Friday, May 25, 2018

জিভের আপদ-Problems with Tongue! A Religious approach


২য় কিস্তি
প্রত্যেক দিন ভোরবেলা আদম সন্তানের সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জিভকে বিনয়ের সাথে বলে, “আমাদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো যেহেতু আমরা তোমার অনুবর্তী সুতরাং তুমি সোজা হলে আমরাও সোজা হই আর তুমি বাঁকা হলে আমরাও বাঁকা হয়ে যাই (সহীহুল জামে নং ৩৪৯নং)
“তোমার জিভ্ দিয়ে ভাল ছাড়া অন্য কথা বলোনা আর ভাল ছাড়া অন্য জিনিসের প্রতি হাত বাড়িয়ো না (সিলসিলাহুল সহীহাহ্ ১৫৬০)
“তোমরা অশ্লীল কথা বলো না (সহীহুল জামে নং ২৪৭০নং)
একদিন আবদুল্লাহ সাফা পর্বতে চড়ে বললেন, “রে জিভ্! ভাল কথা বল সফলতা পাবি চুপ থাক, লাঞ্ছিত হওয়ার আগেই নিরপত্তা পাবি লোকেরা বল্লো, হে আবু আবদুর রহমান, একথা আপনি নিজে বলছেন নাকি কারো কাছে শুনেছেন? তিনি বল্লেন, না, বরং আমি রাসুল (সা.)কে বলতে শুনেছি তিনি বলেছেন, “আদম সন্তানের অধিকাংশ পাপ তার জিভ্ থেকেই সংঘটিত হয় (সহীহুল জামে নং ৫৩৪)
সুতরাং মিতভাষিতা মানব সন্তান তথা মু’মিনের এক অমূল্য সদ্গুণ জিভ নিয়ন্ত্রনে আল্লাহ তাঁর রাসুলের প্রেম লাভ সম্ভব হয় জনপ্রিয় হয় মানুষের ব্যবহার চরিত্র পাপ কমে যায় মানুষের সাথে তার সম্পর্ক সুন্দর, সুদৃঢ় এবং মধুর থাকে ঝামেলা, ঝঞ্ঝাট, তিরষ্কার এবং অশান্তি থেকে তার শরীর-হৃদয় নিরাপদে শান্তি লাভ করে থাকে
কিন্তু বাক্ সংযম খুব সহজ কোন কিছু নয় জিহ্বা এমন এক মন্দ প্রবণ ইন্দ্রিয় যাকে দমন কার এক বড় ধরনের জিহাদ জন্যই রাসুল (সা.) বলেছেন, “মুসলমানদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি কে? তিনি বললেন, “যে ব্যক্তির জিভ্ হাত থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকেপরন্তু কু-প্রবৃত্তির সাথে জিহ্বার সম্পর্ক খুবই ঘনিষ্ঠ আস্বাদন, লালসা, এবং বাচনভঙ্গির আগুনের দহন এই অঙ্গে একত্রিত লোহার তরবারীর আঘাত বা তীরের যখমের উপশম আছে কিন্তু কথার তরবারীর আর কথার তীরের আঘাতের কোন উপশম নাই লোহার তরবারীর আঘাত বা তীরের যখমের ব্যান্ডেজ আছে, আছে ওষুধ কিন্তু কথার তরবারীর আর কথার তীরের আঘাতের কোন ব্যান্ডেজ নাই, নাই কোনও ওষুধ একারণেই শরীরের আঘাতের ওষুধ আছে কিন্তু মনের আঘাতের কোনও ওষুধ নাই মন ভাঙলে আর জোড়া লাগেনা সুতরাং শত্রæকে দমন করা জিহাদ বৈ কি? আর জিহ্বা মনের খেয়ার-খুশীমত পরিচালিত হয়- তাই
মুজাহিদ তো সে যে আল্লাহর সন্তুষ্টিতে নিজের আত্মার বিরুদ্ধে জিহাদ করে (সহীহুল জামেনং ৬৫৫৫)
নিজ আত্মা আর কুপ্রবৃত্তির বিরুদ্ধে জিহাদ করাই হলো মানুষের সবচেয়ে বড় জিহাদ (সহীহুল জামে নং ১১১০)
