Tuesday, August 25, 2020

আধ্যাত্মিকভাবে পবিত্র থাকো, লোকে তোমাকে খুঁজে নেবে

তুমি কি দেখেছো কখনো নদী মানুষের কাছে ছুটে গেছে আর মানুষকে সানুনয়ে বলছে “এসো, আমার জল পান করো?” না, এটা ককখোনই হয়না। বরং হয় উল্টোটা। নদীর জল প্রবাহমান রইলে, তার জল টলটলে আর পরিষ্কার ও সুমিষ্ট হলে মানুষ এমনিতেই নদীর জল পানের বিপুল আগ্রহ দেখাবে।

ঠিক এমনি করে তুমি আধ্যাত্মিকভাবে পবিত্র থাকো। লোকে তোমাকে ঠিকই খুঁজে নেবে। তোমার আত্মীয় পরিজন যদি এতে বিমুখ হয় রয়, পরোয়া করোনা।
এসো, এসো, যে-ই হও না কেন তুমি,
কী পথহারা, কী পূজারী, কী হাল ছেড়ে দেয়ার মানসিকতা-প্রেমী,
কিছু এসে যায় না তাতে, হয় না ব্যতিক্রমী,
আমাদের এ কাফেলা নয়কো হতাশার রাজ্যগামী,
এসো, যদিও শতবার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের দায়ে তোমার হয় বদনামী,
এসো, বার বার এসো, হে সত্যান্বেষী, নিজ কল্যাণকামী!
-আল্লাহতা’লার সাথে মনুষ্যকুলের কৃত ইতিপূর্বেকার ওয়াদা–‘আলাসতু বি-রাব্বিকুম’; আমরা প্রতিনিয়ত এই ওয়াদা ভঙ্গ করছি।

পিতা-মাতার অবাধ্য হবে না

 পিতা-মাতার অবাধ্যতার বিভিন্ন রূপ হতে পারে যা হয়ত অনেক মানুষের কাছেই অজানা।

১) পিতা-মাতার উপর নিজেকে বড় মনে করা। অর্থ-সম্পদ, শিক্ষা-দীক্ষা, সম্মান-প্রতিপত্তিতে পিতা-মাতার চেয়ে বেশী অথবা অন্য যে কোন কারণেই হোক না কেন নিজেকে বড় বড় মনে করা।
২) পিতা-মাতাকে পিতা-মাতাকে সহায়-সম্বলহীন এবং নিঃস্ব অবস্থায় ফেলে রাখা এবং যার কারণে তারা মানুষের দ্বারে দ্বারে হাত পাততে বাধ্য হয়।
৩) বন্ধু-বান্ধব, স্ত্রী-পুত্র বা অন্য কাউকে, এমনকি নিজের প্রয়োজনকেও পিতা-মাতার উপর অগ্রাধিকার দেয়া তাদের নাফরমানীর অন্তর্ভূক্ত।
৪) পিতা-মাতাকে শুধু নাম ধরে বা এমন শব্দ প্রয়োগে ডাকা যা তাদের অসম্মান ও মর্যাদাহানীর ইঙ্গিত দেয়।
৫) পিতা-মাতার সাথে চোখ রাঙ্গিয়ে ধমকের সাথে কথা বলা।
৬) তাদের সেবা-শশ্রুসা না করা এবং শারিরীক বা মানষিক দিকের প্রতি লক্ষ না রাখা। বিশেষ করে বৃদ্ধ বয়সে বা রোগ-ব্যধিতে তাদের প্রতি অবহেলা প্রদর্শন করা।

দৃষ্টি সংযত রাখার মাহাত্ম্য ও মর্যাদা

 আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেছেন,

“(হে নবী) আপনি মু'মিন পুরুষদের বলুন, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে। এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। নিশ্চয়ই তারা যা করে, সে সম্পর্কে আল্লাহ্ সম্যক অবহিত।
(সূরা আন-নূর; ২৪: ৩০)
অতএব, আল্লাহ্ পবিত্রতা ও আত্মিক উন্নয়নকে দৃষ্টি সংযত রাখার এবং লজ্জাস্থান হিফাযত করার প্রতিদান হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কারণ নিষিদ্ধ বস্তু থেকে নিজের দৃষ্টি সংযত করার ফলে তিনটি উপকার হয় যেগুলো ভীষণভাবে গুরুত্বপূর্ণ ও অত্যন্ত মূল্যবান।
প্রথমত: ঈমানের মধুরতা আস্বাদন করা
যে ব্যক্তি আল্লাহ্র ভয়ে দৃষ্টি সংযত রাখে, তার কাছে ঈমানের সুমিষ্ট মাধুর্য এবং তা থেকে পাওয়া আনন্দ, নিষিদ্ধ বস্তু দেখে পাওয়া আনন্দের চেয়ে অনেক বেশি মনোহর। বস্তুত, “কেউ যদি আল্লাহ্র সন্তুষ্টির জন্য কোনোকিছু পরিত্যাগ করে, তবে আল্লাহ্ আরও উত্তম কিছুর দ্বারা সেটির প্রতিস্থাপন করেন।”
প্রবৃত্তি হলো নিষিদ্ধকাজে প্রলুব্ধকারী এবং সুন্দর অবয়ব দেখতে ভালোবাসে। আর চোখ হলো হৃদয়ের দিশারী। হৃদয় তার দিশারীকে কোথায় কি আছে, তা খুঁজে দেখার দায়িত্ব দিয়ে বলে, ‘যাও! দেখো, কোথায় কী আছে।’ চোখ যখন সুন্দর কোনো দৃশ্যের খবর দেয়, হৃদয়ে তখন তা পাওয়ার জন্য ভালোবাসার শিহরণ এবং আকাঙ্ক্ষা জাগে। হৃদয় এবং চোখের এই অভ্যন্তরীণ দোলাচল উভয়কেই অনবরত ক্লান্ত করে থাকে। যেমনটি বলা হয়েছে :
চোখকে যেদিন দিশারী বানিয়ে করালে সন্ধান
তোমার চোখের লক্ষ্যবস্তু তোমায় করল হয়রান,
এমন কিছু দেখেলে যাতে ছিল না নিয়ন্ত্রণ,
আংশিকও নয়, নয় পুরোপুরিও;
বরং তোমার জন্য উত্তম ছিল ধৈর্যধারণ।
কাজেই দৃষ্টিকে যখন কোনোকিছু দেখা এবং নিরীক্ষণ করা থেকে সংযত রাখা হয়, হৃদয়ও তখন নিরর্থক অনুসন্ধান আর কামনার মতো ক্লান্তিকর কাজ থেকে বিশ্রাম পায়।
যে ব্যক্তি নিজের দৃষ্টিকে অবাধে বিচরণের সুযোগ দেবেন, তিনি প্রতিনিয়ত নিজেকে অবিরাম ক্ষতি এবং নিদারুণ মানসিক যন্ত্রণার মাঝে আবিষ্কার করবেন। কারণ দৃষ্টিপাত থেকেই ভালোবাসার (মুহাব্বাহ্) জন্ম হয়, যার সূচনা হয় চোখ যা দেখেছে তার প্রতি মোহাবিষ্ট ও নির্ভরশীল হয়ে পড়ার মাধ্যমে। এই ভালোবাসা ক্রমেই আকুল আকাঙ্ক্ষায় (সাবাবাহ্) পরিণত হয়, যার দ্বারা হৃদয় তার কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তি বা বস্তুর প্রতি অসংশোধনীয় মাত্রায় মোহাবিষ্ট এবং নির্ভরশীল হয়ে যায়। এর মাত্রা বেড়ে ‘আসক্তি’র (গারামাহ্) রূপ নেয়। এই আসক্তি এমন এক শক্তি যা আসক্ত ব্যক্তির পেছনে তেমনিভাবে লেগে থাকে, যেভাবে কোনো পাওয়াদার ঋণ পরিশোধের জন্য ঋণীর পেছনে লেগে থাকে। এই আসক্তি আরও বাড়তে থাকে এবং ‘প্রেমাসক্তি’র (ইশ্ক) রূপ নেয় যা সকল প্রকার সীমা ছাড়িয়ে যায়। সবশেষে এর মাত্রা বেড়ে ‘প্রেমোন্মাদনা’র (শাগাফা) জন্ম হয় যা হৃদয়ের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশকেও বেষ্টন করে ফেলে। এই প্রেমোন্মাদনা ক্রমেই ‘আনুগত্যের ভালোবাসা’য় (তাতাইয়্যুমা) রূপ নেয়। তাতাইয়্যুমা’র অর্থই হলো ইবাদত। যখন বলা হয়, ‘তাইয়্যামা আল্লাহ্’, তখন তার অর্থ দাঁড়ায়, ‘সে আল্লাহ্ র ইবাদত করেছে।’
এভাবেই হৃদয় এমন কিছুর উপাসনা করা শুরু করে, যার উপাসনা করা সমীচীন নয়। আর এসব কিছুর পেছনে একমাত্র কারণ একটি নিষিদ্ধ দৃষ্টিপাত। যে হৃদয় পূর্বে ছিল মনিব, তা এখন শিকলাবদ্ধ; যা ছিল মুক্ত ও স্বাধীন, তা এখন কারারুদ্ধ। এই হৃদয় চোখের দ্বারা নির্যাতিত এবং চোখের আছে অভিযোগ করলে, চোখ এখন বলে : ‘আমি তোমার দিশারী এবং আজ্ঞাবাহক। প্রথমে তুমিই আমাকে পাঠিয়েছিলে।’ এখানে যাকিছু বলা হলো, তার সবই এমন সব হৃদয়ের জন্যই সত্য, যেসব হৃদয় আল্লাহ্র প্রতি ভালোবাসা ও একনিষ্ঠতাকে পরিত্যাগ করেছে। কারণ ভালোবাসার জন্য হৃদয়ের এমনকিছু চায়, যার প্রতি হৃদয় নিজেকে নিবেদিত রাখতে পারে। সে কারণেই, হৃদয় যখন শুধুমাত্র আল্লাহ্কে ভালোবাসে না এবং শুধু তাঁকেই উপাস্য হিসেবে গ্রহণ করে না, তখন নিশ্চিতভাবে সে অন্যকিছুর উপাসনায় লিপ্ত থাকে। আল্লাহ্ ইউসুফ (আ) সম্পর্কে বলেন :
“এভাবেই যাতে আমি তার থেকে অনিষ্ট ও অশ্লীলতা দুর করে দেই। নিশ্চয়ই সে আমার নিষ্ঠাবান বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত।”
(সূরা ইউসূফ; ১২: ২৪)
আযীযের স্ত্রী একজন বিবাহতা নারী হওয়া সত্ত্বেও তার হৃদয়ে প্রেমাসক্তি প্রবেশ করেছিল। কারণ সে ছিল মুশরিকা। অন্যদিকে, ইউসুফ (আ) যুবক, অবিবাহিত এবং চাকর হওয়া সত্ত্বেও সেই অপকর্ম থেকে তাঁকে রক্ষা করা হয়েছিল। কারণ তিনি ছিলেন আল্লাহ্র একনিষ্ঠ গোলাম।
দ্বিতীয়ত: আলোকিত হৃদয়, স্বচ্ছ উপলব্ধিবোধ এবং তীক্ষ্ণ অন্তর্দৃষ্টি
ইবনু সুজা‘আ আল-কিরমানি বলেছেন, “যে ব্যক্তি নিজের বাহ্যিক অবয়বকে সুন্নাহ্র আদলে এবং অভ্যন্তরীণ সত্ত্বাকে সর্বদা আল্লাহ্র চিন্তা-গবেষণা এবং তাঁর সচেতনতার আলোকে গড়ে তোলে, নিজের আত্মাকে প্রবৃত্তির অনুসরণ করা থেকে এবং নিষিদ্ধ বস্তু থেকে দৃষ্টিকে সংযত রাখে, সর্বদা হালাল রুজি ভক্ষণ করে, সেইব্যক্তির উপলব্ধি এবং অন্তর্দৃষ্টি কখনোই ভুল হবে না।”
আল্লাহ্ লূতের (আ) সম্প্রদায়কে কীভাবে শাস্তি দিয়েছিলেন, সে কথা উল্লেখ করে বলেছেন :
“নিশ্চয়ই এতে ‘মুতাওয়াস্সিমীন’দের (স্বচ্ছ উপলব্ধিবোধ এবং তীক্ষ্ণ অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্ন) জন্য রয়েছে নিদর্শনমালা।”
(সূরা আল হিজ্র; ১৫:৭৫)
মুতাওয়াস্সিমীন হলেন তারাই যারা স্বচ্ছ উপলব্ধিবোধ এবং তীক্ষ্ণ অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্ন। তারা হারাম বস্তুর প্রতি দৃষ্টিপাত করেন না এবং অশ্লীল কর্ম সম্পাদন করা থেকে বিরত থাকেন।
দৃষ্টি সংযত করা সম্পর্কিত আয়াতের পরবর্তী আয়াতেই আল্লাহ্ বলেছেন:
“আল্লাহ্ আসমানসমুহ ও যমীনের নূর।” (সূরা আন-নূর; ২৪:৩৫)
এর কারণ হলো, কর্ম যেমন, কর্মের প্রতিদানও তেমন হয়। অতএব, যে কেউ আল্লাহ্র সন্তুষ্টির জন্য নিষিদ্ধ বস্তু থেকে দৃষ্টিকে সংযত রাখবে, আল্লাহ্, আযযা ওয়া জাল্লা, সেইব্যক্তির জন্য নিষিদ্ধ বস্তুকে অনুরূপ অথচ তার চেয়ে অধিক উত্তম বস্তু দ্বারা প্রতিস্থাপন করবেন। তাই বান্দা যেহেতু তার চোখের আলোকে নিষিদ্ধ বস্তুর উপর পড়তে দেয়নি, আল্লাহ্ সেই বান্দার দৃষ্টি এবং অন্তরের আলোকে অনুগ্রহ দান করেন। ফলে ব্যক্তি সেইসব বিষয় বুঝতে এবং উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন, দৃষ্টি সংযত না করলে যেগুলো বুঝা এবং উপলব্ধি করা তার জন্য সম্ভব হতো না।
ব্যক্তি নিজের মধ্যে এই বিষয়টি আক্ষরিক অর্থেই উপলব্ধি করতে পারেন। কারণ হৃদয় একটা আয়নার মতো এবং পাশবিক প্রবৃত্তিগুলো সেই আয়নার উপর মরিচার মতো। এই আয়না যখন সচ্ছ এবং পরিষ্কার থাকে, তখন তাতে বাস্তবতার (হাকাইক) আক্ষরিক প্রতিফলন ঘটে। কিন্তু যদি তাতে মরিচা পড়ে থাকে, তাহলে তাতে সুষম প্রতিফলন তৈরি হয় না। ফলে হৃদয়ে অনুমান এবং সন্দেহ নির্ভর জ্ঞান ও অভিব্যক্তির উন্মেষ ঘটবে।
তৃতীয়ত: হৃদয় হবে শক্তিশালী, দৃঢ় এবং সাহসী
দৃষ্টির আলোর জন্য আল্লাহ্ যেভাবে চোখকে সুস্পষ্ট প্রমাণের সহায়ক শক্তি দিয়েছেন, হৃদয়ের দৃঢ়তার জন্যও তিনি হৃদয়কে সহায়ক শক্তি দান করবেন। এভাবে হৃদয়ে দুধরণের উপাদনের সমন্বয় ঘটবে। ফলে হৃদয় থেকে শয়তান বিতাড়িত হবে। হাদীসে উল্লেখ আছে, “কেউ যদি নিজের পাশবিক প্রবৃত্তির বিরোধিতা করে, ভয়ে শয়তান তার ছায়া থেকেও পালিয়ে বেড়ায়।”
একারণেই যে ব্যক্তি নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, সে নিজের মাঝে গ্লানিময় আত্মাকে খুঁজে পায় — যে আত্মা দুর্বল, শক্তিহীন, ঘৃণার যোগ্য। বস্তুত, যে ব্যক্তি আল্লাহ্কে মান্য করেন, আল্লাহ্ তার জন্য উচ্চমর্যাদা নির্ধারণ করেন। আর তাঁকে অমান্যকারীর জন্য আল্লাহ্ লাঞ্ছনা নির্ধারণ করেন:
“আর তোমরা দুর্বল হয়ো না এবং দুঃখিত হয়ো না, আর তোমরাই বিজয়ী হবে, যদি মু’মিন হয়ে থাকো।”
(সূরা আল–ইমরান; ৩:১৩৯)
“কেউ যদি সম্মান চায় (তবে তা যেন আল্লাহর কাছেই চায়), কেননা সকল সম্মান আল্লাহরই।”
(সূরা ফাতির; ৩৫:১০)
অর্থাৎ, যে ব্যক্তি আল্লাহ্ র (আযযা ওয়া জাল্লা) চেয়ে অবাধ্যতা এবং পাপকর্মকেই বেশি প্রাধান্য দেবে, আল্লাহ্ সেই বিরুদ্ধাচরণকারীকে লাঞ্ছিত করবেন। সালাফদের অনেকেই বলেছেন, “সম্মানের খোঁজে মানুষ রাজাদের দ্বারে যায়। অথচ আল্লাহর আনুগত্য ছাড়া কোনো সম্মান নেই।” কারণ যারা আল্লাহ্র আনুগত্য করে, তারা আল্লাহ্কে নিজেদের বন্ধু এবং রক্ষাকারী হিসেবে গ্রহণ করে। আর যারা আল্লাহ্কে তাদের রব এবং পৃষ্ঠপোষক হিসেবে গ্রহণ করে, আল্লাহ্ কখনোই তাদেরকে অসম্মানিত করেন না। একটি দো‘আ কুনূতে এ কথাগুলোই বলা হয়েছে: “যাকে আপনি বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেন, সে অপমানিত হয় না আর যাকে আপনি শত্রু হিসেবে গ্রহণ করেন, সে সম্মানিত হয় না।”
(সূত্র: শায়েখ ইবনুল কায়্যিম, আল-মুন্তাকা মিন ইক্হাসাতুল লুফ্হান ফী মাসায়্যিদ আশ-শায়তান, পৃষ্ঠা ১০২-১০৫।

