Monday, May 22, 2017

প্রথম বাংলা সংবাদপত্র ‘সমাচার দর্পণ’

বাংলা ভাষার সংবাদপত্রের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় দিন ২৩ মে ১৮১৮ সালের এই দিনে পশ্চিমবঙ্গের শ্রীরামপুর মিশনারি কেন্দ্র থেকে প্রথম বাংলা সংবাদপত্র সমাচার দর্পণ প্রকাশিত হয়েছিল বলা যায়, সেকালে বাংলা সাহিত্যের সৃজনশীলতার প্রস্তুতি বিকাশ সংবাদপত্রকে ঘিরেই শুরু হয়েছিল ১৮১৮ থেকে ১৮৪১ সাল পর্যন্ত প্রথমপর্যায়ে সমাচার দর্পণই ছিল প্রধান বাংলা সংবাদপত্র সেকালের শিক্ষিত সমাজে শাসকশ্রেণীর ইংরেজি ছিল মুখ্য ভাষা আর বাংলা ছিল গৌণ 
ঠিক পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত জোশুয়া মার্শম্যানের উদ্যোগে সমাচার দর্পণ প্রকাশিত হয়। তার নেতৃত্বে বাঙালি পণ্ডিতেরা পত্রিকাটি সম্পাদনা করতেন। কাজে প্রথমে প্রধান সহযোগী ছিলেন জয়গোপাল তর্কালঙ্কার তারিণীচরণ শিরোমণির মতো বরেণ্য পণ্ডিত। শুরুর দিকে সমাচার দর্পণ ছিল সাপ্তাহিক। এর জনপ্রিয়তা ছিল আকাশচুম্বী। ১৮২৯ সালের দিকে পত্রিকাকে দ্বিভাষিক (বাংলা ইংরেজি) করা হয়। কারণ ছিল, হিন্দু কলেজের (পরবর্তীকালের প্রেসিডেন্সি কলেজ) শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইংরেজি পত্রিকা পাঠের ব্যাপারে প্রবল আগ্রহ
উনিশ শতকের বাংলার ইতিহাসে সমাচার দর্পণ-এর স্থান অতুলনীয়। ভাষা, সাহিত্য, শিক্ষা, সমাজ, রাজনীতি, ধর্ম প্রভৃতিসহ সমকালীন বাঙালি জীবনের সব দিকের পূর্ণাঙ্গ তথ্যচিত্র এই সংবাদপত্রের পাতায় চিরজাগরূক হয়ে আছে। এই পত্রিকার তথ্যাবলিকে বিষয়ানুসারে সাজিয়ে সম্পাদনা করে ভারতীয় লেখক ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঐতিহাসিক কীর্তি সংবাদপত্র সেকালের কথা গ্রন্থটি প্রকাশ হয়েছিল
সমাচার দর্পণ পত্রিকাটির উদ্যোক্তা মার্শম্যান জাতিতে ইংরেজ হলেও বাংলা ভাষা বাঙালির ইতিহাসে অপরিহার্য হয়ে আছেন তার কীর্তির জন্য। ১৭৬০ সালের ২০ এপ্রিল লন্ডন শহরের অদূরে ওয়েস্টবেরিলিতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। কয়েকটি ভারতীয় ভাষা ছাড়াও তিনি গ্রিক, ল্যাটিন, হিব্রু সিরিয়াক ভাষায় ছিলেন বেশ দক্ষ। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি লন্ডনে বইপত্র ব্যবসায়ের সাথে জড়িত ছিলেন। পরে কিছুকাল তাঁতের কাজও করেন। ১৭৯১ সালে  দীক্ষিত হন যাজক হিসেবে। ১৭৯৪ সালের দিকে শিক্ষকতার সাথে যুক্ত হলেও কিছু দিনের মধ্যেই তিনি মিশনারির কাজে আত্মনিয়োগ করেন। 

তার গুরুত্বপূর্ণ কর্মের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- চীনা ভাষা শিখে এই ভাষায় বাইবেল অনুবাদ, তৎকালীন মিশনারি প্রধান উইলিয়াম কেরির সহযোগিতায় সংস্কৃত রামায়ণ-এর অনুবাদ এবং সাপ্তাহিক সমাচার দর্পণ, ফ্রেন্ড অব ইন্ডিয়া দিকদর্শন পত্রিকা প্রকাশে অনন্য ভূমিকা পালন। ১৮৩৪ সালে কেরি মারা গেলে তিনি শ্রীরামপুর মিশনারির নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। ১৮৩৭ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মার্শম্যান ওই পদে দায়িত্ব পালন করে গেছেন
Courtesy: Daily Naya Diganta 

No comments:

Post a Comment