Sunday, August 9, 2020

পাতালের পানি মাপা

 এক ঘরকুনো বিড়ালের শখ চেপেছে যে সে নদী দেখতে যাবে। যেই ভাবা সেই কাজ। বেরিয়ে পড়লো সে। খুলনার এক বাড়ীতেই সে থাকতো। যাবি তো যা, একেবারে পশুর নদীর পাড়ে গিয়ে থামলো। অনেক দূর হেঁটে হেঁটে এসে বেচারা কাহিল হয়ে পড়েছে। তেষ্টাও পেয়েছে বেশী। কিন্তু নদীতে তো জল পান করা মুশকিল। কী করা যায়। আপাশটা দেখে নিলো। নদীর কোন এক ঘাটে গিয়ে জল পান করা যায় কি না। দেখলো দূরে একটি ঘাট যেখানে নীচে নেমে জল পান করাযেতে পারে।

বিড়াল চললো সে দিকে। জল পানের প্রায় শেষের দিকে। হঠাত এক বড় ঢেউ এসে বিড়ালকে নদীর ভেতরে নিলো। বিড়াল সে তো শহুরে। সাঁতার টাঁতার জানা নেই তো। জলের ভেতরে সে খাবি খাচ্ছে। একেবারে নাজেহাল অবস্থা। পেটটাও ফুলে ঢোল হতে শুরু করেছে।
দূর থেকে এক কুমীর বিষয়টি দেখছিলো। নিঃশব্দে ও বিড়ালের কাছে এসে ওকে বল্লো, “কি ভায়া, একেবারে যে লবেজান?” ওঠো, ওঠো, আমার পিঠে ওঠো। বিড়াল ২/১বার পিট পিট করে কুমীরের দিকে তাকালো। আবার ভয়ও পেলো। ভাবলো খেয়ে টেয়ে ফেলবে না তো? নদীর জলের মধ্যে নিজেকে সামলে নিতে না পেরে অগত্যা বিড়াল উঠলো কুমীরের পিঠে। এসময় কুমীরও তাকে সাহায্য করলো পিঠে উঠতে। কুমীর ধীরে ধীরে নদীর পাড়ের দিকে এগোতে থাকলো। নদীর পাড়ে এসে কুমীর বিড়ালকে নামিয়ে দিলো পিঠ থেকে। এ সময় কুমীর বিড়ালকে বল্লো, সোজা বাড়ী চলে যাও দিকিনি, কোথাও থামবে না। এই বলে কুমীর তার মুখটা বিড়ালের এক্কেবারে কাছে নিয়ে এলো। এবার বিড়াল কুমীরের গালে আচ্ছা করে কয়েক ঘা চড় বসিয়ে দিলো। বল্লো, আমি তো পাতালের পানি মাপছিলাম। তুই আমাকে উঠালি কেন? এটা কী ভালো করেছিস? আমার কাজটা তো হলো না?
কুমীরতো হতবাক! বাড়তি কিছু না বলে সে বিড়ালকে ক্ষমা করে দিলো। মনে মনে বিড় বিড় করতে লাগলো। বল্লো, শুনেছি ডাঙায় অকৃতজ্ঞ মানুষ ভীড় করছে দিনে দিনে। এখন দেখি কেউ কেউ ডাঙা থেকে এসে আমাদের মাঝেও অকৃতজ্ঞতার বিষবাষ্প ছড়াতে চায়! জলে আমরা তো ভালোই আছি। ওকে ডাঙায় ছেড়ে ভালই করেছি। ও থাকুক অকৃতজ্ঞদের মধ্যেই।
আমি বরং নিরাপদে জলেই চলে যাই। সে ই ভালো।

No comments:

Post a Comment