কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কচুর স্তুতি গেয়েছেন তার অধিকার কবিতায়ঃ
অধিকার বেশি কার বনের উপর
সেই তর্কে বেলা হল, বাজিল দুপর।
বকুল কহিল, শুন বান্ধব-সকল,
গন্ধে আমি সর্ব বন করেছি দখল।
পলাশ কহিল শুনি মস্তক নাড়িয়া,
বর্ণে আমি দিগ্বিদিক রেখেছি কাড়িয়া।
গোলাপ রাঙিয়া উঠি করিল জবাব,
গন্ধে ও শোভায় বনে আমারি প্রভাব।
কচু কহে, গন্ধ শোভা নিয়ে খাও ধুয়ে,
হেথা আমি অধিকার গাড়িয়াছি ভুঁয়ে।
মাটির ভিতরে তার দখল প্রচুর,
প্রত্যক্ষ প্রমাণে জিত হইল কচুর।
বিজ্ঞানও কচুর প্রশস্তিতে কম যায় না। বিজ্ঞান জানাচ্ছেঃ
ভিটামিন ও আয়রনে সমৃদ্ধ কচু, এক নয় বহু রোগ নিরাময় করে সহজেই
নানান পদে কচু প্রতিটি বাঙালির মন জয় করে প্রতি বারে
বাঙালির কাছে কচুর পরিচয় একটু আলাদাই। খাবার উপযোগী কচু অত্যন্ত প্রিয় একটি খাদ্য ৷
কচুর খাদ্যগুণ বা পুষ্টি রীতিমত চমকে দেবে ৷ প্রধানত কচুতে ভিটামিন এ ও আয়রন প্রচুর পরিমাণে থাকে, রক্ত পরিশ্রুতকরণও কচুর অন্যতম প্রধান গুণ ৷
কচু বিভিন্ন রূপে খেতে ভালবাসে খাদ্য রসিক বাঙালি, কচুশাক, কচুর লতি, গাঁটি কচু, চিংড়ি ও ইলিশ মাছ দিয়ে কচু শাকের উপাদেয় তরকারী বারেবরে বাঙালির মন জয় করে থাকে ৷
সর্ষে দিয়েও কচুবাটা অত্যন্ত সুস্বাদু রান্না বহু মানুষের কাছে অত্যন্ত প্রিয় খাবারে পরিণত হয়েছে ৷
কচুর নানান পদে বাঙালি রসনা যেন অন্য এক মাত্রা পায়৷ তাই সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কচুর উপযোগিতা জীবনে বেড়েই চলেছে৷
কচুর লতি (Taro stolon)
২. আয়রন: কচুর লতিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। এটা প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। গর্ভস্থ অবস্থা, খেলোয়াড়, বাড়ন্ত শিশু, কেমোথেরাপি দিচ্ছে- এমন রোগীদের জন্য কচুর লতি অত্যন্ত উপকারী। এতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম। ক্যালসিয়াম হাড় শক্ত করে ও চুলের ভঙ্গুরতা রোধ করে।
২. ফাইবার: এই সবজিতে ডায়াটারি ফাইবার বা আঁশের পরিমাণ খুব বেশি। এই আঁশ খাবার হজমে সাহায্য করে, দীর্ঘ বছরের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, যেকোনো বড় অপারেশনের পর খাবার হজমে উপকারী পথ্য হিসেবে কাজ করে এটি।
৩. ভিটামিন: ভিটামিন ‘সি’ও রয়েছে কচুর লতিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে, যা সংক্রামক রোগ থেকে আমাদের দূরে রাখে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে করে দ্বিগুণ শক্তিশালী। ভিটামিন ‘সি’ চর্মরোগের বিরুদ্ধে কাজ করে।
৪. কোলেস্টেরল বা চর্বি: কিছু পরিমাণ ভিটামিন ‘বি’ হাত, পা, মাথার উপরিভাগে গরম হয়ে যাওয়া, হাত-পায়ে ঝিঁ ঝিঁ ধরা বা অবশ ভাব- এ সমস্যাগুলো দূর করে। মস্তিষ্কে সুষ্ঠুভাবে রক্ত চলাচলের জন্য ভিটামিন ‘বি’ বেশী জরুরি। এতে কোলেস্টেরল বা চর্বি নেয়। তাই ওজন কমানোর জন্য কচুর লতি খেতে বারণ নেই।
৫. আয়োডিন: খাবার হজমের পর বর্জ্য দেহ থেকে সঠিকভাবে বের হতে সাহায্য করে। তাই কচুর লতি খেলে অ্যাসিডিটি ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে খুব কম। আয়োডিনও বসতি গড়েছে কচুর লতিতে। আয়োডিন দাঁত, হাড় ও চুল মজবুত করে।
৬. ডায়াবেটিস: অনেকেই কচুর লতি খান চিংড়ি দিয়ে। চিংড়িতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে কোলেস্টেরল। তাই যারা হৃদরোগী, ডায়াবেটিস ও উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরলজনিত সমস্যায় আক্রান্ত বা উচ্চ রক্তচাপে (হাই ব্লাড প্রেশারে) ভুগছেন তারা চিংড়ি ও শুঁটকি মাছ বর্জন করুন।
ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল, হাই ব্লাডপ্রেশার নিয়ন্ত্রণে থাকলে অল্প পরিমাণে চিংড়ি মাছ খেতে পারেন কচুর লতিতে। তবে মাসে এক দিন অবশ্য ছোট চিংড়ি মাছ দিয়ে খেতে পারেন। বড় চিংড়িতে ফ্যাটের পরিমাণ বেশি, তাই পরিহার করা ভালো।
