Friday, January 24, 2025

রিয্ক

 রিয্ক আরবি শব্দ, এর অর্থ অনেক ব্যাপক। আল্লামা ইবনে ফারিস রহ. তার অভিধানে লিখেছেন, ‘রিয্ক হলো সময় অনুযায়ী প্রদান করা আল্লাহ তায়ালার বিশেষ দান।’ তবে রিয্ক শব্দটি শুধু ‘দান’ অর্থেও ব্যবহৃত হয়। (মাকায়িসুল লোগাহ, পৃষ্ঠা-৩৩৩) বিখ্যাত আরবি অভিধানপ্রণেতা আল্লামা আবু নসর জাওহারি রহ. লিখেছেন, ‘যার মাধ্যমে মানুষ উপকৃত হয়, তার সবই রিয্ক।’ (আস সিহাহ, পৃষ্ঠা-৪৪০)

রিয্ক মানে শুধু খাদ্যসামগ্রী নয়; বরং জীবনোপকরণের সব কিছু। আল্লাহ তায়ালা বান্দার তাকদিরে যা লিখে রেখেছেন এবং যতটুকু লিখে রেখেছেন, যেভাবে লিখে রেখেছেন, ততটুকু সে পাবেই এবং সেভাবেই পাবে। সে অক্ষম হোক বা সক্ষম। আল্লামা ইবনে মানযুর রহ. লিখেছেন, ‘রিয্ক দুই প্রকার : ১. দেহের জন্য রিয্ক, যা খাদ্য; ২. রূহের ও আত্মার জন্য রিয্ক, আর তা হলো জ্ঞান।’ (লিসানুল আরব, ইবনে মানযুর, খণ্ড-৫, পৃষ্ঠা-২৩৯)

আল্লামা কুরতুবি রহ. বলেছেন, ‘রিয্কের আভিধানিক অর্থ এমন বস্তু যা কোনো প্রাণী আহার্যরূপে গ্রহণ করে, যার দ্বারা সে দৈহিক শক্তি সঞ্চয়, প্রবৃদ্ধি সাধন এবং জীবন রক্ষা করে থাকে। রিয্কের জন্য মালিকানা-স্বত্ব শর্ত নয়। সব জীব-জন্তু রিয্ক ভোগ করে থাকে কিন্তু তারা তার মালিক হয় না। কারণ, মালিক হওয়ার যোগ্যতাই ওদের নেই। যেমন ছোট শিশুরাও রিজিক পায় কিন্তু সে তার মালিক নয়, অথচ ওদের রিয্ক অব্যাহতভাবে তাদের কাছে পৌঁছতে থাকে।’ (কুরতুবি)
পবিত্র কুরআনে রিয্ক শব্দটি বিভিন্নভাবে এসেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রিয্ক কিভাবে আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে তা বলা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-‘জমিনে বিচরণশীল এমন কোনো প্রাণী নেই যার জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহর ওপর নেই, তিনি জানেন কোথায় তাদের আবাসস্থল ও সমাধিস্থল, সব কিছুই আছে সুস্পষ্ট কিতাবে।’ (সূরা হুদ, আয়াত-৬)
মহান আল্লাহ রিয্কদাতা, তাঁর আছে অফুরন্ত রিয্ক- যা তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে বিতরণ করেন। তাঁর রিয্ক প্রত্যেকের কাছে পৌঁছে যায়। আল্লাহ তায়ালার রুবুবিয়াতের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো- বান্দাহর প্রয়োজন পূরণের ব্যবস্থা করে দেয়া। এ অর্থেই আল্লাহপাক রাব্বুল আলামিন বা বিশ্বজগতের পালনকর্তা।

