Tuesday, August 18, 2020

With Negativity, self-esteem is terribly shaken

 নেতিবাচকতা আত্মবিশ্বাস নড়বড়ে করে দেয়

জীবনযাপন পদ্ধতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো ‘মানসিক চাপ’। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডব্লিউ.এইচ.ও এ বিষয়টির ওপর ভীষণরকম গুরুত্ব দিয়েছে। আসলে মানসিক চাপ জীবনের একটি ধ্রুব বাস্তবতা। আমাদের সবার জীবনেই বিচিত্র ধরনের উত্থান পতন রয়েছে, রয়েছে অসংলগ্নতা, দু:খ-কষ্ট, অপ্রাপ্তির বেদনা ইত্যাদি।
এগুলো নি:সন্দেহে মানুষের ভেতরটাকে অস্থির করে তোলে, বিষন্ন করে তোলে, বিরক্তির উদ্রেক ঘটায়। আমরা যদি আমাদের জীবনের অবস্থায় দেখা দেওয়া সমস্যা, জটিলতা ইত্যাদিকে সুন্দরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারি কিংবা সমস্যাগুলোর যথাযথ সমাধানের উপায় খুঁজে বের করতে না পারি, তাহলেই আমরা মানসিক চাপের মুখে পড়ে যাই। এই মানসিক চাপ ব্যক্তির ওপর তো বটেই পরিবেশের ওপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলে।
যখন আমরা মানসিক চাপের সম্মুখিন হই তখনই এক ধরনের নেতিবাচকতা আমাদের পেয়ে বসে। নিজের সম্পর্কে বা নিজের দিকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে তাকাতে শুরু করে দেই আমরা। যার ফলে আত্মবিশ্বাস নড়বড়ে হয়ে ওঠে, বিষন্নতা অবসাদ পেয়ে বসে আমাদের। আর এই অনাকাঙ্ক্ষিত মানসিক অবস্থার কুপ্রভাব পড়ে আমাদের ব্যক্তি আচরণের ওপর। আমরা অশালীন অসংলগ্ন আচরণ করতে শুরু করে দেই, উত্তেজিত হয়ে উঠি এককথায় এক ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় আমাদের কাজে কারবারে,কথাবার্তায়, আচার আচরণে। এই অনুভূতির কারণে আমাদের শারীরিক সমস্যা যেমন মাথাব্যথা, পেটের পীড়া, নিদ্রাহীনতা, আলসার, উচ্চ রক্তচাপ, বিচিত্র ধরনের হৃদরোগ, এমনকি ব্রেইন স্ট্রোক পর্যন্ত দেখা দিতে পারে।
মানসিক চাপের পরিণতি সম্পর্কে কথা বলছিলাম আমরা। একেবারে ব্রেইন স্ট্রোকের আশঙ্কা পর্যন্ত গড়িয়েছে আমাদের আলোচনা। তবে স্ট্রেস বা মানসিক চাপ যে কেবল নেতিবাচক দিকগুলো থেকেই আসে তা কিন্তু নয়। অনেক সময় নেতিবাচকতার পাশাপাশি কিছু ইতিবাচক দিক থেকেও কিন্তু মানসিক চাপ দেখা দিতে পারে বলে মনোবিজ্ঞানীদের ধারণা। যেমন বিয়ে শাদি, সন্তানের জন্ম কিংবা নতুন কোনো কাজ ইত্যাদি। কানাডিয় ফিজিওলজিস্ট হ্যান্স সিলের মতে আমাদের জীবনে কিছু চাপ থাকার প্রয়োজন রয়েছে। চাপ হলো চাটনির মতো। এইসব চাপ জীবনে চাটনির মতো স্বাদ তৈরি করে। সুতরাং মানসিক চাপের কারণ বা উপাদানগুলোকে পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া কেবল যে বাস্তব সম্মত নয়, তাই নয় বরং তা জীবনকে অনেকটা একঘেঁয়েও করে তোলে ।
অতএব মানসিক চাপ কীভাবে প্রতিহত করা যায় কী করে তা মোকাবেলা করা যায় সেই জ্ঞান বা উপায়গুলো জানাটাই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এমনও অনেক মানুষ আছেন যাঁরা সামান্য একটু এধার ওধার মানে পরিবর্তন দেখলেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। এমনকি ইতিবাচক পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও এই সমস্যা দেখা দেয়। এটা মানসিক চাপের কারণেই হয়ে থাকে। অনেকেই আবার রোগ-ব্যাধির কষ্ট, নিকটজনদের কারো মৃত্যু, কারাবান্দি, দু:সহ অত্যাচার ইত্যাদি খুব ঠাণ্ডা মাথায় সহ্য করতে পারেন। এ ধরনের মানুষেরা জীবন সমস্যাগুলোকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখেন এবং তাঁদের আত্মবিশ্বাস প্রবল। জীবনযাপনের ক্ষেত্রে এই ইতিবাচকতা খুবই জরুরি।
