Wednesday, November 22, 2023

 গ্রহণ করার চেয়ে দানের মাঝেই অধিক তৃপ্তি

শিক্ষক তার ছাত্রকে নিয়ে ফসলি জমির আইল ধরে হাঁটছিলেন। চলতে চলতে তারা একজোড়া পুরাতন জুতা দেখতে পেলো।
তারা বুঝতে পারলো জুতাজোড়া কোনো গরিব কৃষকের। হয়তো সে পাশেই কোনো জমিতে কাজ করছে। কিছুক্ষণ পরেই হয়তো কাজ শেষ হলে তা নিয়ে যাবে।
ছাত্রটির মাথায় দুষ্টবুদ্ধি চেপে বসলো। সে বললো, উস্তাদজি! আমি যদি সেই কৃষকের সাথে মজা করে তার জুতোজোড়া লুকিয়ে রাখি তাহলে কেমন হবে? সে যখন এসে তার জুতা পাবে না তখন তার আচরণ কেমন হয় তা দেখবো। দূর থেকে মজা নিবো!!
শিক্ষক বললেন, কাউকে অনর্থক কষ্ট দেয়া উচিত নয়রে বাবা! তুমিতো ধনী পিতার সন্তান। তুমি চাইলে এই কৃষকের মাধ্যমে নিজের জন্য সৌভাগ্যের দ্বারকে খুলতে পারো। তার জুতা জোড়ার মাঝে কিছু টাকা গুঁজে রেখে লুকিয়ে লুকিয়ে তার চেহারার দ্বীপ্তি দেখতে পারো।
ছাত্রটি উস্তাদের প্রজ্ঞার পরিচয় পেয়ে খুশি হলো। উস্তাদের কথা মতো কৃষকের জুতার ভিতর কিছু টাকা রেখে তারা উভয়ে গাছের আড়ালে লুকিয়ে রইলো। টাকা পাওয়ার পর কৃষকের অবস্থা চাক্ষুষ দেখার জন্য তারা অপেক্ষা করতে লাগলো।
খানিক সময় পর জরাজীর্ণ পোষাকের কৃষক কাজ শেষ করে ফিরে এলো। জুতা পায়ে দিতে গিয়ে সে জুতার ভিতর কোনো কিছুর অস্তিত্ব অনুভব করে জুতাটি হাতে নিলো।
জুতার ভিতর টাকা দেখে তার চোখ দুটো আনন্দে চিক চিক করে উঠলো। অপর জুতার মাঝেও টাকা দেখে সে যারপর নাই বিস্মিত হলো।
কৃষক ভ্রম কাটাতে বারবার টাকাগুলো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে লাগলো। কয়েক বার এদিক সেদিক চেয়েও যখন আশে-পাশে কাউকে পেলো না তখন আস্তে করে টাকা গুলো পকেটে রাখলো। কৃতজ্ঞতায় সে হাটু ভাঁজ করে জমিনের উপর লুটিয়ে পড়লো। কান্নাভেজা চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে চিতকার করে বলতে লাগলো, “প্রভু! হাজার শোকর তোমার! হে প্রভু! তুমি জানো আমার স্ত্রী অসুস্থ। সন্তানগুলো ক্ষুধার্ত। ঘরে কোনো খাবারের ব্যাবস্থাও নেই। তুমি আমাকে ও সন্তানদের ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেছো।”
আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে এমন করুণার প্রাপ্তি স্বীকার করে সে আকাশের দিকে তাকিয়ে কেঁদেই চললো।
কৃষকের আচরণ দেখে ছাত্রটি খুব প্রভাবিত হলো। অজান্তেই তার চোখ দুটো অশ্রুতে ভরে উঠলো।
উস্তাদ বললেন, জুতা লুকিয়ে রাখার চেয়ে কি এখন নিজেকে বেশি সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছে না নিজেকে?
ছাত্রটি কৃতজ্ঞতার আতিশয্যে বললো, 'উস্তাদ! আমি আজ এমন এক শিক্ষা পেলাম যা আমরণ আর ভুলবো না। এমন কিছু অর্জন করেছি যা আমার অজানা ছিলো। আমি বুঝতে পেরেছি ‘গ্রহণ করার চেয়ে দানের মাঝেই অধিক তৃপ্তি।’
এবার উস্তাদজি তার ছাত্রকে উদ্দেশ্য করে বললেন, শোন বাবা! দান-সদকা অনেক প্রকারের হয়ে থাকে। যেমন:
১. প্রতিশোধ গ্রহণে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও ক্ষমা করে দেয়া সদকা।
২. অপর ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তার জন্য কল্যাণের দোয়া করা সদকা।
৩. কাউকে দূর্বল মনে করে তার ব্যাপারে খারাপ ধারণা সরিয়ে নেয়া সদকা।
৪. কারো অনুপস্থিতিতে তার সম্পদের হেফাযত করা সদকা।
৫. মুসলমান ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাত করা সদকা।
৬. অসুস্থদের সেবা করা সদকা। ইত্যাদি ..
ছাত্রটি তন্ময় হয়ে উস্তাদের মুখপানে চেয়ে রইলো।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এমন সদকা করার তাওফীক দান করুন।
আমীন।
নোটঃ
'সদকা' -এর আক্ষরিক অর্থ 'ন্যায়পরায়ণতা' এবং এটি দান বা স্বেচ্ছাসেবী দানকে বোঝায়। তবে ইসলামী পরিভাষায়; সদকাকে "বিনিময়ে কোন কিছু না চেয়ে একমাত্র আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার অভিপ্রায়ে কাউকে কিছু দেওয়া" বোঝানো হয়েছে।
'সদকাহ' শব্দটি আরবি মূল শব্দ 'সিদক' (আরবি: ص د ق) থেকে এসেছে, যার অর্থ আন্তরিকতা; এটি আন্তরিক বিশ্বাসের চিহ্ন হিসাবে বিবেচিত হয়। এই শব্দটি তিন অক্ষরের মূল ص د ق থেকে এসেছে, যার অর্থ, "সত্য কথা বলা", "আন্তরিক হওয়া" এবং "কারও প্রতিশ্রুতি পালন করা"।
-সংগৃহীত ও পরিমার্জিত
May be an image of Lewisia
All reactions:
Abdus Sabur Dhms

No comments:

Post a Comment