Saturday, August 22, 2020

আল্লাহ নিতান্ত মেহেরবান ও দয়ালু

 আর রাহমান

সূরা বাক্কারার এই আয়াতে আল্লাহ আমাদেরকে তিনি কেমন প্রভু, তার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। মাত্র দুটি শব্দের মধ্যে কী ব্যাপক পরিমাণের তথ্য আছে তা অকল্পনীয়। প্রথমত, রাহমা-ন এবং রাহি-ম: এই দুটো শব্দই এসেছে রাহমা থেকে, যার অর্থ: দয়া। আরবিতে রাহমা শব্দটির আরেকটি অর্থ ‘মায়ের গর্ভ।’ মায়ের গর্ভে শিশু নিরাপদে, নিশ্চিতে থাকে। মায়ের গর্ভ শিশুর জীবনের সব মৌলিক চাহিদার ব্যবস্থা করে দেয়, শিশুকে আঘাত থেকে রক্ষা করে, শিশুর বেড়ে উঠার জন্য সব ব্যবস্থা করে দেয়। শিশুর জন্য সকল দয়ার উতস হচ্ছে তার মায়ের গর্ভ।
এখন রাহমান এবং রাহিম দুটো শব্দই এসেছে রাহমাহ থেকে, কিন্তু যেহেতু শব্দ দুটোর গঠন দুই ধরনের, তাই তাদের অর্থ দুই ধরণের দয়ার—
রাহমা-ন এর শেষে যে একটা টান আছে: ‘আন’, তা প্রচণ্ডতা নির্দেশ করে। রাহমান হচ্ছে পরম দয়ালু, অকল্পনীয় দয়ালু। আল্লাহ তার একটি গুণ ‘আর-রাহমা-ন’ দিয়ে আমাদেরকে বলেছেন যে, তিনি পরম দয়ালু, তাঁর দয়ার কথা আমরা কখনও কল্পনা করতে পারব না। একজন মা যেমন তার শিশুর জন্য সবরকম মৌলিক চাহিদা পূরণ করে, সবরকম বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করে, আল্লাহ তার থেকেও বেশি দয়ার সাথে তাঁর সকল সৃষ্টিকে পালন করেন, রক্ষা করেন, তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করেন। আল্লাহ তাঁর অসীম দয়া দিয়ে প্রকৃতিতে হাজারো ব্যবস্থা করে রেখেছেন পৃথিবীর সবধরনের প্রাণীর মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য। মানুষ হাজার বছর ধরে নানা ভাবে প্রকৃতির এই ব্যবস্থাগুলো ধ্বংস করেছে, চরম দূষণ করেছে, অবাধে গাছ, পশুপাখি নিধন করেছে। কিন্তু তারপরেও কোটি কোটি প্রাণী প্রতিদিন খাবারের সন্ধানে বের হয় এবং ঠিকই খাবার খেয়ে ঘরে ফিরে। শুধু ইউরোপেই প্রতি বছর ৩০০ মিলিয়ন গবাদি পশু এবং ৮ বিলিয়ন মুরগি খাবার জন্য হত্যা করা হয়। তারপরেও আমাদের গবাদি পশু, হাস-মুরগির কোনো অভাব হয় না; কারণ, আল্লাহ পরম দয়ালু।
দ্বিতীয়ত, রাহমা-ন শব্দটির গঠন এমন যে, এটি কোনো কিছু এই মুহূর্তে হচ্ছে—তা নির্দেশ করে। যেমন আপনি যদি বলেন: “মুহম্মদ একজন উদার মানুষ”, তার মানে এই না যে মুহম্মদ এই মুহূর্তে কোনো উদার কাজ করছে, বা কাউকে কিছু দান করছে। কিন্তু রাহমা-ন শব্দটির গঠন এমন যে, তা নির্দেশ করে এই মুহূর্তে আল্লাহ অকল্পনীয় দয়ালু। তিনি আপনাকে, আমাকে, আমাদের পরিবারকে, সমাজকে, আমাদের দেশকে, আমাদের ছোট গ্রহটাকে, আমাদের ছায়াপথের ১০০ কোটি তারা এবং কোটি কোটি গ্রহকে, পুরো মহাবিশ্বের ১০০ কোটি ছায়াপথকে এবং তাদের প্রত্যেকটির ভিতরে কোটি কোটি তারা এবং গ্রহকে এই মুহূর্তে, একই সময়ে, একই সাথে দয়া করছেন।
