Monday, September 2, 2024

সুসন্তান প্রত‍্যাশা

 দু’চোখ মেলে চার পাশে তাকালেই সামনে ভেসে ওঠে সম্পদ ও সন্তানের উপচে পড়া ভিড়। জীবনযাত্রায় যদিও এই দু’টির প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য; কিন্তু সম্পদের তুলনায় সন্তানের গুরুত্ব অপরিসীম। সন্তান বেঁচে থাকলে পাহাড়সম সম্পদ জমা করতে পারবে, প্রাণে মারা গেলে আর ফিরবে না। তাই সন্তানের গুরুত্ব ফুটে উঠেছে আল্লাহর ভাষায়- ‘আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর রাজত্ব আল্লাহরই। তিনি যা চান সৃষ্টি করেন। যাকে চান কন্যা দেন যাকে চান পুত্র দেন। অথবা পুত্র ও কন্যা উভয় মিলিয়ে দেন। আবার যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করে দেন। নিশ্চয়ই তিনি সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান।’ (সূরা শূরা : ৪৯-৫০)

মূল্যবান বস্তুর প্রতি যেভাবে হৃদয়ের আকর্ষণ থাকে এবং তা হাতছাড়া বা বিনাশ হওয়ার একটি ভয় মনের মধ্যে কাজ করে, ঠিক সেভাবে আল্লাহ প্রদত্ত সন্তান-সন্ততি মা-বাবার মনোযোগ, আশা ও শঙ্কার গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। কুরআনে আল্লাহ চমৎকারভাবে এই বাস্তবতা তুলে ধরেছেন। আল্লাহ বলেন- ‘জেনে রেখো, তোমাদের সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তোমাদের জন্য এক পরীক্ষা।’ অর্থাৎ সন্তানের মোহে পড়ে যে মা-বাবা আল্লাহকে ভুলে যায় এবং তাকে সুসন্তান হিসেবে গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়, তাদের সামনে সন্তান বড় আজাবস্বরূপ। বিপরীতে যারা সন্তানকে আল্লাহর পরিচয় শেখায় এবং নিজেরাও আল্লাহর আদেশ মেনে চলে, তাদের জন্য সন্তান চক্ষু শীতল হওয়ার কারণ। এ জন্য দয়াময় আল্লাহ সতর্কবাণীও উচ্চারণ করেছেন- ‘হে মুমিনরা! ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন না করে। যারা উদাসীন হবে তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত।’ (সূরা মুনাফিকুন-৯)
হৃদয়ের গভীরে যেই সন্তানদের স্থান, তাদের মাধ্যমে আল্লাহ মা-বাবাকে পরীক্ষায় ফেলতে চান। কঠিন এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য পিতা-মাতার ওপর কিছু কর্তব্য অবশ্যই আছে :
১. আল্লাহর কাছে দোয়া করা এবং সন্তান জন্মের পূর্ব-পরবর্তী সব সময়ের জন্য সেই দোয়া অব্যাহত রাখা। আল্লাহ নিজেই শিখিয়ে দিচ্ছেন : ‘রাব্বানা হাবলানা মিন আজওয়াজিনা ওয়া জুররিয়্যাতিনা কুররাতা আইয়ুনিন ওয়া জাআলনা লিল মুত্তাকিনা ইমামা।’ অর্থ- ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে আমাদের স্ত্রী ও সন্তানদের পক্ষ থেকে দান করুন নয়নপ্রীতি এবং আমাদেরকে মুত্তাকিদের নেতা বানিয়ে দিন।’ (সূরা ফুরকান-৭৪)
২. সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর প্রাথমিক আমলগুলো সুন্নত অনুযায়ী পালন করা। যেমন, ডান কানে আজান এবং বাম কানে ইকামত দেয়া, তাহনিক করা, মাথা মুণ্ডন করে চুলের ওজন পরিমাণ রুপা বা তার মূল্য সদকা করা, আকিকা করা, উত্তম অর্থবহ নাম রাখা এবং উপযুক্ত সময়ে খৎনা করানো।