কচুর লতি রক্তে চিনির মাত্রা বাড়ায় না। তাই ডায়াবেটিসের রোগীরা নিঃসংকোচে খেতে পারেন কচুর লতি।
আরো দরকারী টিপসঃ
*গরমে শরীর থেকে পানি বেরিয়ে যায়। কচুর ডাঁটায় প্রচুর পানি থাকে। সে কারণে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কচুর ডাঁটা বা কচু রাখা যেতে পারে।
*এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, ফোলেট, এবং থায়ামিন রয়েছে।
*কচু রক্তের কোলেস্টরলের মাত্রা কমায়।
*কোলন ক্যান্সার ও ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে।
*শিশুদের কচুশাক বেশি করে তেল দিয়ে খাওয়ানো ভালো। এতে থাকা ভিটামিন এ’র কারণে রাতকানা রোগের আশঙ্কা কমে।
*কচুতে অক্সলেট রয়েছে। তাই রান্নার পরও কোনো কোনো ক্ষেত্রে গলা খানিকটা চুলকায়। তাই কচুর তরকারি রান্নার সময় পরিমানমত লেবুর রস, সাদা বা অ্যাপল সিডার ভিনেগার অথবা তেঁতুল মিশিয়ে নিন।
কচুর লতি খাবেন না যে কারণে
*অনেক ক্ষেত্রে কচু খেলে শরীরে অ্যালার্জি এবং হজমে সমস্যা দেখা দেয়। এ ক্ষেত্রে যাদের এ ধরনের সমস্যা রয়েছে তারা কচু খাবেন না। তবে দুপুরের মধ্যে কচুর লতি খেলে সাধারনতঃ হজমের সমস্যা থাক না। কারণ, কচুর লতিকে হজম করতে হলে রোদের উপস্থিতি লাগে।
ছড়া/মুখী কচু
ক্লান্তি হ্রাস করে কচুর মুখি এনার্জি ধরে রাখতে ও ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে। এর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম থাকে বলে অ্যাথলেটদের জন্য এটি ভালো খাবার।
ওজন কমায় যারা ওজন কমাতে চান তাদের জন্য একটি ভালো খাবার হচ্ছে কচুর ছড়া। কারণ এর ক্যালরির পরিমাণ খুবই কম।
হজম সহায়ক এই সবজিতে প্রচুর ফাইবার থাকে বলে পরিপাক প্রক্রিয়ার জন্য খুবই উপকারী। এটি দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে।
পাকস্থলী পরিষ্কার করে ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে পরিপাক প্রক্রিয়ায় সাহায্য করার পাশাপাশি পাকস্থলীর বর্জ্য পদার্থ নিস্কাশনেও সাহায্য করে কচুর মুখি।
হৃদস্বাস্থ্যের জন্য উপকারী কচুর মুখিতে ফ্যাট ও কোলেস্টেরল কম থাকে বলে ধমনীর শক্ত হয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে। তাই নিশ্চিন্তে কচুর মুখি খেতে পারেন। দৈনিক ভিটামিন ডি গ্রহণের মাত্রার ১৯% পূরণ করা যায় এক কাপ কচুর ছড়া খেয়ে যা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়।
হাইপারটেনশন কমায় হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের কম চর্বি যুক্ত ও কম সোডিয়াম যুক্ত খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এক কাপ কচুর মুখিতে ২০ গ্রাম সোডিয়াম ও ০.১ গ্রাম ফ্যাট থাকে বলে এটি হাইপারটেনশনের রোগীদের জন্য ভালো খাবার। এছাড়াও কিডনি রোগীদের জন্য ভালো।
অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ও ভিটামিন সি এর চমত্কার উত্স কচুর মুখি। এক কাপ কচুর মুখি দৈনিক ভিটামিন সি এর চাহিদার ১১% পূরণ করতে সক্ষম। শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে এই বর্তুলাকার সবজিটি। এছাড়াও ভিটামিন সি ইমিউনিটি বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে। তাই করোনার আক্রমণ কালেও কচুর শাক, লতি বা ছড়া খান।
Surprising Benefits of Taro Root (ছড়া/মুখী কচু)
1. Rich in fiber and other important nutrients
2. May help control blood sugar
3. May reduce your risk of heart disease
4. May offer anticancer properties
5. May help you lose weight
6. Good for your gut
7. Versatile and easy to add to your diet
No comments:
Post a Comment