ইসলামের দিক থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ মু’মিন হলো সেই ব্যক্তি যার জিভ হাত থেকে অন্য মুসলমানরা নিরাপদ থাকে ঈমানের দিক থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ মু’মিন হলো সেই ব্যক্তি যার চরিত্র সবচেয়ে সুন্দর শ্রেষ্ঠ মুহাজির (হিজরতকারী বা আল্লাহর জন্য স্বদেশত্যাগী) সেই ব্যক্তি যে আল্লাহর নিষিদ্ধ করা জিনিষগুলোকে ত্যাগ করে আর শ্রেষ্ঠ জিহাদ সেই ব্যক্তির যে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজের মনের বিরুদ্ধে জিহাদ করে (সহীহুল জামে’ নং ১১৪০) 
যেহেতু আত্মা দেহের পাওয়ার হাউজ, তাই আত্মার বিরুদ্ধে জিহাদ করলে জিভকে দমন বা নিয়ন্ত্রন করা যায় সকল ধরনের মন্দ থেকে নিষ্কৃতি লাভ করা যায় কারণ, “মানুষের মনতো মন্দ কাজে প্ররোচিত করেই।” (সূরা ইউসুফ আয়াত ৫৩)
মানুষের কাছ থেকে সান্তনার আশা করা যায় তার জিভের মাধ্যমে আবার বেশী ভয়ও হয় তা জিভকেই তাইতো রাসুল (সা.) মানুষের জন্য তার জিবকেই বেশী ভয়ংকর হিসেবে চিহ্নিত করেছেন জিভ মানুষের দেহের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ অঙ্গ হলেও সবচেয়ে নিকৃষ্ট অঙ্গ ওই জিভই এই জিভ যেনো অমঙ্গল “কু”র কারখানা নয়কে ছয় ছয়কে নয় করতে জিভের সাহায্য নেয়া হয়ে বাগাড়ম্বর জিভের জোরে মিথ্যাকে সত্য সত্যকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা হয় তাইতো যাদের কথা কম কাজ বেশী এমন অকর্মণ্য বাকপটু বাচলরা সমাজে ঘৃন্য হয়, যদিও সে জিভের বলে দিনকে রাত করে জয়ী হয় আল্লাহর রাসুল(সা.) এমন লোককে উম্মতের জন্য “ভয়াবহ” বলে গণ্য করেছেন আল্লাহর রাসুল(সা.) বলেছেন, আমি আমার উম্মতের ওপর জিভের জ্ঞানী বা পন্ডিত মুনাফেকদেরকে বেশী ভয় করি (মুসনাদে আহমাদ /২২,৪৪)
যেহেতু এমন কপট আলেম বাড়াড়ম্বরে বেশী পটু হয়, যুক্তি প্রমাণে দক্ষ হয়, বাতিলকে শোভন করে মানুষের মন লুটতে পারদর্শী হয় আর এভবেই সে বাকপটু থেকে গণপতি বনে যায় তাই এসব লোকের করণে মানুষ ধোঁকায় পড়ে বাতিলকে গ্রহণ করে
প্রয়োজন অনুপাতে যথা পরিমাণে থা বলতে, উপকার ব্যতীত অন্য বিষয়ে মুখ না খুলতে, বাক্যবাণ দিয়ে অন্যের মনকে ব্যথিত না করতে এবং যেখানে সেখানে অযথা জিভকে ব্যবহার না করতে রাসুল (সা.) বহু নির্দেশ দিয়েছেন তিনি বলেন, “সুসংবাদ সেই ব্যক্তির জন্য যে তার জিভকে বশীভূত রাখে, নিজের ঘরে থাকে আর নিজের করা পাপের ওপর কান্না করে(সহীহুল জামে নং ৩৯২৯) 
কোন বান্দার ঈমান দুরস্ত হয় না যতক্ষণ পর্যন্ত না তার হৃদয় দুরস্ত হয় আর হৃদয়ও দুরস্ত হয় না যতক্ষণ পর্যন্ত না তার জিহ্বা দুরস্ত হয় আর সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না যার প্রতিবেশী তার অনিষ্ট থেকে নিরাপত্তা না পায়
আদম সন্তানের প্রত্যেক কথাই তার জন্য অপকারী সত কাজের আদেশ দেয়া মন্দ কাজের বাধা দেয়া এবং আল্লাহর জি্কির (স্মরণ) ছাড়া অন্য কোন কথা তার জন্য উপকারী নয় (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ্)