৩. গুনাহমুক্ত জীবনযাপন করা। পিতা-মাতা নিজেরাই অন্যায় ও পাপকর্মে লিপ্ত থেকে সভ্য-ভদ্র ও আল্লাহভীরু সন্তান কামনা করা বোকামি। যেমন, নিজেরা নামাজ ছেড়ে দিয়ে নামাজি সন্তানের আশা করা। এ জন্য স্বামী-স্ত্রীর উচিত সন্তান জন্ম নেয়ার আগেই সব পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত হওয়া; নিজেদের সুন্দর দুনিয়া ও সুখময় আখেরাত এবং সুসন্তান লাভের স্বার্থে। এ ছাড়াও সন্তানের সামনে স্বামী-স্ত্রী কখনো কোনো অভিমান বা ঝগড়ায় লিপ্ত না হওয়া, এর ফলে সন্তানের মনে মানসিক চাপ পড়তে পারে।
৪. শুরু থেকেই সন্তানের মুখে ভালো শব্দ-বাক্য ও পরিভাষাগুলো তুলে দেয়া। যেমন, আল্লাহ, কালিমা, ইসলাম, সালাম, শোকর ইত্যাদি। কোন কাজ করলে পাপ, কোন কাজ করলে সওয়াব এবং হালাল হারামের মধ্যে পার্থক্য শৈশব থেকেই বুঝিয়ে দেয়া। এ ক্ষেত্রে হজরত লুকমান হাকিম কর্তৃক তার পুত্রের প্রতি যেই উপদেশ সূরা লুকমানে লিপিবদ্ধ আছে, তা আমাদের জন্য পথনির্দেশক।
৫. উৎসাহ ও সুপরামর্শ দেয়া। সন্তান কখনো কোনো অন্যায় করলে পরিমিত ও শরিয়তসম্মত শাসন করা এবং ভালো কাজ করলে প্রশংসা করা। অহঙ্কার ও দাম্ভিকতা থেকে বেঁচে থাকার উপদেশ দেয়া। এর জন্য কার্যকর পদক্ষেপ হচ্ছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পোশাক-পরিচ্ছদ ও খাবার ইত্যাদিতে অভ্যস্ত না করানো। অর্থাৎ ভোগ নয়, ত্যাগের শিক্ষা দেয়া।
৬. গুনাহমুক্ত, পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিশ্চিত করা। কারণ, মানুষ চার পাশের পরিবেশ-পরিস্থিতির দ্বারাই প্রভাবিত হয়। অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, বেপর্দা, নোংরা ও নাচ-গানের পরিমণ্ডলে সন্তান বড় হলে ওই পথেই চলতে সে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে। এ জন্য সন্তানকে গুনাহমুক্ত পরিবেশ উপহার দেয়া মা-বাবার অন্যতম দায়িত্ব। তাই তো আল্লাহ তার নবীকে উদ্দেশ করে বলছেন- ‘আপনি নিজেকে তাদের সংসর্গে আবদ্ধ রাখুন, যারা সকাল-সন্ধ্যায় তাদের পালনকর্তাকে তার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে আহ্বান করে। পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য কামনায় আপনার দৃষ্টি যেন তাদের থেকে সরে না যায়। এমন কোনো ব্যক্তির কথা মানবেন না, যার অন্তরকে আমি আমার স্মরণ থেকে গাফেল করে রেখেছি, যে নিজের খেয়ালখুশির পেছনে পড়ে আছে এবং যার কার্যকলাপ সীমা ছাড়িয়ে গেছে।’ (সূরা কাহাফ-২৮)
৭. সুশিক্ষায় শিক্ষিত করা। অর্থাৎ যে শিক্ষা শিশুর মন-মননে, আখলাক-আচরণে আল্লাহর ভালোবাসা ও মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা ফুটিয়ে তুলতে সহায়তা করে এবং তাকে সৎপথে পরিচালিত করে। এর জন্য প্রয়োজন সর্বপ্রথম সন্তানকে ইসলামের মূল আকিদা-বিশ্বাস ও মৌলিক বিধিবিধান পালনের নিয়মনীতি এবং সামাজিক শিষ্টাচার শিক্ষা দেয়া।