প্রতিটি প্রাণী জীবন ধারণের জন্য আল্লাহ তায়ালার এমন বিশেষ দানকে রিয্ক বলা হয়, যা নির্ধারিত সময়ে প্রয়োজন ও চাহিদা অনুযায়ী দেয়া হয়, আর তার মাধ্যমে প্রাণীটির সার্বিক উপকার সাধিত হয়। অর্থাৎ রিয্ক সেটিই, যা বান্দার উপকারে আসে। উপকারে আসার বিষয়টিও ব্যাপক- ইহকাল ও পরকাল, উভয়কালই তাতে অন্তর্ভুক্ত। ইসলাম আমাদের জীবন সম্পর্কে যে ধারণা দেয়- যেহেতু সেই জীবনের শুরু হয়েছিল আলমে আরওয়াহতে (রূহের জগৎ), পরবর্তীতে আলমে আজসাম (দুনিয়ার জীবন), এরপর আলমে বারজাখ (অন্তর্বর্তীকালীন জগৎ), সর্বশেষ আলমে আখিরাত বা বিচার ফায়সালা পরবর্তী অনন্তকালের জগৎ, সুতরাং জীবনের ব্যাপক অর্থের দিকে খেয়াল রেখে কোনো ব্যক্তি বা প্রাণী যদি ইহকালে যথাযথভাবে রিয্কপ্রাপ্ত না হয়, পরকালে সে অবশ্যই তা পাবে। বস্তুত যা কিছু দেহ ও রূহের খোরাক মেটায়, তাই রিয্ক। মোট কথা, আল্লাহ তায়ালার এক বিশেষ অনুগ্রহের নাম রিজিক, যা তিনি মানুষসহ সব প্রাণীকে নির্ধারিত সময়ে প্রয়োজন ও চাহিদা অনুযায়ী দিয়ে থাকেন। সেজন্যই রিয্ক কেবল শারীরিক বিষয় নয়- মানসিক-আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোও এর অন্তর্ভুক্ত। যেমন- তৃপ্তি অনুভব করা, স্বস্তিতে থাকাও রিজিকের উদাহরণ।

রিয্ক বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন তাকদিরের উপর ঈমান
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা: থেকে বর্ণিত-তিনি বলেন, সত্যবাদী ও সত্যবাদিতায় স্বীকৃত রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকেই আপন মাতৃগর্ভে ৪০ দিন পর্যন্ত (শুক্র হিসেবে) জমা থাকে। তারপর ওই রকম ৪০ দিন রক্তপিণ্ড, তারপর ওই রকম ৪৩০ দিন মাংসপিণ্ডাকারে থাকে। এরপর আল্লাহ তায়ালা একজন ফেরেশতা পাঠান এবং তাকে রিয্ক, মৃত্যু, দুর্ভাগ্য ও সৌভাগ্য-এ চারটি বিষয় লিখার জন্য আদেশ দেন। তিনি আরো বলেন, আল্লাহর কসম! তোমাদের মধ্যে যে কেউ অথবা বলেছেন, কোনো ব্যক্তি জাহান্নামিদের আমল করতে থাকে। এমনকি তার ও জাহান্নামের মধ্যে মাত্র একহাত বা এক গজের দূরত্ব থাকে এমন সময় তাকদির তার ওপর প্রাধান্য লাভ করে আর তখন সে জান্নাতিদের আমল করা শুরু করে দেয়। ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করে। আর এক ব্যক্তি জান্নাতিদের আমল করতে থাকে। এমন কি তার ও জান্নাতের মধ্যে মাত্র এক হাত বা দুই হাত দূরত্ব থাকে এমন সময় তাকদির তার ওপর প্রাধান্য লাভ করে আর ওমনি সে জাহান্নামিদের আমল শুরু করে দেয়। ফলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করে।’ (বুখারি-৬৫৯৪) 

