তেল
ছাড়া কি জীবন চলে! পন্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী বলেছেন, তৈলের মহিমা অতি অপরূপ। তৈল
নহিলে জগতের কোন কাজ সিদ্ধ হয় না। তৈল নহিলে কল চলে না, প্রদীপ জ্বলে না, ব্যঞ্জন
সুস্বাদু হয় না, চেহেরা খোলে না, হাজার গুন থাকুক তাহার পরিচয় পাওয়া যায় না, তৈল
থাকিলে তাহার কিছুরই অভাব থাকে না।
ভাজাপোড়া ছাড়াও পোলাও বা খিচুড়ি রাঁধতেও তেল লাগে। তাই এই জিনিসটি
স্বাস্থ্যকর না হলে বিপদ। অপচয় রোধ করতে গিয়ে অনেকেই তেল পুনর্ব্যবহার করে। এতে
তেলের স্বাস্থ্যগুণ নষ্ট হয়। আবার পুনর্ব্যবহারের কিছু উপায়ও আছে। এসব নিয়েই স্বাস্থ্যযত্নের
খাঁটি কথা আজকেঃ
তেলের
পুনর্ব্যবহারে যা ঘটে
কড়া ভাজার পর ওই তেল আবারও ব্যবহার করলে দূষণ ঘটে। এতে ইনফ্লামেশন এবং
পরিণামে আপনি রোগাক্রান্ত হতে পারেন । দূষিত উপাদানগুলো দেহের সুস্থ কোষে প্রবেশ
করে। ফলে ক্রমেই নানা ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দিতে থাকে। এসব দূষণ
সৃষ্টিকারী উপাদান অনেক সময়ই ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। অ্যাথেরোসক্লেরোসিস বা
ধমনী শক্ত হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। ফলে দেহে ক্ষতিকর এলডিএল বা খারাপ কোলেস্টেরলের
মাত্রা বৃদ্ধি পায় আর রক্তবাহী শিরা-উপশিরায় সুষ্ঠু রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়।
তেলের
পুনর্ব্যবহারে আরো আছে রোগের ভয়াবহ শঙ্কা
একই তেলে বারবার রান্না করা হলে আরো বেশ কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর
মধ্যে আছে এসিডিটি, হৃদরোগ, আলঝেইমার্স, পারকিনসন্স এবং কণ্ঠনালিতে অসুবিধা দেখা
দিতে পারে। কড়া ভাজার পর ওই তেল দ্বিতীয়বার না ব্যবহার করাই ভালো। তবে কিছু
ক্ষেত্রে করা যায়। এটা নির্ভর করে আপনি কোন ধরনের তেল দিয়ে রান্না করছেন। কিংবা
একে কতটা তাপে উত্তপ্ত করা হয়েছে তা-ও গুরুত্বপূর্ণ। আবার আপনি কোন ধরনের খাবার
রান্না করছেন, সেখানেও কঠোর হিসাব-নিকাশ আছে।
তেলের
পুনর্ব্যবহারে কিছু বিষয় খেয়াল রাখুন
চাইলেই কিন্তু একবার রান্না শেষে বেশ পরিমাণ তেল ফেলে দেওয়া ঠিক নয়। এতে
যথেষ্ট অপচয় করা হয়। তাই প্রায় সময়ই তেল একাধিকবার ব্যবহার করতে হয়। আর যদি তা
স্বাস্থ্যসম্মতভাবে করতে হয় তবে কিছু বিষয় মেনে চলতে হবে। যেমন বেঁচে যাওয়া
তেলটুকু প্রথমেই ঠাণ্ডা করে নিতে হবে। তারপর এটা বাতাস প্রবেশ করতে পারে না, এমন কঁচের
বোতলে সংরক্ষণ করতে হবে। এতে করে যেসব খাদ্যকণা তেলে রয়ে গেছে সেগুলো তেলকে খুব
বেশি নষ্ট করতে পারবে না। তেল একবার ব্যবহারের পর এর ঘনত্ব ও রং খেয়াল করুন। যদি
এর রং বেশ গাঢ় হয়ে যায়, পিচ্ছিল গ্রিজের মতো হয় এবং তুলনামূলক বেশি ঘন হয়ে থাকে
তবে দেরী না করে ফেলে দিন। সব থেকে ভাল তেল বার বার ব্যবহার না করা। আমরা আমাদের
শিক্ষাকে বাস্তবে কাজে লাগাই। এসব কাজে আল্লাহ পাকের কাছ থেকেও ছাড় পাবার কোনই
সুযোগ নেই।
পোড়া তেল ফ্রি-রেডিকলের খনি-আর
ফ্রি-রেডিকল অসুস্থতা তৈরীর খনি।
“Old oil
is a harbour for free radicals. It is important to note that cooking oil should
be used only once. Ref:
http://www.monitor.co.ug
The consequences of heating cooking oils
extend far beyond the immediate risk of burns by splattering hot oil. All oils
can withstand varying levels of heat. If that level is exceeded, the oil not
only begins to lose its nutritional value and flavor, it produces toxic fumes
and hazardous substances called free radicals. Heated cooking oil is considered
unsafe when it reaches its smoking point -- the temperature at which it begins
to chemically breakdown and smoke continuously. At this point, the fat
molecules break down into glycerol and free-fatty acids, and the glycerol
breaks down further to produce toxic fumes and free radicals -- not to mention
an unpleasant flavor.