৮. সন্তানকে সৃজনশীল জ্ঞানে সমৃদ্ধ, পরিশ্রমী ও উপার্জনক্ষম করে গড়ে তোলা। যেন সে সম্পদের বিলাসিতায় ঘরে বসে আয়েশ না করে কিংবা অভাবের তাড়নায় মানুষের মুখাপেক্ষী না হয়। এ কারণেই রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘ফরজ বিধান আদায়ের পর হালাল মাধ্যমে উপার্জন করাও ফরজ।’ (মিশকাত-২৭৮১)
শেষ কথা, কোনো দম্পতি যদি উল্লিখিত বিষয়গুলো সামনে রেখে সন্তান লালন-পালনে যথেষ্ট সচেতন হয়, আশা করা যায় আল্লাহ তাদের ভাগ্যে নেককার ও সুসন্তান মিলিয়ে দেবেন।
সূত্র: মুফতি মুহাম্মাদ শামসুদ্দোহা
All reactions:
Afruja Ruba and Arham Sadhaf
Like
Comment
Share
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
 
Shared with Your friends
Friends
প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন হলো ফরজ মহান আল্লাহর ঘোষিত, সুন্নত রাসূল সা:-এর; কিন্তু ওয়াজিবের উৎস কী এবং কখন থেকে ওয়াজিব চালু হয়, দয়া করে জানাবেন।
উত্তর : সব ফকিহ এ পরিভাষাটি ব্যবহার করেন না। তারা শুধু ফরজ আর সুন্নতের কথাই বলেন। তবে অনেকেই ওয়াজিব পরিভাষা ব্যবহার করেন। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো সুন্নতের মধ্যে যে কাজগুলো রাসূলুল্লাহ সা: বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন সেগুলো। যেমন- বিতর সালাত। ইমাম আবু হানিফা রাহ:-এর যুগ থেকেই এ পরিভাষার ব্যবহার পাওয়া যায়।…
See more
All reactions:
Lulu Bilkis Khanom
Like
Comment
Share
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
Facebook
 
Shared with Your friends
Friends
জনসাধারণের খোঁজখবর নেয়া শাসকের নৈতিক দায়িত্ব
মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ তায়ালা পয়গম্বরদের মধ্যে হজরত দাউদ আ: ও সুলাইমান আ:-কে নবুয়ত ও রিসালাতের সাথে রাজত্ব দান করেছিলেন। রাজত্বও এমন নজিরবিহীন যে, শুধু মানুষের ওপর নয়- জ্বিন ও জন্তু-জানোয়ারদের ওপরও তাঁরা শাসন পরিচালনা করতেন। এমনকি আল্লাহ তায়ালা বায়ুকে সুলাইমান আ:-এর নির্দেশাধীন করে দেন।
কুরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে- ‘সুলাইমান পক্ষীদের খোঁজখবর নিলেন, অতঃপর বললেন, ‘কী হলো, হুদহুদকে দেখছি না কেন? নাকি সে অনুপস্থিত? আমি অবশ্যই তাকে কঠোর শাস্তি দেবো কিংবা হত্যা করব অথবা সে উপস্থিত করবে উপযুক্ত কারণ।’ (সূরা নামল : ২০-২১)
আলোচ্য আয়াত থেকে প্রমাণিত হয়, হজরত সুলাইমান আ: সর্বস্তরের প্রজাদের প্রতি দৃষ্টি রাখতেন এবং তাদের অবস্থা সম্পর্কে জ্ঞাত থাকতেন। এমনকি, যে হুদহুদ পক্ষীকুলের মধ্যে ক্ষুদ্র ও দুর্বল এবং যার সংখ্যাও দুনিয়াতে অন্যান্য পাখির তুলনায় কম, সেই হুদহুদও তাঁর দৃষ্টির অগোচরে থাকেনি; বরং বিশেষভাবে হুদহুদ সম্পর্কে তাঁর প্রশ্ন করার এক কারণ এটাও হতে পারে যে, হুদহুদ পক্ষীকুলের মধ্যে কমসংখ্যক ও দুর্বল। তাই প্রজাদের মধ্যে যারা দুর্বল, তাদের প্রতি