Wednesday, June 24, 2020

সাফল্যের দুই ডানা সাধনা ও প্রার্থনা

সব মানুষই সফল হতে চায়। সফলতার স্বপ্ন দেখে দেখেই জীবনের দিনগুলো অতিক্রম করে। ব্যর্থ, অসুখী ও অকৃতকার্য হতে চায় না কেউই।
যদিও সফলতার অর্থ ও সংজ্ঞা ব্যক্তিবিশেষে ভিন্ন হয়। কেউ অর্থনৈতিক উন্নতির মাঝে সফলতা দেখে। কেউ সম্মান, মর্যাদা ও প্রভাব-প্রতিপত্তির মাঝে সফলতা দেখে। কেউ সফলতা দেখে জ্ঞান বিদ্যা ও পাণ্ডিত্য অর্জনের মাঝে। কেউ সফলতা দেখে মৃত্যু-পরবর্তী জীবনে সুখী হওয়ার মাঝে। এই সফলতা অর্জনের ক্ষেত্রে পথ-পন্থা নির্বাচনেও মানুষের মধ্যে অনেক ভিন্নতা দেখা দেয়। কেউ বৈধ-অবৈধ, ন্যায়-অন্যায় যেকোনো উপায়ে অর্থ উপার্জন করতে রাজি হয়ে যায়। কেউ ন্যায়ানুগ পন্থা ছাড়া অগ্রসর হতে চায় না।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানুষকে নানা ধরনের যোগ্যতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। সেই যোগ্যতা দিয়ে মানুষ তার কাঙ্ক্ষিত সফলতা অর্জনে সচেষ্ট হয়। নিরন্তর সাধনায় পৌঁছতে চায় গন্তব্যে। অবশ্য কিছু মানুষ এমনও আছে, যারা সফলতার স্বপ্ন দেখে ঠিকই, কিন্তু সফলতা অর্জনে কষ্ট করতে চায় না। সাধনার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে পারে না। মূলত তারা উদাসীন। তাদের জীবনে সফলতা পাওয়া বাস্তবিক পক্ষেই কঠিন।
গভীরভাবে ভাবলে দেখা যায়, স্বাভাবিক পন্থায় সফলতার জন্য প্রধানত দুটি বিষয় জরুরি। তা হলো—এক. সাধনা, দুই. প্রার্থনা।
যেকোনো ক্ষেত্রে সফলতা অর্জনের জন্য কী তীব্র সাধনা ও পরিশ্রমের প্রয়োজন, সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। দুনিয়ার সবচেয়ে সহজ কাজটিও কি কষ্ট ছাড়া হয়? যেকোনো টার্গেট বাস্তবায়নের জন্য কী পরিমাণ শ্রম-সাধনা দরকার, ভুক্তভোগী মাত্রই উপলব্ধি করতে পারে।
কিন্তু সত্য কথা হলো, কেবল সাধনা আর শ্রম ব্যয় করেই মানুষ সফল হতে পারে না। দুনিয়ার কত সামর্থ্যবান শক্তিমান মানুষ জীবন-সংগ্রামে ব্যর্থ। বরং কেউ কেউ চূড়ান্ত অকৃতকার্য! পড়াশোনা, যোগ্যতা, দক্ষতা ও দেহশক্তি পর্যাপ্ত থাকার পরও চাকরি নেই, এর নজির কি দুনিয়ায় দুই-একটা? ভালো চাকরি ও মোটা অঙ্কের বেতন পেয়েও তীব্র সংকটে দিনাতিপাত করছে, এর নজিরও কি গুনে শেষ করার মতো? তা ছাড়া, প্রখর মেধা ও প্রতিভা নিয়েও শিক্ষা-দীক্ষা অর্জন করতে পারেনি, যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা পেয়েও যোগ্যতা-দক্ষতা রপ্ত করতে পারেনি, এসবের নজিরও বেহিসাব। তাহলে বোঝা যায়, সাধনা-পরিশ্রম ছাড়া সফলতার দেখা পাওয়া অসম্ভব হলেও শুধু সাধনা-পরিশ্রম দিয়েই সব কিছু হয় না। কেবল মেহনত করেই সফলতা লাভ করা যায় না। এ জন্য দরকার আল্লাহ তাআলার তাওফিক ও মেহেরবানি। আল্লাহ তাআলা যদি চান, তিনি যদি তাওফিক দান করেন, তাহলে কঠিন থেকে কঠিন কাজও সহজ হয়ে যায়। অসম্ভব বিষয়ও সহজলভ্য হয়ে যায়। কল্পনাতীত অর্জনও অতি স্বাভাবিকভাবে হাসিল হয়ে যায়। এ জন্য প্রয়োজন হয় দোয়া ও মোনাজাত। মন খুলে প্রাণভরে আল্লাহ তাআলার কাছে তাওফিক প্রার্থনা করা উচিত। এর সঙ্গে প্রয়োজন মেহনত ও সাধনা। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘আর নিশ্চয়ই তার (মানুষের) প্রচেষ্টার ফল অচিরেই দেখা যাবে। তারপর তার পূর্ণ প্রতিদান তাকে দেওয়া হবে।’ (সুরা নাজম, আয়াত : ৪০-৪১)। এ কথা আখিরাতের প্রতিদানের ক্ষেত্রে যেমন বাস্তব, তেমনি দুনিয়াবি প্রতিফলের ক্ষেত্রেও।
হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার কাছে প্রার্থনা করে না, আল্লাহ তাআলা তার ওপর রাগান্বিত হন।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৩৩৭৩)
উপসংহারে বলা যায়, নিজস্ব মেহনত ও সাধনার সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহ তাআলার কাছে সাহায্য চাইতে হবে।

No comments:

Post a Comment