Saturday, August 22, 2020

সময়

 Waqt Se Din Aur Raat

সময়ের আবর্তনেই দিন যায় রাত আসে
সময়ের আবর্তনেই অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যত
সময়ের আবর্তনেই রাজা কোন সময় প্রজা হয়
সময় চক্রাকারে রাজা বাদশাহর ওপর প্রাধান্য বিস্তার করে চলে।
সময় অনুভবে আসে-
সজীবতা আর সৌন্দর্যের ভেতর;
সময় কোন সময় ফুল শয্যা-
আবার সময় কখনো হয় কাঁটার তাজ;
সব মানুষেরই উচিত হবে
সময়কে সমীহ করে চলা;
কেউ জানেনা কখন-
সময়ের মেজাজ বিগড়ে যায়?
-হিন্দী ওয়াক্ত কাব্যের ভাবানুবাদ
আল কুরআন তার ১০৩ নম্বর সূরায় দ্ব্যর্থহীন ভাষায় মাত্র ৩টি আয়াতে বলেছে-
১) সময়ের কসম৷
২) মানুষ আসলে বড়ই ক্ষতির মধ্যে রয়েছে৷
৩) তবে তারা ছাড়া যারা ঈমান এনেছে ও সতকাজ করতে থেকেছে এবং একজন অন্যজনকে হক কথার ও সবর করার উপদেশ দিতে থেকেছে ৷
সময়ের কসম খাওয়া হয়েছে যে, মানুষ বড়ই ক্ষতির মধ্যে রয়েছে এবং এই ক্ষতি থেকে একমাত্র তারাই রক্ষা পেয়েছে যারা চারটি গুণাবলীর অধিকারী:
(১) ঈমান,
(২) সতকাজ,
(৩) পরস্পরকে হকের উপদেশ দেয়া এবং
(৪) একে অন্যকে সবর করার উপদেশ দেয়া৷
আল্লাহর এই বাণীর অর্থ সুস্পষ্টভাবে জানার জন্য প্রতিটি অংশের ওপর পৃথকভাবে চিন্তা - ভাবনা করা উচিত৷