দৃষ্টি রাখার ব্যাপারে তিনি অধিক যত্নবান হয়েছেন। সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে হজরত ওমর ফারুক রা: তাঁর খেলাফতের আমলে পয়গম্বরদের এই সুন্নাতকে পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত করেন। রাতের অন্ধকারে তিনি মদিনার অলিতে-গলিতে ঘুরে বেড়াতেন, যাতে সবার অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারেন বা বুঝতে পারেন। কাউকে কোনো বিপদ ও কষ্টে পতিত দেখলে তিনি তাকে সাহায্য করতেন। এ ধরনের অজস্র ঘটনা তাঁর জীবনীতে উল্লিখিত আছে। তিনি বলতেন, যদি ফোরাত নদীর কিনারায় কোনো বাঘ কোনো ছাগলছানাকে গিলে ফেলে, তবে এর জন্যও হাশরের মাঠে আল্লাহর আদালতে আমি ওমরকে প্রশ্ন করা হবে।
এ হচ্ছে রাজ্যশাসন ও প্রজাপালনের রীতিনীতি, যা পয়গম্বররা মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন, সাহাবায়ে কেরাম রা: যা বাস্তবায়িত করে দেখিয়েছেন এবং যার ফলে মুসলমান-অমুসলমান নির্বিশেষে সব শ্রেণীর জনসাধারণ সুখে শান্তিতে জীবন অতিবাহিত করত। তাঁদের পর পৃথিবীতে এমন সুবিচার, ইনসাফ ও সাধারণ বিশ্বের শান্তি, সুখ ও নিশ্চয়তার সে দৃশ্য আর কেউ দেখেননি।
রাষ্ট্র পরিচালনায় কুরআনের বার্তা : আমানত তথা অন্যের প্রাপ্য যথাযথভাবে পৌঁছে দেয়া, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা, সর্বোপরি কুরআন ও সুন্নাহ অনুসরণ করা একজন দায়িত্বশীলের প্রধান কর্তব্য। দায়িত্বশীলদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনার বিষয়ে পবিত্র কুরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে- ‘আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন, যেন তোমরা আমানত হকদারের কাছে অর্পণ করো।’
তোমরা যখন মানুষের মধ্যে বিচারকার্য পরিচালনা করবে, তখন ন্যায়পরায়ণতার সঙ্গে বিচার করবে, আল্লাহ তোমাদের কতই না উত্তম উপদেশ দেন, আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। হে মুমিনরা, তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করো এবং তাদের, যারা তোমাদের মধ্যে ক্ষমতার অধিকারী, তোমাদের কোনো বিষয়ে মতভেদ হলে তা আল্লাহ ও রাসূলের কাছে উপস্থাপন করো, এটাই উত্তম ও পরিণামে সুন্দরতর।’ (সূরা নিসা : ৫৮-৫৯)
শাসনব্যবস্থার গুরুত্ব : শরিয়তের দৃষ্টিতে একজন নেতা নির্বাচন আবশ্যক। রাসূলুল্লাহ সা:-এর মৃত্যুর পর সাহাবারা হজরত আবু বকর সিদ্দিক রা:-এর কাছে দায়িত্ব অর্পণ করে শপথ গ্রহণের জন্য এসেছিলেন। এর পর থেকে সব যুগে মানুষের বিভিন্ন বিষয় তত্ত্বাবধানের জন্য কাউকে নিযুক্ত করার নিয়ম চলে আসছে। কখনো মানুষকে বিশৃঙ্খলার মধ্যে রাখা হবে না। (মুকাদ্দিমা, পৃষ্ঠা-২৯১)
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণে রাষ্ট্র পরিচালনার গুরুত্ব তুলে ধরে ইবনে তাইমিয়া রহ: বলেছেন, ‘এ কথা জানা জরুরি যে, সমাজে শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা দ্বীনের আবশ্যকীয় বিধানগুলোর অন্যতম। বরং এটি ছাড়া দ্বীনের অস্তিত্ব থাকে না। কারণ পারস্পরিক প্রয়োজন পূরণে আদমসন্তানের ঐক্য ছাড়া সমাজের কল্যাণ সম্ভব নয়।
