যালিকাল কিতাবু লারাইবা
ফিহি
এটি আল্লাহর কিতাব,
এর মধ্যে কোন সন্দেহ নেই Zaalikal Kitaabu laa raiba
feeh
এটি হিদায়াত সেই ‘মুত্তাকী’দের
জন্য hudal lilmuttaqeen(প্রথম
শর্ত)
যারা অদৃশ্যে বিশ্বাস
করে Allazeena yu'minoona bilghaibi(দ্বিতীয়
শর্ত)
নামায কায়েম করে wa yuqeemoonas salaata (তৃতীয়
শর্ত)
এবং যে রিযিক আমি তাদেরকে
দিয়েছি তা থেকে খরচ করে wa mimmaa razaqnaahum
yunfiqoon (চতুর্থ শর্ত)
আর যে কিতাব তোমাদের
ওপর নাযিল করা হয়েছে (কুরআন) এবং তোমার আগে যেসব কিতাব নাযিল করা হয়েছিল সে সবগুলোর
ওপর ঈমান আনে Wallazeena yu'minoona bimaa unzila
ilaika wa maaa unzila min qablika (৫ম শর্ত)
আর আখেরাতের ওপর একীন
রাখে wa bil Aakhirati hum yooqinoon(৬ষ্ঠ শর্ত)
এ ধরনের লোকেরা তাদের রবের পক্ষ থেকে সরল সত্য পথের
ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং তারা কল্যান লাভের অধিকারী Ulaaa'ika
'alaa hudam mir rabbihim wa ulaaa'ika humul muflihoon
-সূরা আল বাক্কারাহ
আয়াত ২-৫
ব্যাখ্যাঃ আল কুরআন
একেবারে একটি হিদায়াত ও পথনির্দেশনার গ্রন্থ৷ কিন্তু এর থেকে লাভবান হতে চাইলে
মানুষের মধ্যে কয়েকটি মৌলিক গুণ থাকতে হবে৷ এর মধ্যে সর্বপ্রথম যে গুণটির প্রয়োজন সেটি
হচ্ছে, তাকে "মুত্তাকী" হতে হবে৷
কুরআন
থেকে লাভবান হবার জন্য এটি হচ্ছে দ্বিতীয় শর্ত৷ 'গায়েব' বা অদৃশ্য বলতে এমন গভীর সতের
প্রতি ইংগিত করা হয়েছে যা মানুষের ইন্দ্রিয়াতীত এবং কখনো সরাসরি সাধারণ মানুষের প্রত্যক্ষ
জ্ঞান ও অভিজ্ঞতায় ধরা পড়ে না৷ যেমন আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলী, ফেরেশতা, অহী, জান্নাত,
জাহান্নাম ইত্যাদি৷ এ গভীর সত্যগুলোকে না দেখে মেনে নেয়া এবং নবী এগুলোর খবর দিয়েছেন
বলে তাঁর খবরের সত্যতার প্রতি আস্থা রেখে এগুলোকে মেনে নেয়াই হচ্ছে 'ঈমান বিল গায়েব'
বা অদৃশ্যে বিশ্বাস৷ এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আয়াতের অর্থ হচ্ছে এই যে, যে ব্যক্তি মেনে
নেয়ার জন্য দেখার, ঘ্রাণ নেয়ার ও আস্বাদন করার শর্ত আরোপ করে এবং যে ব্যক্তি বলে, আমি
এমন কোন জিনিস মেনে নিতে পারি না যা পরিমাণ করা ও ওজন করা যায় না—সে এ কিতাব থেকে হিদায়াত
ও পথনির্দেশনা লাভ করতে পারবে না ৷
এটি হচ্ছে
তৃতীয় শর্ত৷ এর অর্থ হচ্ছে, যারা কেবল মেনে নিয়ে নীরবে বসে থাকবে তারা কুরআন থেকে উপকৃত
হতে পারবে না৷ বরং মেনে নেয়ার পর সংগে সংগেই তার আনুগত্য করা ও তাকে কার্যকর করাই হচ্ছে
এ থেকে উপকৃত হবার জন্য একান্ত অপরিহার্য প্রয়োজন ৷ আর বাস্তব আনুগত্যের প্রধান ও স্থায়ী
আলামত হচ্ছে নামায৷ ঈমান আনার পর কয়েক ঘন্টা অতিবাহিত হতে না হতেই মুয়াযযিন নামাযের
জন্য আহবান জানায় আর ঈমানের দাবীদার ব্যক্তি বাস্তবে আনুগত্য করতে প্রস্তুত কি না তার
ফায়সালা তখনই হয়ে যায়৷ এ মুয়াযযিন আবার প্রতিদিন পাঁচবার আহবান জানাতে থাকে ৷ যখনই
এ ব্যক্তি তার আহবানে সাড়া না দেয় তখনই প্রকাশ হয়ে পড়ে যে, ঈমানের দাবীদার ব্যক্তি
