Friday, May 31, 2024

অনিদ্রা insomnia

 অনিদ্রা হলো একটি ঘুমের ব্যাধি যাতে মানুষের ঘুমে সমস্যা হয়। অনিদ্রা বা ইনসমনিয়ার রোগীদের ক্ষেত্রে ঘুমিয়ে পড়তে বা ইচ্ছামত ঘুমাতে অসুবিধা হয়। এক্ষেত্রে সাধারণত দিনের বেলায় ঘুম, কম শক্তি, খিটখিটে, এবং বিষণ্ণ মেজাজ পরিলক্ষিত হয়।

১৩টি কারণ ও তার সমাধান
এক।
গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুমাতে গেলে অনেকের নানা দুশ্চিন্তা মাথায় আসতে থাকে। ফলে ঘুম আসে না।
এই সমস্যা সমাধানের জন্য একটা পদ্ধতি আছে। যাকে বলে ‘worry time’। বাংলায় এর অর্থ দাড়ায় “দুশ্চিন্তার সময়”। মানে দুশ্চিন্তাগুলো নিয়ে ভাবার জন্য দিনের বেলাতেই একটা আলাদা সময় রাখা।
ধরুন, আপনি ঠিক করলেন প্রতিদিন বিকাল ৫টা থেকে ৫.৩০টা আপনার “দুশ্চিন্তার সময়”। এই সময়ে আপনি আপনার দুশ্চিন্তাগুলো নিয়ে ভাববেন। তাহলে এগুলোর দিনেই সমধান হয়ে গেল। ঘুমাতে গেলে আর আপনাকে বিরক্ত করবে না। কিন্তু ঘুমানোর সময় যদি আবার নতুন দুশ্চিন্তা আসে, নিজেকে বলবেন এটা কালকের জন্য। এখন এটা নিয়ে ভাবনার প্রয়োজন নেই!
দুই।
কিছু খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। চা, কফি, কোমল পানীয় আর এনার্জি ড্রিঙ্কস।
কারণ কী? কারণ এগুলোতে আছে ক্যাফেইন। ক্যাফেইন কী করে? ঘুম আসতে দেয় না, ঘুম আসলেও গভীর হতে দেয় না। তাই ঘুমের সমস্যা থাকলে এগুলো না খাওয়াই ভালো। বিশেষ করে ঘুমের ৬ ঘণ্টা আগে এগুলো খাওয়া যাবে না। তাহলে কি খাবেন? সেটা নিয়েই পরের পরামর্শ।
তিন।
ঘুমের কাছাকাছি সময়ে গরম দুধ পান করতে পারেন। কারণ দুধে আছে ট্রিপ্টোফ্যান। গবেষণায় দেখা গেছে এটা ভালো এবং লম্বা সময় ধরে ঘুম হতে সাহায্য করে।
চার।
অনিদ্রার রোগীদের চিকিৎসায় আরেকটা পদ্ধতি শেখানো হয়, যেটা আপনারও উপকারে আসতে পারে। তা হল ঘুমাতে যাওয়ার আগে ১ ঘণ্টা রিলাক্স করা। এটাকে বলে ‘ওয়াইন্ড ডাউন’ টাইম। দিনের ব্যস্ততা আর দুশ্চিন্তা গুলো থেকে নিজেকে দুরে সরিয়ে আনতে এই সময়টা ব্যবহার করতে বলা হয়।
এই এক ঘণ্টায় যেসব কাজ করার পরামর্শ দেয়া হয়, সেগুলো হল, বই পড়া, ডাইরি লেখা, গরম পানি দিয়ে গোসল করা, মনে প্রশান্তি আনে এমন শ্রুতিমধুর কিছু শোনা। যেমন ধর্ম গ্রন্থ বা কবিতা আবৃতি, গান – যেটা আপনার জন্য কার্যকর হয়। যেসব কাজ করতে মানা করা হয়, সেগুলো হল ঘুমানোর আগে টিভি দেখা, কম্পিউটার বা মোবাইল ফোন ব্যবহার করা। কারণ এই যন্ত্রগুলোর স্ক্রিনের উজ্জ্বল আলো মস্তিষ্ককে সজাগ করে তোলে। ফলে ঘুম আসতে দেরি হয়।
পাঁচ।
যাদের বিছানায় শুয়ে থাকার পরও ঘুম না আসার সমস্যা আছে, তাদের জন্য ‘stimulus control’ নামক একটা চিকিৎসা পরামর্শ দেয়া হয়। উদ্দেশ্য হল আপনার মস্তিষ্ক যাতে শোবার ঘর এবং বিছানা দেখলে ঘুমের কথা চিন্তা করে। শোবার ঘরের সাথে যাতে অনিদ্রার কথা মাথায় না আসে।
এই চিকিৎসার বেশ কয়েকটা নির্দেশনা আছে। তার মধ্যে একটা হল ঘুম না আসলে জোর করে বিছানায় শুয়ে না থাকা। যদি ১০ থেকে ২০ মিনিট সময় ধরে শুয়ে থেকে ঘুম না আসে, তাহলে বিছানা থেকে উঠে পাশের রুমে যাবেন। রিলাক্স লাগে এমন কিছু কাজ করবেন যতক্ষণ ঘুম না আসে। তারপর ঘুম আসলেই কেবল বিছানায় ফেরত যাবেন।