নেতিবাচকতা আত্মবিশ্বাস নড়বড়ে করে দেয়

 With Negativity, self-esteem is terribly shaken

জীবনযাপন পদ্ধতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো ‘মানসিক চাপ’। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডব্লিউ.এইচ.ও এ বিষয়টির ওপর ভীষণরকম গুরুত্ব দিয়েছে। আসলে মানসিক চাপ জীবনের একটি ধ্রুব বাস্তবতা। আমাদের সবার জীবনেই বিচিত্র ধরনের উত্থান পতন রয়েছে, রয়েছে অসংলগ্নতা, দু:খ-কষ্ট, অপ্রাপ্তির বেদনা ইত্যাদি।
এগুলো নি:সন্দেহে মানুষের ভেতরটাকে অস্থির করে তোলে, বিষন্ন করে তোলে, বিরক্তির উদ্রেক ঘটায়। আমরা যদি আমাদের জীবনের অবস্থায় দেখা দেওয়া সমস্যা, জটিলতা ইত্যাদিকে সুন্দরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারি কিংবা সমস্যাগুলোর যথাযথ সমাধানের উপায় খুঁজে বের করতে না পারি, তাহলেই আমরা মানসিক চাপের মুখে পড়ে যাই। এই মানসিক চাপ ব্যক্তির ওপর তো বটেই পরিবেশের ওপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলে।
যখন আমরা মানসিক চাপের সম্মুখিন হই তখনই এক ধরনের নেতিবাচকতা আমাদের পেয়ে বসে। নিজের সম্পর্কে বা নিজের দিকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে তাকাতে শুরু করে দেই আমরা। যার ফলে আত্মবিশ্বাস নড়বড়ে হয়ে ওঠে, বিষন্নতা অবসাদ পেয়ে বসে আমাদের। আর এই অনাকাঙ্ক্ষিত মানসিক অবস্থার কুপ্রভাব পড়ে আমাদের ব্যক্তি আচরণের ওপর। আমরা অশালীন অসংলগ্ন আচরণ করতে শুরু করে দেই, উত্তেজিত হয়ে উঠি এককথায় এক ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় আমাদের কাজে কারবারে,কথাবার্তায়, আচার আচরণে। এই অনুভূতির কারণে আমাদের শারীরিক সমস্যা যেমন মাথাব্যথা, পেটের পীড়া, নিদ্রাহীনতা, আলসার, উচ্চ রক্তচাপ, বিচিত্র ধরনের হৃদরোগ, এমনকি ব্রেইন স্ট্রোক পর্যন্ত দেখা দিতে পারে।
মানসিক চাপের পরিণতি সম্পর্কে কথা বলছিলাম আমরা। একেবারে ব্রেইন স্ট্রোকের আশঙ্কা পর্যন্ত গড়িয়েছে আমাদের আলোচনা। তবে স্ট্রেস বা মানসিক চাপ যে কেবল নেতিবাচক দিকগুলো থেকেই আসে তা কিন্তু নয়। অনেক সময় নেতিবাচকতার পাশাপাশি কিছু ইতিবাচক দিক থেকেও কিন্তু মানসিক চাপ দেখা দিতে পারে বলে মনোবিজ্ঞানীদের ধারণা। যেমন বিয়ে শাদি, সন্তানের জন্ম কিংবা নতুন কোনো কাজ ইত্যাদি। কানাডিয় ফিজিওলজিস্ট হ্যান্স সিলের মতে আমাদের জীবনে কিছু চাপ থাকার প্রয়োজন রয়েছে। চাপ হলো চাটনির মতো। এইসব চাপ জীবনে চাটনির মতো স্বাদ তৈরি করে। সুতরাং মানসিক চাপের কারণ বা উপাদানগুলোকে পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া কেবল যে বাস্তব সম্মত নয়, তাই নয় বরং তা জীবনকে অনেকটা একঘেঁয়েও করে তোলে ।
অতএব মানসিক চাপ কীভাবে প্রতিহত করা যায় কী করে তা মোকাবেলা করা যায় সেই জ্ঞান বা উপায়গুলো জানাটাই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এমনও অনেক মানুষ আছেন যাঁরা সামান্য একটু এধার ওধার মানে পরিবর্তন দেখলেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। এমনকি ইতিবাচক পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও এই সমস্যা দেখা দেয়। এটা মানসিক চাপের কারণেই হয়ে থাকে। অনেকেই আবার রোগ-ব্যাধির কষ্ট, নিকটজনদের কারো মৃত্যু, কারাবান্দি, দু:সহ অত্যাচার ইত্যাদি খুব ঠাণ্ডা মাথায় সহ্য করতে পারেন। এ ধরনের মানুষেরা জীবন সমস্যাগুলোকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখেন এবং তাঁদের আত্মবিশ্বাস প্রবল। জীবনযাপনের ক্ষেত্রে এই ইতিবাচকতা খুবই জরুরি।
গবেষণায় দেখা গেছে ধর্মীয় বোধ ও বিশ্বাস শয়তানি প্ররোচনা এবং উত্তেজনা মোকাবেলায় ব্যক্তিকে হেফাজত করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে। আধুনিক চিকিতসাবিদগণ মানসিক কষ্ট বা মর্মযাতনা দূর করার জন্য ধর্মীয় মূল্যবোধগুলোকে ব্যক্তিমনে দৃঢ়ভাবে স্থাপন করার ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। বলাবাহুল্য এ বিষয়টি মনোরোগ চিকিতসার ক্ষেত্রে যেসব ওষুধ দেওয়া হয় সেসব ওষুধের কার্যকারিতা নিশ্চিত করার সহযোগী বলে মনে করে। ডিউক ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় দেখা গেছে যেসব লোক নিয়মিতভাবে ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদিতে যোগ দেয় সেসব লোকের সুস্থতার পরিমাণ যারা নিয়মিতভাবে ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদিতে যোগ দেয় না তাদের তুলনায় অনেক বেশি।
ডেইল এ. ম্যাথিউস তাঁর বই ‘দ্য ফেইথ ফ্যাক্টরে” বলেছেন: উপাসনালয়ে জনগণের স্বতস্ফূর্ত উপস্থিতি সুস্থতার শক্তি বৃদ্ধির একটা কারণ হিসেবে পরিগণিত। তাঁর বইয়ের নামেই রয়েছে “প্রার্থনার নিরাময় শক্তির প্রমাণ”। এই গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত থেকে প্রমাণ হয় যে, শারীরিক সুস্থতার সঙ্গে আধ্যাত্মিকতার শক্তিশালী সম্পর্ক রয়েছে। আর ধর্মীয় বিশ্বাস ও আচরণগুলোই প্রকৃত সুস্থতার কার্যকরী উপাদান।
পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় উল্লেখ করা হয়েছে যে যাদের অন্তরগুলো ইমানির নূরে আলোকিত, তারা সমগ্র পৃথিবীতে সুন্দর, কল্যাণ আর ভালো ছাড়া অন্য কিছুই চোখে দেখেন না। তারা বিশ্বব্যবস্থাকে সবোর্ত্তম ব্যবস্থা বলে মনে করেন। তাঁরা মহাপ্রজ্ঞাবান সেই স্রষ্টা ও প্রতিপালক খোদার প্রার্থনা করেন যিনি এই বিশ্ব সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য উদ্দেশ্য নিয়ে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি সুন্দর ও কল্যাণ ছাড়া তাঁর সৃষ্টিকূলের জন্য অন্য কোনো কিছুই পছন্দ করেন না। এক্ষেত্রে যদি কোনো কিছুতে ঘাটতি থাকে কিংবা জটিলতা থাকে তাহলে সেসব অসংগতি সহনীয় এবং সমাধানের পর্যায়ে পড়ে।
সূরা বাকারার ১৫৬ নম্বর আয়াতে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে: যারা আল্লাহর ওপর বিশ্বাসী তারা যে-কোনো বিপদ আপদের সময় এই সত্য ও বাস্তবতার প্রতি মনোযোগ আকৃষ্ট করে বলে যে “আমরা আল্লাহর জন্য এবং আল্লাহর দিকেই আমাদের ফিরে যেতে হবে।“
যাই হোক, মানসিক চাপ নিয়ে কথা হচ্ছিল আমাদের। ভয় এই মানসিক চাপের অন্যতম কারণ। ভয় কাটিয়ে ওঠার জন্য যত রকমের উপায়ের কথা বলা হয়েছে সেসবের মধ্যে ধর্মীয় বিশ্বাস সবচেয়ে কার্যকরী ভূমিকা রেখেছে। ভয়ের উতপত্তি যেখান থেকে ধর্মীয় বিশ্বাস সেই উতপত্তিস্থলটাকেই ধ্বংস করে দেয়।
যেসব মানুষ ইসলামি শিক্ষার ছায়াতলে লালিত পালিত হয় পবিত্র কুরআনের দৃষ্টিতে তারা বিচিত্র মানসিক চাপ থেকে নিরাপদ থাকে। শক্তির মূল যে উতস তার সঙ্গে যে মানুষের সম্পর্ক সৃষ্টি হয় পৃথিবীর অন্য কোনো শক্তিই তাকে আর প্রভাবিত করতে পারে না। সুতরাং স্রষ্টার সঙ্গে মানে শক্তির উতসের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনকারী মানুষ আর কোনো কিছুকেই ভয় করে না। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে: “যে-ই এক আল্লাহ ও আখেরাতের ওপর ঈমান আনবে এবং সতকাজ করবে নিসন্দেহে তার কোন ভয় বা মর্ম বেদনার কারণ নেই”।
মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন মানসিক চাপ কমানোর ক্ষেত্রে আমরা যে বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দেওয়াকে প্রয়োজনীয় বলে মনে করি তাহলো পবির্তনের চেষ্টা চালানো। মানসিক চাপের উতসে পরিবর্তন আনা বা এ ধরনের কিছু ভিন্নরকম অনুশীলন। যেমন কখনো কখনো শিক্ষা নিতে বলা হয় যে, কখনো কখনো পরাজয় বা ব্যর্থতারও অভিজ্ঞতা নিতে হতে পারে। তবে মনের ভেতরে কখনো নেতিবাচকতাকে স্থান দেওয়া যাবে না বা তাকে পোষা যাবে না। “আমি তো শেষ হয়ে গেছি, আমাকে দিয়ে আর কিচ্ছু হবে না”-এ জাতীয় চিন্তাভাবনাকে কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। তার পরিবর্তে সবসময় ইতিবাচক চিন্তা করে যেতে হবে। আপনি যদি আপনার অবচেতন মনের চিন্তাগুলো নিয়ে পর্যালোচনা করেন তাহলে যে দৃষ্টিভঙ্গি আপনাকে সবসময় বিষন্নতা বা বিরক্ত করে তা শুধরে নিতে পারবেন।
সবসময় আনন্দপূর্ণ, হাসিখুশি জীবন যাপন করবেন। জীবনে যেসব জিনিস কোনো অর্থ বয়ে আনে না সেগুলোকে স্বাভাবিক আনন্দ দিয়ে পরিহার করুন। মনে রাখবেন আপনি একজন বিশেষ মানুষ এবং নিজের সাথে সবোর্ত্তম আচরণ করার যোগ্যতা রাখেন। ধর্মীয় শিক্ষাও তাই। এতোক্ষণ আমরা যেসব দিক নিয়ে কথা বললাম সেগুলো বাস্তবায়ন করার জন্য ঐশী আদেশগুলো মেনে চলাই যথেষ্ট। যেমন আল্লাহ স্মরণ করা, ধৈর্যধারণ করা, আল্লাহভীতি বা তাকওয়াবান হওয়া, বিপদাপদে ভেঙে না পড়ে সুস্থির থাকা, মানসিক চাপ, বিষন্নতা পরিহার করার জন্য সতকাজ করা এবং অপরের কল্যাণ ও সেবায় এগিয়ে যাওয়া ইত্যাদি। একজন ব্যক্তি এইসব অভ্যন্তরীণ বিশ্বাস দিয়ে মানসিক চাপ ও আঘাতগুলোকে অত্যন্ত সুন্দরভাবে রোধ করে দুরন্ত ঝড়ের মুখেও স্থির অনড় থাকতে পারে।
স্রষ্টার সঙ্গে এই সম্পর্ক স্থাপনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর উপায় হচ্ছে প্রার্থনা, দোয়া এবং নামাজ। অনুভূতি ও মনকে বিন্দুমুখি করার সবোর্ত্তম উপায় হলো নামাজ। স্ক্যাপার বলেছেন: প্রার্থনা উদ্বেগ উতকণ্ঠা আর মানসিক অস্থিরতাটাকে কমিয়ে দিয়ে সুদৃষ্টিকে শক্তি দেয়। সেইসঙ্গে ব্যক্তিমনে দৃঢ় আশার সঞ্চার করে। অপর এক লেখক মিসেস সুফি বেরেনহাম বলেছেন: যেসব চিন্তা আমাদের মনোযোগ কেড়ে নেয়, সেগুলোকে ধুয়ে মুছে ফেলতে হবে। যাতে প্রার্থনায় গভীরভাবে মনোনিবেশ করা যায়। মুনাজাতে নেতিবাচক বাক্য পরিহার করে ইতিবাচক বাক্য ব্যবহার করতে হবে। কেননা অবচেতন মন নেতিবাচকতা গ্রহণ করে না। কুরআনের সেই বাক্যটি মনে করুন: “একমাত্র আল্লাহর জিকির বা স্মরণের মাধ্যমেই অন্তরগুলো প্রশান্তি পায়”
-পার্সটুডে

কোষ্ঠকাঠিন্য ও পাইলসে রোজ খান পাকা পেঁপে

 পাইলস সারাতে অব্যর্থ পাকা পেঁপে, এমনটাই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা

কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় অনেকেই ভোগেন৷ গরমে ডিহাইড্রেশন, হজমের সমস্যা বাড়ে৷ তবে কোষ্ঠকাঠিন্য বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে গেলে পাইলস হয়ে যায়৷ যা এক মারাত্মক সমস্যা৷
পাকা পেঁপেতে থাকে এনজাইম প্যাপেইন যা হজমে সাহায্য৷ যেকোনও জটিল খাবার সহজে পরিপাক করাতে পারে পেঁপে৷ যে কারণে খাসির মাংস রান্নার সময় তাড়াতাড়ি সিদ্ধ করতে মেশানো হয় পেঁপে৷
পেঁপেতে থাকে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার ও জল৷ এই প্যাপেইন, ফাইবার ও জলের মিশ্রণই কোষ্ঠকাঠিন্য ও অ্যাসিডিটি দূরে রাখতে অব্যর্থ৷ আমরা সবাই জানি পাইলসের প্রধান কারণই হল কোষ্ঠকাঠিন্য৷
ঠিক তেমনই পেঁপেতে থাকে আরও একটি জরুরি উপাদান কোলিন৷ যা শরীরে পেশীর সংকোচন, প্রসারণে সাহায্য করে৷ স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা বাড়ায়৷
পাইলস বা অ্যানাল হেমারয়েডসের সমস্যা দূর করতে স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা খুবই প্রয়োজনীয়৷ এর ফলে অ্যানাল মাসলের সংকোচন, প্রসারণ ভাল হয়৷
-নিউজএইটিনডটকম

কালোজিরা রোজ রোজ

 ঘরেই থাকে। রান্নায় সবসময় এর ব্যবহার হয়। অথচ জানেন কি, কালোজিরায় রয়েছে অসংখ্য গুণ।

• সর্দি কাশি রুখে দিতে কালোজিরার কোনও বিকল্প নেই। পরিষ্কার কাপড়ে কালোজিরা নিয়ে তা দিয়ে একটি পুঁটলি পাকিয়ে নাকের কাছে ধরে বড় করে শ্বাস টানুন কিছুক্ষণ। বন্ধ নাক খুলে যাবে। সর্দি কমে যাবে। ঘরোয়া টোটকায় মিলবে মুক্তি।
• করোনা প্রকোপের সময় সকলেই বলছেন শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর কথা। সেই কারণেই বলা চলে, কালোজিরাতে রয়েছে ফসফরাস। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শরীরে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। তবে প্রতিদিন কালোজিরা খেতে হবে।
• চুল পড়া রুখে দিতে কালোজিরার তেল উপকারী। একচামচ নারকেল তেলের সঙ্গে কালোজিরা মিশিয়ে যদি চুলে ব্যবহার করা যায়, তাহলে চুল পড়ার সমস্যা কমে যেতে পারে। তবে এই মিশ্রণ অনেকদিন ধরে ব্যবহার করতে হবে। কয়েটকা দিন ব্যবহার করে বন্ধ করে দিলে চলবে না।
• যাঁরা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভোগেন, তাঁদের জন্য কালোজিরা উপকারী। কালোজিরা দিয়ে তৈরি রান্না খেলে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা কমবে।
• যদি শরীরে কোথাও হঠাৎ ব্যথা লাগে, বা পুরনো কোনও ব্যথা থাকে, তাহলে সেই ব্যথার উপশমে কালোজিরা ব্যবহার করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে কালোজিরার সঙ্গে সর্ষের তেল মিশিয়ে মালিশ করলে ব্যথায় স্বস্তি পাওয়া যায়।

সম্পর্ক মূলত কিসের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে?