এক বিজ্ঞজন আমাকে অনেক দিন আগে বলেছিলন যখন ভাল এক হোটেল থেকে খেয়ে
ফিরছিলাম। উনি বল্লেন, জানেন হোটেলের ২টো জিনিস শেষ হয়না কখনো। ১. ভাত আর ২. তেল।
এ ২টোই রি-সাইকল হয়। নিয়ত। প্রত্যেকদিন। তাই হোটেল যত দিনের পুরোনো ভাত আর তেল ও
ততদিনের রি-সাইকল করা। কত ধরনের মুখরোচক খাবার আমরা রি-সাইকল করা তেলে নিত্যদিনই
খাচ্ছি তার হিসাব আমরা কষছিনা। যখন অসুস্থ হই তখনও এর খবর আমরা রাখছিনা। অুসুস্থ
অবস্থায় সিঙ্গাড়া খেতে চাইলেন, হোটেল থেকে এলো রি-সাইকল করা তেলে ভাজা সেই প্রিয়
সিঙ্গাড়টি। ওই বিজ্ঞজনের কথাটা শুনে আমি অনেক ভীত হয়ে পড়েছিলাম। হেটেলে কালেভদ্রে
খাওয়াও বাদ দিয়েছি। আমরা নামী দামী যত হোটেলই দেখিনা বা শুনিনা কেন, তাদের কিচেনের
খবর আমরা জানিনা। হয়তো শোনা যাবে এসব
হোটেলের মালিকরা আল্লাহর কাছে হাত তুলে বলছেন, “আমায় দিয়ে কারো ক্ষতি হয়না যেন দুনিয়ায়,
আমি কারো ভয় না করি, মোরেও কেউ ভয় না পায়!” কিন্তু কিভাবে তারা ক্ষতি করে চলেছেন
তার খবর হয়তো তারাও নেন না লাভ বা মুনাফার আশায়। কিন্তু আহ্ক্কামুল হাকীমিন আল্লাহ
এসব কিছুর খবর অবশ্যই সঠিকভাবে জানতে চাইবেন শেষ বিচারের দিন। এতে কোনই ভুল নেই।
উপসংহারঃ
আবারো পন্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর কথাঃ সর্বশক্তিময় তৈল নানারূপে সমস্ত
পৃথিবী ব্যাপ্ত করিয়া আছেন। তৈলের যে মূর্তিতে আমরা গুরুজনকে স্নিগ্ধ করি, তাহার
নাম ভক্তি, যাহাতে গৃহিণীকে স্নিগ্ধ করি, তাহার নাম প্রণয়; যাহাতে প্রতিবেশীকে
স্নিগ্ধ করি,তাহার নাম মৈত্রী; যাহা দ্ধারা সমস্ত জগতকে স্নিগ্ধ করি, তাহার নাম
শিষ্টাচার ও সৌজন্য বা “ফিলনাথ্রপি।” যাহা দ্ধারা সাহেবকে স্নিগ্ধ করি তাহার নাম লয়ালটি;
যাহা দ্ধারা বড়লোককে স্নিগ্ধ করি, তাহার নাম নম্রতা বা মোডেষ্টি। চাকর বাকর
প্রভৃতিকেও আমরা তৈল দিয়া থাকি, তাহার পরিবর্তে ভক্তি বা যত্ন পাই। অনেকের নিকট
তৈল দিয়া তৈল বাহির করি। পরস্পর ঘর্ষিত হইলে সকল সকল বস্তুতেই অগ্ন্যুদ্গম হয়।
অগ্ন্যুদ্গম নিবারণের একমাত্র উপায় তৈল। এইজন্যই রেলের চাকায় তৈলের অনুকল্প চর্বি
দিয়া থাকে। এইজন্যই যখন দুজনে ঘোরতর বিবাদে লঙ্কাকাণ্ড উপস্থিত হয়, তখন রফা নামক
তৈল আসিয়া উভয় ঠাণ্ডা করিয়া দেয়। তৈলের যদি অগ্নিনিবারণী শক্তি না থাকিত, তবে গৃহে
গৃহে গ্রামে গ্রামে পিতাপুত্রে স্বামী-স্ত্রীতে রাজায়-প্রজায় বিবাগ বিসম্বাদে
নিরন্তর অগ্নিস্ফুলিঙ্গ নির্গত হইত।
কিন্তু আমরা অভাবের বা স্বচ্ছল সংসারে যদি বারংবার পোড়া তৈল দিয়া রাঁধিবার
জন্য গিন্নীকে নিয়ত চাপ দিতে থাকি তা হলে আর রক্ষে নেই। শরীর মহাশয় অচিরেই গোস্বা
করিবেন আর ফল স্বরুপ আমাদেরকে বা সংসারের কাউকে না কাউকে বিশাল রকম অসুখের ঝামেলায়
পড়িতে হইবে আর গোরস্তানে যাওয়াও বিচিত্র নয়। তাই এখনিই সাবধান হওয়া উচিত।
সূত্রঃ বহুবিধ
No comments:
Post a Comment