আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কিছু ইবাদত গোপনে করা উত্তম। গোপন ইবাদত সওয়াবের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দা হওয়ার জন্য গোপন ইবাদতে অভ্যস্ত হওয়া অবশ্যক।
গভীর ঈমানের পরিচায়ক
গভীর ও একনিষ্ঠ ঈমানের একটি বড় আলামত হলো গোপনে ইবাদত করা। কারো গোপন নেক আমল যখন বেড়ে যায়, তখন তিনি ঈমানের সর্বোচ্চ স্তরে উপনীত হতে পারেন। আর ঈমানের সর্বোচ্চ স্তর হচ্ছে ‘ইহসান’। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ইহসান হচ্ছে তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে যেন তুমি তাঁকে দেখতে পাচ্ছ; যদি তাঁকে দেখতে না পাও তবে বিশ্বাস রাখবে তিনি তোমাকে দেখছেন। (বুখারি, হাদিস : ৫০)
আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায়
অন্তরে ঈমান ও তাকওয়ার শিকড় যত শক্তিশালী হয়, নেক আমলের বৃক্ষ তত বেশি ফলবতী হয়। যার গোপন ইবাদত যত সুন্দর হয়, তার বাহ্যিক আমলগুলো তত পরিপাটি হয়। এ জন্য মহান আল্লাহ গোপন ইবাদত অত্যধিক পছন্দ করেন। তিনি বান্দাকে সঙ্গোপনে দোয়া করার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘তোমরা তোমাদের রবকে ডাকো বিনীতভাবে ও চুপে চুপে। নিশ্চয়ই তিনি সীমা লঙ্ঘনকারীদের ভালোবাসেন না। ’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৫৫)
রিয়া ও লৌকিকতা মুক্ত ইবাদত
ইবাদতের সওয়াব বিনষ্ট হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ হলো রিয়া বা প্রদর্শনেচ্ছা। সে জন্য ইবাদত যখন রিয়ামুক্ত হয়, তখন সেটা খাঁটি ও কবুলযোগ্য হয়। আর এ জন্যই মহান আল্লাহ গোপন ইবাদত সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন। আল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান করো, তবে তা কতই না উত্তম! আর যদি তা গোপনে করো এবং অভাবীদের প্রদান করো, তাহলে তোমাদের জন্য সেটাই উত্তম। (এর দ্বারা) তিনি তোমাদের কিছু পাপ মোচন করে দেবেন। আর তোমরা যা কিছু করো, আল্লাহ তার খবর রাখেন।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২৭১)
তাফসিরবিদ ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, ‘এই আয়াতে দলিল আছে যে প্রকাশ্যে দান করার চেয়ে গোপনে দান করা বেশি উত্তম। কেননা গোপন আমলের মাধ্যমে রিয়া বা লৌকিকতা থেকে অধিক নিরাপদ থাকা যায়।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির ১/৭০১)
আল্লাহর ক্রোধ প্রশমিত হয়
বান্দা যখন আল্লাহর নির্দেশ লঙ্ঘন করে, তখন আল্লাহ সেই বান্দার প্রতি ভীষণ রাগান্বিত হন। আর আল্লাহর রাগ ও ক্রোধকে ঠাণ্ডা করার একটি শক্তিশালী মাধ্যম হলো গোপন ইবাদত, বিশেষ করে গোপনে দান করা। আল্লাহ বলেন, ‘যারা তাদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে রাতে ও দিনে, গোপনে ও প্রকাশ্যে, তাদের জন্য উত্তম পারিতোষিক আছে তাদের রবের কাছে। তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা চিন্তান্বিত হবে না।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২৭৪)