এ জন্য রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘তিনজন ভ্রমণে বের হলে তারা যেন একজনকে প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করে।’ (আস-সিয়াসা আশ-শরইয়্যাহ, পৃষ্ঠা-২০)
কুরআনে বর্ণিত দু’জন মুমিন শাসক : পবিত্র কুরআনে দু’জন শাসকের কথা বর্ণিত হয়েছে। বিশিষ্ট তাবেয়ি মুজাহিদ রহ: থেকে ইবনে কাসির রহ: বর্ণনা করেছেন, চার ব্যক্তি পৃথিবী শাসন করেছেন। এর মধ্যে দু’জন মুমিন ও দু’জন কাফির। মুমিন দু’জন হলেন, হজরত সুলাইমান আ: ও জুলকারনাইন। কাফির দু’জন হলো, নমরুদ ও বখতে নসর। (তাফসিরে ইবনে কাসির, পৃষ্ঠা-৩১৪, প্রথম খণ্ড)
মহান আল্লাহ তাদের উদ্দেশে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছেন। সুলাইমান আ:-এর রাজত্ব সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘সুলাইমান আ: ছিল দাউদ আ:-এর উত্তরাধিকারী, সে বলেছিল, হে মানুষ, আমাকে পাখিদের ভাষা শিক্ষা দেয়া হয়েছে এবং আমাকে সবকিছু দেয়া হয়েছে, তা অবশ্যই সুস্পষ্ট অনুগ্রহ। সুলাইমানের সামনে তার বাহিনী জিন, মানুষ ও পাখিদের সমবেত করা হয়, তাদের বিভিন্ন ব্যূহে বিন্যস্ত করা হয়।’ (সূরা নামল-১৯)
অন্য শাসক জুলকারনাইন সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা আপনাকে জুলকারনাইন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, আপনি বলুন, আমি তোমাদের কাছে তার বর্ণনা দিচ্ছি। আমি তাকে পৃথিবীতে কর্তৃত্ব দিয়েছিলাম এবং সব বিষয়ে উপায়-উপকরণ দিয়েছিলাম।’ (সূরা কাহাফ-৮৫)
দায়িত্ব অর্পণের রূপরেখা : ইসলামী শরিয়তে যেকোনো দায়িত্ব অর্পণের ক্ষেত্রে কিছু বিষয়কে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। জনসাধারণের যেকোনো কাজে দায়িত্বশীল নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যদের প্রাধান্য দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে গুরুত্বের সঙ্গে আমানতদারির নির্দেশনা এসেছে। যেমন পবিত্র কুরআনে মূসা আ:-এর বিশ্বস্ততা প্রসঙ্গে তাঁর স্ত্রীর কথা বর্ণিত হয়েছে, অন্যত্র শাসনকার্যে ইউসুফ আ:-এর নিয়োগ সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘রাজা বলল, ইউসুফকে আমাদের কাছে নিয়ে আসো, তাকে আমি একান্ত সহচর নিযুক্ত করব, অতঃপর তাঁর সঙ্গে কথা বলে রাজা বলল, আজ আপনি আমাদের কাছে অত্যন্ত মর্যাদাবান ও বিশ্বস্ত।’ (সূরা ইউসুফ-৫৪)
দায়িত্বশীলদের কল্যাণ কামনা : আল্লাহ ও রাসূল সা:-এর নির্দেশনা পালনকারী দায়িত্বশীলদের অনুসরণ করা সাধারণ মুসলিমদের কর্তব্য। আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ তোমাদের তিনটি বিষয় পছন্দ করেন এবং তিনটি বিষয় অপছন্দ করেন। তিনি পছন্দ করেন তোমরা একমাত্র তাঁর ইবাদত করো, তাঁর সঙ্গে কাউকে অংশীদার করবে না এবং আল্লাহর জন্য সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকবে, বিভেদ করবে না এবং আল্লাহ যাদেরকে তোমাদের দায়িত্বশীল করবেন, তাদের জন্য কল্যাণ কামনা করবে। তিনি অপছন্দ করেন তোমাদের অনর্থক কথাবার্তা, সম্পদের অপব্যয় ও মানুষের কাছে বেশি বেশি চাওয়া। (মুসলিম-১৭১৫)