তৃতীয়ত, রাহমা-ন শব্দটির গঠন এমন যে, এটি একটি অস্থায়ী ব্যাপার নির্দেশ করে। একই ধরণের কিছু শব্দ হল জাওআ’-ন যার অর্থ প্রচণ্ড ক্ষুধায় কাতর, আ’তশা-ন প্রচণ্ড পিপাসার্ত। এই ধরণের শব্দগুলোর প্রতিটি একটি অস্থায়ী ধারণা নির্দেশ করে, যা পরিবর্তন হতে পারে। যেমন, খাবার ক্ষুধাকে দূর করে দেয়, পানি পিপাসাকে দূর করে দেয়। ঠিক একইভাবে আমরা যদি আল্লাহর কথা না শুনি, তাহলে আল্লাহ তাঁর রহমতকে আমাদের উপর থেকে তুলে নিতে পারেন। আল্লাহর রহমত যে অস্থায়ী, তা রাহমা-ন শব্দটির গঠন নির্দেশ করে।
আর রাহি-ম
রাহি-ম এর শেষে যে একটা টান আছে: ‘ইম’ −সেটা ‘সবসময় হচ্ছে’ এমন কিছু নির্দেশ করে। আল্লাহ নিরন্তর করুণাময় প্রভু। তিনি মানুষের মত অল্প করুণাময়, মাঝে মাঝে করুণাময় নন। আল্লাহ কিন্তু শুধুই বলতে পারতেন “তিনি পরম করুণাময়”, এ পর্যন্ততই। কিন্তু একজন পরম করুণাময় কিন্তু সবসময় করুণা নাও দেখাতে পারেন। তিনি সকালে করুণা দেখালেন, রাতে আর দেখালেন না। কিন্তু না, তিনি নিরন্তর করুণাময়। তিনি প্রতি মুহূর্তে আমাদেরকে করুণা করছেন। আপনি যখন সকালে ফজরের এলার্ম বন্ধ করে নামাজ পড়বেন কিনা তা কিছুক্ষন চিন্তা ভাবনা করে আবার ঘুম দেন, তখন আপনার একটা হাত খুলে পড়ে যায় না। আপনি যখন একজন অন্ধ ফকিরের পাশ দিয়ে না দেখার ভান করে হেটে চলে যান, তখন কিন্তু আপনার চোখ দুটা নষ্ট হয়ে যায় না, কারণ আল্লাহ নিরন্তর করুণাময়। আপনি তাঁর এক মামুলি দাস হয়ে দিনের বেশিরভাগ সময় তাঁর আদেশ অমান্য করে, তাঁকে আপনার পরিবারের সদস্যদের চাহিদা থেকে কম গুরুত্ব দিয়ে, ‘লোকে কী বলবে’ এই ভেবে ক্রমাগত তার আদেশ ভেঙ্গে যাবার পরেও তিনি আপনাকে প্রতিদিন ছেড়ে দেন। কারণ তিনি ‘রাহি-ম’ নিরন্তর করুণাময়।
এখন আল্লাহ যদি অকল্পনীয় এবং নিরন্তর দয়ালু হন, তাহলে কি আমরা যা খুশি তা-ই করে পার পেয়ে যাবো? কারণ, তাঁর দয়ার তো কোনো শেষ নেই?
হে মুহাম্মাদ! বলো, যদি আমার রবের কথা (তাঁর কাজ, পূর্ণতার গুণাবলী, বিস্ময়কর ক্ষমতা ও বিজ্ঞতা) লেখার জন্য সমুদ্র কালিতে পরিণত হয় তাহলে সেই সমুদ্র নিঃশেষ হয়ে যাবে কিন্তু আমার রবের কথা শেষ হবে না৷ বরং যদি এ পরিমাণ কালি আবারও আনি তাহলে তাও যথেষ্ট হবে না৷
-সূরা আল কাহফ আয়াত ১০৯
-quranerkothaডটকম

No comments:

Post a Comment