পুরুষ
ও
স্ত্রীলোকের পোশাক-পরিচ্ছদ সম্বন্ধে ইসলামি আইন যথাযথ
উপদেশ
ও
নির্দেশনা দান
করেছে। ইসলাম
যথাযথ
পোশাক-পরিচ্ছদের মাধ্যমে দু’টি বিষয়
প্রতিষ্ঠা করতে
চায়। প্রথমত,
মানবদেহ ঠিকমতো
আচ্ছাদন করা। কারণ,
বিশ্রীভাবে দেহসৌষ্ঠব প্রদর্শন করা
ঠিক
নয়। দ্বিতীয়ত, সৌন্দর্যায়ন ও
ভূষণ
বাড়িয়ে
তোলা। পবিত্র
গ্রন্থ
কুরআনে
বলা
হয়েছেÑ
হে
বনি
আদম!
তোমাদের লজ্জাস্থান ঢাকবার
ও
বেশভূষার জন্য
আমি
তোমাদেরকে পোশাক
দিয়েছি
এবং
সর্বোত্তম পোশাক
হচ্ছে
তাকওয়ার পোশাক।
(সূরা
আরাফ
: আয়াত
২৬)।
দেহ
ঠিকমতো
আচ্ছাদন করা
ও
ভূষণের
মধ্যে
ভারসাম্য থাকা
উচিত।
যদি
এই
ভারসাম্য বিনষ্ট
হয়ে
যায়
তাহলে
শয়তানের পথ
অনুসরণ
করা
হবে।
এ
সম্পর্কে কুরআন
বলে-
হে
বনি
আদম!
শয়তান
তোমাদের প্রথম
পিতা-মাতাকে যেভাবে বেহেশত
থেকে
বহিষ্কার করেছিল
এবং
তাদেরকে তাদের
লজ্জাস্থান উভয়ের
সামনে
দেখানোর জন্য
বিবস্ত্র করেছিল,
তোমাদেরকে কিছুতেই শয়তান
যেন
সেভাবে
প্রলুব্ধ না
করতে
পারে।
(সূরা
আরাফ
: আয়াত
২৭)।
পুরুষ
ও
স্ত্রীলোকের জন্য
একই
ধরনের
পোশাক
পরিধান
করতে
ইসলাম
অনুমতি
দেয়নি।
ইসলাম
পুরুষ
ও
স্ত্রীলোকের মধ্যকার প্রভেদ
রক্ষা
করতে
চায়।
পুরুষ
ও
স্ত্রীলোকের একে
অপরের
পোশাক
পরিধানের মধ্যে
কোনো
বাহাদুরি নেই।
নবী
করিম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া
সাল্লাম বলেছেন-
‘পুরুষের স্ত্রীলোকের মতো
পোশাক
পরিধান
করা
নিষিদ্ধ এবং
স্ত্রীলোকের পুরুষের মতো
পোশাক
পরিধান
করা
নিষিদ্ধ।’ (বুখারি)।
ইসলাম
পোশাক-পরিচ্ছদের ব্যবহারে জাঁকজমক ও আড়ম্বরতা নিষিদ্ধ করেছে।
কুরআন
এ
সম্পর্কে বলেছে-
‘আল্লাহ জাঁকজমকপূর্ণ (গর্বিত)
লোককে
পছন্দ
করেন
না।’
(সূরা
হাদিদ
: আয়াত
২৩)।
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া
সাল্লাম বলেছেন,
‘যে
ব্যক্তি জাঁকজমক বা
গর্ব
দেখানোর জন্য
তার
পোশাক
জমি
পর্যন্ত স্পর্শ
করায়
(বিনা
কারণে
পোশাক
লম্বা
করে)
আল্লাহ
শেষ
বিচারের দিনে
তার
দিকে
তাকাবেন না।’
(বুখারি)।
পোশাক-পরিচ্ছদ অবশ্যই পরিষ্কার হতে
হবে।
কারণ,
ইসলাম
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপর
জোর
দিয়েছে। মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া
সাল্লাম বলেছেনÑ
‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অবলম্বন করো।
কারণ