গবেষণায় দেখা গেছে ধর্মীয় বোধ ও বিশ্বাস শয়তানি প্ররোচনা এবং উত্তেজনা মোকাবেলায় ব্যক্তিকে হেফাজত করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে। আধুনিক চিকিতসাবিদগণ মানসিক কষ্ট বা মর্মযাতনা দূর করার জন্য ধর্মীয় মূল্যবোধগুলোকে ব্যক্তিমনে দৃঢ়ভাবে স্থাপন করার ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। বলাবাহুল্য এ বিষয়টি মনোরোগ চিকিতসার ক্ষেত্রে যেসব ওষুধ দেওয়া হয় সেসব ওষুধের কার্যকারিতা নিশ্চিত করার সহযোগী বলে মনে করে। ডিউক ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় দেখা গেছে যেসব লোক নিয়মিতভাবে ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদিতে যোগ দেয় সেসব লোকের সুস্থতার পরিমাণ যারা নিয়মিতভাবে ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদিতে যোগ দেয় না তাদের তুলনায় অনেক বেশি।
ডেইল এ. ম্যাথিউস তাঁর বই ‘দ্য ফেইথ ফ্যাক্টরে” বলেছেন: উপাসনালয়ে জনগণের স্বতস্ফূর্ত উপস্থিতি সুস্থতার শক্তি বৃদ্ধির একটা কারণ হিসেবে পরিগণিত। তাঁর বইয়ের নামেই রয়েছে “প্রার্থনার নিরাময় শক্তির প্রমাণ”। এই গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত থেকে প্রমাণ হয় যে, শারীরিক সুস্থতার সঙ্গে আধ্যাত্মিকতার শক্তিশালী সম্পর্ক রয়েছে। আর ধর্মীয় বিশ্বাস ও আচরণগুলোই প্রকৃত সুস্থতার কার্যকরী উপাদান।
পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় উল্লেখ করা হয়েছে যে যাদের অন্তরগুলো ইমানির নূরে আলোকিত, তারা সমগ্র পৃথিবীতে সুন্দর, কল্যাণ আর ভালো ছাড়া অন্য কিছুই চোখে দেখেন না। তারা বিশ্বব্যবস্থাকে সবোর্ত্তম ব্যবস্থা বলে মনে করেন। তাঁরা মহাপ্রজ্ঞাবান সেই স্রষ্টা ও প্রতিপালক খোদার প্রার্থনা করেন যিনি এই বিশ্ব সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য উদ্দেশ্য নিয়ে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি সুন্দর ও কল্যাণ ছাড়া তাঁর সৃষ্টিকূলের জন্য অন্য কোনো কিছুই পছন্দ করেন না। এক্ষেত্রে যদি কোনো কিছুতে ঘাটতি থাকে কিংবা জটিলতা থাকে তাহলে সেসব অসংগতি সহনীয় এবং সমাধানের পর্যায়ে পড়ে।
সূরা বাকারার ১৫৬ নম্বর আয়াতে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে: যারা আল্লাহর ওপর বিশ্বাসী তারা যে-কোনো বিপদ আপদের সময় এই সত্য ও বাস্তবতার প্রতি মনোযোগ আকৃষ্ট করে বলে যে “আমরা আল্লাহর জন্য এবং আল্লাহর দিকেই আমাদের ফিরে যেতে হবে।“
যাই হোক, মানসিক চাপ নিয়ে কথা হচ্ছিল আমাদের। ভয় এই মানসিক চাপের অন্যতম কারণ। ভয় কাটিয়ে ওঠার জন্য যত রকমের উপায়ের কথা বলা হয়েছে সেসবের মধ্যে ধর্মীয় বিশ্বাস সবচেয়ে কার্যকরী ভূমিকা রেখেছে। ভয়ের উতপত্তি যেখান থেকে ধর্মীয় বিশ্বাস সেই উতপত্তিস্থলটাকেই ধ্বংস করে দেয়।