এবার আনুগত্য থেকে বের হয়ে এসেছে৷ কাজেই নামায ত্যাগ করা আসলে আনুগত্য ত্যাগ করারই
নামান্তর৷ বলা বাহুল্য কোন ব্যক্তি যখন কারোর নির্দেশে মেনে চলতে প্রস্তুত থাকে না
তখন তাকে নির্দেশ দেয়া আর না দেয়া সমান৷ ইকমাতে সালাত বা নামায কায়েম করা
একটি ব্যাপক ও পূর্ণ অর্থবোধক পরিভাষা একথাটি অবশ্যি জেনে রাখা প্রয়োজন৷ এর অর্থ কেবল
নিয়মিত নামায পড়া নয় বরং সামষ্টিকভাবে নামাযের ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠিত করাও এর অর্থের
অন্তরভুক্ত৷ যদি কোন লোকালয়ে ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যেক ব্যক্তি নিয়মিতভাবে নামায পড়ে
থাকে কিন্তু জামায়াতের সাথে এ ফরযটি আদায় করার ব্যবস্থা না থাকে, তাহলে সেখানে নামায
কায়েম আছে, একথা বলা যাবে না৷
কুরআনের হিদায়াত লাভ করার জন্য এটি হচ্ছে চতুর্থ শর্ত ৷ সংকীর্ণমনা ও অর্থলোলুপ না হয়ে মানুষকে হতে হবে আল্লাহ ও বান্দার অধিকার আদায়কারী ৷ তার সম্পদে আল্লাহ ও বান্দার যে অধিকার স্বীকৃত হয়েছে তাকে তা আদায় করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে ৷ যে বিষয়ের ওপর সে ঈমান এনেছে তার জন্য অর্থনৈতিক ত্যাগ স্বীকার করা ব্যাপারে সে কোন রকম ইতস্তত করতে পারবে না।
আল কুরআন
ছাড়াও যে সেব কিতাব আল্লাহ নাযিল করেছিলেন সে সবগুলোর ওপর ঈমান আনতেই হবে।
এটি ৫ম শর্ত।
এটি ষষ্ঠ
ও সর্বশেষ শর্ত৷ আখেরাত একটি ব্যাপক ও পরিপূর্ণ অর্থবোধক শব্দ৷ আকীদা-বিশ্বাসের বিভিন্ন
উপাদানের সমষ্টির ভিত্তিতে এ আখেরাতের ভাবধারা গড়ে উঠেছে৷ বিশ্বাসের নিম্নোক্ত উপাদানগলো
এর অন্তর্ভুক্ত৷
একঃ এ দুনিয়ায় মানুষ কোন দায়িত্বহীন জীব নয়৷ বরং নিজের সমস্ত
কাজের জন্য তাকে আল্লাহর সামনে জবাবদিহি করতে হবে৷
দুইঃ দুনিয়ার বর্তমান ব্যবস্থা চিরন্তন নয়৷ এক সময় এর মেয়াদ
শেষ হয়ে যাবে এবং সে সময়টা একমাত্র আল্লাহই জানেন৷
তিনঃ এ দুনিয়া শেষ হবার পর আল্লাহ আর একটি দুনিয়া তৈরি করবেন৷
সৃষ্টির আদি থেকে নিয়ে কিয়ামত পর্যন্ত পৃথিবীতে যত মানুষের জন্ম হয়েছে সবাইকে
সেখানে একই সংগে পুনর্বার সৃষ্টি করবেন ৷সবাইকে একত্র করে তাদের কর্মকান্ডের হিসেব
নেবেন৷ সবাইকে তার কাজের পূর্ণ প্রতিদান দেবেন৷
চারঃ আল্লাহর এ সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে সতলোকেরা জান্নাতে স্থান পাবে এবং অসত লোকদেরকে নিক্ষেপ করা হবে
জাহান্নামে৷
পাঁচঃ বর্তমান জীবনের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও অসমৃদ্ধি সাফল্য ও
ব্যর্থতার আসল মানদন্ড নয়৷ বরং আল্লাহর শেষ বিচারে যে ব্যক্তি উত্রে যাবে সে-ই
হচ্ছে সফলকাম আর সেখানে যে উতরোবে না সে ব্যর্থ৷
এ সমগ্র আকীদা-বিশ্বাসগুলোকে যারা মনে প্রাণে গ্রহণ করতে
পারেনি তারা কুরআন থেকে কোনক্রমেই উপকৃত হতে পারবে না৷ কারণ এ বিষয়গুলো অস্বীকার
করা তো দূরের কথা এগুলো সম্পর্কে কারো মনে যদি সামান্যতম দ্বিধা ও সন্দেহ থেকে
থাকে তাহলে মানুষের জীবনের জন্য কুরআন যে পথনির্দেশ করেছে সে পথে তারা চলতে পারবে
না৷
No comments:
Post a Comment