ইসলাম
ধর্মে
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাকে অগ্রাধিকার দেয়া
হয়েছে।’
(ইবনে
হারান)।
হজরত
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া
সাল্লাম স্ত্রীলোকদেরকে স্বর্ণালঙ্কার ও
সিল্কের বস্ত্র
পরিধান
করার
অনুমতি
দিয়েছেন। তিনি
এগুলো
পুরুষদের পরিধান
করার
অনুমতি
দেননি।
এর
কারণ,
সম্ভবত
এগুলো
স্ত্রীলোকদের জন্যই
প্রকৃতিগতভাবে উপযুক্ত এবং
পুরুষদের জন্য
খুব
একটা
উপযুক্ত নয়।
পুরুষ
ও
স্ত্রীলোক অবশ্যই
শালীনতাপূর্ণ পোশাক
পরিধান
করবে।
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া
সাল্লামের সুন্নাহ হচ্ছে,
মানুষ
তার
দেহ
যথাযথভাবে আচ্ছাদন করবে।
পুরুষদের নাভি
থেকে
হাঁটু
পর্যন্ত ঢেকে
রাখতে
হবে।
এ
ছাড়া
অন্যান্য অংশ
বিভিন্ন কারণে
খোলা
রাখা
যেতে
পারে।
স্ত্রীলোক অবশ্যই
তার
দেহ
যথাযথভাবে ঢেকে
রাখবে।
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া
সাল্লাম বলেছেন,
একটি
বয়স্ক
মেয়ের
জন্য
তার
দেহ
খোলা
রাখা
ঠিক
নয়।
সে
অবশ্যই
তার
মুখমণ্ডল ও
হাতের
সামনের
অংশ
খোলা
রাখতে
পারে।
(আবু
দাউদ
তার
হাদিস
গ্রন্থে বর্ণনা
করেছেন)।
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া
সাল্লাম আরো
বলেছেন,
স্ত্রীলোকদের এমন
পাতলা
পোশাক
পরতে
অনুমতি
দেয়া
হয়নি,
যা
তার
শরীর
দেখাতে
পারে।
(ইমাম
মুসলিম
বর্ণনা
করেছেন)
ইসলাম
মেয়েদের বয়স
হওয়ার
পর
ভালো
করে
বুক
ঢেকে
ওড়না
পরতে
বলেছে।
ফ্যাশনের নামে
অনেক
কিশোরী
ও
যুবতী
ওড়না
পরা
বাদ
দিয়েছেন। অনেকে
গামছার
মতো
ওড়না
গলায়
জড়িয়ে
রাখছেন
অথবা
এক
দিক
দিয়ে
ঝুলিয়ে
রাখছেন। ওড়না
গামছা
নয়;
যা
দিয়ে
ভালো
করে
মাথা
ও
বুক
ঢাকা
হয়
না
তাকে
ওড়না
বলা
চলে
না।
এই
প্রবণতা রোধ
করা
প্রয়োজন। তা
না
হলে
পরবর্তীকালে কিশোরীদের মধ্যে
পাশ্চাত্যের মতো
স্কার্ট ও
হাফপ্যান্ট পরার
রেওয়াজ
চালু
হতে
পারে।
সূরা
নূরের
৩১
নম্বর
আয়াতে
আল্লাহ
পাক
নারীদের ওড়না
পরার
নির্দেশ দিয়েছেন। আয়াতটি
হলোÑ
মুসলিম
নারীদেরকে বলুন,
তারা
যেন
তাদের
দৃষ্টিকে সংযত
করে
ও
তাদের
লজ্জাস্থানের হিফাজত
করে;
তারা
যেন
যা
সাধারণত প্রকাশ
পায়
তা
ছাড়া
তাদের
সাজসজ্জা ও
সৌন্দর্য প্রদর্শন না
করে,
তাদের
গ্রীবা
ও
বক্ষদেশ যেন
মাথার
ওড়না
দিয়ে
আবৃত্ত
করে।
(সূরা
নূর
: আয়াত
৩১)।
ওপরের
বিধান