 একটি সম্পর্ক মূলত কতগুলো উপাদানের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে। কিংবা বলা যায় যে একটি সম্পর্কের কাঠামো মূলত কতগুলো উপাদানের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে। উপাদানগুলো হলোঃ

১। সততা: Honesty is being truthful in what you say and do
সততা একটি মানবিক গুনাবলি। এটি একজন মানুষকে সত্যিকারের মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করে। সততা একটি অত্যন্ত সুন্দর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। যা একটি মানুষকে অন্যদের কাছে সম্মানিত করে তোলে।
২। ওয়াদা বা কথা দিয়ে কথা রাখার প্রবণতাঃ if you keep your word, you do what you promised to do. ওয়াদা একটি কঠিন শব্দ যার গুরুত্ব অনেক এই মানব জীবনে। যে লোক কথা দিয়ে কথা রাখে না সে কখনো নিজেকে একজন ভাল মানুষ বলে দাবী করতে পারে না। যেকোনো ধরনের সম্পর্ক ওয়াদার মাধ্যমে গড়ে ওঠে।
৩। বিশ্বস্ততাঃ capable of being believed; believable যেকোনো সম্পর্কের মাঝে বিশ্বস্ততা থাকা জরুরী। অন্যথায় কোন সম্পর্কই টিকে থাকে না। বিশ্বস্ততা অনেকটা দায়বদ্ধতার সাথেও সম্পর্কিত। তাই বর্তমান সমাজে এই বিশ্বস্ততায় খুব সহজেই চির ধরতে দেখা যায়।
৪। বন্ধুত্ব: a relationship of mutual affection বন্ধুত্বের মত মিষ্টি সম্পর্ক বোধহয় আর কোথাও নেই। বন্ধুত্ব এমন একটি বাঁধন যা সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির বা আচরণের মানুষের সাথে গড়ে উঠতে পারে নিমিষেই। বন্ধুত্ব খুব সহজেই দুটি মানুষের মাঝে প্রাণের সখ্যতা গড়ে তোলে এবং তা আলোয় আলোয় ভরিয়ে দেয়।
৫। দায়িত্ব নেয়ার ক্ষমতাঃ to take responsibility for life, is to take responsibility for powers of thinking, feeling, speaking and acting, because this is the structure of all human experience. দায়িত্ব যা কিনা একটি ভারি শব্দ। প্রতিটি মানুষই এর ভার বহন করতে কিছুটা কুণ্ঠিত হয়ে থাকে। কিন্তু যেকোনো সম্পর্ক গড়তে গেলেই এই শব্দটি চলে আসে। যেকোনো সম্পর্কের ভিত্তি যেন এই শব্দটির সাথে জড়িত। তাই যে মানুষের এই দায়িত্ব নেয়ার ক্ষমতা বেশি থাকে সে খুব সহজেই মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়ে থাকে।
৬। বোঝার ক্ষমতাঃ having power and ability; efficient; competent একটি সুন্দর সম্পর্ক অনেকটা নির্ভর করে একে অপরের বোঝার ক্ষমতার উপর। যখন একজন অন্যজনের প্রয়োজন সুবিধা- অসুবিধা, রাগ-অনুরাগ বিভিন্ন অনুভূতি বোঝার চেষ্টা করে এবং কিছুটা বুঝতে পারে তখনই একটি সুন্দর সম্পর্কের সৃষ্টি হয়।
৭। স্বচ্ছতাঃ the quality of being done in an open way without secrets মনের দুয়ার যার স্বচ্ছ কাঁচের মত তার দৃষ্টি হয় সুন্দর ও মলিন। আর এমন একটি বৈশিষ্ট্য যার মধ্যে থাকে সে হয়ে যায় অনন্য।
৮। ভালোবাসাঃ an intense feeling of deep affection ভালোবাসা শব্দটি একটি অনুভূতির সাথে জড়িত। পৃথিবীতে মনে হয় কেবল মানুষই আছে যে কিনা ভালোবাসার অনুভূতিগুলো ব্যক্ত করতে জানে সুন্দর সুগভীর শব্দ চয়নে।
এ সকল উপাদানের মিশ্রণে একটি সুন্দর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তারপরেও কিছু থেকে যায় যা কিনা মানুষ তার ব্যক্তিগত দক্ষতা বা গুণাবলীর দ্বারা অতিক্রম করে যায়।
-স্পাইকস্টোরি

আল্লাহ নিতান্ত মেহেরবান ও দয়ালু

 আর রাহমান

সূরা বাক্কারার এই আয়াতে আল্লাহ আমাদেরকে তিনি কেমন প্রভু, তার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। মাত্র দুটি শব্দের মধ্যে কী ব্যাপক পরিমাণের তথ্য আছে তা অকল্পনীয়। প্রথমত, রাহমা-ন এবং রাহি-ম: এই দুটো শব্দই এসেছে রাহমা থেকে, যার অর্থ: দয়া। আরবিতে রাহমা শব্দটির আরেকটি অর্থ ‘মায়ের গর্ভ।’ মায়ের গর্ভে শিশু নিরাপদে, নিশ্চিতে থাকে। মায়ের গর্ভ শিশুর জীবনের সব মৌলিক চাহিদার ব্যবস্থা করে দেয়, শিশুকে আঘাত থেকে রক্ষা করে, শিশুর বেড়ে উঠার জন্য সব ব্যবস্থা করে দেয়। শিশুর জন্য সকল দয়ার উতস হচ্ছে তার মায়ের গর্ভ।
এখন রাহমান এবং রাহিম দুটো শব্দই এসেছে রাহমাহ থেকে, কিন্তু যেহেতু শব্দ দুটোর গঠন দুই ধরনের, তাই তাদের অর্থ দুই ধরণের দয়ার—
রাহমা-ন এর শেষে যে একটা টান আছে: ‘আন’, তা প্রচণ্ডতা নির্দেশ করে। রাহমান হচ্ছে পরম দয়ালু, অকল্পনীয় দয়ালু। আল্লাহ তার একটি গুণ ‘আর-রাহমা-ন’ দিয়ে আমাদেরকে বলেছেন যে, তিনি পরম দয়ালু, তাঁর দয়ার কথা আমরা কখনও কল্পনা করতে পারব না। একজন মা যেমন তার শিশুর জন্য সবরকম মৌলিক চাহিদা পূরণ করে, সবরকম বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করে, আল্লাহ তার থেকেও বেশি দয়ার সাথে তাঁর সকল সৃষ্টিকে পালন করেন, রক্ষা করেন, তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করেন। আল্লাহ তাঁর অসীম দয়া দিয়ে প্রকৃতিতে হাজারো ব্যবস্থা করে রেখেছেন পৃথিবীর সবধরনের প্রাণীর মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য। মানুষ হাজার বছর ধরে নানা ভাবে প্রকৃতির এই ব্যবস্থাগুলো ধ্বংস করেছে, চরম দূষণ করেছে, অবাধে গাছ, পশুপাখি নিধন করেছে। কিন্তু তারপরেও কোটি কোটি প্রাণী প্রতিদিন খাবারের সন্ধানে বের হয় এবং ঠিকই খাবার খেয়ে ঘরে ফিরে। শুধু ইউরোপেই প্রতি বছর ৩০০ মিলিয়ন গবাদি পশু এবং ৮ বিলিয়ন মুরগি খাবার জন্য হত্যা করা হয়। তারপরেও আমাদের গবাদি পশু, হাস-মুরগির কোনো অভাব হয় না; কারণ, আল্লাহ পরম দয়ালু।
দ্বিতীয়ত, রাহমা-ন শব্দটির গঠন এমন যে, এটি কোনো কিছু এই মুহূর্তে হচ্ছে—তা নির্দেশ করে। যেমন আপনি যদি বলেন: “মুহম্মদ একজন উদার মানুষ”, তার মানে এই না যে মুহম্মদ এই মুহূর্তে কোনো উদার কাজ করছে, বা কাউকে কিছু দান করছে। কিন্তু রাহমা-ন শব্দটির গঠন এমন যে, তা নির্দেশ করে এই মুহূর্তে আল্লাহ অকল্পনীয় দয়ালু। তিনি আপনাকে, আমাকে, আমাদের পরিবারকে, সমাজকে, আমাদের দেশকে, আমাদের ছোট গ্রহটাকে, আমাদের ছায়াপথের ১০০ কোটি তারা এবং কোটি কোটি গ্রহকে, পুরো মহাবিশ্বের ১০০ কোটি ছায়াপথকে এবং তাদের প্রত্যেকটির ভিতরে কোটি কোটি তারা এবং গ্রহকে এই মুহূর্তে, একই সময়ে, একই সাথে দয়া করছেন।
তৃতীয়ত, রাহমা-ন শব্দটির গঠন এমন যে, এটি একটি অস্থায়ী ব্যাপার নির্দেশ করে। একই ধরণের কিছু শব্দ হল জাওআ’-ন যার অর্থ প্রচণ্ড ক্ষুধায় কাতর, আ’তশা-ন প্রচণ্ড পিপাসার্ত। এই ধরণের শব্দগুলোর প্রতিটি একটি অস্থায়ী ধারণা নির্দেশ করে, যা পরিবর্তন হতে পারে। যেমন, খাবার ক্ষুধাকে দূর করে দেয়, পানি পিপাসাকে দূর করে দেয়। ঠিক একইভাবে আমরা যদি আল্লাহর কথা না শুনি, তাহলে আল্লাহ তাঁর রহমতকে আমাদের উপর থেকে তুলে নিতে পারেন। আল্লাহর রহমত যে অস্থায়ী, তা রাহমা-ন শব্দটির গঠন নির্দেশ করে।
আর রাহি-ম
রাহি-ম এর শেষে যে একটা টান আছে: ‘ইম’ −সেটা ‘সবসময় হচ্ছে’ এমন কিছু নির্দেশ করে। আল্লাহ নিরন্তর করুণাময় প্রভু। তিনি মানুষের মত অল্প করুণাময়, মাঝে মাঝে করুণাময় নন। আল্লাহ কিন্তু শুধুই বলতে পারতেন “তিনি পরম করুণাময়”, এ পর্যন্ততই। কিন্তু একজন পরম করুণাময় কিন্তু সবসময় করুণা নাও দেখাতে পারেন। তিনি সকালে করুণা দেখালেন, রাতে আর দেখালেন না। কিন্তু না, তিনি নিরন্তর করুণাময়। তিনি প্রতি মুহূর্তে আমাদেরকে করুণা করছেন। আপনি যখন সকালে ফজরের এলার্ম বন্ধ করে নামাজ পড়বেন কিনা তা কিছুক্ষন চিন্তা ভাবনা করে আবার ঘুম দেন, তখন আপনার একটা হাত খুলে পড়ে যায় না। আপনি যখন একজন অন্ধ ফকিরের পাশ দিয়ে না দেখার ভান করে হেটে চলে যান, তখন কিন্তু আপনার চোখ দুটা নষ্ট হয়ে যায় না, কারণ আল্লাহ নিরন্তর করুণাময়। আপনি তাঁর এক মামুলি দাস হয়ে দিনের বেশিরভাগ সময় তাঁর আদেশ অমান্য করে, তাঁকে আপনার পরিবারের সদস্যদের চাহিদা থেকে কম গুরুত্ব দিয়ে, ‘লোকে কী বলবে’ এই ভেবে ক্রমাগত তার আদেশ ভেঙ্গে যাবার পরেও তিনি আপনাকে প্রতিদিন ছেড়ে দেন। কারণ তিনি ‘রাহি-ম’ নিরন্তর করুণাময়।
এখন আল্লাহ যদি অকল্পনীয় এবং নিরন্তর দয়ালু হন, তাহলে কি আমরা যা খুশি তা-ই করে পার পেয়ে যাবো? কারণ, তাঁর দয়ার তো কোনো শেষ নেই?
হে মুহাম্মাদ! বলো, যদি আমার রবের কথা (তাঁর কাজ, পূর্ণতার গুণাবলী, বিস্ময়কর ক্ষমতা ও বিজ্ঞতা) লেখার জন্য সমুদ্র কালিতে পরিণত হয় তাহলে সেই সমুদ্র নিঃশেষ হয়ে যাবে কিন্তু আমার রবের কথা শেষ হবে না৷ বরং যদি এ পরিমাণ কালি আবারও আনি তাহলে তাও যথেষ্ট হবে না৷
-সূরা আল কাহফ আয়াত ১০৯
-quranerkothaডটকম

নিয়মিত আদা, চালিয়ে যান দাদা

 সকলের বাড়িতে কম বেশি আদার ব্যবহার আছে, তাই না?