ইবনে মাসউদ রাসুল (সা.)কে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, সবচেয়ে ভাল আমল কি? তিনি বললেন, “যথা সময়ে সালাত আদায় করা তার পর জিজ্ঞাসা করেন এর পর কি? তিনি বললেন, “অন্য লোকদেরকে তোমার জিহ্বা থেকে নিরাপদ রাখা (ত্বাবারানী)       
জান্নাতে প্রবেশ করায় এমন আমলের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, “প্রাণ মুক্ত করো, ক্রীতদাস স্বাধীন করো তাতে যদি তুমি সক্ষম না হও, তাহলে ক্ষুধার্তকে অন্ন দাও, পিপাসার্তকে পানি পান করাও, সতকাজে আদেশ দাও অসত কাজে বাধা দাও এসব যদি না পারো তবে ভাল ছাড়া অন্য কথা থেকে নিজের জিহ্বা সংযত রাখো (আহমাদ, ইবনে হিব্বান, বাইহাকী)
মুয়াজ (রা.) বলেন, হে আল্লাহর রাসুল(সা.) আমাক উপদেশ দিন আল্লাহর রাসুল(সা.) বললেন, “এমনভাবে আল্লাহর ঈবাদত করো যেন তুমি তাঁকে দেখছো এবং তুমি নিজেকে মৃত মানুষদের ভেতরে গণ্য করো আর যদি চাও তবে তোমাকে এমন কাজের কথা বলবো যা তোমার কাছে সবের চেয়ে অনেক বেশী সহজসাধ্য মনে হবে তারপর তিনি নিজ হাত দিয়ে নিজের জিভের প্রতি ঈঙ্গিত করে বললেন, “এটা সংযত রাখো(ইবনে আবিদ দুনিয়া)
তিনি আরো বললেন, “যে চুপ থাকে, সে পরিত্রাণ পায় (সহীহ্ তিরমিযী নং ২০৩১)
ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, “তাঁর কসম যিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নাই! জিভ ছাড়া ভূপৃষ্ঠে এমন কোন বস্তু নাই যাকে দীর্ঘ সময় কারাবদ্ধ তথা সংযত রাখার দরকার হয় (ইবনে আবী শাইবাহ্ নং ২৬৪৯০)
ইবনে উমার বলেন, মুসলিমদের সবচেয়ে পবিত্র আর সংশোধনযোগ্য অঙ্গ হলো তাদে জিহ্বা (ইবনে আবী শাইবাহ্ নং ২৬৪৯০)
বাজে মন্দ কথা এবং কাজ থেকে বিরত থাকা মুসলিমদের জন্য সাদাকাহ্ স্ব^রুপ রাসুল (সা.) বলেন, সকল মুসলিমের ওপর সাদাকাহ্ করার দায়িত্ব আছে যদি তারা সাদাকাহ্ করার কিছু না পায়, তবে সে নিজের হাতে কাজ করে উপকার করবে এবং থেকে সাদাকাহ্ করবে তাতেও যদি অক্ষম হয় তবে সে অভাবীকে সাহায্য করবে তাতেও যদি অক্ষম হয় তবে সে সত কাজ করবে  তাতেও যদি অক্ষম হয় তবে সে মন্দ কাজ খেকে বিরত থাকবে আর এটাই তার জন্য সাদাকাহ্(বুখারী মুসলিম)
গর্হিত অশ্লীল কথা থেকে নিবৃত্ত হওয়া রোযার এক মহান উদ্দেশ্য এমনকি কেউ যদি রোজাদারকে গালি দেয় অর তার সাধে বৃথা ঝগড়া করতে চায় তা হলে রোজাদার মুখ থেকে প্রতিশোধমূলক কোন কথা বের করতে পারেনা কারণ, এতে রোযার মান মর্যাদা বিনষ্ট হয়  রাসুল(সা.) বলেন,  কেবল পানাহার থেকে বিরত থাকার নামই রোযা নয়, রোযা হচ্ছে অসার, বাজে অশ্লীল কথা থেকে বিরত থাকার নাম যদি কেউ তোমাকে গালি দেয় বা কেউ যদি মূর্খতায় লেগে যায় তবে তাকে বল আমি রোযা রেখেছি (সহীহুল জামে নং ৫২৫২) 

No comments:

Post a Comment