ঘরে-বাইরে দুই স্থানেই প্রযোজ্য। এখানে
উল্লেখ
করা
প্রয়োজন যে,
সূরা
নূরের
৩০
নম্বর
আয়াতে
পুরুষদেরকেও তাদের
দৃষ্টি
সংযত
রাখার
ও
তাদের
লজ্জাস্থানের হেফাজতের নির্দেশ দেয়া
হয়েছে।
উপরি
উক্ত
আয়াতে
‘খুমুর’
(এক
বচন
‘খিমার’)
শব্দ
ব্যবহার করা
হয়েছে।
‘খিমার’
শব্দের
অর্থ
‘ওড়না’
বা
চাদরজাতীয় পোশাক।
জাহেলিয়াতের জমানায়
স্ত্রীলোকেরা মাথার
ওপর
এক
প্রকারের চাদর
দ্বারা
পেছনের
খোঁপা
বেঁধে
রাখত।
সম্মুখের দিকের
বোতাম
খোলা
থাকত।
এতে
গলা
ও
বুকের
উপরাংশ
স্পষ্ট
দেখা
যেত।
বুকের
ওপরে
কোর্তা
ছাড়া
আর
কিছু
থাকত
না
(ইবনে
কাসির,
কাশশাফ,
মুহাম্মদ আসাদ
লিখিত
‘মেসেজ
অব
দি
কুরআন’,
মাওলানা মওদূদীকৃত তাফহিমুল কুরআন,
সূরা
নূরের
তাফসির
অংশ)। এই আয়াত
নাজিল
হওয়ার
পর
মুসলমান নারী
ও
কিশোরীদের মধ্যে
ওড়না
ব্যবহার করার
রেওয়াজ
চালু
হয়।
ঈমানদার মহিলারা এ
নির্দেশ শুনে
অবিলম্বে তদনুযায়ী আমল
শুরু
করেন।
এর
প্রশংসা করে
হজরত
আয়েশা
রা:
বলেছেন,
যখন
সূরাটি
নাজিল
হয়
তখন
নবী
করিম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া
সাল্লামের কাছ
থেকে
লোকেরা
শুনে
নিজের
স্ত্রী,
কন্যা
ও
বোনদেরকে এই
আয়াতের
কথা
শোনায়।
আয়াত
শুনে
প্রত্যেকে উঠে
ওড়না
বা
চাদর
দিয়ে
সর্বাঙ্গ জড়িয়ে
নেয়।
পরের
দিন
ফজরের
নামাজে
যত
স্ত্রীলোকই মসজিদে
নববীতে
হাজির
হয়
তারা
সবাই
ওইভাবে
ওড়না
বা
চাদর
পরা
ছিল।
এ
পর্যায়ে আরেকটি
বর্ণনায় হজরত
আয়েশা
রা:
বলেন,
নারীরা
পাতলা
কাপড়
পরিত্যাগ করে
মোটা
কাপড়ের
ওড়না
বানিয়ে
নিয়েছিল। (তাফসিরে ইবনে
কাসীর,
আবু
দাউদ,
কিতাবুল লিবাস;
তাফহিমুল কুরআন,
সূরা
নূরের
তাফসির)।
ওপরের
আলোচনায় সুস্পষ্ট হয়,
মাথা
ও
বুক
ঢেকে
নারী
ও
কিশোরীদের ওড়না
পরার
নির্দেশ কুরআন
থেকে
এসেছে।
এটা
কারো
বানানো
বিধান
নয়।
অথচ
বেশির
ভাগ
লোক
জানে
না
যে,
ওড়না
পরা
কুরআনের নির্ধারিত অবশ্যকর্তব্য। এ
ছাড়া
অন্যান্য প্রমাণের ভিত্তিতে ‘গায়ের
মাহরামদের’ (অর্থাৎ
যাদের
সাথে
কোনো
নারীর
বিবাহ
বৈধ)
সামনে
মাথা
ঢাকা
ফরজ
এবং
চেহারা,
হাতের
সামনের
অংশ
ও
পায়ের
পাতা
ছাড়া
শরীরের
কোনো
অংশ
খোলা
রাখা
বৈধ
নয়।
(আবু
দাউদ
ও
হিদায়া,
নজর
অধ্যায়)।
পোশাকের ফ্যাশনের নামে
কুরআনের বিধান
অমান্য
করে
আজ
ওড়না
উঠিয়ে
দেয়ার
চেষ্টা
অনেকে
করছেন।
অনেক
বয়স্ক
মেয়েকে
ওড়না
ছাড়া
বাইরে
চলাফেরা করতে