• তবে আদার যে কত গুণ, সে কথা সকলে জানেন কী?‌ জানেন না বোধহয়। আরও অনেক শাক, সবজি, ফলের মতো আদারও রয়েছে অনেকগুণ। নিয়মিত আদা খেলে অনেক উপকার হতে পারে।
• যেমন রোজ যদি তিন থেকে চার গ্রাম আদা খাওয়া যায়। তাহলে শরীরে কোলেস্টরলের মাত্রা অনেকটা কম থাকে। ফলে ইদানিং কালে অনিয়ন্ত্রিত কোলেস্টরলের সমস্যায় যাঁরা ভুগছেন, তাঁরা আদা খেতে পারেন।
• কোলেস্টরল কমা মানেই হৃদরোগের সম্ভাবনা অনেকটা কমে যাওয়া। ফলে আদা পরোক্ষভাবে হৃদরোগের ঝুঁকিও কমায় বলা চলে।
• সর্দি, কাশিতে এটি অনেকটা কাজ দেয়। গলা ব্যথা, খুসখুসে কাশি সারিয়ে তুলতে অনেকদিন ধরে আদার প্রয়োগ হয়ে আসছে। ক্রমাগত কাশি আসতে থাকলে যদি দাঁতের ফাঁকে একটুকরো আদা রাখা যায়, অনেকটা আরাম পাওয়া যায়।
• এছাড়াও আদার মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট থাকায়, এটি শরীরের রক্ত চলাচল ঠিক রাখে। বার্ধক্য কমায়। এছাড়াও, যাদের বমির অভ্যাস আছে, তাঁদের সারিয়ে তুলতে আদা কাজে লাগতে পারে।
-news18

কোন ইলিশ কিনবেন? জানেন কি ইলিশই সেরা?

 ইলিশ (বৈজ্ঞানিক নাম:Tenualosa ilisha, Hilsa ilisha) বাংলাদেশের জাতীয় মাছ।

তুমুল বর্ষণ বা ইলশে গুঁড়ি, বর্ষার ধরন যা–ই হোক না কেন, বাঙালি মনে বর্ষার সঙ্গে ইলিশের সম্পর্ক যেন জোড়া লেগে গেছে। সময় বড় খারাপ চলছে, করোনা ভাইরাসের এই কালে মানুষ স্বাদের কথা শিকেয় তুলে খুঁজছেন পুষ্টিগুণ! বাঙালির খাওয়া কন্টিনেন্টালের চাকা ছেড়ে ফিরে এসেছে মা -দাদীর তুলসি -হলুদে৷ সবেতেই হিসেব যাক বাবা দিনের কৌটার ভিটামিন সি খাওয়া হল, জিঙ্কটা ঠিক গেল তো! তবে বাঙালিকে খুশি করার মতো খবর আছে এখানে৷ তাদের সবচেয়ে পছন্দের মাছ -অর্থাত ইলিশ খেতে পারেন জমিয়ে৷ কারণ মাছের রাজা তো আর সে শুধু শুধু হয়নি, পুষ্টিগুণে ভরপুর এই সুস্বাদু মাছ ৷
ফ্যাট ২ ধরণের হয় আর ইলিশ মাছে ফ্যাটের পরিমাণ বেশি৷ তবে সেটি হল ভাল ফ্যাট- হাই-ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন বা এইচ.ডি.এল৷ ইলিশ মাছে পলি আনস্যাচুরেটেড এবং মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণই বেশি যা আমাদের শরীরের জন্য উপকারি৷ মাঝারি সাইজের ইলিশ মাছ সবচেয়ে পুষ্টিকর৷ মোটামুটি সাতশো গ্রাম থেকে এক কেজির ওজনের ইলিশ মাছের মধ্যেই একমাত্র পলি ও মনো আন-স্যাচুরেটেড ফ্যাট পাওয়া যায়৷
এর চেয়ে বেশি ওজনের ইলিশ মাছ হলেই জানবেন সেটিতে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ অনেক বেশি৷ সেটা আমাদের শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর৷ তবে একদম কম ওজনের ইলিশ মাছ যাকে খোকা বা জাটকা ইলিশও বলা হয় সেটা কিন্তু ততটা পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ নয়৷ এই মাছে প্রোটিনের পরিমাণ বেশ কম৷
তাই মাঝারি সাইজের ইলিশ মাছ আছে প্রচুর প্রোটিন, জিঙ্ক, ক্রোমিয়াম, সেলেনিয়ামের মতো খনিজ৷ ১০০ গ্রাম ইলিশ মাছে রয়েছে ২২.৩ শতাংশ প্রোটিন৷ করোনা কালে জিঙ্কের গুরুত্ব সকলেই এতদিন জেনে গেছেন৷ এছাড়াও জিঙ্ক ডায়াবেটিস রোগীদের পক্ষে খুব ভালো৷ সেলেনিয়াম আবার অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টের কাজ করে৷ এছাড়াও রয়েছে ক্যালসিয়াম আর আয়রনের পুষ্টিগুণও৷
ইলিশ মাছ এবং ইলিশ মাছের তেল হার্টের জন্যও খুব ভালো৷ যাদের কোলেস্টরল বেশি তারাও ইলিশ মাছ খাবেন৷ কারণ তা খারাপ কোলেস্টেরল বা লো-ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন বা এল.ডি.এলকে কমিয়ে দেয়৷ এল.ডি.এল বেড়ে গেলে কিন্তুহার্ট ব্লকের সমস্যা হতে পারে৷
ভিটামিন এ, ডি এবং ই-ও ভরে রয়েছে ইলিশ মাছে৷ বিশেষ করে ভিটামিন ডি কিন্ত্ত খুব কম খাবারেই পাওয়া যায়৷ বাতের ব্যাথা কমাতে ও অস্টিওপোরোসিসের জন্যও ইলিশ মাছ খুব ভালো৷
ইলিশ মাছে আরজিনিন থাকায় তা ডিপ্রেশনের জন্যও খুব ভালো৷ তাছাড়া ইলিশ মাছ ক্যান্সার প্রতিরোধক৷ হাঁপানি-র উপশমেও উপকারি৷ আবার সর্দি কাশি প্রতিরোধেও দারুণ কার্যকরী৷
ইলিশের পাতুরি-ভাপা-ঝাল -ঝোলও সবই সুস্বাদু তাই যেটা ইচ্ছা সেটাই খেতে কোনও বাধা নেই৷ কিন্তু একটাই জিনিস মাথায় রাখবেন ইলিশ মাছটা যেন প্রচণ্ড কড়া করে না ভাজা হয়৷ কারণ উঁচু আঁচে প্রোটিন যেমন নষ্ট হয়ে যায় ঠিক তেমনিই অন্যান্য গুণগুলিও নষ্ট হয়ে যায়৷ তাই মাছটা যেন কম ভাজা হয় শুধু এটাই নজর রাখবেন৷
ইলিশ এক নজরে
১। হার্ট- ইলিশ মাছে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ একেবারেই কম। অন্য দিকে প্রচুর পরিমাণ ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড থাকায় রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কম থাকে। ফলে হার্ট থাকে সুস্থ।
২। রক্ত সঞ্চালন- সামুদ্রিক মাছে থাকা ইপিএ ও ডিএইচএ ওমেগা-থ্রি-অয়েল শরীরে ইকসিনয়েড হরমোন তৈরি রুখতে পারে। এই হরমোনের প্রভাবে রক্ত জমাট বেঁধে শিরা ফুলে যায়। ইলিশ মাছ খেলে শরীরে রক্ত সঞ্চালন ভাল হয়। থ্রম্বসিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে।
৩। বাত- ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের সঙ্গে অস্টিওআর্থারাইটিসের প্রত্যক্ষ যোগ রয়েছে। প্রতি দিনের ডায়েটে সামুদ্রিক মাছ থাকলে বাতের ব্যথা, গাঁট ফুলে গিয়ে যন্ত্রণার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
৪। চোখ- তেলযুক্ত মাছ খেলে চোখের স্বাস্থ্য ভাল থাকে, চোখ উজ্জ্বল হয়। বয়সকালে দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে আসার মোকাবিলা করতে পারে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। ইলিশ মাছের মধ্যে থাকা ভিটামিন এ রাতকানার মোকাবিলা করতেও সাহায্য করে।
৫। প্রয়োজনীয় খনিজ- ইলিশ মাছে রয়েছে আয়ডিন, সেলেনিয়াম, জিঙ্ক, পটাশিয়াম। থায়রয়েড গ্ল্যান্ড সুস্থ রাখে আয়ডিন, সেলেনিয়াম উত্‌সেচক ক্ষরণে সাহায্য করে যা ক্যানসারের মোকাবিলা করতে পারে। এ ছাড়াও ভিটামিন এ ও ডি-র উত্কৃষ্ট উত্স ইলিশ মাছ।
৬। ফুসফুস- বহু গবেষণায় দেখা গিয়েছে সামুদ্রিক মাছ ফুসফুসের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে কার্যকরী। শিশুদের ক্ষেত্রে হাঁপানি রোধ করতে পারে ইলিশ মাছ। যাঁরা নিয়মিত মাছ খান তাঁদের ফুসফুস অনেক বেশি শক্তিশালী হয়।
৭। অবসাদ- ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড অবসাদের মোকাবিলা করতে পারে। সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিজঅর্ডার (SAD), পোস্ট ন্যাটাল ডিপ্রেশন কাটাতে পারে ইলিশ মাছ।
৮। ত্বকের যত্নে- সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মির হাত থেকে ত্বককে রক্ষা করে ওমেগা ফ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। নিয়মিত মাছ খেলে একজিমা, সোরেসিসের হাত থেকে রক্ষা পায় ত্বক। ইলিশ মাছে থাকা প্রোটিন কোলাজেনের অন্যতম উপাদান। এই কোলাজেন ত্বক টাইট ও নমনীয় রাখতে সাহায্য করে।
৯। পেটের যত্নে- ডায়েটে তেলযুক্ত মাছ থাকলে পেটের সমস্যা অনেক কম হয়। আলসার, কোলাইটিসের হাত থেকে রক্ষা করে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যসিড।
১০। ব্রেন- মস্তিষ্কের ৬০ শতাংশই তৈরি ফ্যাট দিয়ে। যার অধিকাংশই ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। যাঁরা নিয়মিত মাছ খান তাঁদের মধ্যে বয়স কালে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা অনেক কম দেখা যায়। শিশুদের মস্তিষ্কের গঠনেও সাহায্য করে ডিএইচএ। অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিজঅর্ডার(ADHD) রোধ করতে পারে ইলিশ মাছ। স্মৃতিশক্তি, পড়াশোনায় মনযোগ বাড়ায়।
শুধু দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার প্রায় ২৬ কোটি মানুষ ইলিশ মাছ খায়। স্যামন ও টুনার পরেই পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি মানুষের কাছে জনপ্রিয় মাছ হচ্ছে ইলিশ। ওয়ার্ল্ড ফিশের হিসাবে ওমেগা-৩ পুষ্টিগুণের দিক থেকে স্যামন মাছের পরেই ইলিশের অবস্থান।
বিশ্বজুড়ে বর্তমানে ইলিশের পুষ্টিগুণের উপকারিতা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। ইলিশ মাছে ক্ষতিকর স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ একেবারেই কম। অন্যদিকে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকায় রক্তে কোলেস্টরলের মাত্রা কম থাকে। ফলে হৃদ্যন্ত্র থাকে সুস্থ। ইলিশ মাছ খেলে শরীরে রক্তসঞ্চালন ভালো হয়। থ্রম্বসিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে। এ ছাড়া ভিটামিন এ ও ডির উতকৃষ্ট উতস ইলিশ। সব মিলিয়ে যা দাঁড়াল, বাঙালির ইলিশই তো সেরা।