আল্লাহ তায়ালাই একমাত্র রিয্কদাতা
রিজিকের মালিক একমাত্র আল্লাহ, তিনি ছাড়া আর কোনো রিজিকদাতা ছিল না, এখনো নেই, ভবিষ্যতেও থাকবে না। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা কুরআনে কারিমে ইরশাদ করেছেন-‘নিশ্চয়ই আল্লাহ যিনি রিয্কদাতা, শক্তির আধার ও পরাক্রমশালী।’ (সূরা জারিয়াত, আয়াত-৫৮) ‘জমিনে বিচরণশীল এমন কোনো প্রাণীও নেই যার জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহর ওপর নেই, তিনি জানেন কোথায় তাদের আবাসস্থল ও কোথায় সমাধিস্থল, সব কিছুই আছে সুস্পষ্ট কিতাবে।’ (সূরা হুদ, আয়াত-৬) ‘জনপদগুলোর লোকেরা যদি ঈমান আনত আর তাকওয়া অবলম্বন করত তাহলে আমি তাদের জন্য আসমান আর জমিনের কল্যাণ উন্মুক্ত করে দিতাম কিন্তু তারা (সত্যকে) প্রত্যাখ্যান করল। কাজেই তাদের কৃতকর্মের কারণে তাদের পাকড়াও করলাম।’ (সূরা আরাফ, আয়াত-৯৬)
উল্লিখিত আয়াতগুলোতে এ কথা স্পষ্ট, রিয্কদাতা একমাত্র আল্লাহ তায়ালা। তিনি ছাড়া আর কোনো রিয্কদাতা নেই। মানুষসহ সব প্রাণীর রিয্কের দায়িত্ব একমাত্র তাঁর জিম্মায়।
হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘তোমরা যদি প্রকৃতই আল্লাহ তায়ালার ওপর ভরসা রাখতে তাহলে পাখিদের যেভাবে রিয্ক দেয়া হয় সেভাবে তোমাদেরও রিয্ক দেয়া হতো। পাখিরা সকালবেলা খালি পেটে বের হয় এবং সন্ধ্যা বেলায় ভরা পেটে ফিরে আসে।’ (তিরমিজি-২৩৪৪, ইবন মাজাহ-৪১৬৪)
অনুসন্ধান করার শর্তে রিয্ক নির্ধারিত : প্রত্যেক মানুষের রিয্ক নির্ধারিত। একজন মানুষ যা কিছু প্রাপ্ত হন বা লাভ করেন, তা পূর্বনির্ধারিত ছিল বলে তিনি তা পেয়ে থাকেন। যা কিছু মানুষ প্রাপ্ত হন না বা লাভ করেন না, তা নির্ধারিত ছিল না বলেই তিনি তা পাননি বা লাভ করেননি। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন-‘আমি অবশ্যই জমিনে তোমাদের প্রতিষ্ঠিত করেছি, আর তাতে রেখেছি তোমাদের জন্য জীবনোপকরণ। (অথচ) তোমরা অল্পসংখ্যকই কৃতজ্ঞ।’ (সূরা আরাফ, আয়াত-১০)
রিয্ক আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে নির্ধারিত হলেও তা অনুসন্ধান করা বান্দার কর্তব্য। আল্লাহ তায়ালা রিয্ক নির্ধারণ করে রেখেছেন বলেই বিষয়টি এমন নয় যে, সেই রিয্ক আপনা-আপনি আমাদের কাছে এসে হাজির হবে।
বস্তুত আল্লাহ তায়ালা মানুষকে হালাল উপায়ে রিজিক অন্বেষণের নির্দেশ দিয়েছেন। ‘এরপর যখন নামাজ শেষ হয়ে যাবে তখন তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ করো এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করো যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সূরা জুমুআহ, আয়াত-১০)
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘...যে আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার জন্য উত্তীর্ণের পথ বের করে দেবেন। আর তাকে তার ধারণাতীত অবস্থান থেকে রিয্ক দেবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে, তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। আল্লাহ তাঁর উদ্দেশ্য পূর্ণ করবেনই। (তবে) নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রত্যেক জিনিসের জন্য একটি সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন।’ (সূরা তালাক, আয়াত : ২-৩)
হজরত মুত্তালিব ইবনে হানতাব রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই জিবরাইল আমার অন্তরে ওহি ঢেলে দিয়েছেন যে, অবশ্যই রিয্ক শেষ হওয়ার আগে কারো মৃত্যু হয় না। সুতরাং তোমরা হারাম ছেড়ে হালাল পথে রিয্কের অনুসন্ধান করো।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, খণ্ড-৯, পৃষ্ঠা-২৫৪)
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘হালাল রিজিক অন্বেষণ করা দ্বীনের ফরজগুলোর মধ্যে অন্যতম।’ (সুনানুল কুবরা-বায়হাকি, খণ্ড-৬, হাদিস-১১৬৯৫)
হজরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘হে লোকেরা! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং উত্তম পন্থায় জীবিকা অন্বেষণ করো। কেননা, কোনো ব্যক্তিই তার জন্য নির্ধারিত রিয্ক পূর্ণরূপে না পাওয়া পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করবে না, যদিও তার রিয্ক প্রাপ্তিতে কিছু বিলম্ব হয়। অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং উত্তম পন্থায় জীবিকা অন্বেষণ করো, যা হালাল তাই গ্রহণ করো, যা হারাম তা বর্জন করো।’ (ইবনে মাজাহ-২১৪৪)
ইমাম শাফেয়ি রহ. বলেন, ‘যা কিছু তোমার জন্য লিখিত সেটি পাহাড়ের চূড়ায় থাকলেও তোমারই হবে। আর যা কিছু তোমার জন্য লেখা হয়নি, সেটি দুই ঠোঁটের মধ্যখানে থাকলেও তোমার হবে না।’
তাই আপনার জন্য নির্ধারিত রিয্ক আপনার কাছে সঠিক সময়ে, সঠিক জায়গায়, সঠিক উৎস থেকে পৌঁছে যাবে আল্লাহর হুকুমে। তবে এ জন্য যে কাজটি করতে হবে, তা হলো আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল বা ভরসা করে হালাল পথে যথাযথ চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। বাকিটা আল্লাহর জিম্মায়।
যেসব কাজে মানুষের রিজিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়
১. পাপকাজে লিপ্ত হওয়া : হজরত সাওবান রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘সৎকর্ম মানুষের আয়ুষ্কাল বাড়াতে পারে এবং দোয়া মানুষের তাকদির রদ (পরিবর্তন) করতে পারে। আর মানুষ তার পাপ কাজের কারণে প্রাপ্য রিজিক থেকে বঞ্চিত হয়।’ (ইবনে মাজাহ-৪০২২)
২. অকৃতজ্ঞ হওয়া : আল্লাহ-তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘আর যদি অকৃতজ্ঞ হও, তবে মনে রেখো আমার শাস্তি বড়ই কঠোর।’ (সূরা ইবরাহিম, আয়াত-৭)
৩. মিথ্যা কসম খাওয়া ও ধোঁকা দেয়া : রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘বেচাকেনা করার সময় তোমরা অধিক কসম করা থেকে সাবধান থেকো। কারণ, মিথ্যা কসমের দ্বারা বিক্রি বেশি হয় কিন্তু বরকত ধ্বংস হয়ে যায়।’ (মুসলিম-১৬০৭) রাসূলুল্লাহ সা: আরো বলেছেন, ‘ক্রেতা ও বিক্রেতা যতক্ষণ পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন করা কিংবা বাতিল করার সুযোগ রয়েছে। যদি তারা সত্য বলে এবং পণ্যের প্রকৃত অবস্থা ব্যক্ত করে, তাহলে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত হবে। আর যদি মিথ্যা বলে এবং পণ্যের দোষ গোপন করে, তাহলে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ের বরকত ধ্বংস হয়ে যাবে।’ (বুখারি-২০৭৯)