অন্তরের শুদ্ধতা অর্জন
সঙ্গোপনে ইবাদতের মাধ্যমে যে তৃপ্তি পাওয়া যায়, কারো সামনে ইবাদত করার সময় সেটা পাওয়া যায় না। হাশরের ময়দানে সবাই যখন দিশাহারা হয়ে যাবে, তখন তারা আল্লাহর সামনে উপস্থিত হবে প্রশান্ত চিত্তে। মহান আল্লাহ বলেন : ‘যেদিন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি কোনো কাজে আসবে না, কেবল যে ব্যক্তি বিশুদ্ধ অন্তর নিয়ে আল্লাহর কাছে আসবে, সে ছাড়া। (সেদিন) জান্নাতকে আল্লাহভীরুদের নিকটবর্তী করা হবে।’ (সুরা : শুআরা, আয়াত : ৮৮-৯০)
বিপদাপদে বড় হাতিয়ার
বিভিন্ন ধরনের বিপদাপদে আল্লাহর সাহায্য ও অনুগ্রহ লাভের একটি শক্তিশালী মাধ্যম হলো গোপন আমল। কারণ গোপন আমলে ফজিলত বেশি এবং খুব তাড়াতাড়ি কবুল হয়। আর কবুলযোগ্য কোনো আমলের অসিলায় আল্লাহর কাছে দোয়া করলে যেকোনো বড় বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। যেমন আগের যুগের তিনজন ব্যক্তি পাহাড়ের গুহায় আটকা পড়েছিল। সেখান থেকে বের হওয়ার কোনো উপায় তাদের ছিল না। অতঃপর তারা যখন তাদের নেক আমলের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করল, তখন আল্লাহ তাদের গুহা থেকে বের করে আনেন। (বুখারি, হাদিস : ২২১৫)
ইউনুস (আ.) মাছের পেটে অবরুদ্ধ হয়ে কায়মনো বাক্যে আল্লাহকে ডেকেছিলেন এবং তাঁর তাসবিহ পাঠ করেছিলেন। ফলে আল্লাহ তাঁকে মাছের অন্ধকার পেটের ভেতর থেকে মুক্তি দান করেন। আল্লাহ বলেন, ‘যদি সে এই সময় আল্লাহর গুণগানকারী না হতো, তাহলে সে তার পেটে অবস্থান করত পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত।’ (সুরা : সাফফাত, আয়াত : ১৪৩-১৪৪)
এ সময় তিনি দোয়া পাঠ করেন, ‘লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহা-নাকা ইন্নি কুনতু মিনায যোয়া-লিমীন।’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৮৭-৮৮)
এটি দোয়া ইউনুস নামে প্রসিদ্ধ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কোনো মুমিন কঠিন বিপদে এই দোয়া পাঠ করলে আল্লাহ তা কবুল করেন। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫০৫)
আল্লাহর আরশের ছায়া লাভ
কিয়ামতের ময়দানে মহান আল্লাহ যে সাত শ্রেণির বান্দাকে ছায়া দান করবেন, তার মধ্যে তিন শ্রেণির লোক হবে গোপন আমলকারী। যেমন—নবী কারিম (সা.) বলেন, সেদিন সাত শ্রেণির ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা তাঁর (আরশের) ছায়ায় আশ্রয় দেবেন, যেদিন আল্লাহর ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না।...(তন্মধ্যে অন্যতম হলো) ওই ব্যক্তি, যাকে কোনো উচ্চ বংশীয় রূপসী নারী আহ্বান জানায়, কিন্তু সে এই বলে প্রত্যাখ্যান করে যে ‘আমি আল্লাহকে ভয় করি।’ আর সেই ব্যক্তি ছায়া পাবে, যে এমন গোপনে দান করে যে তার ডান হাত কি ব্যয় করে বাঁ হাত সেটা জানতে পারে না। অতঃপর সে ব্যক্তি, যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে; ফলে তার দুই চোখ দিয়ে অশ্রু প্রবাহিত হয়। (বুখারি, হাদিস : ৬৬০)
রেফা: উম্মে আহমাদ ফারজানা
No comments:
Post a Comment