Tuesday, January 14, 2025

যিক্‌র হোক একান্ত নির্জনে

 আমরা যারা এখন নিজেকে মুসলিম বলে দাবী করি তারা “যিক্‌র”কে প্রদর্শনীর পর্যায়ে নিয়ে গেছি। কিন্তু আল্লাহ আল কুরআনে অন্য কথা বলেছেন। আল্লাহর এ কথা আমার আব্বা আমাকে আমার বাল্যকালে মনে করিয়ে দিয়ে সতর্ক করেছিলেনঃ

আল্লাহ পাক বলেন, ‘তোমার রবকে স্মরণ করো মনে মনে কাকুতি-মিনতি ও ভীতি সহকারে অনুচ্চ স্বরে সকালে ও সন্ধ্যায়। আর তুমি উদাসীনদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।’ (আ‘রাফ : ৭/২০৫)
সর্বক্ষণ আল্লাহ তাআলার ধ্যান ও খেয়ালে নিমগ্ন থাকা খাঁটি মুমিনের বৈশিষ্ট্য। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের অন্যতম মাধ্যম হলো যিক্‌র। মুমিনের সকাল-সন্ধ্যা কাটে জিকিরের মাধ্যমে। মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাকে সকাল-সন্ধ্যা যিক্‌র করার নির্দেশ দিয়েছেন।
হাসান বসরি (রহ.) বলেন, ‘মুসলিম ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য হলো তারা দোয়া করার মধ্যে পরিশ্রম করে। কিন্তু কেউ তাদের আওয়াজ শুনতে পায় না; বরং দোয়া ও যিক্‌রের মৃদু শব্দ শুধু তার রব ও তার মাধ্যমেই সীমাবদ্ধ থাকে।
’ (তাফসিরে ইবনে কাসির : ৩/২৪৮)
যিক্‌র হোক একান্ত নির্জনে। নির্জন জিকির মহান আল্লাহর বেশি পছন্দের। আবু মুসা আশআরি (রা.) বলেন, আমরা এক সফরে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে ছিলাম। যখন আমরা কোনো উপত্যকায় আরোহণ করতাম, তখন ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এবং ‘আল্লাহু আকবার’ বলতাম।
আর আমাদের আওয়াজ অতি উঁচু হয়ে যেত। নবী করিম (সা.) আমাদের বলেন, ‘হে লোক সকল! তোমরা তোমাদের প্রতি সদয় হও। তোমরা বধির বা অনুপস্থিত কাউকে ডাকছ না; বরং তোমরা এমন সত্তাকে ডাকছ যিনি শ্রবণকারী এবং অতি নিকটবর্তী। আর তিনি সর্বদা তোমাদের সঙ্গেই আছেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৪২০৫)
নবী করিম (সা.) বলেন, সাত শ্রেণির ব্যক্তি কিয়ামতের ময়দানে আল্লাহর আরশের ছায়ায় আশ্রয় পাবে, তন্মেধ্যে এক শ্রেণি হলো, ‘সে ব্যক্তি, যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে, ফলে তার দুই চোখ দিয়ে অশ্রু প্রবাহিত হয়। ’ (বুখারি, হাদিস : ৬৬০)
তবে ফরজ ইবাদত, যা দিয়ে শুধু আল্লাহর নাম জপার নাম যিক্‌র নয়; বরং আল্লাহর ভয়ে ভীত হয়ে তাঁকে স্মরণ করার জন্য যে ইবাদত করা হয়, সেটাও যিক্‌রের অন্তর্ভুক্ত। প্রখ্যাত তাবেঈ সাঈদ ইবনে জুবাইর (রহ.) বলেন, ‘যদি আল্লাহর ভয় তোমার এবং গুনাহের মধ্যে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়, তবে সেটাই প্রকৃত ভয়।যিক্‌র হচ্ছে আল্লাহর আনুগত্য। যে আল্লাহর আনুগত্য করল, সে তাঁর যিক্‌র করল। আর যে আল্লাহর আনুগত্য করল না, সে তাঁর যিক্‌র করল না; যদিও সে বেশি তাসবিহ পড়ে এবং কোরআন তিলাওয়াত করে।’ (ইবনুল জাওজি, সিফাতুছ সাফওয়া : ২/৪৫)
আল্লাহকে স্মরণ করার জন্য তাসবিহ, তাহমিদ, তাকবির ও তাহলিলের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে তাহলিল বা ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’কে সর্বোকৃষ্ট যিক্‌র হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
(তিরমিজি, হাদিস : ৩৩৮৩)
ইমাম ইবনুল কাইয়িম (রহ.) বলেন, আগের অনেক মুসলিম মনীষী ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ কালেমার মাধ্যমে বেশি যিক্‌র করতেন। কারণ এই যিক্‌র শুধু জিহ্বার মাধ্যমে করা যায়। এখানে ঠোঁটের কোনো অংশগ্রহণ নেই। তাই এই যিক্‌র অধিক গোপনে করা যায়। বান্দা তার ঠোঁট বন্ধ করে সবার অগোচরে আল্লাহর যিক্‌রে ব্যস্ত থাকতে পারে।
(ইবনুল কাইয়িম, ইলামুল মুওয়াক্কিঈন : ৩/২৮৭)
এটা খুবই বাস্তবসম্মত কথা। কেননা ‘সুবহানাল্লাহ’, ‘আলহামদুলিল্লাহ’, ‘আল্লাহু আকবার’ প্রভৃতি বাক্য পাঠের সময় ঠোঁট নড়াচড়া করে। কিন্তু ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলার সময় একদম ঠোঁট নড়ানোর প্রয়োজন হয় না, বরং ভরা মজলিসে বসেও ঠোঁট বন্ধ রেখে গোপনে এই যিক্‌র করা যায়। সুতরাং রাস্তাঘাটে, গাড়িতে-বাড়িতে, চলতে ফিরতে আমরা যেন এই বাক্যের মাধ্যমে আল্লাহর যিক্‌র করতে পারি।
সূত্র: ১. আহমাদ ইজাজ
২. নিজ পাঠ ও উপলব্ধি
May be an image of 1 person and text
ms

No comments:

Post a Comment