে সবাই সেখানে ধ্বংস হয়ে গেল। কুরআনে কারিমে বলা হয়েছে, ‘তাদেরকে প্রচ- ভূমিকম্প পাকড়াও করল। ফলে তারা নিজেদের গৃহের ভেতরে উপুড় হয়ে পড়ে রইল [সূরা আরাফ, আয়াত নং-৯১] তাফসীরকারকগণ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন যে, তাদের ওপর তিন ধরনের গজব উপস্থিত হয়েছিল
এক. ঘন মেঘমালা থেকে অগ্নিবৃষ্টি বর্ষিত হয়। দুই. তারপর প্রচYW  শব্দ শোনা যায়। তিন. সবশেষে ভূমিকম্প হয়। ব্যাপারে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, হযরত শোয়াইব (.)-এর জাতির ওপর এমন গজব চাপিয়ে দেয়া হয়, যেনো জাহান্নামের দরজা তাদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছিল। ফলে তাদের শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হতে থাকে। তখন ছায়া পানি কোথাও তাদের স্বস্তি ছিল না
অতঃপর তারা অসহ্য গরমে অস্থির হয়ে ভূগর্ভস্থ কক্ষে প্রবেশ করে দেখল সেখানে আরও গরম। তখন তারা ছটফট করতে করতে ময়দানের দিকে ছুটে চলল। সেখানে আল্লাহতায়ালা ঘন কালো মেঘ পাঠিয়ে দিলেন। যার নিচে শীতল বাতাস বইছিল। তারা সকলে গরমে অস্থির হয়ে মেঘের নিচে এসে আশ্রয় নিল। তখন মেঘমালা থেকে তাদের ওপর অগ্নিবৃষ্টি বর্ষিত হতে শুরু করল এবং সেসাথে প্রচYW ভূমিকম্প হাজির হলো। অন্যদিকে বিকট গর্জন তাদের পাকড়াও করল। ফলে তারা সবাই ধ্বংস হয়ে গেল

বর্তমানে আমাদের সমাজে হযরত শোয়াইব (.)-এর কওমের মতো অনেক লোক আছে, যারা লাভের আশায় ওজনে কম দিয়ে থাকে। এই ঘটনায় তাদের জন্য রয়েছে সতর্কবাণী। সুতরাং ওজনে কম দিয়ে যারা লোকজনকে ঠকান, তাদের এই ঘটনা থেকে শিক্ষা অর্জন করা প্রয়োজন
-Adapted

No comments:

Post a Comment