Tuesday, May 29, 2018

নদী থেকে নেয়ে আসা হাতি আর কাদামাখা কদাকার শুয়োরের গল্প


বড়সড় একটা হাতি নদীতে গোসল সেরে তার মালিকের বাড়ীর পথে যাচ্ছিল। একটা সাঁকোর কাছে আসার পর সে দেখলো বিপরীত দিক থেকে একটা কাদামাখা কদাকার শুয়োর আসছে। হাতিটি একপাশে সরে গিয়ে কাদামাখা কদাকার শুয়োরটার জন্য পথ করে দেয়। আর হাতিও তার পথে যেতে থাকে। ডেরায় ফেরার পর কাদামাখা কদাকার শুয়োর তার বন্ধুদেরকে মজা করে বললো “দ্যাখ আমি কত্ত বড়। একটা বড় হাতিও “ভয়ে” আমাকে পথ ছেড়ে দেয়, হা হা হা।”
এটা শুনে হাতির বন্ধুরা বেশ অস্বস্তি বোধ করে। ওরা কাদামাখা কদাকার শুয়োরের কথার একা সমুচিত জবাব চায়। তারা চেচিঁয়ে বল্লো আমরা কি এতই ভীতু?
সদ্য নাইয়ে আসা হাতিটি মুচকী হেসে বন্ধুদেরকে বল্লো, “দ্যাখ বন্ধুরা, পুঁচকে কাদামাখা কদাকার শুয়োরকে পায়ের তলায় পিষে মারা আমার পক্ষে কোন ব্যাপারই ছিল না। কিন্তু আমিতো গোসল করে এসেছি আর ও ছিল নিতান্তই অপরিষ্কার, অপরিচ্ছন্ন। আর ওকে পায়ের তলায় পিষে দিলে আমার পা ৪টিও অপরিষ্কার, অপরিচ্ছন্ন হতো, তাই না? তাই আমি আস্তে এক পাশে সরে গিয়ে ওর জন্য পথ করে দিয়েছি। এটা ছিল আমার পজিটিভ মনেরই উপস্থিতি, তাইনা। হাতির বন্ধুরা ইতিবাচক মাথা নোয়ালো।   
সারমর্মঃ আমরা যেনো “নেগেটিভ” মনের ভয়ে কখনোই না থাকি আর নোংরা অপবিত্রতাকে সব সময়ই দূরে রাখি। নোংরা, অপবিত্ররা কী কমেন্ট করলো, ভঙ্গীতে কমেন্ট করলো সেটা আমাদের গায়ে মাখার কী দরকার!
জীবনে কোন “ড্রামা” করার দরকার নেই-সামনে এগিয়ে যাও।   

“উত্তম নিশ্চিন্তে চলে অধমের সাথে,
তিনিই মধ্যম যিনি চলেন তফাতে।
-রবীন্দ্রনাথ

“কুকুর আসিয়া এমন কামড়
দিল পথিকের পায়
কামড়ের চোটে বিষদাঁত ফুটে
বিষ লেগে গেল তাই।
ঘরে ফিরে এসে রাত্রে বেচারা
বিষম ব্যথায় জাগে,
মেয়েটি তাহার তারি সাথে হায়
জাগে শিয়রের আগে।
বাপেরে সে বলে ভর্তসনা ছলে
কপালে রাখিয়া হাত,
তুমি কেন বাবা, ছেড়ে দিলে তারে
তোমার কি নাই দাতঁ?
কষ্টে হাসিয়া আর্ত কহিল
“তুই রে হাসালি মোরে,
দাঁত আছে বলে কুকুরের পায়ে
দংশি কেমন করে?”
কুকুরের কাজ কুকুর করেছে
কামড় দিয়েছে পায়,
তা বলে কুকুরে কামড়ানো কি রে
মানুষের শোভা পায়?”
-শেখ সা’দী

Friday, May 25, 2018

জিভের আপদ-Problems with Tongue! A Religious approach


৫ম কিস্তি
মানুষের আসল পরিচয় লুকিয়ে থাকে তারই রসনায়  
অতি বলায় যে অভ্যাসী, সাধারনতঃ সে মিথ্যা বেশী বলে কবি বলেন, “কহে সে বিস্তর মিছা যে কহে বিস্তর
যেমন, যে নিজের বড়াই করে সে অধিকাংশ সময় আতিরঞ্জন করে
আল্লাহ তায়ালা তোমার জন্য একটি মাত্র জিহ্বা আর দুটি কান দিয়েছেন সুতরাং তোমার “কথন অপেক্ষা “শ্রবন বেশী হওয়াই বাঞ্ছনীয় তাই বিজ্ঞব্যক্তিরা বলেন, “লৌহ তরবারী অপেক্ষা বাক্ তরবারীর তীব্রতা অনেক বেশী
হযরত আলী(রা.) বলেন, “৪টি কাজ মূর্খের আচরণঃ . এমন লোকের অভিমান করা যে মানিয়ে নিতে পার না . এমন লোকের কাছে বসা যে তাকে কাছে টানতে পারে না . এমন লোকের কাছে অভাবের কথা বলা যে অভাব পূরণের ক্ষমতা রাখে না . এমন কথা বলা যা নিজের বিষয়ের ভেতর নয়
তাই বলা হয়, “বোবার শত্রæ নেই
“কোথা বা সে ভালবাসা,
কোথা বা সে প্রেম আবিলতা?
কাড়িয়া লইয়াছে সবি
সেই ব্যথা, সেই বল্গাহীন কথা

