কৃষণ
চন্দরের উপন্যাস “আমি গাধা বলছি” যারা পড়েছেন অন্ততঃ মন দিয়ে তারা মানুষের
মনুষ্যত্ব, বিবেক জাগানোর জন্যে লেখকের অভিনব পন্থা নিশ্চয়ই বুঝেছেন। গল্প বলার
ধরণ, বিষয় বৈচিত্র্যতা, ঘটনার গভীরে প্রবেশ, উপলব্ধির মর্মমূলে আঘাত, রসালো
উপস্থাপন, ভাষার অশেষ দক্ষতা সব মিলিয়ে স্যাটায়ার ধর্মী লেখাগুলোর মধ্যে এই লেখাটি
আমার পড়া অন্যতম সেরা উপন্যাস।
গাধা থেকে একটু
সরে এসে মাছিদের কথা বলি। “মাছি-মারা-কেরানি নিয়ে যত ঠাট্টা-রসিকতাই করি না কেন,
মাছি ধরা যে কত শক্ত সে কথা পর্যবেক্ষণশীল ব্যক্তিমাত্রই স্বীকার করে নিয়েছেন,
মাছিকে যেদিক দিয়েই ধরতে যান না কেন, সে ঠিক সময়ে উড়ে যাবেই”- সৈয়দ মুজতবা আলী
একথাগুলো সাথে বোধ করি কেউই দ্বিমত করবেন না।
তাচ্ছিল্য অথবা উপহাস করে আমরা মানুষকেই “গাধা”
বলে ডাকি। গাধা কিন্তু মূলতঃ একটি নিরীহ প্রাণী। এরা মানুষের অত্যন্ত অনুগত। কারো ক্ষতি
করে না। ‘গাধা’ শব্দটা আমরা বেশি ব্যবহার করি নেতিবাচক অর্থে। কিন্তু গাধা কর্মঠ, বুদ্ধিমান
এবং উপকারী প্রাণীও বটে। এটা সবাই কি জানি? হয়তো জানি না, হয়তো জানলেও গাধা শব্দটা
বলতে, ব্যবহার করতে ভালো লাগে। তাই যদি না হতো, তাহলে ক্লাসে পড়া না পারলে শিক্ষকরা
বলতেন না ‘গাধা’, অফিস বা নিজ কর্মক্ষেত্রে বেশি কাজ করলে কেউ বলতেন না ‘গাধা’র মতো
খাটছিস কেন, কোনো কথা বুঝতে না পারলে, কোনো কাজ ঠিকমতো না করতে পারলে তাকে বলতো না
‘গাধা’। কিন্তু এ প্রশ্ন করা যেতেই পারে যে গাধারা কতটুকু ‘গাধা’।
গাধা
বিচিত্রিতা:
সংগ্রহ
কার কয়েকটি তথ্য “গাধা” বিষয়ে আপনাকে পজিটিভ হতে সাহায্য করবে বলে আশা করি।
গাধা গৃহপালিত প্রাণী হলেও বর্তমানে অনেকে পোষ্য প্রাণী (pet)
হিসেবে গাধা পালছেন । এটি খুব আজ্ঞাবহ কিন্তু ঘোড়ার মত যত্ন প্রত্যাশী নয়। ভারবহন
নয় ভালো বন্ধু হিসেবে পশুপাখির ফার্মে গাধার চাহিদা বাড়ছে।
১. আমাদের সমাজে ভ্রান্ত ধারণা আছে গাধা একটা বোকা
প্রানী । কিন্তু প্রাণিবিজ্ঞানীরা একে বুদ্ধিমান ও স্মার্ট প্রাণী বলেই মনে করেন।
মানুষের কণ্ঠের নির্দেশ বোঝে তারা ও পুরনো মনিব ও সঙ্গীসাথীকে ২৫ বছর পরেও চিনতে
পারে গাধা এমন রেকর্ডও আছে।
২. এদের ঘ্রাণশক্তি ও শ্রবণ শক্তি প্রবল । দূরের বিপদজনক গন্ধ তারা আগেই
বুঝে ফেলে ও সামনে কিছুতেই এগোয় না। পা দিয়ে মাটিতে আঘাত করতে থাকে। এতে অনেক মনিব
না বুঝে গাধাকে একগুঁয়ে প্রাণী মনে করেন।
৩. সামনে বড় বাঁধা থাকলে ভারবাহি গাধা আগেই নিজের গতিপথ
বদলে নেয়।
৪. সে তার ওজনের দ্বিগুণেরও বেশি ওজন বইতে পারে। তার ভারসাম্য খুবই
উন্নত। যত বন্ধুর পথ হোক সে তার মনিবকে কখনো নীচে ফেলে দেবে না, যা ঘোড়ার নেই ।
