মানুষগুলো স্ব-শিক্ষিত হোক
মানুষগুলো আল্লাহকে ভয় করুক
মানুষ মারা গেলে তার আমল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তার কিছু কাজের সওয়াব অথবা গুনাহ তার মৃত্যুর পরও চলমান থাকে। সওয়াবের ক্ষেত্রে সদকায়ে জারিয়া, নেক সন্তান ও মসজিদ নির্মাণ ইত্যাদির কথা আমাদের জানা থাকলেও কোন কোন ধরনের গুনাহ মৃত্যুর পরও চলমান থাকে সে সম্পর্কে আমাদের ধারণা নেই বললেই চলে। তাই আজ আমরা আলোচনা করব এমন কিছু গুনাহ নিয়ে যেগুলো মৃত্যুর পরও মানুষের পাপের বোঝা ভারী করতে থাকে।
১. ত্রাস সৃষ্টি করা : ক্ষমতার লোভ মানুষকে অন্ধ করে দেয়। প্রভাবশালী হওয়ার নেশায় মানুষ নিজ নিজ এলাকায় ত্রাসের জন্ম দেয়। যার কুফল সেই এলাকা ও দেশের মানুষকে যুগের পর যুগ ভোগ করতে হয়। ফলে এর মূল হোতা মৃত্যুর পরও তার সৃষ্ট ত্রাসের প্রভাবে যত অপকর্ম হবে, সব অপকর্মের গুনাহ ভোগ করতে হবে। আবদুল্লাহ (ইবনে মাসউদ) (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, কোনো ব্যক্তিকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হলে, তার এ খুনের পাপের অংশ আদম (আ.)-এর প্রথম ছেলে (কাবিলের) ওপর বর্তায়। কারণ সেই সর্বপ্রথম হত্যার প্রচলন ঘটায়। (বুখারি, হাদিস : ৩৩৩৫)
২. সুদি অ্যাকাউন্ট রাখা : মহান আল্লাহ সুদকে কঠোরভাবে হারাম করেছেন। যারা তা অমান্য করবে, তাদের সঙ্গে যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সুদের যা বকেয়া আছে তা ছেড়ে দাও, যদি তোমরা মুমিন হও। অতঃপর যদি তোমরা না করো, তাহলে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা নাও।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৭৮-২৭৯)
সুদি অ্যাকাউন্ট যত দিন থাকবে, তত দিন সেই অ্যাকাউন্টের গচ্ছিত টাকাগুলো সুদি কারবারেই ব্যবহৃত হবে। আর অ্যাকাউন্ট হোল্ডারও তত দিন আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর বিপক্ষে যুদ্ধে লিপ্ত থাকবে। (নাউজুবিল্লাহ) কেউ যদি অ্যাকাউন্ট বন্ধ না করে মারা যায়, তাহলে সে কবরে থেকেই সুদের গুনাহের বোঝা বইতে থাকবে। আল্লাহ হেফাজত করুন।
৩. দুর্নীতি করা : ইসলামের দৃষ্টিতে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, সুদ, ঘুষ, জুয়া তথা যেকোনো হারাম পন্থা অবলম্বন, ক্ষমতা ও পেশিশক্তির অপব্যবহার, স্বেচ্ছাচারিতা, প্রতারণা, আইনের অসৎ ব্যবহার ইত্যাদির মাধ্যমে ব্যক্তিগত ও গোষ্ঠীগত স্বার্থ হাসিল এবং দেশ, জাতি ও সাধারণ নাগরিকের অধিকার ও স্বার্থ হরণ করার নাম দুর্নীতি। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস কোরো না। শুধু তোমাদের পরস্পরের সম্মতিক্রমে যে ব্যবসা করা হয় তা বৈধ। আর তোমরা নিজেদের কাউকে হত্যা কোরো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়ালু।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ২৯)