পাশের রুমে কী কী করতে পারেন? হাল্কা আলোতে বই পড়তে পারেন, গান শুনতে পারেন। তবে মোবাইল ফোন ব্যবহার করবেন না, কারণ ফোনের উজ্জ্বল আলো ঘুম আসতে বাধা দিতে পারে।
ছয়।
‘Stimulus control’ চিকিৎসা পরামর্শের আরেকটি নির্দেশনা হল বিছানা শুধু ঘুমের জন্য ব্যবহার করা। বিছানায় অন্য কাজ না করা।
আমরা অনেকেই বিছানায় খাবার খাই, পড়াশুনা করি, মোবাইল বা কম্পিউটার ব্যবহার করি। বাসায় থাকলে দিনের অনেকটা সময় বিছানায় কাটাই। ঘুমের সমস্যা কমাতে চাইলে এগুলো এড়িয়ে চলতে হবে।
সাত।
অনেক অনিদ্রার রোগী বারবার ঘড়িতে সময় দেখে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পরে। এটা তাদের ঘুমের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলে। তাই তাদেরকে ঘড়ির দিকে না তাকানোর পরামর্শ দেয়া হয়।
কী কী উপায়ে এটা করা যেতে পারে? ঘড়ির মুখটা উলটো দিকে ঘুরিয়ে রাখা। দেয়ালে ঘড়ি থাকলে সেটা নামিয়ে নেয়া। আর ফোনটা দুরে রেখে ঘুমানো। আবার এসব ব্যবস্থা নিতে গিয়ে ঘড়ি একদম লুকিয়ে ফেলবেন না! সকালে সময়মত জেগেও উঠতে হবে।
ঘড়ি দুরে আছে কিন্তু সকাল বেলা অ্যালার্ম বাজবে এবং আপনি শুনতে পাবেন – এমন ব্যবস্থা করে ঘুমাবেন। আর বাসায় যদি কেউ ঘুম থেকে ডেকে দেয়ার মত থাকে, তাহলে তো আর অ্যালার্ম নিয়ে এত চিন্তা করার প্রয়োজন নেই।
আট।
গবেষণায় দেখা গেছে অনেকের মনে ঘুম নিয়ে এমন কিছু ধারণা থাকে, যা দুশ্চিন্তার উদ্রেক করে এবং ভালো ঘুম হতে ব্যঘাত ঘটায়।
কি সেই চিন্তা গুলো? যেমন, প্রতিদিন আমাকে আট ঘণ্টা ঘুমাতেই হবে যখন আট ঘণ্টা ঘুমানো আপনার জন্য সম্ভব নয়। আবার ঘুমাতে গেছেন, ঘুম আসছে না এর মধ্যে দুশ্চিন্তা শুরু করলেন ‘আজ রাতে ভালো ঘুম না হলে কালকে কাজে খারাপ করবো বা পরীক্ষায় ফেইল করবো’। আবার মাঝ রাতে চিন্তা শুরু করলেন যে অনিদ্রা কোন দিন সারে না আমার এটা সারা জীবন থাকবে। আপনার
মাথায় যদি এমন চিন্তা আসে, তাহলে সেটাকে ধরে ফেলবেন আর ঠাণ্ডা মথায় নিজেকে বোঝাবেন এই চিন্তা গুলোর কোন ভিত্তি আছে কি না।
নয়।
ঘুমানোর আগে আগে অনেক বেশি করে খেলে কারো কারো ঘুম ভালো না হতে পারে। যাদের রাতে ঘুমের সমস্যা আছে, তাদের জন্য ঘুমানোর ৩-৪ ঘণ্টা আগেই রাতের খাবার সেরে নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।
দশ।
ধূমপান এড়িয়ে চলতে হবে। কারণ নিকোটিন একটি উত্তেজক পদার্থ।
যারা ধূমপান করে তারা সহজে ঘুমাতে পারে না, ঘন ঘন ঘুম ভেঙে জেগে ওঠে, এবং প্রায়ই তাদের ঘুম ব্যাহত হয়। একদম সম্পূর্ণ ভাবে পরিহার করা সম্ভব না হলে অন্তত ঘুমানোর ১ ঘণ্টা আগে ধূমপান থেকে বিরত থাকবেন।
এগারো।
আর একটা গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা হল নিয়মিত ব্যায়াম করা। শরীর সচল রাখলে রাতে ঘুম ভালো হয়। তবে ঘুমানোর ৩ ঘণ্টা আগে ব্যায়াম পরিহার করতে হবে।
বারো।
শরীরকে প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে অভ্যস্ত করার জন্য নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানো আর ঘুম থেকে জেগে ওঠা প্রয়োজন। যেমন, আপনি যদি ঠিক করেন যে প্রতিদিন রাত ১১টায় ঘুমাতে যাবেন আর সকাল সাতটায় ঘুম থেকে উঠবেন, তাহলে এই রাত ১১টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত সময়ে আপনার শরীর একটা ভালো ঘুম দিতে অভ্যস্ত হয়ে পরবে।
