অল্পতেই পরিতৃপ্ত ও সন্তুষ্ট হওয়া মুমিনের একটি মহৎ গুণ। অনন্য এ গুণটি যার অর্জিত হয়, জীবনের শত দুঃখ-কষ্ট ও অপূর্ণতায় তার কোনো আক্ষেপ থাকে না। আল্লাহ প্রদত্ত নির্ধারিত জীবন-জীবিকায় তিনি তুষ্ট থাকেন। আর অধিক চাহিদা, না পাওয়ার হাহাকার এবং অন্যের ভোগ্য সামগ্রীর ওপর অধিকার লাভের বাসনা একজন মুমিনের জন্য কল্যাণকরও নয়।
অল্পতে তুষ্ট হওয়ার গুণ অর্জন একটু কঠিনই বটে। কারণ মানুষের চাহিদার অন্ত নেই। আমৃত্যু তা পূরণে ব্যস্ত থাকে সে। তার সীমাহীন এ চাহিদার অবসান ঘটাতে পারে শুধু কবরের মাটি।
আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যদি বনি আদমের স্বর্ণভরা একটা উপত্যকা থাকে, তথাপি সে তার জন্য দুটি উপত্যকা হওয়ার কামনা করবে। তার মুখ মাটি ছাড়া অন্য কিছুতেই ভরবে না। তবে যে ব্যক্তি তাওবা করবে, আল্লাহ তার তাওবা কবুল করবেন। (বুখারি, হাদিস, ৬৪৩৯)
তবে মানুষ চাইলে লোভ-লালসা ত্যাগ করে অল্পে তুষ্টির গুণ অর্জন করতে পারে।
কিছু উপায়ঃ
লোভ-লালসা নির্মূলের জন্য জীবিকার ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বন করা আর আয় অনুযায়ী ব্যয় করা। এ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত খরচ একদম না করা। যথাসাধ্য এসব থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখা। ধীরে ধীরে অল্পতে তুষ্ট থাকার অভ্যাস করা, পরিবারের সদস্যদের এভাবে অভ্যস্ত করানো।
আল্লাহ তায়ালা প্রকৃত মুমিনের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, ‘এবং যারা ব্যয় করার সময় না করে অপব্যয় এবং না করে কার্পণ্য; বরং তা হয় উভয়ের মাঝখানে ভারসাম্যমান।’ (সূরা, আল-ফুরকান, আয়াত, ৬৭)
ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন না হওয়া
আমাদের অনেকের প্রবণতা রয়েছে, সম্পদ থাকার পরও ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়া। এ ক্ষেত্রে প্রত্যাশা যত কম হবে তার জন্য মঙ্গল তত বেশি হবে। আজকে যিনি আমাকে যথেষ্ট পরিমাণ রিজিক দিয়েছেন, সামনেও তিনি আমাকে দেবেন। রিজিক আসার কোনো মাধ্যম যদি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে আল্লাহ তাআলা এর চেয়ে উত্তম পথ খুলে দেবেন। তাই এসব নিয়ে হা-হুতাশ করার কিছু নেই।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হে লোকসকল, যে ব্যাপারে আমি তোমাদের আদেশ করেছি তা ছাড়া এমন কোনো জিনিসই নেই, যা তোমাদের জান্নাতের নিকটবর্তী করবে এবং জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে। আর যা থেকে আমি তোমাদের নিষেধ করেছি তা ছাড়া এমন কোনো জিনিসই নেই, যা তোমাদের জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে। এরপর তিনি বলেন, জিবরাইল আলাইহিস সালাম আমার অন্তরে এ কথাটি ঢেলে দিয়েছেন যে কোনো দেহ তার (নির্ধারিত) রিজিক পরিপূর্ণভাবে ভোগ না করা পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করবে না। সাবধান! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং ধনসম্পদ উপার্জনে উত্তম নীতি অবলম্বন করো। কাঙ্ক্ষিত রিজিক পৌঁছার বিলম্বতা যেন তোমাদের আল্লাহর অবাধ্যতা খোঁজার পথে তা অন্বেষণে উদ্বুদ্ধ না করে। কেননা আল্লাহর কাছে যা নির্ধারিত রিজিক আছে তা আল্লাহর আনুগত্য ছাড়া অর্জন করা যায় না। (শুআবুল ঈমান, হাদিস, ১০৩৭৬)
অল্পে তুষ্টির কল্যাণ নিয়ে ভাবা
অল্পে তুষ্ট ও অমুখাপেক্ষীর মধ্যে যেসব বহুবিধ কল্যাণ রয়েছে এসব নিয়ে চিন্তা করা। আর অতিরিক্ত লোভ-লালসার যেসব ক্ষতি রয়েছে তাও উপলব্ধি করা। কারণ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তাহাজ্জুদের নামাজ আর মানুষ থেকে অমুখাপেক্ষিতার মধ্যে আছে মুমিনের সম্মান। (আত-তারগিব ওয়াত-তারহিব, হাদিস, ৯২৯)
নিজ পাঠ
No comments:
Post a Comment