৪. সুদের কারবার করা : আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘আল্লাহ সুদকে ধ্বংস করে দেন এবং সাদাকাকে বর্ধিত করে দেন।’ (সূরা বাকারাহ, আয়াত-২৭৬)
৫. জাকাত না দেয়া : রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যখন কোনো জাতি জাকাত আদায় করা বন্ধ করে দেয়; আসমান থেকে তখন বৃষ্টিবর্ষণ বন্ধ করে দেয়া হয়। পৃথিবীর বুকে যদি কোনো চতুষ্পদ জন্তু না থাকত, তাহলে আর কখনো বৃষ্টি হতো না।’ (ইবনে মাজাহ-৪০১৯)

উপসংহার
রিয্ক নিয়ে মানুষ খুব বেশি দুশ্চিন্তায় ভোগে। এটি একটি মনোরোগ। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন- ‘তোমার প্রতিপালকের রহমত কি তারা বণ্টন করে (যে তাদের মর্জিমতো কুরআন নাজিল করতে হবে)! (অথচ) পার্থিব জীবনে তাদের মাঝে তাদের জীবিকা আমিই বণ্টন করে থাকি এবং মর্যাদায় একজনকে অন্যজনের ওপর উন্নত করে থাকি, যাতে করে তারা একে অপরের সহায়তা গ্রহণ করতে পারে। তারা যা সঞ্চয় করে, তোমার প্রতিপালকের রহমত তা থেকে উত্তম।’ (সূরা জুখরুফ, আয়াত-৩২) ‘আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি অতিশয় দয়ালু। তিনি যাকে ইচ্ছা রিয্ক দান করেন। তিনি মহাশক্তিধর, মহাপরাক্রমশালী।’ (সূরা শূরা, আয়াত-১৯) ‘আল্লাহ জীবনোপকরণে তোমাদের একজনকে অন্যজনের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। যাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয়েছে তারা তাদের অধীনস্থ দাস-দাসীদেরকে নিজেদের জীবনোপকরণ থেকে এমন কিছু দেয় না যাতে তারা এ বিষয়ে সমান হয়ে যায়; তাহলে কি তারা আল্লাহর অনুগ্রহ অস্বীকার করে?’ (সূরা নাহল, আয়াত-৭১)