জেগে ওঠার সময়টা প্রতিদিন একই রাখার চেষ্টা করবেন। শুক্রবারে বা ছুটির দিনে আমরা একটু দেরি করে উঠতে পছন্দ করি। এটা বাদ দিতে হবে।
তেরো।
অনিদ্রার চিকিৎসায় দিনের বেলায় ঘুমাতে নিরুৎসাহিত করা হয়। দিনের বেলা যদি ঘুমাতেই হয়, তাহলে দুপুরে আগে আগে ঘুমিয়ে নিবেন, তাও ৪০ মিনিটের বেশি নয়।
অনিদ্রার ক্ষেত্রে তেমন নিশ্চিত একটা কারণ থাকে না।
একেকজনের জন্য একেটা হতে পারে। যে ১৩ টি কারণ ও তার চিকিৎসা বলা হলো তার সবগুলো আপনার জন্য প্রযোজ্য হবে না। যেটা যেটা আপনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য শুধু সেটাই আপনি পালন করবেন।
যদি এসব ব্যবস্থা নিয়ে ঘুমের সমস্যার সমাধান না হয়, ঘুমের অভাব নিয়মিত সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়, আপনার দৈনন্দিন জীবন ব্যাহত হয়, ঘুম নিয়ে খুব বেশি দুশ্চিন্তা হতে থাকে, তবে ডাক্তারের সহায়তা নিবেন।
নিজে নিজে ঘুমের ঔষধ খাবেন না।
বয়স অনুযায়ী ঘুমের সময়
▶ শারীরিক ও মানসিক সুস্বাস্থ্যের জন্য ঘুম অপরিহার্য। এ ঘুম যথাযথ নিয়ম মেনে পর্যাপ্ত পরিমাণে হওয়া জরুরি।
▶ অতিরিক্ত ঘুমানো বা কম ঘুমানো দুটোই ক্ষতিকর।
▶ ৬-৯ বছর বয়সিদের অন্তত ৯-১১ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন এবং পূর্ণবয়স্কদের জন্য ৮-৯ ঘণ্টা।
▶ ৬৫ বছরের অধিক বয়সিদের জন্য ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন।
* সুনিদ্রার জন্য নির্দেশনা
ধারাবাহিকতা, গভীরতা ও পর্যাপ্ততা; এ তিনটি বিষয় নিশ্চিত হলে তবেই তাকে সুনিদ্রা বা সাউন্ড স্লিপ বলা যায়। সুস্থ জীবনের জন্য সুনিদ্রা অপরিহার্য। এ ক্ষেত্রে মেনে চলুন নিুোক্ত নির্দেশনা-
▶ কাজের সঙ্গে সমন্বয় করে ঘুমের রুটিন করে নিন।
▶ নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন নিশ্চিত করুন। দ্রুত ঘুমোতে যাওয়া, সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করুন।
▶ প্রতিদিন একই সময় ঘুমোতে যান। এতে ঘুমের স্বাভাবিক সাইকেল ঠিক থাকবে।
▶ ঘুমানোর সময় ফোন চালানো, টিভি দেখা, বই পড়া থেকে বিরত থাকুন।
▶ নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খান। সুষম ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করবেন।
▶ ঘুমানোর অন্তত পাঁচ ছয় ঘণ্টা আগে থেকে চা-কফি, ধূমপান করবেন না।
▶ প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা শরীরচর্চা করুন। তবে ঘুমোতে যাওয়ার আগে অবশ্যই নয়।
▶ ঘুমানোর বিছানা কেবল ঘুমানোর জন্যই হোক। বিছানাকে কাজ, পড়া বা আড্ডার জায়গা বানাবেন না।
▶ ঘুমানোর সময় ঢিলেঢালা পোশাক পড়ুন।
▶ ঘরের তাপমাত্রা, সাউন্ড, লাইট অর্থাৎ ঘুমের পরিবেশ যেন সুনিদ্রা-সহায়ক হয়, সেটি নিশ্চিত করুন।
May be a graphic of text that says "Causes of Insomnia CROSSING TIME CROSSINGTIMEZONES ZONES BLUELIGHT BLUE HEAVY HEAVYFOOD FOOD STRESS MEDICINES 03:21 I ALCOHOL, ALCOHOL,SMOKINGORCAFENE SMOKING OR CAFFEINE ENVIRONMENTALFACTORS FACTORS UNCOMFORTABLE UNCOMFORTABLEBEDORPILLOW BED OR"
All reactions:

No comments:

Post a Comment