যেসব মানুষ ইসলামি শিক্ষার ছায়াতলে লালিত পালিত হয় পবিত্র কুরআনের দৃষ্টিতে তারা বিচিত্র মানসিক চাপ থেকে নিরাপদ থাকে। শক্তির মূল যে উতস তার সঙ্গে যে মানুষের সম্পর্ক সৃষ্টি হয় পৃথিবীর অন্য কোনো শক্তিই তাকে আর প্রভাবিত করতে পারে না। সুতরাং স্রষ্টার সঙ্গে মানে শক্তির উতসের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনকারী মানুষ আর কোনো কিছুকেই ভয় করে না। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে: “যে-ই এক আল্লাহ ও আখেরাতের ওপর ঈমান আনবে এবং সতকাজ করবে নিসন্দেহে তার কোন ভয় বা মর্ম বেদনার কারণ নেই”।
মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন মানসিক চাপ কমানোর ক্ষেত্রে আমরা যে বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দেওয়াকে প্রয়োজনীয় বলে মনে করি তাহলো পবির্তনের চেষ্টা চালানো। মানসিক চাপের উতসে পরিবর্তন আনা বা এ ধরনের কিছু ভিন্নরকম অনুশীলন। যেমন কখনো কখনো শিক্ষা নিতে বলা হয় যে, কখনো কখনো পরাজয় বা ব্যর্থতারও অভিজ্ঞতা নিতে হতে পারে। তবে মনের ভেতরে কখনো নেতিবাচকতাকে স্থান দেওয়া যাবে না বা তাকে পোষা যাবে না। “আমি তো শেষ হয়ে গেছি, আমাকে দিয়ে আর কিচ্ছু হবে না”-এ জাতীয় চিন্তাভাবনাকে কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। তার পরিবর্তে সবসময় ইতিবাচক চিন্তা করে যেতে হবে। আপনি যদি আপনার অবচেতন মনের চিন্তাগুলো নিয়ে পর্যালোচনা করেন তাহলে যে দৃষ্টিভঙ্গি আপনাকে সবসময় বিষন্নতা বা বিরক্ত করে তা শুধরে নিতে পারবেন।
সবসময় আনন্দপূর্ণ, হাসিখুশি জীবন যাপন করবেন। জীবনে যেসব জিনিস কোনো অর্থ বয়ে আনে না সেগুলোকে স্বাভাবিক আনন্দ দিয়ে পরিহার করুন। মনে রাখবেন আপনি একজন বিশেষ মানুষ এবং নিজের সাথে সবোর্ত্তম আচরণ করার যোগ্যতা রাখেন। ধর্মীয় শিক্ষাও তাই। এতোক্ষণ আমরা যেসব দিক নিয়ে কথা বললাম সেগুলো বাস্তবায়ন করার জন্য ঐশী আদেশগুলো মেনে চলাই যথেষ্ট। যেমন আল্লাহ স্মরণ করা, ধৈর্যধারণ করা, আল্লাহভীতি বা তাকওয়াবান হওয়া, বিপদাপদে ভেঙে না পড়ে সুস্থির থাকা, মানসিক চাপ, বিষন্নতা পরিহার করার জন্য সতকাজ করা এবং অপরের কল্যাণ ও সেবায় এগিয়ে যাওয়া ইত্যাদি। একজন ব্যক্তি এইসব অভ্যন্তরীণ বিশ্বাস দিয়ে মানসিক চাপ ও আঘাতগুলোকে অত্যন্ত সুন্দরভাবে রোধ করে দুরন্ত ঝড়ের মুখেও স্থির অনড় থাকতে পারে।
স্রষ্টার সঙ্গে এই সম্পর্ক স্থাপনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর উপায় হচ্ছে প্রার্থনা, দোয়া এবং নামাজ। অনুভূতি ও মনকে বিন্দুমুখি করার সবোর্ত্তম উপায় হলো নামাজ। স্ক্যাপার বলেছেন: প্রার্থনা উদ্বেগ উতকণ্ঠা আর মানসিক অস্থিরতাটাকে কমিয়ে দিয়ে সুদৃষ্টিকে শক্তি দেয়। সেইসঙ্গে ব্যক্তিমনে দৃঢ় আশার সঞ্চার করে। অপর এক লেখক মিসেস সুফি বেরেনহাম বলেছেন: যেসব চিন্তা আমাদের মনোযোগ কেড়ে নেয়, সেগুলোকে ধুয়ে মুছে ফেলতে হবে। যাতে প্রার্থনায় গভীরভাবে মনোনিবেশ করা যায়। মুনাজাতে নেতিবাচক বাক্য পরিহার করে ইতিবাচক বাক্য ব্যবহার করতে হবে। কেননা অবচেতন মন নেতিবাচকতা গ্রহণ করে না। কুরআনের সেই বাক্যটি মনে করুন: “একমাত্র আল্লাহর জিকির বা স্মরণের মাধ্যমেই অন্তরগুলো প্রশান্তি পায়”
-পার্সটুডে

No comments:

Post a Comment