‘আল্লাহ তোমাদের হতেই তোমাদের জোড়া সৃষ্টি করেছেন, আর তোমাদের যুগল থেকে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য পুত্র-পৌত্রাদি এবং উত্তম জীবনোপকরণ দান করেছেন। তবুও কি তারা বাতিল বিষয়ে বিশ্বাস করবে আর আল্লাহর অনুগ্রহ অস্বীকার করবে?’ (সূরা নাহল, আয়াত-৭২) ‘হে মানুষ! তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহের কথা স্মরণ করো। তিনি ছাড়া কোনো সৃষ্টিকর্তা আছে কি, যে তোমাদেরকে আকাশ ও জমিন থেকে রিজিক দান করে? বস্তুত তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তাহলে কিভাবে তোমরা বিপথগামী হচ্ছ?’ (সূরা ফাতির, আয়াত-৩) ‘তোমরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে প্রতিমার পূজা করছ আর মিথ্যা উদ্ভাবন করছ। আল্লাহকে বাদ দিয়ে তোমরা যেগুলোর পূজা করছ তারা তোমাদেরকে রিয্ক দানের কোনো ক্ষমতা রাখে না, কাজেই তোমরা আল্লাহর কাছে রিয্ক তালাশ করো, আর তাঁরই ইবাদত করো, আর তাঁরই প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো, তোমাদেরকে তাঁরই দিকে ফিরিয়ে নেয়া হবে।’ (সূরা আনকাবুত-১৭)

হজরত ঈসা ইবনু মারইয়াম বলেছিলেন, ‘হে আল্লাহ! হে আমাদের রব, আমাদের কাছে আসমান থেকে খাদ্যভর্তি দস্তরখান প্রেরণ করুন যা আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সবার জন্য আনন্দের ব্যাপার হবে, আর হবে তোমার থেকে একটি নিদর্শন। আর আমাদেরকে জীবিকা দান করুন, (কারণ) আপনিই সর্বোত্তম রিয্কদাতা।’ (সূরা মায়িদাহ-১১৪)
আল্লাহর রাসূল সা: বলেন, ‘আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা সব রূহ সৃষ্টি করার পর তাদের জীবন ও রিয্ক লিখে রেখেছেন।’ (সুনানে তিরমিজি-২১৪৩)

আবদান (রহ:) সূত্রে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহকে জিজিয়া আনার জন্য বাহরাইন পাঠান। ... আবু উবায়দা রা: বাহরাইন থেকে মাল নিয়ে এসে পৌঁছালে আনসাররা তার আগমনের সংবাদ পেয়ে সবাই রাসূলুল্লাহ সা:-এর সাথে ফজরের নামাজ আদায় করার উদ্দেশ্যে উপস্থিত হলেন। নামাজ শেষে রাসূলুল্লাহ সা: তাদেরকে দেখে মুচকি হেসে বললেন, আমার মনে হয় আবু উবায়দা কিছু মাল নিয়ে এসেছে বলে তোমরা শুনতে পেয়েছ। তারা সবাই বললেন, হ্যাঁ, ইয়া রাসূলুল্লাহ! তিনি বললেন, সুসংবাদ গ্রহণ করো এবং তোমাদের খুশির বিষয়ে আশায় থাকো। আল্লাহর কসম, আমি তোমাদের জন্য দারিদ্র্যের আশঙ্কা করি না; বরং আমি আশঙ্কা করি তোমাদের কাছে দুনিয়ার প্রাচুর্য এসে যাবে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের কাছে এসেছিল। তখন তোমরা তা লাভ করতে পরস্পরে প্রতিযোগিতা করবে যেমনভাবে তারা করেছিল। আর এ ধনসম্পদ তাদেরকে যেমনিভাবে ধ্বংস করেছিল তোমাদেরকেও তেমনিভাবে ধ্বংস করে দেবে।’ (বুখারি-৩৭২৪)

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা: বলেন, আল্লাহ তায়ালা তোমাদের মধ্যে চরিত্র বণ্টন করেছেন, যেভাবে তোমাদের মধ্যে রিয্ক বণ্টন করেছেন। আল্লাহ যাকে ভালোবাসেন এবং যাকে ভালোবাসেন না তাদের সবাইকেই সম্পদ দান করেছেন; কিন্তু তিনি ঈমান দান করেছেন কেবল তাদেরকে যাদেরকে তিনি ভালোবাসেন। (আবু দাউদ, হাকিম, আদাবুল মুফরাদ ২৭৫)
ইমাম ইবনুল কাইয়িম (রহ:) বলেন, ‘রিয্ক ও জীবন’ দুটো যেন একটি মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। কারণ, দুটোই নিশ্চিত। যতক্ষণ আপনি জীবিত আছেন, রিয্ক আসবেই। একটি দরজা যদি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে জেনে রাখুন সেটি আল্লাহর প্রজ্ঞা। কারণ, আরেকটি দরজা ঠিকই খুলে যাবে তাঁর রহমতস্বরূপ। পুরস্কার হিসেবে যেটা কিনা আরো বড় হতে পারে।’

সূত্র: নিয়াজ মাখদুম শিবলী

No comments:

Post a Comment