দেখা
যাচ্ছে। টেলিভিশনের অনেক
অনুষ্ঠানেও ওড়না
ছাড়া
মেয়েদের অংশগ্রহণ করতে
দেখা
যাচ্ছে
ও
অংশগ্রহণ করতে
দেয়া
হচ্ছে।
অথচ
ওড়না
ব্যবহার ইসলামি
শালীনতার সর্বোত্তম উদাহরণ। বাংলাদেশের মুসলিম
জনগণের
দায়িত্ব হচ্ছে,
এ
সংক্রান্ত কুরআনের নির্দেশ কার্যকর করা।
আমাদের
পোশাক
প্রস্তুতকারকদের প্রভাবিত করা
কর্তব্য, যেন
তারা
উপযুক্ত ওড়না
ও
সালোয়ারসহ পোশাক
ডিজাইন
করে।
আর
তারা
যেন
এমন
পোশাক
ডিজাইন
না
করে,
যার
মাধ্যমে সমাজে
ইসলামি
শিক্ষার বিরোধী
বেহায়াপনা ছড়িয়ে
পড়ে।
ইসলাম
স্ত্রীলোকের সম্ভ্রমের প্রতি
মর্যাদা দেয়
এবং
খারাপ
লোকদের
hungry eye থেকে
নিরাপদে রাখতে
চায়।
তাই
ইসলাম
স্ত্রীলোকদের তার
সাধারণ
পোশাকের ওপরে
চাদর
ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছে,
যখন
সে
কাজের
জন্য
বা
অন্যান্য উদ্দেশ্যে বাইরে
যায়।
কুরআন
এ
সম্পর্কে বলেছে-
হে
নবী!
আপনার
স্ত্রী, কন্যা ও
মুমিনদের নারীদেরকে চাদর
(মাথা
ও
বুক
আচ্ছাদন করে)
পরিধান
করতে
বলুন।
এটাই
ভালো
স্ত্রীলোকের পরিচয়ের উত্তম
পথ
এবং
এতে
করে
তাদের
কখনো
বিব্রত
করা
হবে
না।
(সূরা
আহযাব
: আয়াত
৫৯)।
চাদরটি
বড়
হওয়া
সঙ্গত।
চাদরের
বুনন
ভালো
হওয়া
প্রয়োজন। মহিলাদের দিকে
নজর
দেয়া
নিয়ে
বিখ্যাত ফিকাহর
গ্রন্থ
হিদায়াতে প্রাথমিক যুগের
হানাফি
ইমামদের মতামত
উল্লিখিত আছে,
‘বেগানা
পুরুষের নারীর
চেহারা
ও
হাতের
তালু
ছাড়া
অন্য
অংশের
দিকে
দৃষ্টি
দেয়া
জায়েজ
নয়।
কেননা
আল্লাহ
বলেছেন,
‘নারীরা
তাদের
সৌন্দর্য প্রকাশ
করবে
না
কেবল
সে
সৌন্দর্য ছাড়া,
যা
স্বতই
প্রকাশ
হয়ে
পড়ে।
তা
ছাড়া
চেহারা
ও
হাত
প্রকাশ
করার
প্রয়োজন আছে
পুরুষদের সাথে
বিভিন্ন কাজকারবার-লেনদেন
করার
জন্য।
আবু
হানিফা
বলেছেন,
পায়ের
দিকেও
নজর
দেয়া
জায়েজ।
কেননা
এরও
প্রয়োজন অনেক
সময়
দেখা
দেয়।
আবু
ইউসুফ
থেকে
বর্ণিত
আছে,
হাতের
কনুই
পর্যন্ত দেখা
জায়েজ।
কারণ
এটিও
অনেক
সময়
স্বতই
প্রকাশ
হয়।
তবে
কুচিন্তা থেকে
নিরাপদ
না
হলে
বিশেষ
প্রয়োজন ছাড়া
চেহারার দিকে
তাকাবে
না।’
(হিদায়া,
নজর
অধ্যায়)।
যদি
মানবজাতি ইসলামপ্রদত্ত পোশাক-পরিচ্ছদের নীতি মেনে চলে,
তাহলে
তা
অবশ্যই
পুরুষ
ও
স্ত্রীলোকের সম্ভ্রম নিশ্চিত করবে
এবং
একটি
সুন্দর
সমাজ
প্রতিষ্ঠা করতে
সাহায্য করবে।
Ref: Mr. S.A. Hannan
No comments:
Post a Comment