দুর্নীতির কারণে একটি সমাজ একটি দেশ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে যায়। এর ভুক্তভোগী হতে হয় কোটি কোটি মানুষকে। কখনো কখনো একটি দুর্নীতি কোটি কোটি মানুষকে শত বছর পিছিয়ে দেয়, ফলে দুর্নীতিকারীকে বছরের পর বছর কোটি মানুষের অভিশাপ মাথায় নিয়ে বেঁচে থাকতে হয়।
৪. সমাজে কুপ্রথা চালু করা : জারির বিন আব্দুল্লাহ বিন জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো উত্তম পন্থার প্রচলন করল এবং লোকে তদনুযায়ী কাজ করল, তার জন্য তার নিজের পুরস্কার রয়েছে, উপরন্তু যারা তদনুযায়ী কাজ করেছে তাদের সমপরিমাণ পুরস্কারও সে পাবে, এতে তাদের পুরস্কার মোটেও হ্রাস পাবে না। আর যে ব্যক্তি কোনো মন্দ প্রথার প্রচলন করল এবং লোকেরা তদনুযায়ী কাজ করল, তার জন্য তার নিজের পাপ তো আছেই, উপরন্তু যারা তদনুযায়ী কাজ করেছে, তাদের সমপরিমাণ পাপও সে পাবে, এতে তাদের পাপ থেকে মোটেও হ্রাস পাবে না। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২০৩)
৫. ভুয়া মেসেজ : অনেক সময় দেখা যায়, মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য অনেকে বিভিন্ন ভুয়া মেসেজ লিখে অন্যদের কাছে পাঠায়। সেখানে লেখা থাকে, রাসুল (সা.) মদিনার এতজন আলেমকে স্বপ্নে দেখিয়েছেন, এই এই করতে হবে। মেসেজটি এতজনকে পাঠালে সুখবর পাবেন, আর না পাঠালে দুঃসংবাদ পাবেন। এ ধরনের মেসেজগুলো একদম ভিত্তিহীন। এ ধরনের কাজের ব্যাপারে রাসুল (সা.) কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার ওপর মিথ্যারোপ করল, সে যেন তার বাসস্থান জাহান্নামকে বানিয়ে নেয়। (তিরমিজি, হাদিস : ২৬৬১)
অতএব যারা এ ধরনের ভিত্তিহীন মেসেজ তৈরি করবে এবং যারা এ ধরনের মেসেজগুলো ছড়াবে প্রত্যেকেই এই মিথ্যা ছড়ানোর গুনাহে লিপ্ত থাকবে। এই চেইন যত দিন চালু থাকবে তত দিন মেসেজ তৈরিকারী ও প্রচারকারীরা গুনাহগার হবে। এমন অবস্থায় সে যদি মারাও যায়, এর গুনাহ তার কবরে পৌঁছাতে থাকবে।
৬. অশ্লীল পোস্ট ও ভিডিও প্রচার : অনেকে আছে ভাইরাল হওয়ার জন্য কিংবা অর্থ উপার্জনের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় অশ্লীল ভিডিও প্রচার করে। এটি জঘন্য অপরাধ। এই পোস্ট, ভিডিও ইত্যাদি দ্বারা যত মানুষ গুনাহ করবে, সে তার একটি অংশ পেতে থাকবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে, তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়া ও আখেরাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আর আল্লাহ জানেন তোমরা জানো না। (সুরা : নুর, আয়াত : ১৯)
যেসব পাপ মৃত্যুর পরও মানুষের আমলনামায় যোগ হবে এর ফিরিস্তি অনেক লম্বা। এখানে সংক্ষেপে কয়েকটি তুলে ধরা হলো, এগুলো ছাড়াও এমন অনেক পাপ রয়েছে যেগুলো কিয়ামত পর্যন্ত মানুষের আমলনামায় গুনাহ পৌঁছাতে থাকবে। যেমন, মদের বার বানানো, সিনেমা হল বানানো ইত্যাদি। এককথায় অপকর্মের যেকোনো রাস্তা তৈরি করে দেওয়াই মানুষকে অগণিত পাপের সাগরে ভাসিয়ে দেয়। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সব পাপ থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন।
No comments:
Post a Comment