চোখ বাঁচাবে মাছের টুকরো

 Enliven your eyes with Fish enriched diet

কথায় বলে মাছে ভাতে বাঙালি। মাছের টুকরো পাতে না থাকলে খাওয়াটা ঠিক জমে না। আর এই খাদ্যাভ্যাস যে কতটা ভাল, তা সামনে এসেছে একটি গবেষণায়।
অবশ্য এই গবেষণার শুরুয়াতটা বাংলা বা বাঙালিকে নয়। জাপানকে সামনে রেখে। কিন্তু ফলাফল বলছে, বাঙালির মতস্যপ্রেম তাঁর মগজাস্ত্রের শান দেওযার অন্যতম হাতিয়ার। সারা বিশ্বই জানে, জাপানিদের গড় আয়ু সবচেয়ে বেশি। কিন্তু কেন? ন্যাশানাল সেন্টার ফর গ্লোবাল হেলথ অ্যান্ড মেডিসিন ইন টোকিওর স্বাস্থ্যবিদরা বলছেন খাদ্যাভ্যাসেই জরাকে জয় করে জাপানিরা। আর খাদ্যতালিকার প্রধান উপাদানই হচ্ছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড।
আর এই ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে তেলযুক্ত মাছে। সামুদ্রিক মাছের মধ্যে উপস্থিত এই ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড মস্তিষ্কের উর্বরতাও যোগায়।
এছাড়া সিঙ্গাপুরের লুইসিয়ানা স্টেট ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক সম্প্রতি দাবি করেন, দৃষ্টিশক্তি বাড়াতেও সাহায্য করে এই ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড।
দলের প্রধান নিকোলাস বাজানের দাবি, রেটিনার স্বাস্থ্য ধরে রাখতে পাতে রাখতে হবে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড।
Tips for eye health
It’s important that you take care of your eyes on a regular basis to maintain eye health. Eating eye-healthy foods is not the only way to protect your eyes. Other ways you can keep your eyes healthy include:
• visiting an eye doctor every one to two years
• wearing sunglasses when outdoors
• avoiding smoking
• maintaining a healthy weight
• wearing protective eye gear when engaging in sports, hobbies, home projects, or work-related activities
• managing blood sugar

রাগ

 Anger

রাগ হলো মনের সেই অবস্থা যখন জিভ মনের আগে আগে চলে। তাই রাগকে বশ করতে চাইলে মনের প্রকৃত স্বরূপ- সহনশীলতা ও প্রেম-ভালোবাসার কাছেই ফিরে যেতে হবে।
রাগ মানুষের শরীরের অনেক ক্ষতির জন্য দায়ী। একজনের রাগ অন্যেরও রাগের সৃষ্টি করতে পারে। কারণ তালি কখনোই এক হাতে বাজেনা। তাই আমি বলবো যে তোমার ওপর রাগ করেছে, তাকে ফুল দাও। রাগ করোনা, নিজের ক্ষতি করোনা।
রাগের কাছে প্রজ্ঞা ছারখার
নিজের মধ্যে সুখ খুঁজে পাওয়া খুবই দুঃসাধ্য একটি কাজ। তেমনিই দুঃসাধ্য সুখকে সর্বত্র খুঁজে পাওয়া। -অ্যাগনিজ রেপ্লিয়ার
অহং-এ নিঃশেষ মান-সম্মান
দুশ্চিন্তায় নিঃশেষ জীবন
উতকোচে নিঃশেষ বিচার
লোভে সততার অবসান
ভয়ে নিঃশেষ মানুষ
মহানুভবতাই জীবনের একমাত্র আভরণ
আপন দৃঢ় স্বাধীন চিন্তা সবচেয়ে বিশ্বস্ত সহচর
যাচেনা যে কিছুই, সবকিছু এমনিতেই হয় তারই
যে সুখ অন্যের কষ্টের কারণ তা করো বিপুলভাবে ত্যাগ
আল্লাহ পাক বলেন, যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল সব অবস্থায়ই অর্থ-সম্পদ ব্যয় করে এবং যারা ক্রোধ দমন করে ও অন্যের দোষ–ক্রটি মাফ করে দেয়৷ এ ধরনের সত লোকদের আল্লাহ অত্যন্ত ভালোবাসেন। -আয়াত ১৩৪, সূরা আলে ইমরান

কচু প্রশস্তি

 কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কচুর স্তুতি গেয়েছেন তার অধিকার কবিতায়ঃ

অধিকার বেশি কার বনের উপর
সেই তর্কে বেলা হল, বাজিল দুপর।
বকুল কহিল, শুন বান্ধব-সকল,
গন্ধে আমি সর্ব বন করেছি দখল।
পলাশ কহিল শুনি মস্তক নাড়িয়া,
বর্ণে আমি দিগ্বিদিক রেখেছি কাড়িয়া।
গোলাপ রাঙিয়া উঠি করিল জবাব,
গন্ধে ও শোভায় বনে আমারি প্রভাব।
কচু কহে, গন্ধ শোভা নিয়ে খাও ধুয়ে,
হেথা আমি অধিকার গাড়িয়াছি ভুঁয়ে।
মাটির ভিতরে তার দখল প্রচুর,
প্রত্যক্ষ প্রমাণে জিত হইল কচুর।
বিজ্ঞানও কচুর প্রশস্তিতে কম যায় না। বিজ্ঞান জানাচ্ছেঃ
ভিটামিন ও আয়রনে সমৃদ্ধ কচু, এক নয় বহু রোগ নিরাময় করে সহজেই
নানান পদে কচু প্রতিটি বাঙালির মন জয় করে প্রতি বারে
বাঙালির কাছে কচুর পরিচয় একটু আলাদাই। খাবার উপযোগী কচু অত্যন্ত প্রিয় একটি খাদ্য ৷
কচুর খাদ্যগুণ বা পুষ্টি রীতিমত চমকে দেবে ৷ প্রধানত কচুতে ভিটামিন এ ও আয়রন প্রচুর পরিমাণে থাকে, রক্ত পরিশ্রুতকরণও কচুর অন্যতম প্রধান গুণ ৷
কচু বিভিন্ন রূপে খেতে ভালবাসে খাদ্য রসিক বাঙালি, কচুশাক, কচুর লতি, গাঁটি কচু, চিংড়ি ও ইলিশ মাছ দিয়ে কচু শাকের উপাদেয় তরকারী বারেবরে বাঙালির মন জয় করে থাকে ৷
সর্ষে দিয়েও কচুবাটা অত্যন্ত সুস্বাদু রান্না বহু মানুষের কাছে অত্যন্ত প্রিয় খাবারে পরিণত হয়েছে ৷
কচুর নানান পদে বাঙালি রসনা যেন অন্য এক মাত্রা পায়৷ তাই সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কচুর উপযোগিতা জীবনে বেড়েই চলেছে৷
কচুর লতি (Taro stolon)
২. আয়রন: কচুর লতিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। এটা প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। গর্ভস্থ অবস্থা, খেলোয়াড়, বাড়ন্ত শিশু, কেমোথেরাপি দিচ্ছে- এমন রোগীদের জন্য কচুর লতি অত্যন্ত উপকারী। এতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম। ক্যালসিয়াম হাড় শক্ত করে ও চুলের ভঙ্গুরতা রোধ করে।
২. ফাইবার: এই সবজিতে ডায়াটারি ফাইবার বা আঁশের পরিমাণ খুব বেশি। এই আঁশ খাবার হজমে সাহায্য করে, দীর্ঘ বছরের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, যেকোনো বড় অপারেশনের পর খাবার হজমে উপকারী পথ্য হিসেবে কাজ করে এটি।
৩. ভিটামিন: ভিটামিন ‘সি’ও রয়েছে কচুর লতিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে, যা সংক্রামক রোগ থেকে আমাদের দূরে রাখে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে করে দ্বিগুণ শক্তিশালী। ভিটামিন ‘সি’ চর্মরোগের বিরুদ্ধে কাজ করে।
৪. কোলেস্টেরল বা চর্বি: কিছু পরিমাণ ভিটামিন ‘বি’ হাত, পা, মাথার উপরিভাগে গরম হয়ে যাওয়া, হাত-পায়ে ঝিঁ ঝিঁ ধরা বা অবশ ভাব- এ সমস্যাগুলো দূর করে। মস্তিষ্কে সুষ্ঠুভাবে রক্ত চলাচলের জন্য ভিটামিন ‘বি’ বেশী জরুরি। এতে কোলেস্টেরল বা চর্বি নেয়। তাই ওজন কমানোর জন্য কচুর লতি খেতে বারণ নেই।
৫. আয়োডিন: খাবার হজমের পর বর্জ্য দেহ থেকে সঠিকভাবে বের হতে সাহায্য করে। তাই কচুর লতি খেলে অ্যাসিডিটি ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে খুব কম। আয়োডিনও বসতি গড়েছে কচুর লতিতে। আয়োডিন দাঁত, হাড় ও চুল মজবুত করে।
৬. ডায়াবেটিস: অনেকেই কচুর লতি খান চিংড়ি দিয়ে। চিংড়িতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে কোলেস্টেরল। তাই যারা হৃদরোগী, ডায়াবেটিস ও উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরলজনিত সমস্যায় আক্রান্ত বা উচ্চ রক্তচাপে (হাই ব্লাড প্রেশারে) ভুগছেন তারা চিংড়ি ও শুঁটকি মাছ বর্জন করুন।
ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল, হাই ব্লাডপ্রেশার নিয়ন্ত্রণে থাকলে অল্প পরিমাণে চিংড়ি মাছ খেতে পারেন কচুর লতিতে। তবে মাসে এক দিন অবশ্য ছোট চিংড়ি মাছ দিয়ে খেতে পারেন। বড় চিংড়িতে ফ্যাটের পরিমাণ বেশি, তাই পরিহার করা ভালো।
কচুর লতি রক্তে চিনির মাত্রা বাড়ায় না। তাই ডায়াবেটিসের রোগীরা নিঃসংকোচে খেতে পারেন কচুর লতি।
আরো দরকারী টিপসঃ
*গরমে শরীর থেকে পানি বেরিয়ে যায়। কচুর ডাঁটায় প্রচুর পানি থাকে। সে কারণে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কচুর ডাঁটা বা কচু রাখা যেতে পারে।
*এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, ফোলেট, এবং থায়ামিন রয়েছে।
*কচু রক্তের কোলেস্টরলের মাত্রা কমায়।
*কোলন ক্যান্সার ও ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে।
*শিশুদের কচুশাক বেশি করে তেল দিয়ে খাওয়ানো ভালো। এতে থাকা ভিটামিন এ’র কারণে রাতকানা রোগের আশঙ্কা কমে।
*কচুতে অক্সলেট রয়েছে। তাই রান্নার পরও কোনো কোনো ক্ষেত্রে গলা খানিকটা চুলকায়। তাই কচুর তরকারি রান্নার সময় পরিমানমত লেবুর রস, সাদা বা অ্যাপল সিডার ভিনেগার অথবা তেঁতুল মিশিয়ে নিন।
কচুর লতি খাবেন না যে কারণে
*অনেক ক্ষেত্রে কচু খেলে শরীরে অ্যালার্জি এবং হজমে সমস্যা দেখা দেয়। এ ক্ষেত্রে যাদের এ ধরনের সমস্যা রয়েছে তারা কচু খাবেন না। তবে দুপুরের মধ্যে কচুর লতি খেলে সাধারনতঃ হজমের সমস্যা থাক না। কারণ, কচুর লতিকে হজম করতে হলে রোদের উপস্থিতি লাগে।
ছড়া/মুখী কচু
ক্লান্তি হ্রাস করে কচুর মুখি এনার্জি ধরে রাখতে ও ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে। এর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম থাকে বলে অ্যাথলেটদের জন্য এটি ভালো খাবার।
ওজন কমায় যারা ওজন কমাতে চান তাদের জন্য একটি ভালো খাবার হচ্ছে কচুর ছড়া। কারণ এর ক্যালরির পরিমাণ খুবই কম।
হজম সহায়ক এই সবজিতে প্রচুর ফাইবার থাকে বলে পরিপাক প্রক্রিয়ার জন্য খুবই উপকারী। এটি দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে।
পাকস্থলী পরিষ্কার করে ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে পরিপাক প্রক্রিয়ায় সাহায্য করার পাশাপাশি পাকস্থলীর বর্জ্য পদার্থ নিস্কাশনেও সাহায্য করে কচুর মুখি।
হৃদস্বাস্থ্যের জন্য উপকারী কচুর মুখিতে ফ্যাট ও কোলেস্টেরল কম থাকে বলে ধমনীর শক্ত হয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে। তাই নিশ্চিন্তে কচুর মুখি খেতে পারেন। দৈনিক ভিটামিন ডি গ্রহণের মাত্রার ১৯% পূরণ করা যায় এক কাপ কচুর ছড়া খেয়ে যা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়।
হাইপারটেনশন কমায় হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের কম চর্বি যুক্ত ও কম সোডিয়াম যুক্ত খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এক কাপ কচুর মুখিতে ২০ গ্রাম সোডিয়াম ও ০.১ গ্রাম ফ্যাট থাকে বলে এটি হাইপারটেনশনের রোগীদের জন্য ভালো খাবার। এছাড়াও কিডনি রোগীদের জন্য ভালো।
অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ও ভিটামিন সি এর চমত্কার উত্স কচুর মুখি। এক কাপ কচুর মুখি দৈনিক ভিটামিন সি এর চাহিদার ১১% পূরণ করতে সক্ষম। শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে এই বর্তুলাকার সবজিটি। এছাড়াও ভিটামিন সি ইমিউনিটি বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে। তাই করোনার আক্রমণ কালেও কচুর শাক, লতি বা ছড়া খান।
Surprising Benefits of Taro Root (ছড়া/মুখী কচু)
1. Rich in fiber and other important nutrients
2. May help control blood sugar
3. May reduce your risk of heart disease
4. May offer anticancer properties
5. May help you lose weight
6. Good for your gut
7. Versatile and easy to add to your diet
সূত্রগুলো: News18 Bangla
হেল্থলাইন

অন্যকে সাহায্য করো, নিজে বেড়ে ওঠো!

 o help others to grow is to enable ourselves to grow.