জিভের আপদ-Problems with Tongue! A Religious approach


৪র্থ কিস্তি
নীরবতা হলো বিনা কষ্টের ঈবাদত, বিনা অলঙ্কারের সৌন্দর্য, বিনা প্রতাপের প্রতিপত্তি নীরবতা পালনের কারণেই তুমি ওজর পেশ করার অমুখাপেক্ষী হবে আর তোমার সকল দোষ-ত্রæটি গোপন করতে সক্ষম হবে।’  
‘শরীরের ভেতরের দুটি মাংসপিন্ড হলো সর্বোত্তম আর তা হলো রসনা আর হৃদযন্ত্র আবার ওই দুটিই হলো সবচেয়ে নিকৃষ্টতম   কেবল মাত্র ২টি বিষয় বলো, . যা তোমার পার্থিব জীবনে উপকারী . যা পরকালের জন্য স্থায়ী
কোন একদিন কোন এক ভোজের নিমন্ত্রণে আগত মেহমানরা কোন এক ব্যক্তির নিন্দা গাইতে শুরু করলে এক জ্ঞানী মানুষ তাদের উদ্দেশ্যে বললেন, “আমাদের পর্বপুরুষরা ভোজের নিমন্ত্রণে এসে আগে রুটি খেয়ে পরে গোস্ত খেতেন কিন্তু আপনারা দেখছি রুটির আগেই গোস্ত খাওয়া শুরু করেছেন!
তিনটি কাজ করতে না পারলে তিনটি কাজ অবশ্যই ছেড়ে দাওঃ . কারো উপকার করতে না পারলে অপকার বা ক্ষতি করো না
. নেকী করতে না পারলে পাপ করো না
. (নফল) রোযা না করতে পারলে মাংস খেয়ো না(গীবত বা পরচর্চা) করো না
ইবনুল কাইয়্যেম (.) বলেন, আশ্চর্যের কথা এই যে, মানুষের পক্ষে হারাম খাবার থেকে দূরে থাকা, অত্যাচার করা, চুরি করা, মদ পান না করা আর অবৈধ দর্শন থেকে  নিজেকে সংযত রাখা সহজ, কিন্তু তার পক্ষে জিহ্বার স্পন্দন থেকে নিয়ন্ত্রন করা কঠিন এমনকি সমাজে এমন লোকও দেখা যায় দ্বীনদারী, পার্থিব অনাসক্তি আর পরহেজগারীতে প্রসিদ্ধ; কিন্তু সে আল্লার অসন্তুষ্টির জন্য এমন কথা বলে যার প্রতি সে খেয়ালই করে না এর কারণে পূর্ব পশ্চিম বরাবর তার পদস্খলন ঘটে যায় (আল জাওয়াবুল ক্কাফী)
পিছল কাটা ধরনের . পায়ের পিছল কাটা . জিভের পিছল কাটা
তাইতো পিছল কাটা নিয়ে সূরা আল ফুরক্কানের ৬৩ নং আয়াতে একত্রিতভাবে বিবৃত করা হয়েছে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “রহমানের বান্দারা আল্লাহর জমীনে নরমভাবে চলাফেরা করে এবং অজ্ঞ ব্যক্তিরা যখন তাদের সম্বোধন করে তখন তারা প্রশান্তভাবে জবাব দেয়
এই রসনা বা জিহ্বায় রয়েছে ২টি পরস্পর বিরোধী আপদ . অনর্থক কথা বলা . চুপ থাকা এর একটি থেকে রেহায় পাওয়া গেলেও আরেকটি থেকে রেহায় পাওয়া সুকঠিন বরং যথা সময়ে একটির থেকে অপরটি দিয়ে বৃহত্তর পাপ সংঘটিত হয়ে থাকে যেতেু (ফিতনার ভয় না থাকলে) যে হক কথা বলতে চুপ থাকে সে নির্বাক শয়তানের সমতূল্য পরন্তু সে আল্লাহর অবাধ্য, লোক প্রদর্শনকরী অথবা তোষামদকারী আর যে অন্যায় বাতিল কথা বলে সে সবাক শয়তান এবং আল্লাহর অবাধ্য 
৪টি জিনিস মুখমন্ডলকে বিবর্ণ করে . মিথ্যা কথা বলা . প্রগ্লভতা . বিনা প্রয়োজনে বেশী প্রশ্ন  করা . বিনা কারণে বেশী কথা বলা
মিতভাষী, মিতাচারী, মিতাহারী, মিতব্যয়ী কোনদিন লাঞ্ছিত বা অভাবগ্রস্ত হয় না
ওমর ইবনে আবদুল আযীয বলেন, “হৃদয় হলো রহস্যের সিন্দুক, ওষ্ঠাধার তার তালা, রসনা হলো তার চাবী আর তাই সবারই উচি নিজের গোপন রহস্যের চাবিটি হেফাজত রাখা