৫. গাধার প্ৰকৃত ইংরেজি নাম ছিল Ass ও she-ass কিন্তু সেটা গালিতে বা ভালগার শব্দে পরিনত হওয়ায়, পরে dunkey বলে ইংরেজি তে ডাকা শুরু হয় ।
৬. গাধাদের নিজস্ব চিন্তা ভাবনা আছে। নিজের ও মনিবের নিরাপত্তা সবার আগে চিন্তা করে সে।
৭. ভেড়া ও ছাগলের পাল পাহারা দেয়ার জন্য একটি গাধা যথেষ্ট। খুব মনোযোগ দিয়ে গাধা পাহারা দেয় ভেড়ার পাল।
৮. নেকড়ে বাঘ ও শেয়াল গাধাকে ভয় করে। তারা কোন ভেড়ার খোঁয়াড়ে ঢুকে পাহারায় গাধাকে দেখতে পেলে, দ্রুত সটকে পড়ে।
৯. গাধা তার সঙ্গীনিকে খুব ভালোবাসে। গলা জড়িয়ে ঘুমায়, শরীর পরিস্কারও করে দেয় সারাক্ষন।
১১.গাধা ৫০ বছর পর্যন্ত বাঁচে। একই বয়সের ঘোড়ার চেয়ে গাধা
শক্তিশালী।
১২. গাধার আদি বাসস্থান মরুভূমি। সেজন্য গরম
আবহাওয়া পছন্দ তার। শরীরের চামড়া ঘোড়ার চেয়ে পাতলা ও পশম পানিরোধী নয় । তাই সে
বৃষ্টিকে ভয় পায় ও ঠান্ডায় কাঁপে।
১৩. গাধা ও ঘোড়ার হাঁটার ভঙ্গি একই। কিন্তু মরুভূমির প্রাণী
হওয়ায়, গাধা ঘোড়ার মতো দৌঁড়তে পারেনা, এতে শক্তি বেশি ক্ষয় হবে বলে। সেজন্য
বিবর্তনের শুরুতে গাধা যেমন ছিল তেমনি এখনো আছে।
১৪. তারা কখনো চমকায় না। জোরে আওয়াজ হলে
কৌতূহলে দেখে তারপর সিদ্ধান্ত নেয় । অথচ জোরে আওয়াজ হলে ঘোড়া দিগ্বিদিক ছুটতে
থাকে।
১৫. মরুভূমিতে ঘাস কম থাকায় গাধা ঘাসের ৯৫% ই শরীরের কাজে
লাগায়। তাই এদের গোবরে কোন সারবত্তা থাকে না।
১৬.যারা ঘোড়ায় চড়া শিখতে চান তাদের জন্য গাধা "ভাল
শুরু" হতে পারে। সে কখনোই সওয়ারীকে ফেলে দেয় না।
১৭. সংকর প্রাণী উতপাদনে গাধার জিন চমতকার
মানিয়ে নেয়। পশ্চিমে ছেলে গাধাকে জ্যাক ও গাধিকে জেনি বলা হয়। এর সাথে ঘোটকির সংকর
প্রাণী হল মিউল ও জেব্রার সংকর হল জংকি। গাধীর সাথে ঘোড়ার সংকর
হলো হিনী। হিনীর চেয়ে মিউল শক্তিশালী হয়। এরা সব
অনুর্বর বা বন্ধ্যা হয়।
১৮. মিশরীয় সভ্যতা ও সিল্ক রোড নির্মাণে গাধার ভূমিকা ছিল অপরিসীম। আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গাধার পিঠে চড়েই পিরামিড ও ফারাওদের প্রাসাদ তৈরির সরঞ্জাম আসতো। তাই মিশরীয়দের দেয়াল চিত্রে গাধার উল্লেখযোগ্য ছবি আছে।
প্রাচীন সিল্ক রোডে বেশিরভাগ সিল্ক বহন করতো গাধা।
১৯. সব প্রাণীর দুধের মধ্যে একমাত্র গাধার দুধই নন-এলার্জিক। যেসব শিশুদের পেটে সমস্যা থাকে তাদের জন্য এর দুধই সর্বোত্তম।
২০.
পৃথিবীর সবচে বেশি গাধা আছে চীনে। ব্রিটেনে গাধা আমদানি করতে হলে তার (গাধার) পাসপোর্ট প্রয়োজন ।
ওপরের তথ্যগুলো ভাল করে পড়েও বুঝবার পর
আমার মনে হলো গাধারা সব সময়ই পজিটিভ আর আমরা মানুষরূপী গাধারা আসলেই “গাধা”
গুটিকতক “মানুষ” বাদে।
https://bn.quora.com/
https://www.newsg24.com
No comments:
Post a Comment