ইংরেজিতে একটি কথা আছে, তা হলো— ‘Charity begins at home’. বলা যায় আপনি আপনার পরিবারের সন্তানদের প্রতি খেয়াল রাখবেন, যাতে তারা ছোটকাল থেকে সঠিক শিক্ষা পেয়ে বড় হতে পারে। কিন্তু আমরা কি তা করতে পারছি। আজকাল বেশির ভাগ পরিবারের সন্তান বড় হয় বাড়ির বুয়াদের কাছে। ফলে সন্তান যে আদর্শ শিক্ষাটা পেয়ে বড় হওয়ার কথা তারা তা পাচ্ছে না। ফলে তারা যে ইন্টিগ্রিটি (doing the right thing even when no one is watching) নিয়ে বড় হতো সেটার অভাব থেকেই যাচ্ছে প্রকটভাবে।
একই পরিবারে দরবেশ বা দুর্বৃত্ত (saint and scoundrel in the same family) থাকতে পারে। সেই দুর্বৃত্ত অনেক সময় কিন্তু ঘরের ভেতরে কিছু করছেনা। তার কাজ কারবার সব কিছুই বাইরে। আবার কখনো কখনো সে ঘরের ভেতরেও সরব থাকে। পরিবারের সবার ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, শৈশবে পরিবার থেকে, সমাজ থেকেই সাধুতার শিক্ষা, নীতি এবং নৈতিকতার শিক্ষা মানুষ পায়। ছোটখাট অপরাধই বড় অন্যায় ও দুর্নীতির দিকে মানুষকে নিয়ে যায়। এক্ষেত্রে পরিবারের পিতামাতার উচিত যেকোনো অন্যায়কে প্রশ্রয় না দেয়া।
চেম্বার্সের টুয়েন্টিথ সেঞ্চুরী ডিকশনারী অনুসারে করাপ্ট শব্দটির অর্থ হচ্ছে টু মেইক পিউট্রিড অর্থাত টু টেইন্ট, টু ডিবেইজ, টু স্পয়েল, টু ডেসট্রয় দি পিউরিটি অব । আবার করাপশন শব্দটির অর্থ করা হয়েছে পচা, ঘুষ, ভেজাল, কৃত্রিম ও নকল হিসাবে। হাল আমলের উইকিপিডিয়া যার অন্য নাম ফ্রি এনসাইক্লোপেডিয়া অনুসারে দর্শন, ধর্মশাস্ত্র অথবা নৈতিকতার আলোকে দুর্নীতি হচ্ছে আধ্যাত্মিক ও নৈতিক অবক্ষয় অথবা অর্থনৈতিক আদর্শ থেকে বিচ্যুতি। সে প্রেক্ষিতে দুর্নীতিকে অনার্জিত আয় বলা যাবে যা প্রাপ্তিতে আইন ও বিধি স্বীকৃত রোজগারের পন্থা অনুসৃত হয় নি। দুর্নীতিকে অনেকেই ঘুষ, কিকব্যাক, স্পীড মানি অথবা বখশিশের আরেক নাম বলে অভিহিত করে থাকেন। সরকারী কর্মকান্ডের পরিসরে দুর্নীতি সংঘটিত হয় যা যখন এর একটি অঙ্গ অথবা এজেন্ট এমন ধরণের সিদ্ধান্ত নেন যেটি অন্যায়ভাবে আর্থিক সুবিধা আদায় অথবা স্বজনপ্রীতি অথবা রাজনৈতিক প্রচারাভিযানে চাঁদা প্রদানকারীর স্বার্থ আদায়ের পথ খুলে দেয়। বলা বাহুল্য এ ধরণের দুর্নীতিগ্রস্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াতে ন্যায়নীতি, বিবেক ও সুবিচারের কোন বালাই থাকে না। রাজনৈতিক দুর্নীতি বলতে সাধারণতঃ সরকারী (পাবলিক) ক্ষমতাবলে প্রাপ্ত সম্পদের অপব্যাবহারকে বোঝায় যার পিছনে অবৈধ ব্যক্তিগত লাভক্ষতির বিবেচনা কাজ করে। এ ধরণের দুর্নীতিতে সরকারী কর্মকর্তাগণ জনস্বার্থ উপেক্ষা করে এবং আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজী, ঘুষ ও ভোট কেনাবেচার মাধ্যমে বিশেষ করে স্বার্থান্বেষী মহলের অনুকূলে সরকারী সিদ্ধান্ত করে দেন। এ ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাকে একটি লাভের বিনিময়ে পণ্যসেবা হিসাবে বিক্রী করা হয়।
সততা শিক্ষার শুরুটা শিশু বয়স থেকেই হতে হয়। নৈতিকতার শিক্ষার সূচনা হওয়া দরকার পরিবার এবং স্কুল থেকে। এই দুটো হলো হলো মূল উতস যেখান থেকে শিশু মৌলিক জিনিসগুলো গ্রহণ করছে। উঠতি বয়সের ছেলে মেয়ে- তাদের সামনে তো কোনো আদর্শ নেই। কাকে অনুসরণ করবে? যে আদর্শগুলো সামনে আছে সেগুলো নিলে বরং অনৈতিক জিনিসই বেশি শিখবে। তাই তারা জুভেনাইল ডেলেনকুয়েন্সী- Juvenile delinquency (the habitual committing of criminal acts or offences by a young person, especially one below the age at which ordinary criminal prosecution is possible) বা তারুন্যসূলভ অপরাধের দিকে এগাতে এগোতে বড় বড় দাগী মানুষ, খল মানুষ হয়ে উঠছে।
যেহেতু কোনই আদর্শ নেই তাই তারা সহজেই কূচক্রীদের সাথে হাত মেলাচ্ছে সহজ আয়ের পথ ধরছে। আর যেহেতু পরিবার শিশুদের মানুষ করার শিক্ষার ব্যাপারে (Being Human) নির্বিকার সেহেতেু কুচক্রী স্বার্থান্বেষী মহলের স্বার্থে আঘাত দিলেই সপরিবার মিথ্যা দোষারোপ, গণপিটুনি, লুঠপাঠ, তোলাবাজি ও ভয়াবহ মানসিক চাপের শিকার হতে হয়। সেই মানসিক চাপ আমরা সহ্য করছি। ফলে শারীরিক মানসিক যাতনা নিয়েই চলে যেতে হচ্ছে পরপারে। এটা খুবই দুঃখের বিষয়।
কবি সত্তেন্দ্রনাথ দত্ত অনেক আগে তার কবিতায় একটি সুন্দর উপস্থাপন করেছেন:
“হৃদয়ের মাঝে পাশাপাশি আছে
গুপ্ত দুখানি ঘর
দুঃখ ও সুখ বাস করে তাহে
যমজ দু সহোদর।
সুখ জেগে ওঠে আপনার মনে
খেলে গো আপন ঘরে
দুরন্ত ছেলে দুঃখ এখনো
ঘুমাইছে অবসরে।
ওরে সুখ! তুই চুপি চুপি খেল,
করিসনে কলরব।
-এখনি দুঃখ জাগিয়া উঠিবে
করিবে উপদ্রব।
No comments:
Post a Comment