Allegorical Story
কয়োট (Coyote)নামের প্রাণীটির নাম হয়তো শুনে থাকবেন অনেকেই। ভীষন রকমের চতুর নেকড়ে গোত্রের এই প্রাণীটি। বৈজ্ঞানিক নাম Canis latrans. সব খায় এরা। এদের শরীরটা লেজ বাদে ৩২থেকে ৩৭ ইঞ্চি, লেজটা ১৬ ইঞ্চি। ওজন ২০ পাউন্ড সর্বোচ্চ। দৌড়বাজ এরা। ঘন্টায় ৪০ কিলোমিটার দৌড়াতে পারে।
গল্পের শুরুঃ
বনের ধারে এক চাষীর বিশাল ক্ষেতের নধর নধর পাকা তরমুজ দেখে একবার এক কয়োটের খুব লোভ হলো। কি করা যায় ভাবলো সে। একদিনে তো আর বহু তরমুজ খাওয়া যাবে না। তাই প্রত্যেক রাতে অন্ততঃ একটা করে সাবাড় করতে হবে। ভাবনাটা কয়োট পাকাপোক্ত করে নিলো।
প্রথম রাতে হানা দিয়ে একটা বড়সড় পাকা তরমুজ সাবাড় করে ফেল্লো কয়োট। পেটটা বেশ ভারী হয়ে গেলো। ধীর লয়ে সে বনের পাশেই গর্তে ঢুকে মনের সুখে বিশ্রাম নিলো। সকাল হলে সে বনের ভেতর এটা ওটা খেয়ে নিলো। রাত নেমে এলে তার মনের ভেতর আবার পাকা তরমুজ খাওয়ার লোভ উথলে উঠলো।
দ্বিতীয় রাতেও সে একইভাবে হানা দিয়ে একটা বড়সড় পাকা তরমুজ সাবাড় করে ফেল্লো। নিজেকে পাকা শিকারী ভাবতে মোটেও কষ্ট হলোনা কয়োটের। বেশ ভারাক্কী চালে আজকের রাতেও সে বনের পাশেই গর্তে ঢুকে মনের সুখে বিশ্রাম নিলো।
এভাবে তৃতীয় রাত এমনকি চতুর্থ রাতেও ভোজ চল্লো তার।
চাষী কিন্তু প্রত্যেক দিন আসে তার ক্ষেতে। পাকা তরমুজ এভাবে খেযে খোসা চারদিকে ছড়ানো দেখে তার মনে ক্ষোভ জন্মাতে থাকে। চাষী ধরেই নিয়েছে এ কাজ কয়োট ছাড়া আর কেউই করতে পারনা। তাই সে নষ্ট ক্ষেতটি দেখে দূঃখভারাক্রান্ত মনে বাড়ী পৌছে জিরিয়ে নিতে নিতে ভাবলো কি করা যেতে পারে। অনেক ভেবে চিন্তে সে তার পোষা ৪টে অ্যামেরিকান বুলডগকে ডাকলো। মনিবের ডাক শুনে ওরা দ্রুত হাজির হলো। মালিক ওদের বুঝালো যে ক্ষেতের পাকা পাকা তরমুজ চুরি করে খাওয়ার জন্য কয়োটকে শায়েস্তা করতেই হবে। বুলডগগুলো মালিকের কথা মন দিয়ে শুনে আমলে নিলো। সন্ধ্যে রাতে মালিক চাষী বুলডগগুলোকে পাহারা দেয়ার জায়গাগুলো নির্দিষ্ট করে দিয়ে এলো। ওরা ৪জনে বসলো পাহারায় জমির ৪ কোণে। বুলডগগুলো তীক্ষ্ণ দৃষ্টি মেলে কয়োটের অপেক্ষায় রইলো।
রাত গভীর হলে কয়োট ধীর পায়ে এগোতে থাকলো তরমুজের ক্ষেতের পানে। ভেতরে ঢুকে পড়লো। একটা বড়সড় পাকা তরমুজ দেখে সে ওটা নখ দিয়ে আঁচড়ে নিয়ে ভেতরের রাঙা অংশ বের করে মজা করে খেয়ে পেটটা বেশ ভারী করে নিলো। এর পর সে ক্ষেতের বাইরে আসতেই তার চোখ পড়ে গেলো চাষীর একটি শিকারী কুকুরের চোখে। কুকুর ঘেউ করতেই বাকী তিন সঙ্গী সেখানে মূহুর্তেই হাজির হলো। কয়োট ভাবলো আজকে বোধ হয় ক্কিয়ামত হয়েই যাবে। কিন্তু সে ও হাল ছাড়লো না। জানপ্রাণ দিয়ে ছুটতে থাকলো বনের চারপাশ ধরে। বুলডগগুলোও ছাড়বার পাত্র নয়। ওরাও পিছু ছাড়ছে না। বড্ড হাঁপিয়ে উঠেছে কয়োট। এই বুঝি ধরা খেলাম- এ রকমই ভাবছে সে। অবশেষে সে বনের ভেতরে তার নিজের গর্তের কাছেই এসে পড়লো আর ঝুপ করে ভেতরে ঢুকলো। কুকুরগুলোও হতভম্ভ হয়ে গেল। তারাও ভাবছে শিকারটা পেয়েও ছেড়ে দিলাম আমরা? কুকুরগুলো জিরিয়ে নিচ্ছে গভীর রাতে বনের ভেতরেই। কিন্তু ওরা গর্ত থেকে দূরে না গিয়ে কাছেই বসে রইলো।