কেউ নেতিবাচক কোন কাজ করে বসলে আমরা খুব সহজেই তার ভুল ধরে ফেলি, সমালোচনাও করি প্রচন্ড। এর চেয়ে সহজ আর কোন কাজ দুনিয়াতে নেই। কিন্তু আমরা কি জানি সেই মানুষটির ভুল ধরে আমরা নিজেদেরকে নেতিবাচকতার দিকে ঠেলে দিচ্ছি? আমাদের মনের ভেতরকার শান্তি বিঘ্নিত করছি? আর এভাবেই আমরা মনের ভারসাম্য নষ্ট করছি তার ভুল ধরার মাধ্যমে?
কেউ যদি ভুল করেই বসে, আমাদের উচিত হবে তার সে কাজটি ভাল করে খতিয়ে দেখা, তাকে মন থেকে সাহায্য করা। এতে করে আমরা তাকে ইতিবাচকতার দিকেই এগিয়ে নিতে পারবো। আর এভাবে আমরাও ই্তিবাচকতার দিকে এগিয়ে আসতে থাকবো। ফলে আমরা উভয় পক্ষই ভাল ফল পেতে থাকবো।
মানুষ তার সমশ্রেণীর কাউকে কিংবা দ্বীনী ভাইকে সাহায্য করলে সেই কল্যাণটা নিজের দিকেই ফিরে আসে। অর্থাত অন্যের কল্যাণ করলে মূলত নিজেরই কল্যাণ হয়। কারণটা হলো যিনি কারো উপকার করছেন বা কারও কল্যাণার্থে আন্তরিকতার সাথে কাজ করেন তার মাধ্যমে আসলে সেই ব্যক্তি নিজেরই ব্যক্তিত্বকে পরিপূর্ণতা দান করেন।
এই সত্যটি স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে অন্যের উপকার করা একটা বদান্যতা, একটা অসাধারণ ঔদার্য ও গুণ। আমাদের সমাজের বহু লোক গুরুত্বপূর্ণ এই মানবিক বৈশিষ্ট্য থেকে বঞ্চিত এমনকি অপরের দু:খ কষ্ট উপলব্ধি করারও ক্ষমতা রাখে না। মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে যে লোক মানুষ ছাড়াও অন্যান্য প্রাণীর উপকার করাকে মানে জন্তু-জানোয়ার, পশুপাখি, গাছপালার সেবা করাকে নিজের একটি মৌলিক দায়িত্ব বলে মনে করে তারা অনেক বড় মাপের মানুষ হিসেবে পরিগণিত।
অন্যদিকে যারা অপরের সেবায় নিয়োজিত থাকে, পরোপকারী তারা সবসময় সুস্থ জীবনযাপন করে, আনন্দঘন জীবনযাপন করে।
কুরআনুল কারিম যে বিষয়টির প্রতি বেশি গুরুত্ব দিয়েছে তা হলো আপনি যদি কারও দিকে সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন অর্থাত কারো সেবা করেন বা উপকার করেন, সেটা আসলে অন্যের উপকার নয় নিজেরই উপকার করলেন। সূরা বনি ইসরাইলের ৭নং আয়াতে বলা হয়েছে: "দেখো, তোমরা ভালো কাজ করে থাকলে তা তোমাদের নিজেদের জন্যই ভাল ছিল”। তার মানে মানুষ তার সমগোত্রীয়কে কিংবা দ্বীনী ভাইকে যে সাহায্য সহযোগিতা করে তা প্রকৃতপক্ষে সাহায্যকারীর নিজের ভাণ্ডারেই জমা হয়। কারণ, সেবাকারী ব্যক্তি ওই সাহায্য সহযোগিতা করে নিজের ব্যক্তিত্বকে পরিপূর্ণ করে তোলে। এভাবেই ব্যক্তির অস্তিত্ব পূর্ণতায় পৌঁছার পথ সুগম হয়।
মানুষের সেবা ও সহযোগিতা করা এমন একটি গুণ যা সবসময়ই শুভ ও কল্যাণ বয়ে আনে। আল্লাহর নৈকট্য লাভের বিষয়টি ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি বিচিত্র বালা মুসিবত দূর হয়ে যায়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো সেবার প্রতিদান হিসেবে আল্লাহর কাছে প্রিয় হয়ে ওঠার সুযোগ তৈরি হয়। আর কে না জানে আল্লাহর প্রিয় হওয়া মানেই তাঁর দয়া ও রহমত লাভের পথ সুগম হয়ে যায়। দ্বীনী শিক্ষা তো এরকম যে, তুমি যদি কোনোদিন নফল রোজা রাখো এবং কেউ যদি তোমাকে তার বাসায় দাওয়াত করে, তাহলে বলো না রোজা রেখেছো, তুমি বরং তার দাওয়াত গ্রহণ করো! তার বাসায় যাও এবং খাও! আল্লাহ তোমাকে সেই রোজার সওয়াব দান করবেন। কেননা এ কাজের মাধ্যমে তুমি একজন মুসলমানের অন্তরকে আনন্দে ভাসাতে সহযোগিতা করেছো। এই প্রসঙ্গে রাসুল (সা) বলেছেন: তুমি যদি আল্লাহর সাহায্য পেতে চাও তাহলে মানুষকে সাহায্য করো!
It is easy to raise our voices and complain when we encounter someone else’s negativity. This disturbs our own inner calm and we become caught up with that negativity, when thrown off balance in this way, we are unable to give the other person the support he or she needs.
When someone is doing something wrong, I need to see what I can do to help that person, there is surely something I can contribute toward the growth of each and every human being. When I focus on how best is it to offer my help, I do not become caught up with negativity and I can transform the situation into one that benefits us both.