হাদিস শরিফে হজরত উত্তম শাসকদের মর্যাদার কথা এসেছে। হজরত উমর বিন খাত্তাব রা: থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘আমি তোমাদের উত্তম ও নিকৃষ্ট শাসকদের সম্পর্কে জানাব না? উত্তম শাসক হলো যাদের তোমরা ভালোবাসো এবং তারাও তোমাদের ভালোবাসে। তোমরা তাদের জন্য দোয়া করো এবং তারাও তোমাদের জন্য দোয়া করে। নিকৃষ্ট শাসক হলো যাদের তোমরা ঘৃণা করো এবং তারাও তোমাদের ঘৃণা করে। তোমরা তাদের অভিশাপ দাও এবং তারাও তোমাদের অভিশাপ দেয়।’ (তিরমিজি-২২৬৪)
রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘মহান আল্লাহ (কিয়ামতের দিন) সাত শ্রেণীর মানুষকে (আরশের) ছায়ায় আশ্রয় দেবেন। সেদিন তার ছায়া ছাড়া কোনো ছায়াই থাকবে না-
১. ন্যায়পরায়ণ শাসক।
২. আল্লাহর ইবাদতে বেড়ে ওঠা যুবক।
৩. মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর যার অন্তর মসজিদে সম্পৃক্ত থাকে, যতক্ষণ না সে তাতে ফিরে আসে।
৪. যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পরস্পরকে ভালোবাসে; তাঁর সন্তুষ্টির জন্য একত্র হয় এবং তাঁর জন্য বিচ্ছিন্ন হয়।
৫. যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং দু’চোখ অশ্রুসিক্ত হয়।
৬. মর্যাদাবান সুন্দরী নারী ডাকার পর যে বলে, আমি আল্লাহকে ভয় করি।
৭. যে এমনভাবে দান করে, তার ডান হাত জানে না।’ (বুখারি-৬৮০৬)
দুনিয়ার বর্তমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতিকে সামাল দেয়ার জন্য হজরত উমরের মতো একজন শাসকের বিকল্প নেই। দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে নিজের স্নেহের পুত্রকে পর্যন্ত ছাড় দেননি খলিফাতুল মুসলিমিন উমর। কোনো ধরনের দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি স্পর্শ করতে পারেনি তাকে এবং তাঁর কোনো প্রতিনিধিকে। হজরত ওমর নিজে খাদ্যসামগ্রীর বস্তা কাঁধে চাপিয়ে ক্ষুধার্ত মানুষের ঘরে পৌঁছে দিতেন। গভীর রাতে মানুষের খোঁজ নিতে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতেন। তিনি বিভিন্ন প্রদেশের গভর্নর, দায়িত্বশীল ব্যক্তিদেরকে কঠোর নির্দেশ দিতেন যেন ন্যায়বিচার ও সাহায্য পেতে সাধারণ জনগণ হয়রানির শিকার না হয়। অন্য ধর্মের অনুসারীরা যেন কোনোভাবেই ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত না হয় সে বিষয়ে ছিল আরো কঠোর নির্দেশ। ফলে সবখানে বিরাজ করছিল শান্তির বাতাস। মানুষের মধ্যে ছিল ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্যরে প্রশান্তিময় পরিবেশ। রাষ্ট্র পরিচালনায় ন্যায়পরায়ণ শাসকের বিকল্প নেই।
সূত্র: মাওলানা কাওসার আহমদ যাকারিয়া

No comments:

Post a Comment