কয়োটও বেদম তাড়া খেয়ে ক্লান্ত ছিল। তাই সে নিজ বাড়ীতে সহজেই ঘুমে ঢলে পড়লো। সকালের দিকে ঘুম ভাঙলে কয়োট নিজেকে খুবই ভাগ্যবান মনে করলো। কারণ সে চাষীর বুলডগগুলেকে বোকা বানাতে পেরেছে।
কিন্তু কয়োট এতটা ভাগ্যবান হয়েও কেন যেন স্বস্তি পাচ্ছিল না। এবার সে নিজের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে জিজ্ঞাসা করবে চিন্তা করলো যে তারা তার জন্য কে কি কি করেছে। যেই ভাবা সেই কাজ।
কয়োট পয়লা জিজ্ঞাসা করলো চোখ দুটোকে। বল্লো, “এই তোর কি কি করেছিস?” ওরা সাফ সাফ বলে দিলো, “কেন? আমরা না থাকলে তুমি পথ খুঁজে পেতে কি করে? আমরাইতো তোমাকে বন-বাদাড় পার করে এই জায়গায় তোমাকে নিয়ে এলুম।” কয়োট বল্লো। ও তাহলে তোরা তো আমার জন্য ভালই করেছিস। কয়োট তাদের ধন্যবাদ জানালো।
কয়োট দুস্রাবার জিজ্ঞাসা করলো কান দুটোকে। বল্লো, “এই তোর কি কি করেছিস?” ওরা সাফ সাফ বলে দিলো, “কেন? আমরা না থাকলে তুমি কি কুকুরদের আসার শব্দ শুনতে পেতে? কুকুরগুলো কত দূরে না কি এক্কবারে কাছে রয়েছে সেটা কি তুমি বুঝতে?” কয়োট বল্লো। ও তাহলে তোরা তো আমার জন্য ভালই করেছিস। কয়োট তাদের ধন্যবাদ জানালো।
কয়োট তিসরাবার জিজ্ঞাসা করলো পা ৪টেকে। বল্লো, “এই তোর কি কি করেছিস?” ওরা সাফ সাফ বলে দিলো, “কেন? আমরা না থাকলে তুমি কি কুকুরদের সাথে পাল্লা দিতে পারতে? কত দ্রুত আমরা ৪জনে তোমাকে এখানে নিয়ে এসেছি তা যদি তুমি বুঝতে!” কয়োট মনে করলো আহা, আহা, আমি কতই না সৌভাগ্যবান! আহা!
একটু জিরিয়ে নিয়ে সে এবার তাকালো লেজের দিকে। বল্লো, “এই তুই কি কি করেছিস অমার জন্য?” লেজ সত্যিই কাঁচুমাচু হয়ে গেল। কিচ্ছুই বলতে পারলো না। কয়োট সত্যিই খুব রেগে গেল। বল্লো, “ও বুঝেছি। তুই তো কিচ্ছুই করিসনি বরং আমার পেছনে একটা ভারী বোঝা হয়ে রয়েছিস। তুই না ধাকলে আজ আমি আরো আরো জোরে দৌড়ে এই জায়গায় পৌছতে পারতুম।” দাঁড়া! আজ তোকে দেখাচ্ছি মজা। আজ তোর একদিন না হয় আমারই একদিন। তুই এক্ষনি এই গর্তের বাইরে নিকাল যা। যা নিকাল যা? বদমাশ কোথাকার? আমার সাথে আর তোর কোনদিন থাকা হবে না। কয়োট এই বলে তার ১৬ ইঞ্চি লম্বা লেজটি গর্তের বাইরে ঠেলে দিতে থাকলো।
কুকুরগুলোর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি কিন্তু এ ঘটনাটি এড়ায়নি। এরকম একটি ঘটনা যে ঘটবে কুকুরগুলো তা ভাবতেই পারেনি। তবুও সুযোগ যখন এসেছে সেটার সদ্ব্যবহার করা যাক। কুকরগুলো খুবই সন্তর্পণে কয়োটের গর্তের কাছে চলে গেল্। কয়োটের লেজটি পুরোপুরি গর্তের বা্ইরে এলে চাষীর কুকুরগুলো লেজটি কামড়ে ধরলো আর প্রাণপনে টেনে কয়োটকে বাইরে এনেই ছাড়লো। আর অল্প কিছুক্ষণের ভেতরেই কয়োটকে ছিন্নভিন্ন করে ফেল্লো।
সকালে চাষী এসে কয়োটো ছিন্নভিন্ন শরীরটা দেখতে পেলো। সে কুকুরগুলোকে আদর করতে থাকলো।
ফোকাস: শরীরের কোন অংগকেই অবহেলা করতে নেই। সব অঙ্গই দেহের জন্য বিশেষ ভাবে বিশেষ অবস্থায় কার্যকরী। সেটা অনেকেই বোঝেনা। বুঝতে চেষ্টাও করে না।
গল্পের শেষ
-আমার মেমোরী থেকে
No comments:
Post a Comment