Tuesday, August 18, 2020

With Negativity, self-esteem is terribly shaken

 নেতিবাচকতা আত্মবিশ্বাস নড়বড়ে করে দেয়

জীবনযাপন পদ্ধতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো ‘মানসিক চাপ’। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডব্লিউ.এইচ.ও এ বিষয়টির ওপর ভীষণরকম গুরুত্ব দিয়েছে। আসলে মানসিক চাপ জীবনের একটি ধ্রুব বাস্তবতা। আমাদের সবার জীবনেই বিচিত্র ধরনের উত্থান পতন রয়েছে, রয়েছে অসংলগ্নতা, দু:খ-কষ্ট, অপ্রাপ্তির বেদনা ইত্যাদি।
এগুলো নি:সন্দেহে মানুষের ভেতরটাকে অস্থির করে তোলে, বিষন্ন করে তোলে, বিরক্তির উদ্রেক ঘটায়। আমরা যদি আমাদের জীবনের অবস্থায় দেখা দেওয়া সমস্যা, জটিলতা ইত্যাদিকে সুন্দরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারি কিংবা সমস্যাগুলোর যথাযথ সমাধানের উপায় খুঁজে বের করতে না পারি, তাহলেই আমরা মানসিক চাপের মুখে পড়ে যাই। এই মানসিক চাপ ব্যক্তির ওপর তো বটেই পরিবেশের ওপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলে।
যখন আমরা মানসিক চাপের সম্মুখিন হই তখনই এক ধরনের নেতিবাচকতা আমাদের পেয়ে বসে। নিজের সম্পর্কে বা নিজের দিকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে তাকাতে শুরু করে দেই আমরা। যার ফলে আত্মবিশ্বাস নড়বড়ে হয়ে ওঠে, বিষন্নতা অবসাদ পেয়ে বসে আমাদের। আর এই অনাকাঙ্ক্ষিত মানসিক অবস্থার কুপ্রভাব পড়ে আমাদের ব্যক্তি আচরণের ওপর। আমরা অশালীন অসংলগ্ন আচরণ করতে শুরু করে দেই, উত্তেজিত হয়ে উঠি এককথায় এক ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় আমাদের কাজে কারবারে,কথাবার্তায়, আচার আচরণে। এই অনুভূতির কারণে আমাদের শারীরিক সমস্যা যেমন মাথাব্যথা, পেটের পীড়া, নিদ্রাহীনতা, আলসার, উচ্চ রক্তচাপ, বিচিত্র ধরনের হৃদরোগ, এমনকি ব্রেইন স্ট্রোক পর্যন্ত দেখা দিতে পারে।
মানসিক চাপের পরিণতি সম্পর্কে কথা বলছিলাম আমরা। একেবারে ব্রেইন স্ট্রোকের আশঙ্কা পর্যন্ত গড়িয়েছে আমাদের আলোচনা। তবে স্ট্রেস বা মানসিক চাপ যে কেবল নেতিবাচক দিকগুলো থেকেই আসে তা কিন্তু নয়। অনেক সময় নেতিবাচকতার পাশাপাশি কিছু ইতিবাচক দিক থেকেও কিন্তু মানসিক চাপ দেখা দিতে পারে বলে মনোবিজ্ঞানীদের ধারণা। যেমন বিয়ে শাদি, সন্তানের জন্ম কিংবা নতুন কোনো কাজ ইত্যাদি। কানাডিয় ফিজিওলজিস্ট হ্যান্স সিলের মতে আমাদের জীবনে কিছু চাপ থাকার প্রয়োজন রয়েছে। চাপ হলো চাটনির মতো। এইসব চাপ জীবনে চাটনির মতো স্বাদ তৈরি করে। সুতরাং মানসিক চাপের কারণ বা উপাদানগুলোকে পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া কেবল যে বাস্তব সম্মত নয়, তাই নয় বরং তা জীবনকে অনেকটা একঘেঁয়েও করে তোলে ।
অতএব মানসিক চাপ কীভাবে প্রতিহত করা যায় কী করে তা মোকাবেলা করা যায় সেই জ্ঞান বা উপায়গুলো জানাটাই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এমনও অনেক মানুষ আছেন যাঁরা সামান্য একটু এধার ওধার মানে পরিবর্তন দেখলেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। এমনকি ইতিবাচক পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও এই সমস্যা দেখা দেয়। এটা মানসিক চাপের কারণেই হয়ে থাকে। অনেকেই আবার রোগ-ব্যাধির কষ্ট, নিকটজনদের কারো মৃত্যু, কারাবান্দি, দু:সহ অত্যাচার ইত্যাদি খুব ঠাণ্ডা মাথায় সহ্য করতে পারেন। এ ধরনের মানুষেরা জীবন সমস্যাগুলোকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখেন এবং তাঁদের আত্মবিশ্বাস প্রবল। জীবনযাপনের ক্ষেত্রে এই ইতিবাচকতা খুবই জরুরি।
গবেষণায় দেখা গেছে ধর্মীয় বোধ ও বিশ্বাস শয়তানি প্ররোচনা এবং উত্তেজনা মোকাবেলায় ব্যক্তিকে হেফাজত করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে। আধুনিক চিকিতসাবিদগণ মানসিক কষ্ট বা মর্মযাতনা দূর করার জন্য ধর্মীয় মূল্যবোধগুলোকে ব্যক্তিমনে দৃঢ়ভাবে স্থাপন করার ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। বলাবাহুল্য এ বিষয়টি মনোরোগ চিকিতসার ক্ষেত্রে যেসব ওষুধ দেওয়া হয় সেসব ওষুধের কার্যকারিতা নিশ্চিত করার সহযোগী বলে মনে করে। ডিউক ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় দেখা গেছে যেসব লোক নিয়মিতভাবে ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদিতে যোগ দেয় সেসব লোকের সুস্থতার পরিমাণ যারা নিয়মিতভাবে ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদিতে যোগ দেয় না তাদের তুলনায় অনেক বেশি।
ডেইল এ. ম্যাথিউস তাঁর বই ‘দ্য ফেইথ ফ্যাক্টরে” বলেছেন: উপাসনালয়ে জনগণের স্বতস্ফূর্ত উপস্থিতি সুস্থতার শক্তি বৃদ্ধির একটা কারণ হিসেবে পরিগণিত। তাঁর বইয়ের নামেই রয়েছে “প্রার্থনার নিরাময় শক্তির প্রমাণ”। এই গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত থেকে প্রমাণ হয় যে, শারীরিক সুস্থতার সঙ্গে আধ্যাত্মিকতার শক্তিশালী সম্পর্ক রয়েছে। আর ধর্মীয় বিশ্বাস ও আচরণগুলোই প্রকৃত সুস্থতার কার্যকরী উপাদান।
পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় উল্লেখ করা হয়েছে যে যাদের অন্তরগুলো ইমানির নূরে আলোকিত, তারা সমগ্র পৃথিবীতে সুন্দর, কল্যাণ আর ভালো ছাড়া অন্য কিছুই চোখে দেখেন না। তারা বিশ্বব্যবস্থাকে সবোর্ত্তম ব্যবস্থা বলে মনে করেন। তাঁরা মহাপ্রজ্ঞাবান সেই স্রষ্টা ও প্রতিপালক খোদার প্রার্থনা করেন যিনি এই বিশ্ব সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য উদ্দেশ্য নিয়ে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি সুন্দর ও কল্যাণ ছাড়া তাঁর সৃষ্টিকূলের জন্য অন্য কোনো কিছুই পছন্দ করেন না। এক্ষেত্রে যদি কোনো কিছুতে ঘাটতি থাকে কিংবা জটিলতা থাকে তাহলে সেসব অসংগতি সহনীয় এবং সমাধানের পর্যায়ে পড়ে।
সূরা বাকারার ১৫৬ নম্বর আয়াতে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে: যারা আল্লাহর ওপর বিশ্বাসী তারা যে-কোনো বিপদ আপদের সময় এই সত্য ও বাস্তবতার প্রতি মনোযোগ আকৃষ্ট করে বলে যে “আমরা আল্লাহর জন্য এবং আল্লাহর দিকেই আমাদের ফিরে যেতে হবে।“
যাই হোক, মানসিক চাপ নিয়ে কথা হচ্ছিল আমাদের। ভয় এই মানসিক চাপের অন্যতম কারণ। ভয় কাটিয়ে ওঠার জন্য যত রকমের উপায়ের কথা বলা হয়েছে সেসবের মধ্যে ধর্মীয় বিশ্বাস সবচেয়ে কার্যকরী ভূমিকা রেখেছে। ভয়ের উতপত্তি যেখান থেকে ধর্মীয় বিশ্বাস সেই উতপত্তিস্থলটাকেই ধ্বংস করে দেয়।
যেসব মানুষ ইসলামি শিক্ষার ছায়াতলে লালিত পালিত হয় পবিত্র কুরআনের দৃষ্টিতে তারা বিচিত্র মানসিক চাপ থেকে নিরাপদ থাকে। শক্তির মূল যে উতস তার সঙ্গে যে মানুষের সম্পর্ক সৃষ্টি হয় পৃথিবীর অন্য কোনো শক্তিই তাকে আর প্রভাবিত করতে পারে না। সুতরাং স্রষ্টার সঙ্গে মানে শক্তির উতসের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনকারী মানুষ আর কোনো কিছুকেই ভয় করে না। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে: “যে-ই এক আল্লাহ ও আখেরাতের ওপর ঈমান আনবে এবং সতকাজ করবে নিসন্দেহে তার কোন ভয় বা মর্ম বেদনার কারণ নেই”।
মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন মানসিক চাপ কমানোর ক্ষেত্রে আমরা যে বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দেওয়াকে প্রয়োজনীয় বলে মনে করি তাহলো পবির্তনের চেষ্টা চালানো। মানসিক চাপের উতসে পরিবর্তন আনা বা এ ধরনের কিছু ভিন্নরকম অনুশীলন। যেমন কখনো কখনো শিক্ষা নিতে বলা হয় যে, কখনো কখনো পরাজয় বা ব্যর্থতারও অভিজ্ঞতা নিতে হতে পারে। তবে মনের ভেতরে কখনো নেতিবাচকতাকে স্থান দেওয়া যাবে না বা তাকে পোষা যাবে না। “আমি তো শেষ হয়ে গেছি, আমাকে দিয়ে আর কিচ্ছু হবে না”-এ জাতীয় চিন্তাভাবনাকে কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। তার পরিবর্তে সবসময় ইতিবাচক চিন্তা করে যেতে হবে। আপনি যদি আপনার অবচেতন মনের চিন্তাগুলো নিয়ে পর্যালোচনা করেন তাহলে যে দৃষ্টিভঙ্গি আপনাকে সবসময় বিষন্নতা বা বিরক্ত করে তা শুধরে নিতে পারবেন।
সবসময় আনন্দপূর্ণ, হাসিখুশি জীবন যাপন করবেন। জীবনে যেসব জিনিস কোনো অর্থ বয়ে আনে না সেগুলোকে স্বাভাবিক আনন্দ দিয়ে পরিহার করুন। মনে রাখবেন আপনি একজন বিশেষ মানুষ এবং নিজের সাথে সবোর্ত্তম আচরণ করার যোগ্যতা রাখেন। ধর্মীয় শিক্ষাও তাই। এতোক্ষণ আমরা যেসব দিক নিয়ে কথা বললাম সেগুলো বাস্তবায়ন করার জন্য ঐশী আদেশগুলো মেনে চলাই যথেষ্ট। যেমন আল্লাহ স্মরণ করা, ধৈর্যধারণ করা, আল্লাহভীতি বা তাকওয়াবান হওয়া, বিপদাপদে ভেঙে না পড়ে সুস্থির থাকা, মানসিক চাপ, বিষন্নতা পরিহার করার জন্য সতকাজ করা এবং অপরের কল্যাণ ও সেবায় এগিয়ে যাওয়া ইত্যাদি। একজন ব্যক্তি এইসব অভ্যন্তরীণ বিশ্বাস দিয়ে মানসিক চাপ ও আঘাতগুলোকে অত্যন্ত সুন্দরভাবে রোধ করে দুরন্ত ঝড়ের মুখেও স্থির অনড় থাকতে পারে।
স্রষ্টার সঙ্গে এই সম্পর্ক স্থাপনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর উপায় হচ্ছে প্রার্থনা, দোয়া এবং নামাজ। অনুভূতি ও মনকে বিন্দুমুখি করার সবোর্ত্তম উপায় হলো নামাজ। স্ক্যাপার বলেছেন: প্রার্থনা উদ্বেগ উতকণ্ঠা আর মানসিক অস্থিরতাটাকে কমিয়ে দিয়ে সুদৃষ্টিকে শক্তি দেয়। সেইসঙ্গে ব্যক্তিমনে দৃঢ় আশার সঞ্চার করে। অপর এক লেখক মিসেস সুফি বেরেনহাম বলেছেন: যেসব চিন্তা আমাদের মনোযোগ কেড়ে নেয়, সেগুলোকে ধুয়ে মুছে ফেলতে হবে। যাতে প্রার্থনায় গভীরভাবে মনোনিবেশ করা যায়। মুনাজাতে নেতিবাচক বাক্য পরিহার করে ইতিবাচক বাক্য ব্যবহার করতে হবে। কেননা অবচেতন মন নেতিবাচকতা গ্রহণ করে না। কুরআনের সেই বাক্যটি মনে করুন: “একমাত্র আল্লাহর জিকির বা স্মরণের মাধ্যমেই অন্তরগুলো প্রশান্তি পায়”
-পার্সটুডে

স্বাস্থ্যযত্নের আধ্যাত্মিক দিক

 The Spiritual Aspect of Healthcare

নীরবতা, সূখ, প্রেম ভালবাসা এবং শুভ ইচ্ছা হলো জীবনের সবচেয়ে উন্নত বৈশিষ্টগুলোর অন্যতম।
সূখ ও শান্তি থাকলে ভাল স্বাস্থ্য পেতে আসলেই কোন অসুবিধা হয় না। মানব জীবনে ভাল স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে দামী মেডিসিন হলো সূখ ও শান্তি। রাগ, লোভ, অপূরণীয় আশা, বেশী বেশী পাওয়ার আকাংখা, অনুভুতিগুলোর অবদমন এবং রিলেশনশীপের ক্ষেত্রে ব্যাপক অমনযোগিতা এ সবগুলোই হলো মানুষের বিশেষ বিশেষ রোগ। এসব রোগের নিমেষেই চলে যাবে যদি মানুষের ভেতর সূখ ও শান্তি বিরাজ করতে থাকে। তাই একবার মনের দিকে তাকাও আর ভাল করে খেয়াল করো এই অসুখগুলোর উতপত্তি কোত্থেকে!
দীর্ঘ ও স্বাস্থ্যবান জীবন পেতে হলে মানুষের জীবনে ৩টি উপাদান খুবই দরকারীঃ
১. দুশ্চিন্তাহীন থেকে পূর্ণ মনযোগের সাথে বাঁচতে শেখা।
২. সময়কে বিশেষভাবে খুবই মূল্যবান ভেবে তার সূ-ব্যবহার করতে শেখা, দীর্ঘসূত্রীতার ভেতরে কোনভাবেই না থাকা।
৩. চিন্তাকে একেবারেই স্বচ্ছ, খাঁটি, ইতিবাচক রাখা এবং সে চিন্তায় যেন প্রচন্ড শক্তি থাকে।
এই তিনটি উপাদানকে সঠিকভাবে কাজে লাগালে আশা করা যায় দীর্ঘ ও স্বাস্থ্যবান জীবন পেতে কোনই অসুবিধা হবে না।
ভালো স্বাস্থ্যের একটি PHILOSOPHY বা দর্শন আছে।
PHILOSOPHY-এই শব্দটির প্রত্যেক অক্ষর দিয়ে এটি সুন্দরভাবে বর্ণনা করা যায়ঃ
P=Present Moment-বর্তমানকে অবশ্যই মূল্য দিতে হবে।
H=Health-স্বাস্থ্যকে হেলাফেলা করা যাবেনা।
I=Ignite the Happiness- সূখকে প্রজ্বলিত করা যায় কিভাবে তা শিখতে হবে।
L=Love unconditionally- নিঃশর্তভাবে ভালবাসতে শিখতে হবে।
O=Open to Learning-শিক্ষণে কোনভাবেই পিছিয়ে থাকা যাবেনা।
S=Self-Audit-নিজের অডিট নিজেই করতে হবে। এখানে ভাল-মন্দ থেকে বাঁচার উপাদান রয়েছে।
O=Optimism-আশাবাদী হতে হবে।
P=Power of Now-‘এখন’-এই কথাটির মূল্য দিতে হবে।
H=High Gratitude- মনের ভেতরে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উচ্চ আশা থাকতে হবে।
Y=Yes to Change toward positivity- সব ইতিবাচক পরিবর্তনকে অবশ্যই স্বাগত জানাতে হবে।
“স্বাস্থ্য” অবশ্যই একটি জটিল বিষয়। তাই ভালো স্বাস্থ্য পাবার চেষ্টায় সকলকেই নিবিষ্টচিত্ত হতে হবে।
এজন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা স্বাস্থ্যের একটি সুন্দর সংজ্ঞা দিয়েছে:
Health is a state of complete physical, mental and social well-being and not merely the absence of disease or infirmity.
শারীরিকভাবে অসুস্থ না হওয়াটাই স্বাস্থ্য নয় বরং স্বাস্থ্য হলো কোন মানুষের শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিকভাবে সুস্থ্য থাকাটাই হলো পরিপূর্ণ স্বাস্থ্য।