৩য় কিস্তি
যারা বিষ-জিহ্বা দিয়ে মুসলিমদেরকে দংশন করে এবং বাক্যবাণ হেনে তাদের হৃদয়কে ক্ষত-বিক্ষত করে তাদের উদ্দেশ্যে রাসুল(সা.) বলেন, ‘হে মুনাফেকের দল, যারা মুখে মুসলমান হয়েছো আর যাদের অন্তরে এখনো ঈমান ঢোকেনি তারা শোন, তোমরা মুসলমানদেরকে কষ্ট দিও না, তাদের লাঞ্ছিত করো না আর তাদের ছিদ্র অন্বে^ষণ করো না। যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের ছিদ্র অন্বে^ষণ করে, আল্লাহ তার ছিদ্র অন্বে^ষণকরেন। আর আল্লাহ যার ছিদ্র অন্বে^ষণ করেন, তাকে তিনি চরম অপদস্থ করেন সে যদিও সে ঘরের ভেতরে থাকে।’ (সহীহুল জামে’ নং ৭৮৬২)
কোন বিষয় নিয়ে বেশী, অমূলক এবং অনর্থক বাদ-প্রতিবাদ, কী ও কেন বা চূল-চেরা কৈফিয়ত তলব করা আল্লাহ পছন্দ করেন না। মুজতাবা (রা.) বলেন, আল্লাহ তোমাদের ওপর মায়ের অবাধ্য হওয়া কন্যা সন্তানকে জীবিত পুঁতে ফেলা, কারো অধিকারে বাধা দেয়া এবং অনধিকার কিছু দাবী করাকে হারাম করেছেন। আর তিনি তোমাদের জন্য অনর্থক পরের কথা চর্চা, অনর্থক অধিক প্রশ্ন করা এবং অনর্থক অর্থ নষ্ট করাকে অপছন্দ করেছেন।’
(বুখারী ও মুসলিম)
যারা নিজের জিহ্বায় লাগাম দেয় না এবং বাক সংযম করে না তারা ক্কিয়ামতের দিন আল্লাহর রাসুল (সা.) বহু দূরে থাকবে। এই সব মানুষেরা আল্লাহর রাসুলের(সা.) এর কাছে সবচেয়ে ঘৃণিত হবে। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, তোমাদের ভেতর থেকে আমার কাছে অধিক প্রিয় ও ক্কিয়ামতের দিন আমার সবচেয়ে কাছে অবস্থানকারী হবে সেই ব্যক্তি যে সদাচরণে তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম। তোমাদের মধ্যে থেকে আমার কাছে অধিক ঘৃন্য ও ক্কিয়ামতের দিন আমার সবচেয়ে দূরে অবস্থানকারী হবে তারা যারা বেশী বথা বলে, যারা অত্যুক্তি করে মানুষকে খোঁচা মারে আর যারা অহংকার ভরে মুখে লম্বা লম্বা কথা বলে।’
(সহীহুল জামে’ নং ২১৯৭ )
অনর্থক বাদ-প্রতিবাদের কারণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপকারী বস্তু লাভ থেকে মানুষ বঞ্চিত হয়ে যায়। একবার দুই সাহাবীর বাদ-প্রতিবাদের কারণে শবে ক্কদরের সঠিক রাত কোন তারিখে তা রাসুল (সা.)কে বিস্মিত করেছিল। (সহীহুল জামে’ নং ৩২২)
জিহ্বা যে কত ভয়ানক ও বিপজ্জনক অঙ্গ এবং কত যে উপকারী ও মূল্যবান অঙ্গ সে সম্পর্কে সালফে সালেহীনগণ বহু জ্ঞানী উক্তি দিয়ে গেছেন। যেমন কুস বিন সায়েদাহ্ এবং আক্করাম বিন সাঈফী একে অপরকে বল্লেন, আদম সন্তনদের ভেতরে আপনি কতগুলি ত্রæটি পেয়েছেন? বল্লেন অগণিত! তবে আমি যা গুনেছি তার সংখ্যা হলো ৮ হাজার। আর ওরই ভেতর এমন একটি গুন পেয়েছি তা যদি অদম সন্তান ব্যবহার করে তা হলে তার সমস্ত ত্রæটি গোপন করে নিতে পারে! অপরজন বল্লেন, তা কী? বল্লেন, বাক্ সংযম।
ঈমাম শাফেয়ী (র.) রাবীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, হে রাবী! অনর্থক কথা বলো না। কারন, তোমার বলে ফেলা কথা তোমাকে বশীভূত করে ফেলে আর তুমি তা নিয়ন্ত্রন করতে পারো না।’
আবুল কাসেম কুরাঈশী বলেন, বাকসংযম হলো নিরাপত্তা দানকারী আর সেইটাই হলো মূল। যথা সময়ে নীরব থাকা পুরুষের গুণ যেমন যথাস্থানে কথা বলাও একটি সদ্গুণ।’ আমি আবু আলী দাক্কাকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি ন্যায্য কথা বলতে চুপ থাকে, সেহলো বোবা শয়তান।’
অনেকে বলেছেন, তোমার জিহ্বাকে সংযত রাখো হে মানুষ! তা যেন তোমাকে দংশন করে না ফেলে। কারণ, জিহ্বা হলো এক ধরনের অজগর সাপ। কবরস্থানে কত জিহ্বাদৃষ্ট মানুষ পড়ে অছে যাদেরকে বীর্যবান পুরুষেরাও ভয় করতো।’
‘মুনাফেক্কের কথা বেশী কাজ কম আর মু’মিনের কথা কম কাজ বেশী।’ ছোঁড়া ঢিল যেমন ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়, তেমনি বলা কথাও ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।’
জ্ঞানীর জিহ্বা থাকে তার হৃদয়ের পেছনে। তাই জ্ঞানী যখন কথা বলে তখনে সে হৃদয়ের পরামর্শ নেয়। যদি তা বলা উপকারী হয়, তবেই সে বলে নচেত নয়। আর মূর্খের হৃদয় থাকে তার জিভের আগায়। সে কথা বলার আগে হৃদয়ের কাছে পরামর্শ নেয় না। মুখে যা আসে তা ই বলে ফেলে।’ জ্ঞানী মানুষেরা বলেন, ‘ নীরব থেকে কোনদিনই লাঞ্ছিত হই নি, কিন্তু কথা বলে বহুবারই লাঞ্ছিত হয়েছি। পা পিছলে গিয়ে মানুষ মারা যায় না, কিন্তু জিভ্ পিছলে অনেকেই মারা যায়।’
No comments:
Post a Comment